somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়ের ভালোতো মা চাইবেনই। কিন্তু বাস্তব উদাহরণে অনেক সময় দেখা যায় মেয়ের সংসারে মায়ের অতিরিক্ত নাক গলানোতে উল্টো ফলই বেশি হয়। এসব নিয়েই...

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




—শ্বশুরবাড়ির সবাইকে অত পাত্তা দিবি না।
—কী করব বুঝতে পারছি না।
—আরে, তুই তো বোকা। কিছুই বুঝবি না। তোকে ভালো মানুষ পেয়ে সব দায়িত্ব কাঁধে দেবে।
—কিন্তু দায়িত্ব এড়াব কী করে? বড় ছেলের বউ। শ্বাশুড়ি অসুস্থ।
—কেন তোর ননাসরা আছে না ? তারা মাকে নিয়ে ডাক্তার দেখাবে। তুই কেন যাবি?
ওপরের কথোপকথনটি মা-মেয়ের—সেটি সহজে বোঝা যায়। কিন্তু মায়ের এই অযাচিত উপদেশ মেয়ের সংসারে, দাম্পত্য জীবনে মাঝেমধ্যে টানাপোড়েন তৈরি করে, অশান্তির ঝড় তোলে, তা হয়তো অনেক মা বুঝতে পারেন না। কখনো মেয়েও বুঝতে পারেন না। তখনই ঘটে বিপত্তি।
পারিবারিক আয়োজনেই বিয়ে হয়েছিল রাকিব-মোনার (ছদ্মনাম)। বিয়ের পরপরই রাকিব বুঝতে পারেন, সংসারে নানাভাবে তাঁর শাশুড়ি প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি এমন তীব্র আকার ধারণ করল যে কী রান্না করা হবে, কখন খাবে—সবই শাশুড়ি টেলিফোনে মোনাকে নির্দেশনা দেন।
রাকিব-মোনার দাম্পত্য জীবনে অশান্তি দানা বাঁধলেও বড় আকার ধারণ করেনি। ‘আমি বুঝতে পারতাম। তাই মায়ের সব কথাকে গুরুত্ব দিতাম না। তা না হলে সমস্যা বাড়ত। রাকিবের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করেছি। দুজনই একমতে এসেছি। সংসারে অশান্তি কমাতে হলে এসব এড়িয়ে চলতে হবে। মাকেও বুঝিয়ে বলেছি।’ বলেন মোনা।
সব মেয়ে তো মোনার মতো বুঝতে পারেন না। এর ফলে কারও কারও সংসারও ভেঙে যায়। বিয়ের পর থেকেই মিথিলার (ছদ্মনাম) সংসারে মায়ের খবরদারি চলতে থাকে। ঘর কীভাবে সাজাবেন, পর্দা কোন রঙের কিনবেন, এমনকি বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায় কোথায় যাবেন—সবই মিথিলার মায়ের পরামর্শে হয়। বাধ্য মেয়ের মতো মিথিলাও মায়ের কথামতো চলেছেন। এ বিষয় নিয়ে দাম্পত্য জীবনে ক্রমেই অশান্তি বাড়ে। শুরুতে মিথিলার স্বামী আদনান (ছদ্মনাম) মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও একসময় জীবন অসহনীয় হয়ে ওঠে।
আদনান বলেন, ‘মিথিলার মা ওকে প্রায়ই তাঁর কাছে নিয়ে গিয়ে রাখতেন। আমাদের বাড়ির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরিতে সাহায্য করেন তিনি। মায়ের কথা শুনে মিথিলার আচরণও বদলে যেতে থাকে। ওর মা আমাকে ডেকে বলেন, “আমাদের বাড়িতে এসে থাকো।
এখানেই সংসার করো। মিথিলা তোমাদের ওখানে যাবে না।” সেটি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। আর মিথিলাও মায়ের সিদ্ধান্ত মেনে আলাদা থাকতে চাইল। পরিণতিতে আমাদের সংসারটাই ভেঙে গেল।’
মায়েরা সাধারণত নিরাপত্তাহীনতা বোধ থেকে মেয়ের সংসারে অনুপ্রবেশ ঘটান। বুঝতেও পারেন না তাঁর অযাচিত উপদেশ মেয়ের দাম্পত্য জীবনে হিতে বিপরীত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক দুটো মানুষের স্বাধীনভাবে থাকার এবং চিন্তা-ভাবনা করার অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের মতো করেই থাকতে দেওয়া ভালো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক দিলরুবা আফরোজ এমনটাই মনে করেন। শুধু অন্যকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য নয়, নিজের মেয়ের ক্ষেত্রেও তিনি এই নীতি মেনে চলেন।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় টেলিফোন করে ঘটনা ধরে ধরে উপদেশ না দিয়ে মায়ের মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলা উচিত। যেকোনো পরিস্থিতিতে যেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাঁর থাকে। মাকে বুঝতে হবে, তাঁর অহেতুক দুশ্চিন্তা ও অযাচিত উপদেশ মেয়ের দাম্পত্য জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যদি কোনো কিছু নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন, সেটি ভালোভাবে মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের সামনে খোলাখুলিভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। তবে অন্যায় আচরণ এবং নির্যাতনের বিষয়টি একেবারেই ভিন্ন। সেক্ষেত্রে সোচ্চার হতেই হয়।
মেয়েরা সাংসারিক বুদ্ধি নিতে মায়ের কাছে ছুটে যান। তখন মেয়েকে সরাসরি কোনো বুদ্ধি-পরামর্শ না দিয়ে পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক তাঁর সামনে তুলে ধরার পরামর্শ মনোবিজ্ঞানীর। তাহলে মেয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
আবার উল্টোদিকে দাম্পত্য জীবনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মায়ের সঙ্গে বুদ্ধি-পরামর্শ করাও মেয়ের দিক থেকে ঠিক নয়। আর মায়ের কোন কথাটা গুরুত্ব দিতে হবে আর কোনটা দিতে হবে না, সেই বিবেচনা থাকতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরামর্শক নাসিমা আকতার বলেন, ‘বেশির ভাগ সময় তৃতীয় পক্ষের অনুপ্রবেশে দাম্পত্য জীবনে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়; চরম আকার ধারণ করে, পরিণতিতে বিবাহবিচ্ছেদও ঘটে। শুধু মেয়ের মা নন, দাম্পত্য জীবনে শাশুড়ি ও ননদেরাও অযাচিত উপদেশ দিয়ে থাকেন অনেক সময়। মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতা আছে। নিজের সন্তান হলেও তিনি আলাদা মানুষ, ভিন্ন সত্তা আছে তাঁর। যদি কোনো ঝামেলা হয়, তা হলে উভয় পক্ষের কাছের মানুষ মিলে এর সমাধান করা যেতে পারে। কিন্তু অযাচিত প্রবেশ ও পরামর্শ দেওয়া যাবে না।’



ProthomAlo Link
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Dull Friday !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৩৭


ইদের ছুটি শেষ হতে চলেছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে যায়। আমার ক্ষেত্রে বরবার উলটো ঘটনা ঘটে। কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছি ঈদের ছুটিতে এবার।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিটিংয়ের জন্য কেন এত তোড়জোড়?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১২



অর্থাৎ চীনের সহায়তায় লালমনিরহাটের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এয়ার বেইস চালুর চেষ্টা, তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীনকে নিয়ে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও চীনে গিয়ে ডক্টর ইউনূসের সেভেন সিস্টার্স সম্পর্কিত বক্তব্য ভারতের ভালো লাগেনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা এবং বাংলাদেশে এর প্রতিফলন

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:১৮



গত বছরের মতো এবছর আর কানাডার প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা জানাননি। রোজার শুরুতেও “রামাদান করিম” শুভেচ্ছাবচনটি কেউ পাঠায়নি। আগে যখন ট্রুডো ঈদের ঠিক আগে আগে সরকারি দপ্তর থেকে কানাডার মুসলিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:১৭

অকুতোভয় বাসচালক মো. সোহেলকে পুরষ্কৃত করা হোক

ছবিসহ মিনি পোস্টারটি এআই দিয়ে তৈরিকৃত।

থেঁতলানো চোয়াল, ভেঙ্গে গেছে দাঁত, রক্তাক্ত অবয়ব—তবু ৪০ কিমি বাস চালিয়ে যাত্রীদের বাঁচালেন! এই সাহসী চালকই বাংলাদেশের নায়ক... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর পর যা হবে!

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৪২



বেহেশত বেশ বোরিং হওয়ার কথা।
হাজার হাজার বছর পার করা সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। দিনের পর দিন একই রুটিন। এরচেয়ে দোজক অন্য রকম। চ্যালেঞ্জ আছে। টেনশন আছে। ভয় আছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×