somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারবালা প্রান্তরে হযরত ইমাম হুসাইনের শেষ ভাষণ

১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কারবালার প্রান্তরে একে-একে যখন সবাই শাহাদাত বরণ করেন, হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কেবল তখন একা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঐ সময়টাতে তাঁর শেষ কয়েকটি কথার কিছু অংশ নিম্নে উদ্ধৃত করলাম।

“হজরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “কেন আমাকে হত্যা করতে চাও? আমি কি কোন পাপ অথবা অপরাধ করেছি?” এজিদের সৈন্য বাহিনী বোবার মত দাঁড়িয়ে রইলো। পুনরায় ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, “আমাকে হত্যা করলে আল্লাহর কাছে কি জবাব দেবে ? কি জবাব দেবে বিচার দিবসে মহানবীর কাছে?” এজিদের সৈন্য বাহিনী পাথরের মত দাঁড়িয়ে আছে। আবার ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হাল্ মিন্ নাস্রিন ইয়ানসুরুনা? অর্থাৎ “আমাদের সাহায্য করার মত কি তোমাদের মাঝে একজনও নাই ?” তারপরের আহ্বানটি সাংঘাতিক মারাত্বক। ঐতিহাসিকদের মতে এটাই ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু’র শেষ আহ্ববান। আর তা হচ্ছে, আলাম্ তাস্মাও ? আলাইসা ফিকুম্ মুসলিমু?” অর্থাৎ আমার কথা কি শুনতে পাও না ? তোমাদের মাঝে কি একজন মুসলমানও নাই?’



মুসলিম লেবাসধারী এই অপদার্থের দল ইমাম পাকের খুতবার কোন জবাব দিতে পারলো না। সমস্ত কারবালা নিরব-নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এবার যারা ইমাম পাককে চিঠি লিখে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল,তাদের কয়েকজনের নাম ধরে তিনি জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,

“হে শাবস ইবনে রাবয়ী ! হে হাযর ইবনে আবযার ! হে কায়েস বিন আশআস ! হে ইয়াযিদ ইবনে হারেস! হে যায়েদ ইবনে হারেস ! হে আমর ইবনে হাজ্জাজ ! …………… তোমরা কি চিঠি লিখে আমাকে আমন্ত্রণ জানাও নাই? তোমরা কি আমাকে কুফায় আসার জন্য বার বার চিঠি লিখে অনুরোধ কর নাই? তোমরা কি চিঠিপত্র ও দূত পাঠিয়ে বলো নাই যে, আমাদের কোন ইমাম নেই, আপনি আমাদের মাঝে তাশরীফ আনুন এবং আপনার মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালার হয়তো আমাদের সঠিক নির্দেশনা দিবেন। তোমরা এও লিখেছিলে যে, যাদের অধিকার না থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতা দাবী করে ও অন্যায় আচরণ করে, তাদের চাইতে ইসলামী শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে আহলে বাইত-ই অধিকযোগ্য (বেশি হকদ্বার) ।

ইবনে সা’দের সৈন্যবাহিনী এবারও নিরব নিথর। হঠাৎ নির্দিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ (যাদের নাম ধরে ধরে ইমাম পাক উপরের কথা বললেন) তারা বলে উঠল, না ! না ! আমরা কোন চিঠিপত্র লিখিনি। মিথ্যা, সবই মিথ্যা কথা। আমরা এ সম্পর্কে কিছুই জানি না।

পুনরায় ইমাম পাক বললেন, ছি: ! ছি : (ধিক)! তোমাদের। বড়ই অনুতাপ ও পরিতাপের বিষয়। এই চেয়ে দেখো তোমাদের চিঠি। এই তোমাদের স্বাক্ষরযুক্ত আবেদনপত্র। খোদার কসম ! এগুলো তোমরাই লিখেছো এবং লোক মারফত আমার নিকট প্রেরণ করেছো ।
ঐ বেহায়া লম্পট মিথ্যুকের দল বলল, যদি লিখে থাকি তাহলে মন্দ কাজ করেছি। আমরা আমাদের কাজের প্রতি অসন্তুষ্ট।

মজলুম ইমাম পাক বললেন, এখন আমার আগমণ যদি তোমাদের মন:পূত না হয়, তোমরা যদি আমাকে না চাও, তাহলে আমাকে ফিরে যেতে দাও। আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানেই ফিরে যাব । তোমাদের সাথে আমার কোন বিরোধ ও বিদ্বেষ নাই ।



ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর শেষ ভাষণটি মাত্র একটি ছোট্ট বাক্য ছিল। তবে এর ব্যাখ্যা যদি কাঁচ ভাঙ্গার মত টুকরো-টুকরো করে দেখাতে চাই তাহলে সেই বাক্যটি হবে খুবই বেদনা দায়ক। তাই বেশি কিছু না বলে শেষ বাক্যটির সামান্য ব্যাখ্যা দিয়ে শেষ করতে চাই। খাজা গরীব নাওয়াজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি যেমন বলেছেন, “ইমাম হোসাইন হক্ব এবং বাতিলের নির্ধারণটা পরিস্কার করে দেখিয়ে গেলেন; সে রকমই অর্থ বহন করছে ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু শেষ ভাষণটিতে। কারণ এজিদের সৈন্যবাহিনীতে একজনও হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিস্টান অথবা অন্য কোন ধর্মের কেউই ছিল না। সবাই ছিল মুসলমান। অথচ কি সাংঘাতিক এবং ভয়ংকর ভাষণ, “তোমাদের মাঝে কি একজনও মুসলমান নাই?” এজিদের সৈন্যবাহিনীর সবাই মুসলমান ছিল। অথচ ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু এ কি তাক লাগানো কথা বলেছেন? “তোমাদের মাঝে কি একজনও মুসলমান নাই? ” একটিও সত্যিকারের আসল মুসলমান ছিল না বলেই ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু এই আহ্বান জানিয়ে পৃথিবীকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন যে, যারা দাঁড়িয়ে আছে তারা সবাই নকল মুসলমান।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৩৪
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×