ছোট বেলা থেকেই জ্বীনজাতিদের বিষয়ে আমার প্রবল আগ্রহ। বংশ পরম্পরায় বলতে পারেন দাদা-নানীসহ বেশকিছু ভাল কবিরাজের সান্নিধ্য আমি পেয়েছি এবং রোগীর চিকিৎসা আমি দেখেছি।আমিও টুকটাক চিকিৎসা করি আমার পারিবারিক ও বনধু মহলের তেমন রোগী পেলে। আমি তেমন কোন বড় মাপের রোগীর চিকিৎসা করতে পারিনা ।
আমি যে ঘটনাটি বলবো ২০১০ সালের দিকের আমার বন্ধুর চাচাতো বোনের চিকিৎসা করার একটি ঘটনা।
এক দুপুরে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ আমার এক বনধু (তার নাম লেলিন) এসে বললো ওর চাচাতে বোন অসুস্থ, ওদের বাড়ী যেতে হবে। বোনের বয়স তখন ৯-১০ হবে। চাচা দেশের বাইরে থাকে চাচী একা বেশ ঝামেলাতে পড়েছে। হুট করে এমন খবরের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে ওকে জিজ্ঞাসা করলাম অদৃশ্যের কোন সমস্যা আছে কিনা।
বললো মাথার সমস্যা ডাক্তার দেখাচ্ছে সমধান হচ্ছে না, তো আমাকে একটু দেখতে হবে। আমার পাশে থাকে আরও দুই বন্ধু তো প্রবল আগ্রহ দেখালো এই জাতীয় সমস্যা কিভাবে সমাধান করা হয় তা দেখবে।
তো আমরা ৪ জন বিকেলে রওয়ানা দিলাম বাসে আমাদের গন্তব্য কুষ্টিয়ার ছোট শহর ভেড়ামারা। এই সমস্ত মিশনে যাত্রা পথে বাধা হচ্ছে সাভাবিক একটা বিষয়। এবারো এইটা হবে না তা কি হয়?
কিছুদুর বাস এাগোতেই ধুম একটা শব্দ, ড্রাইভার যেন বাস কন্ট্রোল করতে পারছে না। বাস কাপতে কাপতে দাড়িয়ে গেল। আমার এক বনধু উৎকন্ঠা ভরা চেহারা নিয়ে আমার দিকে তাকালো । আমি হেসে বল্লাম বাসে টায়ার ফেটেছে। সংগে সংগে সে ও হেসে উঠলো।
৪০ মিনিটের যাত্রা বিরতি অর্থাৎ টায়ার চেন্জ করে আবার বাস রওয়ানা দিল। সন্ধার দিকে ভেড়ামারাতে নামলাম এবং হেটে চাচীর বাসায় রওয়ানা দিলাম শহরে হলেও বাসা একটু গ্রাম্য পরিবেশের মধ্যে। ছোট-চিপা রাস্তা, রাস্তার পাশে বড় বড় গাছ, বাশ-বাগান বেশ ভুতুড়ে পরিবেশ।
আধুনিক বাড়ী তবুও রাস্তা সংকুলান না থাকায় চিপা গলি দিয়েই ওনার বাসার গেটের সামনে আসতেই আমার সারা শরীর বেশ ভারী অনুভুত হলো, মনে হলো আমার পা যেন মাটির সংগে টেনে ধরার চেষ্টা করছে কেউ। দাড়িয়ে পড়লাম, এদিক ওদিক চেয়ে পরিবেশটা বুঝতে চেষ্টা করছিলাম। আমার বন্ধু ও আমার দাড়ানো খেয়াল করে কাছে এসে চোখ বড় বড় করে বললো
- কি হয়েছে?
আমি জানি আমি যার টের পেলাম তা তাকে বুঝতে দেয়া ঠিক হবে না। আমি বল্লাম কিছু না।
আমি বাসার ভেতরে গেলাম। ভেতরে দাদী-চাচী আর ছোট বোন। অন্য রুমে চাচীর কাছ থেকে সবকিছু শুনে আমি আমার মতো কিছু পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম যে আসলে কি হচ্ছে এখানে।
তো আরেকটু বলে রাখি আমার পরিবারে রুগীর শরীরে তাবিজ বাধতে দেয়া হয়না মুলত চেষ্টা করা হয় সমস্যা যাকে নিয়ে তার সংগে যোগাযোগ করা ও সমাধান করা।
যাই হোক রাতে আমি কিছু নকশা নিয়ে ছাদের উপরে গেলাম একটা কাগজের টুকরা জ্বালানোর জন্য।
কারণ আমি জানি যদি কোন সমস্যা ছাড়া তা পোড়াতে পারি তাহলে কোন সমস্য নাই।
ছাদের মাঝখানে যেয়ে কাগজের টুকরা বের করে ম্যাচ ঠুকে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করা মাত্র প্রচন্ড বেগে ঝড় শুরু হলো্ এতটায় জোরে যে আমার দাড়ানোই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বাধ্য হয়ে বসে আগুন জ্বালিয়ে কাগজে লাগাতেই ঝটকা বাতাস আমাতে দুরে ফেলে দেয় কাগজ বাড়ীর যে দিক বাশ বাগান ওদিকে উড়ে যায়। আমি কাগজটি খুজতে নীচে তাকাতে অদ্ভুত জিনিষ।নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছি না! কাদা খেকোদের কথা শুনেছি কিনতু দেখিনায় কখনো। দুই কাদা-খেকো ড্রেন থেকে বসে, না ঠিক বসে না আধাশোয়া আবস্থায় আমার দিয়ে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারেও ওর চোখের হলুদ রঙ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। বিভৎস হাসি , খুব খুবই বিশ্রী হাসি হাসছে আর লালার মতো মুখের দুই ধার দিয়ে পচা ময়লা ঝরে পড়ছে।
উফ, কিছুক্ষনের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলার মতো অবস্থা । সেই দুই লোক ড্রেন-থেকে উঠে বাগানের মধ্যে মিলিয়ে গেল। আমি নিচে আসলাম একটু একা থেকে চাচীকে বল্লাম বোনটা কি পিছনে কিছু দেখছে কখনো? চাচী বল্লো- ওমা আমি ভাবী ও তামাশা করে তার মানে পেছনের ড্রেনএ কাদা-খেকো আছে?আমি বল্রাম- জী
কিন্তু আমার বনধুটির দাদি আমার ওপর বিরক্ত। উনি চান ডাক্তার দেখানো হচ্ছে তো আবার এসব কেন?
বলতে পারেন ২য় পর্ব এবার শুরু হলো। ছাদ থেকে নামার ৫ মিনিটের মধ্যে বোনটি আমার চরমভাবে চেল্লানো আর জিনিষ পত্র ছোড়াছুড়ি শুরু করেছে। আমার এক বনধু যার ওজন ৮৫ কেজি তো হবেই ওকে বল্লাম ওর পা দুটো ধর। লেলীন আর চাচীকে বল্লাম মাথার দিকটা ধরে শুয়ে রাখতে আমি একটু ওর চোখদুটোর ওপর আমার হাত রাখবো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আমি ওকে সুস্থ করতে পারবো। কিন্তু না আমার শরীরচর্চা কারী বন্ধুকে যেভাবে সে দু পা দিয়ে নাচালো তা ওর সারাজীবন মনে থাকবে। আমি বল্লাম এটা আমার ক্ষমতার বাইরে। তখনি রিক্সাতে ১০ মিনিটের দুরুত্বে এক হুজুরের আশ্রয়ে বোনকে সাময়িক মুক্ত করার পর হুজুরের চিকিৎসা অনুযায়ী পুকুরের পানি আনতে হবে।
সেতো আরেক বিপদ সংকেত। ৩০ মিনিটের মতো পথ হেটে মাঠের মধ্যে থাকা পুকুরের পানি আনতে হবে। রাত তো তখন ১২টা প্রায়। তাও আমি আনলে হবে না ওর রক্তের কেউ আনবে।
লেলিনের সংগে আমি যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। নিয়ম অনুযায়ী পুকুরের ৪০ পদ দুরুত্বে আমাকে অবস্থান করতে হবে। ফিটফিটে জোৎস্না রাত , ঝিঝিপোকার আলো খুবই সুন্দর রাতে শুরু হলো ২য় দফা ঝড়। ধুলোবালিতে আমাদের পথ এগোনোটাই দায়। আমার পকেটে থাকা তাসবীহ হাতে নিতে ঝড় থেমে গেল। বলে রাখি আমার তাসবীহটি পুরাতন এবং এটি এজাতীয় সমস্যায় বেশ কাজ করে। পুকুরে নামতে লেলীনের ভয় করবে ভেবে তাসবীহ ওর গলায় দিয়ে পুকুরে যেতে বলি আর আমি ৪০পদ দুরুত্বে দাড়াই। লেলীন ২৫-৩০ পদ যেতেই। আমার ডানদিক দিয়ে প্রবল হাওয়া আর মনে হচ্ছে কেউ দাড়ীয়ে আছে। ওইদিকে ফিরতেই আমার ১০ হাত দুরে দাড়িয়ে ১ জন। পুরো সাদা পোশাক।
চোখে প্রচন্ড রাগ নিয়ে বললো - পানি নেবে, তোদের কপালের জোর আজ বেচে গেলি।
আমি বল্লাম - দাড়ীয়ে তো আছি মার আমায়।
কিছু না বলে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে থেকে উল্টো হাটতে হাটতে মিলিয়ে গেল। ততক্ষণে পানি নিয়ে ও চলে এসেছে।
পানি হুজুরের বাড়ী রেখে বাড়ী এসে চাচীকে বল্লাম তার ৩ টি সমস্যার কথা।
১. গেইটে কিছু রাখা আছে সামনে খুড়ে তা বের করুন।
২. ড্রেনের কাদা-খেকো ভুত
৩. ওর ওপর জ্বীন পাঠানো হয়েছে।
২. ও ৩ নম্বর problem আমি ঠিক করে যাচ্ছি। কাদা-খেকো ভুত - আর চালান কৃত জ্বীনের উদ্দেশ্যে আমরা কাজ শেষ করে পরদিন কুষ্টিয়া চলে আসলাম। আমার heavy weight friend এখনো বলে জ্বীন না দেখি জীবনে জ্বীনের power তো টের পেলাম।
মাসখানেক পর জানতে পার নিকটাত্বীয়ের দ্বারা এই ধরণের আক্রমনের শিকার ছোট বোন টি।গেইট থেকে একটা তাবিজ ও উদ্বার হয়েছে।
বোনটি এখন সুস্থ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৩৫