somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উচ্চ শিক্ষায় ভর্তুকির নামে অপচয় বন্ধ হোক

০১ লা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ সাম্প্রতিক ঘটানার প্রেক্ষিতেই এই লেখার অবতারনা। আমি হয়ত সমস্যার পূর্ন সমাধান দিতে পাড়ব না কিন্তু বিক্ষিপ্ত চিন্তাগুল শেয়ার করতে চাই। অন্য কেউ আরো ভাল সমাধান নিয়ে হয়ত এগিয়ে আসবে। ]

অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থানের মত চাহিদাগুলার পরই মানুষের প্রয়োজন শিক্ষা ও চিকিৎসা। মৌলিক এই চাহীদাগুল রীতিমত অধিকারের পর্যায়ে পৌছে গেছে এখন। রাষ্ট্র তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করছে তার নাগরীকদের নূন্যতম চাহীদার যোগান দিতে।

গত সপ্তাহে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, যদিও আগাম ছুটি ঘোষনা করে পরিস্থিতি 'আপাতত' সামাল দিতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার। উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সম্পদ অসীম নয় তাই অবধারিত ভাবেই সীমিত সম্পদ প্রায়রিটির ভিত্তিতে বন্টিত হয়। যদিও দূর্নীতি ও অদক্ষতার করনে অপ্রতুল বরাদ্যে ও হরিলুট নিত্য দিনের ঘটনা।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে উচ্চশিক্ষার্থির সংখ্যাও বাড়ছে। প্রথমটি খুশির কারন হলেও দ্বিতীয়টি দুঃশ্চিন্তার কারন যা মূলত প্রয়োজনীয় সংখ্যক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার ফলে সৃষ্ট।

এতক্ষন যা বললাম তার সবই কোয়ান্টিটির পেচাল কিন্তু কোয়ান্টিটির সল্পতায় কোয়ালিটির অবস্থা আরো খারাপ। খাবার প্রাপ্তির অনিশ্বয়তায় ভোগা ব্যাক্তি যেমন স্বাদ ও পুষ্টিগুন নিয়ে খুব এখটা চিন্তার সুযোগ পায়না ঠিক তমনি ভাবে শিক্ষর্থীদের ও একই অবস্থা। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুল তাই অন্ধের যোস্ঠী হয়ে উঠেছে অবস্থা সম্পন্ন শিক্ষার্থিদের। অতএব মেধার জোরে আর্থিক অসামর্থ ঘোচানোর সুযোগ কেবল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলতেই উন্মুক্ত।

কিন্তু সীমিত সম্পদ দিয়ে চাইলেই আগামীকাল প্রয়োজনীয় সংখ্যাক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গ তৈরী ও পরিচালনা কারা সম্ভব নয়। শিক্ষা অধিকার কিন্ত প্রত্যেক নাগরীকের জন্য উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয়, বিশেষত তা যদি হয় বাংলাদেশের মত জনসংখ্যার ভাড়ে নজ্জু কোন দেশ। পাঠকগন নিশ্চই বেসিক এডুকেশন ও হায়ার-এডুকেশনের তফাত বুঝবেন, বেসিক এডুকেশন প্রত্যেক নাগরিকের অধীকার হলেও হায়ার-এডুকেশ প্রাপ্তি মেন্ডেটরী নিড নয়।

জার্মানী, ফিনল্যান্ডের মত গুটি কয় স্কেন্ডেনেভিয়ান দেশ ছাড়া অন্যরা সবাই এই অবৈতনিক/ সল্প মূল্যে উচ্চশিক্ষা বিতরনের ধরনা থেকে বেরিয়ে এসেছে। আর বাংলাদেশ উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগকৃত সম্পদের ঠিক কতটা ফেরত পাচ্ছে শিক্ষার্থিদের কাছ থেকে ? গুটিকয় ব্যাতিক্রম বাদে যারা সুযোগ পাচ্ছে না তারাই সরকারী চাকরীতে থাকছে আর তুলনামূলক মেধাবী অংশ বেসরকারী ও দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। অধিক অর্থ জেনারেট করতে পারায় এদের কাছ থেকে বাংলাদেশ হয়ত আর্থিক নিরাপত্তা পাচ্ছে কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রে পরোজানীয়ে মেধার প্রয়োগ ঘটাতে পারছে না ফলে আমাদের অবস্থার পরিবর্তন ও দ্রুততর হচ্ছে না। গত ৩০ বছরে শুধু এক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই ১৩৮ জন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় পিএইচডি করে দেশে ফেরত আসেনি। আর বাৎসরিক দেড়-দুই লাখ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আমরা যে মেডিক্যাল স্টুডেন্টদের পড়াচ্ছি সেই তারাই ২ বছরের জন্যে ও ঢাকার বাইরে থানা ও উপজেলা পর্যায়ে যেতে চায় না। অথচ এই গরিব মানুষগুলর টাকাতেই তারা বিগত ৫ বছর পড়া-শোনা করেছে।

তাই উচ্চশিক্ষা খাতে সরকারের দেয়া ভর্তুকি ব্যবস্থায় পরিবর্তন আশু প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাবনা

১। ভর্তুকি বিশ্ববিদ্যালয় ও বৃত্তি এই দুই খাতে ব্যায় হবে।

২। বিশ্ববিদ্যায়লগুল তাদের পার্ফর্মেন্স অনুযায়ী ভর্তুকি পাবে, শিক্ষার্থির সংখ্যানুযায়ী নয়। পাবলিশ হওয়া রিসার্চ পেপারের সংখ্যা ও এ ধরনের ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক পার্ফর্মেন্স মূল্যায়নের অনেকগুল মাপকাঠির একটি হতে পারে।

৩। বিশ্ববিদ্যায়গুলর নিজস্ব আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে যার মূল দ্বায়ীত্ব বর্তাবে সিনিয়র শিক্ষকদের কাধে। এক জন প্রফেসরের মূল কাজ রিসার্চ করা, ছাত্র পড়ানো নয়। কর্পোরেট ও ইন্ডাস্ট্রি ওরিয়েন্টেড কাজ করে (রিসার্চ, প্রজেক্ট) তিনি ফান্ড যোগার করবেন পাশাপাশি ছাত্রও পড়াবেন। ফান্ড নাই তো প্রফেসবের চাকরী ও নাই। আর ফান্ডের একটা অংশ পাবেন ঐ শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্র (স্কলার্শিপ আকারে)।

৪। সরকারী বিশ্ববিদ্যায়লগুল ২য় শিফ্ট চালু করে অর্থের যোগান বাড়াতে পারে যার একটি অংশ পাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগন।

৪। এইচ এস সি পর্যন্ত শিক্ষা কে বেসিক এডুকেশনের আওতায় এনে সকলের জন্য সকলের জন্য তা অবৈতনিক করা।

৫। আন্ডারগ্রেড/ পোস্টগ্রেড ছাত্রদের রেজাল্ট (পড়া চলা-কালিন সময়ের) অনুযায়ী তাদের আর্থিক বৃত্তি দেয়া হবে যেন সচ্ছল ভাবে কোর্স শেষ করতে পারে। তবে এই সংখ্যা হবে সীমিত।

৬। যারা বৃত্তি পাবে না তারা সরকারী ব্যাংক থেকে বিনা সুদে এডুকেশন লোন পাবেন যা তারা এমপ্লয়েড হবার পর শোধ করবেন।

৭। অর্জিত শিক্ষার স্তর অনুযায়ী নুন্যতম বেতন কাঠামো প্রনোয়ণ করতে হবে। ফলে আন্ডার এমপ্লয়মেন্ট রোধ হবে।

এর ফলে সরকারের ভর্তুকির পরিমান যেমন কমবে ঠিক তেমনি ভাবে অপচয় রোধ হবে কারন ভর্তুকির টাকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে কেউ ঘরে বসে থাকবে না (বিশেষত মেয়েরা)। আবার কেউ গ্রেজুয়েশন করে বিদেশে শ্রমিকের চাকরী নিয়ে দেশ ছাড়বে না। মানে শিক্ষার্থি তার মেধানুযায়ী সরকারী খরচে উচ্চশিক্ষা লাভ করবে। আর উৎসাহীরা উচ্চশিক্ষা পেতে চাইলে যথাযথ অর্থ ব্যায় সাপেক্ষে তা করবে।

ইংল্যেন্ড, ফ্রান্স, আমেরিকার অনেকেই স্কুল শেষ করে কলেজ/ইউনিভারসিটিতে যায় না কারন হয় তারা যথেষ্ট মেধাবী নয় অথবা এডুক্যাশন লোনে পড়াশোনা করে তা শোধ করার ব্যপারে যথেষ্ট আত্নবিশ্বাসী নয়। বরং প্রয়োজনীয় ১-২ টি ডিপ্লমা করে তারা কৃষি, সেবা, পরিবহন, লাইট ইন্জিনিয়ারিং ইত্যাদি কাজে নিয়জিত হয়ে পরে। ইংল্যান্ডে অনেকেই একাডেমিক অফার পাওয়া সত্বেও পিএইচডি রিফিউজ করে কারন ঐ লেভেলের জব পাওয়া বা করার ব্যাপারে সে যথেষ্ট নিশ্চিত নয়। আর চাইলেই এখ জন পিএইডি হোল্ডার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হতে পাড়বেন না, কারন পিএইডি হোল্ডারের বেতন কাঠামো তা সাপর্ট করে না। আর এভাবেই কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাব্যাবস্থার মধ্যে সাম্মাবস্থা আনা হয়েছে পাশ্চাত্যে।

আর এগুল ইমপ্লিমেন্ট করলে সরকারী অর্থ দক্ষ জনশক্তি গড়তে আরো ইফিশিয়েন্ট ভাবে ব্যয় হবে, আর বোনাস হিসেবে আমরা শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতির ধংসাত্বক পরিনতি থেকে ও বেচে যাব। নতুবা আমরা এখন যে রকম 'আল্লাহ ওয়াস্তে' উচ্চ শিক্ষায় ভর্তুকি দিচ্ছি তাতে অল্প দিনেই বাংলাদেশ চেরেটি স্টেটে পরিচত হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:৫৯
১৪টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×