“স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ” হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসিয়ানা ও টেক্সাসে ভূগর্ভস্থ ট্যাঙ্কে রক্ষিত বিশ্বের বৃহত্তম পেট্রোলিয়ামের জরুরী মজুদ। ১৯৭৩-১৯৭৪ সালের সৌদি তেল নিষেধাজ্ঞায় মহাসঙ্কটের পর অ্যামেরিকা ভবিষ্যতে সঙ্কট প্রশমিত করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সাল থেকে এই মজুদ (৭১৪ মিলিয়ন ব্যারেল) শুরু করে।
.
১৯৭৩ সালের তেল সংকটের পরে এই রুজার্ভের সিদ্ধান্ত হয়। ২২ ডিসেম্বর, ১৯৭৫ তারিখের সিদ্ধান্তে ১ বিলিয়ন ব্যারেল পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ স্থাপনের নীতি গৃহীত হয়। ১৯৭৭ সালে সরকার বেশ কয়েকটি বিদ্যমান স্টোরেজ সাইট অধিগ্রহণ করে। সে বছর জুনে প্রথম পৃষ্ঠতলের সুবিধার নির্মাণ শুরু হয়েছিল।
.
টানেলগুলো নির্মাণে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছিল। মাটির অনেক নীচে লবণের তৈরি টানেলে রাখার কারণে তাপমাত্রার উল্লেখযোগ্য হেরফের হবে না এবং টানেলে ছিদ্র হবে না- বিধায় সিস্টেম লস হবে না। ফলে, ভূ-পৃষ্ঠের রিজার্ভারের চেয়ে ভূ-তলে তেল সংরক্ষণ খরচ ১০ ভাগের এক ভাগ।
.
এই রিজার্ভ মেক্সিকো উপসাগরে তীরে চারটি সাইটে রক্ষিত, প্রতিটির নিকটে পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি ও প্রসেসিং সেন্টার রয়েছে। পেট্রোলিয়াম মজুদ রয়েছে মাটির নীচে লবণের তৈরি টানেলে। টানেলগুলো ভূপৃষ্ঠ হতে কমপক্ষে ১ কিমি নীচে। প্রতিটি টানেল ৬০ মিটার থেকে ৬০০ মিটার পর্যন্ত প্রশস্ত।
.
বর্তমান টানেলগুলো-
ব্রায়ান মাউন্ড: ফ্রিপোর্ট, টেক্সাস। প্রতিদিন ১.৫ মিলিয়ন ব্যারেল উত্তোলন ক্ষমতাসহ ২৫৪ মিলিয়ন ব্যারেল স্টোরেজ ক্ষমতার ২০টি টানেল।
বিগ হিল: উইনি, টেক্সাস। প্রতিদিন ১.১ মিলিয়ন ব্যারেল উত্তোলন ক্ষমতাসহ ১৬০ মিলিয়ন ব্যারেল স্টোরেজ ক্ষমতার ১টি টানেল।
ওয়েস্ট হ্যাকবেরি: লেক চার্লস, লুইসিয়ানা। প্রতিদিন ১.৩ মিলিয়ন ব্যারেল উত্তোলন ক্ষমতাসহ ২২৭ মিলিয়ন ব্যারেল স্টোরেজ ক্ষমতার ১টি টানেল।
বাইয়্যু চোকতাউ : ব্যাটন রুজ, লুইসিয়ানা। প্রতিদিন ৫,৫০,০০০ ব্যারেল উত্তোলন ক্ষমতাসহ ৭৬ মিলিয়ন ব্যারেল ক্ষমতার ১টি টানেল।
.
এছাড়া উইকস দ্বীপ: আইবেরিয়া প্যারিশ, লুইসিয়ানা টানেলটি ১৯৯৯ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। এটি ৭২ মিলিয়ন ব্যারেলের ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল। এই টানেলে একটি সিঙ্কহোল তৈরি হলে এতে প্রচুর পানি ঢুকে পড়ে। পরে সঞ্চিত তেলের ৯৮% পুনরুদ্ধারের পর টাবেলটি পরিত্যাক্ত হয়।
.
কেন এটা আলোচনায় আসছে?
২০২০ সালে সৌদি আরব তেলের দাম এতটা কমিয়ে দিয়েছিল যে, মার্কিন বিক্রেতারা তেল গ্রহীতাদের নিকট থেকে মূল্য নেয়ার পরিবর্তে উলটো অর্থ দিয়েছিল। এক বছর পর, ২০২১ সালে তারা তেলের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র তার স্ট্রাটেজিক রিজার্ভ থেকে ৫০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ছেড়ে দেয়। ঠিক এই সময়ে সৌদি আরব তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছে, যা মার্কিন রিজার্ভকে অপ্রত্যাশিত এক ধাক্কা দিয়েছে।
.
সৌদির (বাদশাহ ফয়সাল) চাপিয়ে দেয়া তেল সংকটের কারণে অ্যামেরিকা এই রিজার্ভ তৈরি করেছিল। সেটা অ্যামেরিকা ভোলেনি। আবার সেই সৌদির (প্রিন্স এমবিএস) এর চাপিয়ে দেয়া তেল ফ্লাকচুয়েশনের কারণে সেই রিজার্ভের অপমান হয়েছে। এটাও অ্যামেরিকা ভুলবে না।
✍ Mohammad Salimullah এর ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৩