আন গো ডালা গাঁথ গো মালা,
আন মাধবী মালতী অশোকমঞ্জরী, আয় তোরা আয়।
আন করবী রঙ্গন কাঞ্চন রজনীগন্ধা প্রফুল্লমল্লিকা, আয় তোরা আয়।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
রক্তকাঞ্চন
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কাঞ্চনার, কাঞ্চনক, পাকারি, রক্তপুষ্পক, লালকাঞ্চন
Common Name : Orchid tree, Camel's foot tree, Kachnar, Mountain ebony, Red flowered bauhinia, Napoleon's hat, Paper mulberry, Poor man's orchid, Variegated orchid tree.
Scientific Name : Bauhinia variegata
নানান ধরনের কাঞ্চন ফুল দেখতে পাওয়া যায়। রং, আকার, ধরনের বিবেচনায় তাদের সংখ্যা একেবারে কম নয়। তবে আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত তিন ধরনের কাঞ্চনই বেশী দেখা যায়। শ্বেতকাঞ্চন, দেবকাঞ্চন এবং রক্তকাঞ্চন। এদের মধ্যে দেবকাঞ্চন চোখে পড়ে তুলনায় কম, শ্বেতকাঞ্চন এবং রক্তকাঞ্চনের আধিক্যই বেশী। তাছাড়া হাইব্রীড কাঞ্চনও আছে।
রক্তকাঞ্চন এক প্রকারের অলঙ্কারিক বৃক্ষ। এরা ছোট আকারের কষ্ট সহিষ্ণু গাছ। গাছে কাণ্ড ও শাখা-প্রশাখা বেশ শক্ত ও খাটো। তবে মাঝে মধ্যে বেশ বড় আকারের রক্তাঞ্চনের গাছও দেখতে পাওয়া যায়।
রক্তকাঞ্চন পত্রঝরা ভারতীয় প্রজাতির গাছ। শীত ও বসন্তে রক্তকাঞ্চনের অনেক পাতা ঝরে গিয়ে গাছে বেগুনি রঙের সুগন্ধী ফুলে ভরে যায়। যখন পত্রহীন রক্তকাঞ্চন গাছ রক্তিম ফুলে ফুলে গাছ ভরে যায় তখন তা দেখতে অসাধারণ লাগে। যদিও এমন রূপ সব সময় সব গাছে দেখা যায় না। ফুটন্ত ফুলে রূপসী কাঞ্চন গাছ সবার নজর কাড়ে। শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে এক বা একাধিক ফুল ফুটতে দেখা যায়। শীতের শেষে ফুল ফোটা শুরু হয়ে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত গাছে ফুল থাকে। গাছে কয়েক মাস ধরে ফুল ফোটলেও মৌসুমের শুরুতে গাছে বেশি সংখ্যক ফুল ফোটে।
ফাল্গুনে বিকশিত
কাঞ্চন ফুল ,
ডালে ডালে পুঞ্জিত
আম্রমুকুল।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
রক্তকাঞ্চন ফুল মূলত ঘন মেজেন্টা রঙের। ফুলে বড় বড় পাঁচটি পাপড়ি থাকে। পাঁচটি পাপড়ির ঠিক মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলির চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম। মাঝের পাপড়িটির গোড়ার দিকে গাঢ় বেগুনি রঙের কারুকার্য থাকে। ফুলের মাঝে কাস্তের মতো বাঁকানো পরাগদণ্ড থাকে। রক্তকাঞ্চন ঘন মেজেন্টা রঙের হলেও এর একটি সাদা রঙের প্রকারভেদও আছে।
ফুল শেষে গাছে ফল হয়। ফল দেখতে শিমের মতো চ্যাপ্টা সবুজ। ফল পরিপক্ক হলে শুকিয়ে ফেটে বীজগুলো চার পাশে ছড়িয়ে পড়ে। বীজ ও ডাল কাটিংয়ের মাধ্যমে বংশবিস্তার করা যায়।
অদূরে ফুটেছে নেবু ফুল,
গাছ ভরেছে গোলকচাঁপায়,
কোণের গাছে ধরেছে কাঞ্চন,
কুড়চি-শাখা ফুলের তপস্যায় মহাশ্বেতা।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর -----
বসন্তের মাঝামাঝি গাছে নতুন পাতা গজায়। রক্তকাঞ্চন বা যেকোনো কাঞ্চন গাছের পাতা কিন্তু বেশ দেখতে। অন্য যেকোনো গাছের পাতার চেয়ে অনেক বেশী আলাদা হয়। পাতা গুলি হৃদয় আকৃতির মাঝারি সাইজের হয়। পাতা দেখে খুব সহজেই কাঞ্চন গাছ চেনা যায়। তবে সেটি কোন কাঞ্চন তা পাতা দেখে অনুমান করা কঠিন।
অনেকই রক্তকাঞ্চন ফুলকে দেবকাঞ্চনের সাথে মিলেয়ে ফেলে। দুটি আলাদা করার সবচেয়ে সহজ বিষয় হচ্ছে ফুল ফুটার সময়। দেবকাঞ্চন ফুটে হেমন্ত ও শীতে। এই সময় রক্তক্ঞ্চন ফুটে না। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে ফুলের পাপড়ি। দেবকাঞ্চনের পাপড়ি মুক্ত, আর রক্তকাঞ্চনের পাপড়ি একটার উপরে আরেকটি উঠে আসে।
ছবি তোলার স্থান : ঢাকা, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : বিভিন্ন সময়।
তথ্য সূত্র : অন্তর্জাল।
ছবি ও বর্ণনা : নিজ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৫:৩০