অনেক বছর আগের কথা, ২০১৪ সাল, জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখে গিয়েছিলাম গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। দিনটি ছিলো আমার বড় কন্যা সাইয়ারা নাজিবা সেহেন এর জন্ম দিন। ওর জন্ম দিন উপলক্ষ্যেই এই বেড়াতে যাওয়া। তখন সবে নতুন নতুন চালু হয়েছিলো সাফারি পার্কটি। পার্কের একটি অংশে ছিলো নানান ধরনের বিদেশী পাখিদের খাঁচা। আলাদা টিকেট কেটে সেখানে ঢুকতে হতো। হরেক রকম পাখিদের মধ্যে খুবই সুন্দর একটি উজ্জ্বল রঙের পাখি ছিলো। নাম তার সান প্যারাকিট (Sun parakeet).
সান প্যারাকিটের বাংলা কোনো নাম আছে কিনা আমরা তা জানা নেই। তবে এর বেশ কয়েকটি কমন নাম রয়েছে।
Common Name : Sun conure, Jandaya parakeet, Jenday conure, Aratinga jandaya
Binomial name : Aratinga solstitialis
সান প্যারাকিট একটি মাঝারি আকারের উজ্জ্বল রঙের তোতা জাতীয় পাখি। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় বাসিন্দা এরা। এদের প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও মেয়ে পাখি দেখতে একই রকম। এদের ঠোঁট কালো, মাথা থেকে গলা পর্যন্ত সোনালি-হলুদ, আর গলার নিচ থেকে বুক পর্যন্ত লালচে কমলা রঙের। পিঠের রং সোনালি-হলুদ আর ডানার রঙ সবুজ। লেজে আছে নীল, সোনালি-হলুদ আর সবুজ রঙের পালক।
সান প্যারাকিটেরা সাধারণত ঝাঁক বেঁধে দলবদ্ধ ভাবে বাস করে। সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ টি পাখি মিলে একটি বড় ঝাঁক তৈরি করে। প্রজননের সময় একটি পুরুষ ও একটি মেয়ে পাখি মিলে একটি একগামী জোড়া গঠন করে। একটি পূর্ণবয়ষ্ক সান প্যারাকিটের ওজন প্রায় ১১০ গ্রাম এবং প্রায় ১২ ইঞ্চি লম্বা হয়। পুরুষ আর মেয়ে পাখি দেখতে একই রকম হলেও মহিলা পাখি গুলি পুরুষের তুলনায় কিছুটা হালকা এবং সরু হয়। এরা সাধারণত ৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
বন্দিদশায় নানান কলা-কৌশল শেখার ক্ষমতা এদের রয়েছে। প্রশিক্ষকের কথাবার্তা বুঝার ক্ষমতাও এদের আছে। অর্থাৎ এরা বেশ বুদ্ধিমান পাখি। পায়ের আঙ্গুল ও নখ ব্যবহার করে কোন কিছু ধরা বা খাবার খাওয়ার ক্ষমতা এদের আছে অন্য তোতাদের মতোই। এরা প্রধানত ফল, ফুল, বেরি, বীজ, বাদাম এবং পোকামাকড় খায়। প্রজনন ঋতুতে এদের বেশি প্রোটিন গ্রহণের প্রয়োজন হয়, বাচ্চাদের লালন-পালনের সময় বেশি কার্বোহাইড্রেট এবং ডিম উৎপাদনের সময় বেশি ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
সান প্যারাকিটের ঝাঁক খাওয়ার সময় তুলনামূলকভাবে শান্ত থাকে, কিন্তু উড়ে যাওয়ার সময় বেশ শব্দ করতে থাকে। এরা এক দিনে মাইলের পর মাইল বেশ দ্রুত গতিতে উড়ে যেতে পারে ঝাঁক বেঁধে। এরা ঝাঁক ছেড়ে খুব কমই বের হয়। কখনো দল থেকে বিচ্ছিন্ন হলে উচ্চ-স্বরে চিৎকার করে যা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পরে। সেই চিৎকার শুনে তার দলের অন্য পাখিরা সাড়া দিলে সে তার দলকে খুঁজ পায়।
সান প্যারাকিটের এই প্রজাতিটি বর্তমানে বাসস্থানের অভাব এবং পোষা প্রাণীর ব্যবসায়ীদে ফাঁদে আটকে পড়ার কারণে প্রকৃতিতে আশংকাজনক ভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়ে গেছে। প্রকৃতিতে এদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে গেছে। তাই এদেরকে বর্তমানে IUCN (International Union for Conservation of Nature and Natural Resources) এর বিপন্ন প্রজাতি হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ছবি তোলার স্থান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, গাজীপুর, বাংলাদেশ।
ছবি তোলার তারিখ : ১৪ই জানুয়ারি, ২০১৪ খ্রীষ্টাব্দ্।
তথ্য সূত্র : অন্তর্জাল।
ছবি ও বর্ণনা : নিজ।
=================================================================
সিরিজের পুরনো পর্বগুলি দেখতে -
পাখ-পাখালি - ০১, পাখ-পাখালি - ০২, পাখ-পাখালি - ০৩, পাখ-পাখালি - ০৪, পাখ-পাখালি - ০৫
পাখ-পাখালি - ০৬, পাখ-পাখালি - ০৭, পাখ-পাখালি - ০৮, পাখ-পাখালি - ০৯ পাখ-পাখালি - ১০
পাখ-পাখালি - ১১, পাখ-পাখালি - ১২, পাখ-পাখালি - ১৩, পাখ-পাখালি - ১৪, পাখ-পাখালি - ১৫
পাখ-পাখালি - ১৬, পাখ-পাখালি - ১৭, পাখ-পাখালি - ১৮, পাখ-পাখালি - ১৯, পাখ-পাখালি - ২০
পাখ-পাখালি - ২১, পাখ-পাখালি - ২২, পাখ-পাখালি - ২৩, পাখ-পাখালি - ২৪, পাখ-পাখালি - ২৫
পাখ-পাখালি - ২৬