somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের পহেলা বৈশাখ! এবার ১৪৩২।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাঙলা বা ইংরেজি যেকোন নববর্ষই আমাদের জন্য আনন্দের ইংরেজি অবশ্য বছরের শেষ রাতটা সবাই অনেক আনন্দ করে। সে হিসেবে পহেলা বৈশাখের আনন্দ সাধারণতঃ দিনের বেলায়।

যদিও এবার জমকালো বৈশাখী লেজার নাইট শো দেখা গেল! তবে সেখানে এক শাপলা ছাড়া সবই রাজনীতি মনে হলো। বৈশাখ কি রাজনীতি? ভাবছি…

সাধারণতঃ আমাদের বাসায় ছোটবেলা থেকেই ২৬শে মার্চ বা পহেলা বৈশাখ, এরকম কোন বিশেষ দিনে মোটের উপর দিবসমাফিক খানাপিনা চলে কম বেশি। এই যেমন ২৬শে মার্চ মোরগ পোলাও বা কোন বিশেষ খাবার, পহেলা বৈশাখে ভর্তা, পারলে ইলিশ, তবে পান্তা ভাত ভালো লাগে না সেই অর্থে। তাই বাসায় চলে না।



তবে ঢাকায় আসবার আগে পহেলা বৈশাখ কেন্দ্রিক মেলায় তেমন যাওয়া হতো না। বাসার কাছে ছিল এক দরগা, ঔরস উপলক্ষে বিশাল এক মেলা বসে সপ্তাহব্যাপী। সেটাই আমাদের এলাকাবাসীর, ছোট-বড় সবারই বিশেষ আনন্দের উৎসব। এমনকি সেই মেলা থেকে মুড়ি, মুড়কি, মোয়া, বাতাসা এরকম আরো অনেক কিছু কিনে বিবাহিত মেয়েদের বাড়িতে তত্ত্বও পাঠানো হয়। রেওয়াজ বলে কথা!
তবে রোকেয়া হলে আসার পর থেকে এই দিনে চিংড়ির মাথা ভাজা খাওয়া আমার রীতিমত প্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে, এটাই আমার বৈশাখ!
আরো ভাল লাগে যদি কাঁচা আমের কোন জুস বা মাখানি যদি খাওয়া যায়! তা সবসময় হয় না, কারণ এ সময়ে আম তেমন বড় হয় না। এরকম একটা দিবসের ছুতো পেলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রমরমা, লোকে লোকারণ্য। আমরা হলে থাকতে বলতাম বহিরাগতদের ভিড় লেগেছে, ক্যাম্পাসে চলাই দায়!

এখন নিজেরাই বহিরাগত! জানি না, এখনকার ক্যাম্পাসের মেয়েগুলো আমাদের দেখে এরকম বলে কিনা! কিছু কিছু বখাটে পোলাপান বিকেল থেকে সন্ধ্যা রাত পর্যন্ত ঝামেলা করার চেষ্টা করে, হুমড়ি খেয়ে পড়ে পেছন থেকে। তাই আমরা যা বেড়ানোর সকাল দেখে দুপুর পর্যন্তুই।

এবার ছোট ছেলেটাকে নিয়ে বেরোলাম। বাসা থেকে বললাম, মেলা দেখবো, কুলফি খাব, খেলনা কিনবো, তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠো। সিএনজি পিজির সামনে আসতেই ছোট ছোট বাহারী আয়োজনের জটলা দেখে সে তো তখনই নেমে পড়ে, না জানি কি মিস হয়ে যাচ্ছে! আমি বললাম, একটু ধৈর্য ধরো বাবা। এরকম আরো অনেক পাবে চারুকলার সামনে।

একটু পর চারুকলার ভিতরে ঢুকি। তার আগেই তাকে কুলফি খাওয়াতে হয়, আমি সুযোগ পেলেই ঠান্ডা আখের শরবত খাই, আজকেও খেলাম। খুবই প্রিয় একটা ড্রিংকস, এটা। তারপর রাকিন একটা বাঁশি কিনলো। এরপর গেলাম ফ্যাসিস্ট দেখতে, দেখলাম, ছবি তুললাম, শান্তির পায়রা দেখলাম, পালকি দেখলাম, বাঘ দেখলাম! পটচিত্র দেখলাম। পুরো চারুকলা ছেলেকে নিয়ে ঘুরলাম। অনেক স্মৃতি, এই চারুকলা বেড়ানো নিয়ে, একসময়ে নিয়মিত চারুকলার গেটের সামনে কাঁঠাল পাতায় খিচুড়ি খেতে আসতাম। এরপর পানি ছাড়া পুকুরটা সবসময়েই আমার জন্য একটা বিস্ময়, এবার ছেলেটাকে দেখালাম! ছাত্ররা নানান কিছু কাঠ দিয়ে, অন্যান্য কিছু দিয়ে বানিয়ে রেখেছে, রাকিনকে সব ঘুরে ঘুরে দেখালাম!



একসময়ে কাঁঠালের মুচি খাবার চেষ্টা করেছি এখানে। এবারো দেখি ছোট ছোট কাঁঠাল ঝুলে আছে অনেকগুলো গাছে। রাকিনকে বললাম, দেখ দেখ, বেবি কাঁঠাল। হাত দিয়ে ধরে দেখ। সে হাত দিয়ে ধরে, আর বলে, ওর আম্মু কই? আমি বললাম, গাছই ওর আম্মু।



আরো বললাম, এখানে ছাত্রছাত্রিরা ড্রয়ং করা শিখে, নানারকম গড়ন,মুখচিত্র তৈরী করা শিখে। তাকে জিগ্যাস করলাম, তুমি কি বড় হয়ে এগুলো তৈরী করা শিখতে চাও? সে ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তার ওস্তাদের মতোই ওস্তাদ হবে সে।

বাসায় এসে অবশ্য ইউটিউবে আনন্দ শোভাযাত্রা দেখে জিজ্ঞ্যেস করে, এতো বড় বড় বাঘ, পাখি, ওরা তৈরী করলো ক্যামনে?! আমি মোটামুটি কিছু একটা ব্যাখ্যা করে দিলাম, ইউটিউবে গত কয়দিন ওদের এই প্রস্তুতিগুলো দেখছিলাম। এরপর আবার নাগরদোলায় চড়া, ছোট খেলনা ট্রেনে চড়া, তারপর টানা গাড়ি চালানো, মেলায় যেগুলো পাওয়া যায়। প্রতিটা মুহুর্তই একেকটা আনন্দ পাবার মুহূর্ত! রাকিনের জন্য এখানকার অনেক কিছুই নতুন, কারণ এবারই প্রথম সে বৈশাখী মেলায় এসেছে।



এরপর একতারা কিনলো, কাঠের পিঁড়ি বেলন কিনলো। আমরা ছোটবেলায় মেলা থেকে কাঠের ড্রেসিং টেবিল, আলমারী, পুতুল এসব কিনতাম। কাঁচের একটা রকেট কিনতাম, এটা ঢাকা শহরে কখনো দেখিনি। রঙিন জরি মাখানো পানি সেই কাঁচের লম্বা চিকন টেস্টটিউবের মতো, তার ভিতরে থাকতো। একটা ক্যাথেটার এর মতো থাকতো। ক্যাথেটার হালকা, নলটা ওলট পালোট করলেই উপরে ধাবমান হতো। জরি পানি নিচের দিকে চলে আসতো। খুবই ভাল লাগতো এই টিউবটাকে। প্রতি মেলায় একটা কেনা চাই-ই চাই।
কিন্তু ঢাকায় একবারো এটা দেখিনি!



ভেবেছি একটা কুমড়ো বা কাঁঠালের মাটির ব্যাংক কিনবো। পাইনি।





যাক, অনেক কিছু দেখে এবার বাড়ি ফেরার পালা। বাসায় এসে গোসল করে ইলিশ, ভর্তা দিয়ে গরম ভাত খেয়ে ঘুম। সন্ধ্যায় উঠে সেই ইউটিউবে দেখি বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে! কি চমৎকার লেজার শো, নাকি ড্রোন লেজার শো! এক্কেবারে তোফা!
তবে লেজার শো তে বৈশাখী আমেজ কম পেলাম! তবুও কাফি!



জয়তু ইউটিউব, তুমি না থাকলে সারা বিশ্ব এতো বিমানের টিকেট কেটে দেখা হতো না!
তুমি না থাকলে অনেক গল্প, ইতিহাস আমার জানা হতো না!
তুমি না থাকলে বাঙালীর ডিজিটাল রসিকতা, ট্রল কি করে হতো!
তুমি না থাকলে এতো বাক স্বাধীনতা, সৃজনশীলতা,
নিজের সুন্দর মুখশ্রী, কেমন করে দেখাতো!


সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:১৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:০৪

বাংলার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতী...

ময়মনসিংহ গীতিকা প্রকৃতপক্ষে একক কোনো কাহিনী নির্ভর বই না। 'ময়মনসিংহ গীতিকা' হচ্ছে কবিতা বা গানের সংকলন, যা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের মানুষের মুখেমুখে প্রাচীন কাল থেকে ভিন্নভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাটারি অটো রিক্সা বন্ধ করা কী খুব কঠিন কাজ?

লিখেছেন চোরাবালি-, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৪৮



বাংলাদেশের জন্য বিষফোঁড় হল এখন অটো রিক্সা, স্বল্প পরিশ্রমে সহজ আয়ের মাধ্যম হিসাবে খুবই জনপ্রিয় একটা পেশা। স্বল্প ভাড়ার জন্য অনেক মানুষ এখন পায়ে হাঁটা ভুলেই গেছে আর হাঁটার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জিয়াউর রহমান

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৪



চাইলে জিয়াউর রহমান ঢাকায় ঝাঁ চকচকে দালান কোঠা রাস্তা বানিয়ে সবার চোখ ধাঁধিয়ে উন্নয়ন করার বাহাদুরি করতে পারতেন। সেটা না করে তিনি ঘুরতে লাগলেন সারা দেশে, গ্রামে গঞ্জে গিয়ে খাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জবাবদিহিতার অনন্য দৃষ্টান্ত

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৫

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে। সেসব পোস্টে তার বিরুদ্ধে বিপুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি যাত্রা করবেন নাকি রাজনীতি করবেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১১


ইদানীং দেশে রাজনৈতিক দল গজানোর হার দেখলে মনে হয়, দেশের মাটিতে এখন ধান নয়, গজায় দল। ভোট এলেই বুঝি এই দলগুলো দুলে ওঠে, আর না এলেই পড়ে থাকে ফাইলের পাতায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×