কালিকচ্ছ কুমারপাড়ার কিষাণ কুটিরের কর্ণধার কমল কুমারের কনিষ্ঠ কাকু কেষ্ট। কেউ কেউ কেষ্টরে কবি কেষ্ট' করেও কয়। কিছুকাল কবিতায় কাব্যেও কির্তনে কাজ করেছে কেষ্ট। কেষ্টর কণ্ঠে কিনা কঠিন কারুকাজ। “কিন্তু কপাল কুন্ডলা কেষ্ট”। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে কণ্ঠরুদ্ধ কেষ্টর।
উপরের গদ্যাংশের প্রতিটি শব্দের শুরু হয়েছে ক বর্ণটি দিয়ে। এমন অনেক আছে আমাদের জানা। এমন ছোটখাটো লেখা আপনার আমার প্রায় সকলের পক্ষেই ধৈর্য আর সময় ব্যয় করলে তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু যদি বলি ১০ পাতার একটি গদ্যাংশ লিখুন এমনি করে। কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন ১০ পাতা নয় বরং অর্ধশত পাতার উপন্যাস লিখেছেন একজন শুধু ক দিয়ে শুরু শুব্দ ব্যবহার করে। আরো অবাক হবেন এটা যেনে যে তিনি ১টি নয়, বরং ৩টি উপন্যাস তিনি লিখেন এইভাবে।
সরদার মোঃ নাজমুল কবির ইকবাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই লেখক ইসমোনাক ছদ্মনামে লিখেছেন এই ৩টি উপন্যাস। তিনটি বইতে মোট ২৭,০০০ শব্দ রয়েছে, যার প্রতিটি শব্দ শুরু হয়েছে ক বর্ণ দিয়ে। উপন্যাসের শেষে প্রধান চরিত্রের মৃত্যু হবার শব্দটি ‘ক’ দিয়ে মেলাতে না পরে শেষ পর্যন্ত কুপোকাত শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
বইটি এখনো আমার পড়ার সুযোগ যদি, ফলে এর ভালো মন্দ কিছুই বলতে পারছি না। কাহিনী সম্পর্কে কোনোই ধারনা না থাকলেও শুধ ক দিয়ে শুরু শব্দ ব্যবহার করে এমন সাহিত্য রচনা বাংলায় এই প্রথম। এই ধরনের সাহিত্যকে বলে টটোগ্রাম। বাংলা সাহিত্যে টটোগ্রাম উপন্যাসের এটাই প্রথম প্রচেষ্টা।
২০১০ সালে প্রকাশিত হয় ইসমোনাকের প্রথম বই।
বইয়ের নাম : কেষ্ট কবির কষ্টগুলো
প্রথম প্রকাশ : ২০১০ ইং
প্রকাশক : প্রজন্ম পাবলিকেশন
শব্দ সংখ্যা : ৭,০০০ টি
বইটির প্রথম কয়েক পতার নমুনা-
কালিকচ্ছ কুমারপাড়ার কিষাণ কুটিরের কর্ণধার কমল কুমারের কনিষ্ঠ কাকু কেষ্ট। কেউ কেউ কেষ্টরে কবি কেষ্ট' করেও কয়। কিছুকাল কবিতায় কাব্যেও কির্তনে কাজ করেছে কেষ্ট। কেষ্টর কণ্ঠে কিনা কঠিন কারুকাজ। “কিন্তু কপাল কুন্ডলা কেষ্ট”। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে কণ্ঠরুদ্ধ কেষ্টর। কালিকচ্ছের কাজী কটেজের কাছে কামরাঙ্গিতলায় কুঁড়ের কুটিরে কোষ্ঠকাঠিন্যে কোনক্রমে কাল কাটায় কেষ্ট। কিছুকাল কাজীর কটেজে কাজ করেছিল, কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে কাজী কটেজেও কাজ করছেনা কিছুকাল। কেমনেইবা করবে। কাজ করাতাে কেষ্টর কাছে কঠিন। কঠিন কাজ কেষ্ট করবে কেমন করে। কাজ কাম করেনা, কাগজ কড়িও কামাই করেনা, কান্তু কড়ি কামাইনা করলে, কাম কাজ করলে কষ্টতাে করবেই। কেষ্টর কেবলই কষ্ট কেবলই কষ্ট। কত কিযে কষ্ট কেষ্টর, কেমনে কমু কষ্টের কথা। কেষ্টর কাকীমা কুসুম কলি কইল “কেষ্টরে, কষ্টের কথা কেউরে কইসনা। কইয়া কাম কি? কইলে কেবল করুণাই করবে। কটাক্ষ করে কথা কইবে।” কাকীমার কথায় কেষ্ট কষ্টেই কাল কাটাচ্ছে। কিন্তু কাউকে কয়না। কষ্ট করে, কেবলই কষ্ট করে “কষ্ট করাটাই কেবল কেষ্টর কাজ।"
কত কিযে কষ্ট কপাল কুন্ডলা কেষ্টর। কেমন করে কমু কেষ্টর কষ্টের কথা। কড়ির কষ্ট, কাগজের কষ্ট, কুঁড়ে কুটিরে কাঁথা কাপড়ের কষ্ট, কাম কাজ করার কষ্ট, কলমের কষ্ট, কালাে কালাে কষ্ট, কমলা কালার কষ্ট, কেষ্টর কেবলই কষ্ট। কমল কান্তের কনিষ্ট কুমারী কন্যা কমলারে কাছের করে করে কাবিন করে কালনা কাটানাের কষ্ট। কেষ্টর কেবল কষ্ট, কেবলই কষ্ট। কমল কান্তের কন্যা কংকনাকেও কইছিল, কংকনারে কাবিন করে, কাছের করে কামরাঙ্গিতলার কুঁড়ের কুটিরে কাল কাটাবে। কিন্তু কংকনা কেষ্টরে কাবিন করে কুঁড়ের কুটিরে কাল কাটায়নি। কেষ্টর কথায় কর্ণপাত করেনি। কিন্তু কেষ্টর কলিজার কোমল কুঠরির কঠিন কঠিন কথাগুলােকে কলঙ্কিত করেছে।
কিন্তু কেষ্ট! কষ্টের কথাগুলাে কারে কইব, কেমন করে কইব, কীভাবে কইব, কারে কইলে কেষ্টর কষ্ট কমবে?
কষ্টের কথা কি কেউ কর্ণপাত করে? করেনা। কেষ্টর কষ্টের কথা কেউ কর্ণপাত করবেনা। কি করবে কেষ্ট? কেমন করে কাল কাটাবে? কেষ্টর কাকিমা কুসুমকলি কালিকচ্ছের কয়েকজন কবিকে কইল; কবিগণ, কয়েকটা কথা কই।।
কবিগণ কইলেন; কও কুসুমকলি কও। কী কথা কইবা কও! কুসুমকলি কয়: কে কোথায়, কখন, কারাে কাছে কথাগুলাে কইছিল কিনা কমু কেমনে, কিন্তু কমু, কথাগুলাে কমু, কুসুম কোমল করে কুকিল কণ্ঠে কমু। কঠিন কঠোর কষ্টের করে কর্ণপাত করুন। কেননা কথাগুলাে কাজের কথা। কঠোর কঠিন কষ্টের কথা। কর্ণপাত করুণ, কবিগণ কর্ণপাত করুন। কাহিনীটি কবিগুরু কায়কোবাদের কওয়া কেষ্টর কঠিন কষ্টের কাহিনী। কবি কেষ্টর ক্রান্তিকালের কিছু করুণ কাব্য কথা।
কেউ কেউ কইবেন: কওতাে, কওতাে, কেমনতর করুণ কাব্য কথা। কেউ কেউ কইবেন, কাব্য কথা কীসের? কাব্য কথা কইয়া কাম কী? কিন্তু কবিগুরু কায়কোবাদ কী কয় কনতাে? কেমনেই বা কইবেন? কানেতাে কোন কাজ করেনা। কানে কাজ করলে কবিগুরু কী কয় কইতেন কিংবা কর্ণপাত করতেন।
কবিগণ কহে: কবিগুরু কায়কোবাদ কী কয়? কবিগুরু কায়কোবাদ কয় কৃপা করাে করুণাময়ী কৃপা করাে, করুণা করাে কঠিন কালের কর্তা। কেষ্টরে কৃপা করাে। কতনা করুন কণ্ঠে কেষ্ট কবিতা কইত। কির্তণ কইত। কিন্তু কোথায়! কোথায় কেষ্টর কষ্টের কবিতা। কোথায় কেষ্টর করুণ কির্তণ। কোথায়?
কোথায়? কৃপা করাে করুণাময়ী করুণা করাে। কেষ্টরে কৃপা করাে কেননা কেষ্ট কঠিন কপালকুণ্ডলা। কেষ্টরে কৃপা করাে। কিন্তু কপাল, কপালের কষ্টের কথা কেপারে কইতে?
কবি কালিপদ কয়: কবিগুরু কায়কোবাদের কথাই কন। কবিগণ কইলেন: কী কইবেন কবিগুরু কায়কোবাদের কপালের
কথা?
কালিপদ কয়: কেমন কপাল কবির, কয়েকটা কাঠের কারখানা, কয়টা কাপড়ের কল, কিন্তু...
কবিগণ কহে: কিন্তু কী?
কালিপদ কয়: কইতেছি।
কবিগণ কয়: কও কও; কবিগুরু কায়কোবাদের কথা কও।
লেখক ঠিক এভাবেই লিখেছেন ৭,০০০ শব্দের এই বইটি। সুযোগ হলে পড়ে দেখার ইচ্ছে রইলো আমার। আপনাদের কারো কাছে বইটির পিডিএফ কপি থাকলে শেয়ার করতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৪৯