তোমারে পাছে সহজে বুঝি
তাই কি এত লীলার ছল,
বাহিরে যবে হাসির ছটা
ভিতরে থাকে আঁখির জল।
বুঝি গো আমি বুঝি গো তব
ছলনা,
যে কথা তুমি বলিতে চাও
সে কথা তুমি বল না।
তোমারে পাছে সহজে ধরি
কিছুরই তব কিনারা নাই--
দশের দলে টানি গো পাছে
বিরূপ তুমি, বিমুখ তাই।
বুঝি গো আমি বুঝি গো তব
ছলনা,
যে পথে তুমি চলিতে চাও
সে পথে তুমি চল না।
সবার চেয়ে অধিক চাহ
তাই কি তুমি ফিরিয়া যাও--
হেলার ভরে খেলার মতো
ভিক্ষাঝুলি ভাসায়ে দাও।
বুঝেছি আমি বুঝেছি তব
ছলনা,
সবার যাহে তৃপ্তি হল
তোমার তাহে হল না।
অনেকেই জানেন ফুল আমার খুবই প্রিয়। ফুল কার না প্রিয়! সকলেই ফুল ভালোবাসে। আমি ফুলের ছবি তুলতে পছন্দ করি। ফুলের নাম জানতে চেষ্টা কবরি। এইটুকুই হয়তো ব্যাতিক্রম। আমি যেমনি ভাবে ফুল ভারোবাসি তেমনি ভাবে কবিতাকেও ভালোবাসি এটা বলা যাবে না। বলা যায় আমার সবচেয়ে কম পছন্দের বিষয় হচ্ছে এই কবিতা। কবিতা আমি একেবারেই পড়ি না, তা না। আমি কবিতা পড়ি। ইদানিং আগের চেয়ে বেশীই পড়ছি। সম্ভবতো বয়স বাড়ার সাথে সাথে পড়ার রুচি পালটাচ্ছে। বেশীরভাগ সময় কবিতার অর্থ বুঝতে পারি না বলে কবিতা এড়িয়ে চলি। বিশেষ করে আধুনিক কবিতা। মনে হয় যেনো কঠিন কিছু শব্দের এলোমেলো সমাবেশ, যে যার মতো যেখানে খুশী বসে আছে অর্থের পরোয়া না করেই। আমার পছন্দ কঠিন শব্দের সহজ-সরল কবিতা। আমার পছন্দ নরীর রূপ বর্ননার কবিতা, আমার পছন্দ ফুল-পাখি-প্রকৃতির কবিতা, আমার প্রছন্দ প্রেমের কবিতা, আমার পছন্দ .... কঠিন শব্দে সরল অর্থের কবিতা।
আজ আমার পছন্দের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঁচ খানি কবিতা রইলো।
-২-
কেবল তব মুখের পানে
চাহিয়া,
বাহির হনু তিমির-রাতে
তরণীখানি বাহিয়া।
অরুণ আজি উঠেছে--
আশোক আজি ফুটেছে--
না যদি উঠে,না যদি ফুটে,
তবুও আমি চলিব ছুটে
তোমার মুখে চাহিয়া।
নয়নপাতে ডেকেছ মোরে
নীরবে।
হৃদয় মোর নিমেষ-মাঝে
উঠেছে ভরি গরবে।
শঙ্খ তব বাজিল--
সোনার তরী সাজিল--
না যদি বাজে, না যদি সাজে,
গরব যদি টুটে গো লাজে
চলিব তবু নীরবে।
কথাটি আমি শুধাব নাকো
তোমারে।
দাঁড়াব নাকো ক্ষণেক-তরে
দ্বিধার ভরে দুয়ারে।
বাতাসে পাল ফুলিছে--
পতাকা আজি দুলিছে--
না যদি ফুলে, না যদি দুলে,
তরণী যদি না লাগে কূলে
শুধাব নাকো তোমারে।
-৩-
আমি যারে ভালোবাসি সে ছিল এই গাঁয়ে,
বাঁকা পথের ডাহিন পাশে, ভাঙা ঘাটের বাঁয়ে।
কে জানে এই গ্রাম,
কে জানে এর নাম,
খেতের ধারে মাঠের পারে বনের ঘন ছায়ে--
শুধু আমার হৃদয় জানে সে ছিল এই গাঁয়ে।
বেণুশাখারা আড়াল দিয়ে চেয়ে আকাশ-পানে
কত সাঁঝের চাঁদ-ওঠা সে দেখেছে এইখানে।
কত আষাঢ় মাসে
ভিজে মাটির বাসে
বাদলা হাওয়া বয়ে গেছে তাদের কাঁচা ধানে।
সে-সব ঘনঘটার দিনে সে ছিল এইখানে।
এই দিঘি, ওই আমের বাগান, ওই-যে শিবালয়,
এই আঙিনা ডাক-নামে তার জানে পরিচয়।
এই পুকুরে তারি,
সাঁতার-কাটা বারি,
ঘাটের পথরেখা তারি চরণ-লেখা-ময়।
এই গাঁয়ে সে ছিল কে সেই জানে পরিচয়।
এই যাহারা কলস নিয়ে দাঁড়ায় ঘাটে আসি
এরা সবাই দেখেছিল তারি মুখের হাসি।
কুশল পুছি তারে
দাঁড়াত তার দ্বারে
লাঙল কাঁধে চলছে মাঠে ওই-যে প্রাচীন চাষি।
সে ছিল এই গাঁয়ে আমি যারে ভালোবাসি।
পালের তরী কত-যে যায় বহি দখিনবায়ে,
দূর প্রবাসের পথিক এসে বসে বকুলছায়ে।
পারের যাত্রিদলে
খেয়ার ঘাটে চলে,
কেউ গো চেয়ে দেখে না ওই ভাঙা ঘাটের বাঁয়ে।
আমি যারে ভালোবাসি সে ছিল এই গাঁয়ে।
-৪-
পথের পথিক করেছ আমায়
সেই ভালো ওগো, সেই ভালো।
আলেয়া জ্বালালে প্রান্তরভালে
সেই আলো মোর সেই আলো।
ঘাটে বাঁধা ছিল খেয়াতরী,
তাও কি ডুবালে ছল করি।
সাঁতারিয়া পার হব বহি ভার
সেই ভালো মোর সেই ভালো।
ঝড়ের মুখে যে ফেলেছ আমায়
সেই ভালো ওগো, সেই ভালো।
সব সুখজালে বজ্র জ্বালালে
সেই আলো মোর সেই আলো।
সাথি যে আছিল নিলে কাড়ি--
কী ভয় লাগালে, গেল ছাড়ি--
একাকীর পথে চলিব জগতে
সেই ভালো মোর সেই ভালো।
কোনো মান তুমি রাখ নি আমার
সেই ভালো ওগো, সেই ভালো।
হৃদয়ের তলে যে আগুন জ্বলে
সেই আলো মোর সেই আলো।
পাথেয় যে ক'টি ছিল কড়ি
পথে খসি কবে গেছে পড়ি,
শুধু নিজবল আছে সম্বল
সেই ভালো মোর সেই ভালো।
-৫-
কালকে রাতে মেঘের গরজনে
রিমিঝিমি-বাদল-বরিষনে
ভাবিতেছিলাম একা একা--
স্বপ্ন যদি যায় রে দেখা
আসে যেন তাহার মূর্তি ধ'রে
বাদলা রাতে আধেক ঘুমঘোরে।
মাঠে মাঠে বাতাস ফিরে মাতি,
বৃথা স্বপ্নে কাটল সারা রাতি।
হায় রে, সত্য কঠিন ভারী,
ইচ্ছামত গড়তে নারি--
স্বপ্ন সেও চলে আপন মতে,
আমি চলি আমার শূন্য পথে।
কালকে ছিল এমন ঘন রাত,
আকুল ধারে এমন বারিপাত,
মিথ্যা যদি মধুর রূপে
আসত কাছে চুপে চুপে
তাহা হলে কাহার হত ক্ষতি
স্বপ্ন যদি ধরত সে মূরতি?
পাঁচ খানি কবিতা - ০১
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:২৫