বইয়ের নাম : কুহক
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
লেখার ধরন : বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারী ১৯৯১
প্রকাশক : প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৬২ টি
সতর্কীকরণ : কাহিনী সংক্ষেপটি স্পয়লার দোষে দুষ্ট
কাহিনী সংক্ষেপ :
নিশানাথ বাবুর সাইনাসের সমস্যার জন্য মাথা ব্যথা হয় বলে ডাক্তার পাঠিয়েছে মাথার এক্সরে করার জন্য। এক্সরে করার সময় হঠাৎ করেই মেশিনে সামান্য সমস্যার কারণে মেশিনটি আর বন্ধ না হওয়ার ফলে প্রচুর পরিমানে রশ্মি নিশানাথ সাহেবের মাথার ভিতর দিয়ে চলে যায়। ডায়গনিস্ট সেন্টারের এক্সরের লোকেরা খুব ভয় পেয়ে যায়। কিন্তু দেখা যায় বৃদ্ধ নিশানাথের তেমন কিছুই হয় নি। তিনি একটি রিক্সা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এর মধ্যেই বিচিত্র কোন উপায়ে নিশানাথ বাবু রিক্সাওয়ালার মনের সব কথা বুঝতে পেরে যেতে থাকেন।
নিশানাথ বাবু থাকেন তার পুরনো ছাত্র মহসিন সাহেবের বাড়িতে। মহসিন সাহেব প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, তিন ছেলে মেয়ের পিতা। নিশানাথ বাবু এখন মহসিন সাহেবের ছেলে মেয়েদের পড়ান। আজ পড়ানোর সময় তিনি লক্ষ্য করলেন তিনি অনায়াসেই ছাত্রের মস্তিষ্কের ভিতরে ঢুকে যেতে পারছেন। যে টেনশিলেশান গুলি ছাত্র পারছিলো না, সেগুলি তিনি সহজেই মস্তিষ্কের ভিতরে থেকে শিখিয়ে দিলেন, কি করে একটার পর একটা শব্দ বসাতে হবে সেটা ধরিয়ে দিতেই ছাত্র টপাটপ সব বুঝে গেলো।
রাতে নিশানাথ বাবুর শরীর আবার খারাপ হয়ে গেলো, জ্বর আর প্রচন্ড মাথা ব্যথা। খবর পেয়ে মহসিনের স্ত্রী দীপা ছুটে আসেন নিশানাথের রুমে। ডাক্তার ডেকে আনান। ডাক্তার আসতে আসতে নিশানাথ বাবু আবার সুস্থ হয়ে যান। দ্বীপা নিশানাথকে চাচা বলে ডাকে। নিশানাথ বাবুও দ্বীপাকে খুবই স্নেহ করেন। তিনি দ্বীপাকে জানালেন- তিনি মানুষের মস্তিষ্কের ভিতরে ঢুকে যেতে পারেন। দ্বীপা ভাবলো এগুলি অসুস্থতার কারণে তিনি বলছেন।
পরদিন সকালে নিশানাথ দেখলেন তার মাথার সমস্ত চুল পরে গেছে। উপরের মাড়ির দুটি দাঁতও পরে যায়। তিনি তার দাঁতের এক্সরে করানোর জন্য আবার সেই ডায়গনিস্ট সেন্টারে যান। সেখানে তিনি ডাক্তারের মস্তিষ্কের ভিতরে ঢুকে ডাক্তারের ভিতরের লোভ আর কুটিলতা গুলি মুছে দেন। ডাক্তার বুঝতে পারেন তার ভিতরে কিছু একটা হয়েছে, নিশানাথ বাবুই যে সেটা করে দিয়ে গেছেন সেটাও তিনি বুঝতে পারেন।
মহসিন আর দ্বীপার সবচেয়ে ছোট মেয়ে আলো জন্ম থেকেই বোবা কালা। কোনো ভাবেই তাকে অক্ষর শেখানো যায়নি, সাইন ল্যাঙ্গুয়েজও তেমন শেখানো যায়নি। রাতে মহসিন সাহেবকে দেখলে সে ভয়ে অস্থিররহয়ে যায়। শুধু দ্বীপাই তাকে সামলাতে পারে। তাই বাধ্য হয়ে দ্বীপা স্বামীকে ছেড়ে রাতে মেয়েকে নিয়ে আলাদা ঘরে থাকেন। একদিন রাতে আলো ঘুম থেকে উঠে মাকে পাশে না পেয়ে প্রচন্ড চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। ঠিক তখন নিশানাথ আলোর মস্তিষ্কের ভেতরে ঢুকে তাকে শান্তনা দেন। নতুন এই অভিজ্ঞাতয় আলো অবাক হয়। পরে নিশানাথ অতি সহজেই আলোকে অক্ষর চেনান, পড়তে সেখান মস্তিষ্কের ভেতরে থেকে।
কদিনের মধ্যেই নিশানাথ আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার উপরের মাড়ির সবগুলি দাঁত পরে যায়। শরীরে পানি এসে শরীর ফুলে যায়। হাত পায়ের নখগুলি কালচে নীল হয়ে মরে যেতে শুরু করে। ডাক্তার তাকে হাসপাতালে ভর্তী হতে বলেন। কিন্তু তিনি দ্বীপাকে বলেন আর কয়েকটা দিনই তিনি বাঁচবেন, তাই তিনি হাসপাতালে না গিয়ে নিজের ঘরে থাকতে চান। এদিকে দ্বীপা তার ডাক্তার ছোট বোনকে খবর দেন নিশানাথ বাবুকে দেখে যেতে। নিশানাথ বাবু যখন তার ক্ষমতার কথা দ্বীপার বোনকে বলেন তখন সে তা বিশ্বাস করেনা। পরে হঠাৎ করেই যখন নিশানাথ মেয়েটির ব্যাগে থাকা গোপন চিঠির কথা বলে দেন তখন মেয়েটি অবাক হয়ে যায়।
দ্বীপার বোন মহসিন সাহেবকে নিশানাথের মস্তিষ্কের ভিতরে ঢুকে যাওয়ার ক্ষমতার কথা বলে, কিন্তু মহসিন সাহেব তা বিশ্বাস করেন না। পরে মহসিন সাহেব নিশানাথকে দেখতে গেলে নিশানাথ মহসিনের মস্তিষ্কে ঢুকে দেখতে পান মহসিন তার স্ত্রী দ্বীপাকে ইস্ত্রীর শটসার্কিট করিয়ে হত্যা করার পরিকল্পনা করছেন, কারণ মহসিন অন্য আরেকটি মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছে। নিশানাথ সাহেব প্রিয় ছাত্রের এমন নীচতা দেখে অবাক হয়ে যান। পরে তিনি দ্বীপাকে ডেকে তাদের বাসার সমস্ত ইস্ত্রী চেয়ে নেন নিজের কাছে আর দ্বীপাকে বলে দেন ভুলেও কোন কাপড় স্ত্রী না করতে।
রাতে মহসিন সাহেব বাড়িতে ফিরলে দ্বীপা নিশানাথের পাগলামির কথা জানান। নিশানাথ সমস্ত ইস্ত্রী নিয়ে নিয়েছেন শুনেই মহসিন বুঝতে পারে আসলে নিশানাথ মস্তিষ্কে ঢুকতে পারেন। তার মস্তিষ্কে ঢুকে নিশানাত ইস্ত্রীর বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন। তাই মহসিন ঠিক করে আজ রাতেই তিনি নিশানাথকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করবেন। গভীর রাতে যখন মহসিন নিসা নাথের ঘরের দিকে যাচ্ছেন তখন নিশানাথ বাবু ঢুকে গেছেন মহসিনের মস্তিষ্কে। নিশানাথ বাবু বুঝতে পারেন তার সময় বেশী নেই। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে মহসিনের মম্তিষ্ক থেকে ঐ মেয়েটির সমস্ত স্মৃতি মুছে দিয়ে দ্বীপার জন্য ভালোবাসা ভরে দিতে হবে। নিশানাথ মহসিনের মস্তিষ্ক থেকে ঐ মেয়েটির স্মৃতি মুছতে শুরু করেন, অন্য দিকে মহসিন সাহেব ঢুকে পরেন নিশানাথের ঘরে। বালিশ চাপা দিয়ে ধরেন নিশানাথের মুখে। নিশানাথ বুঝতে পারেন মহসানের মাথা থেকে ঐ মেয়েটির স্মৃতির সাথে সাথে এই হত্যা কান্ডের স্মৃতিও মুছে দিতে হবে।
----- সমাপ্ত -----
=======================================================================
আমার লেখা হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য কাহিনী সংক্ষেপ সমূহ
আমার লেখা অন্যান্য কাহিনী সংক্ষেপ সমূহ: আমার লেখা অন্যান্য কাহিনী সংক্ষেপ সমূহ:
ভয়ংকর সুন্দর (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মিশর রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
খালি জাহাজের রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
ভূপাল রহস্য (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সবুজ দ্বীপের রাজা (কাকাবাবু) - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
তিতাস একটি নদীর নাম - অদ্বৈত মল্লবর্মণ
ফার ফ্রম দ্য ম্যাডিং ক্রাউড - টমাজ হার্ডি
কালো বিড়াল - খসরু চৌধুরী
১. ২৩ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১:০৮ ০
আশ্চর্য পোস্টে একটিও মন্তব্য নেই! হুমায়ূন আহমেদের কুহক একটি অসাধারণ গল্প। নিশিনাথ বাবুর মৃত্যুটি এভাবে না হলেও পারতো! লেখক চাইলেই পট পরিবর্তন করতে পারতেন। গল্পটি বাস্তবতাকে ছোঁয়ে গেছে। সত্যি সত্যি এমন হলে হতেও পারে।