পূর্ণগ্রাস চন্দগ্রহণ ২০১৮
আগামী ২৭শে জুলাই রাতে পূর্ণগ্রাস চন্দগ্রহণ হবে। আসলে ভুল বলা হল। যে সময় চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে তখন আমাদের দেশে ঘড়িতে সময় হবে রাত ১২টা ২৪ মিনিট, ফলে ক্যালেন্ডারের নিয়মে তখন ২৮ তারিখ হয়ে যাবে।
অন্যদিক থেকে আবার বলা যায় ২৭ তারিখ রাত ১১টা ১৪ মিনিটে চাঁদ পৃথিবীর উপচ্ছায়ায় ঢুকে প্রাথমিক উপচ্ছায়া গ্রহণ শুরু হবে, যদিও একে ঠিক গ্রহণ বলা যায় না। এই সময় চাঁদের আলো ধীরে ধীরে কমতে থাকবে কিন্তু সত্যিকারের গ্রহণ শুরু হবে রাত ১২টা ২৪ মিনিটে। তখন থেকে চাঁদ পৃথিবীর প্রচ্ছায়ায় ঢুকা শুরু করবে আর ধীরে ধীরে চাঁদ ঢেকে যেতে শুরু করবে অন্ধকারে। একে বলে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ । রাত ১টা ৩০ মিনিটে চাঁদ পুরপুরি অন্ধকারে ঢেকে গিয়ে শুরু হবে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ। রাত ৩টা ১৩ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হবে এই পূর্নগ্রহণের কাল। অর্থাৎ ১০৩ মিনিট পর্যন্ত আকাশে কোন চাঁদ থাকবে না। তারপর চাঁদ ধীরে ধীরে বের হতে শুরু করবে অন্ধকার থেকে। শুরু হবে আবারও আংশিক চন্দ্রগ্রহণ। ভোর ৪টা ১৯ মিনিটে চাঁদ আংশিক চন্দ্রগ্রহণ থেকে মুক্ত হবে। তখন চাঁদের পুরটা দেখা গেলেও উপচ্ছায়ার ভিতরে থাকার কারণে চাঁদের আলো কিছুটা ম্লান থাকবে। ভোর ৫টা ২৮ মিনিটে চাঁদ গ্রহণের সমস্ত প্রভাব কাটিয়ে ৬ ঘণ্টা ১৪ মিনিট পরে বেরিয়ে আসবে স্ব-মহিমায়। কিন্তু তার অনেক আগেই ভোর ৫টা ২৮ মিনিটে ঢাকার আকাশে সূর্যোদয় হয়ে আলো ফুটতে শুরু করবে।
উপরের অংশটুকু পরে থাকলে কয়েকটা জিনিস হয়তো কেউ কেউ জানতে চাইতে পারেন। আমার ভাসা ভাসা জ্ঞানে যতটুকু সম্ভব সহজ ও সরল ভাষায় বলার চেষ্টা করছি।
চন্দ্রগ্রহণ কি?
পৃথিবী উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, আবার চাঁদও উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। কক্ষপথ পরিভ্রমণের এক পর্যায়ে পূর্ণিমার রাতে চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী এসে যায়।
সেই সময় যদি সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ এই তিনজন এক সমতলে এবং এক সরলরেখায় চলে আসে তখন সূর্যের আলো পৃথিবীতে বাঁধা পড়ে মহাকাশের বিশাল এলাকা জুড়ে পৃথিবীর ছাড়া পরে। পূর্ণিমার চাঁদ যখন সেই ছায়াতে ঢুকে তখনই ঘটে চন্দ্রগ্রহণ।
প্রতি মাসে পূর্ণিমা হয় কিন্তু চন্দ্রগ্রহণ হয় নাকেন?
প্রতি মাসে একবার করে পূর্ণিমা হয় এবং চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী এসে যায়। পৃথিবীর ছায়াও ছড়িয়ে পরে। কিন্তু তবুও প্রতি পূর্ণিমাতে চন্দ্রগ্রহণ হয় না। এর কারণ হচ্ছে সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ এই তিনজন সব সময় একই সমতলে অবস্থান করে না।
চন্দ্র গ্রহণ হতে হলে সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদ এই তিনজন এক সমতলে এবং একই সরল রেখায় আসতে হবে পূর্ণিমার দিনে। ঠিক সেই সময় চাঁদের কক্ষপথের নির্দিষ্ট দুটি অংশে যদি চাঁদের অবস্থান হয় তখনই কেবল চন্দ্রগ্রহণ ঘটে।
পৃথিবীর ছায়ার কয় প্রকার?
সূর্যের আলো পৃথিবীতে বাধা পেয়ে মহাকাশে তার যে ছায়া পরে তা দুই রকমের। এক উপচ্ছায়া এবং দুই প্রচ্ছায়া।
প্রচ্ছায়া ও উপচ্ছায়া কি?
চন্দ্রগ্রহণ কত প্রকার?
কোন চন্দ্রগ্রহণ কখন হয়?
ছায়ার কেন্দ্রী অংশে থাকে প্রচ্ছায়া অঞ্চল। এই অঞ্চলে সূর্যের আলো একদমই পৌঁছতে পারে না। চাঁদ যখন এই অঞ্চলে থাকে তখন চন্দ্রগ্রহণ হয়। চাঁদ যখন আংশিক প্রচ্ছায়া অঞ্চলে থাকে তখন আংশিক চন্দ্রগ্রহণ হয় আর চাঁদ যখন সম্পূর্ন প্রচ্ছায়া অঞ্চলে থাকে তখন পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হয়।
অন্যদিকে প্রচ্ছায়া অঞ্চলের দুই দিকে অনেকটা এলাকা জুড়ে থাকে উপচ্ছায়া অঞ্চল। উপচ্ছায়া অঞ্চলে সূর্যের আলো কিছু পরিমাণ পৌঁছায়। ফলে চাঁদ যখন শুধুমাত্র উপচ্ছায়ায় অবস্থান করে তখন কোন গ্রহণ ঘটে না, চাঁদকে শুধু কিছুটা ম্লান দেখায়।
খালি চোখে কি চন্দ্রগ্রহণ দেখা উচিৎ?
চন্দ্রগ্রহণ দেখার জন্য কোন প্রস্তুতির দরকার নেই। খালি চোখে কোন সমস্যা ছাড়াই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায়।
বি.দ্র. উপরের সমস্ত চিত্র নেট থেকে সংগ্রহীত ও সামান্য পরিমার্জীত করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫