শিরনামটাই অর্থহীন হল আমার জন্য!! কারণ আমি আজও এই ভাট ফুলের সুবাস পাইনি। ভাট ফুল দেখেছি অনেক, কিছু ছবিও তুলেছি তবে সুবাস নেয়ার সৌভাগ্য হয়নি। অবশ্য এর একটি কারণও আছে। ভাট একটি বুনো ফুল, পথের ধারে জংলা যায়গায়, গায়ের মাঠের ধারে অযত্নে ফুটে থাকে এই ফুল। আদর করে কেউ বাগানে রোপণ করে না। আর ফুলটি সুবাস ছাড়ে রাতে, তাই কখনো এর সুবাস নেয়া হয়নি আমার।
(ভাট ফুল)
(ভাট ফুলের কলি)
(কলি আর ফুলের সমারহ)
ভাট আসলে গুল্ম জাতিয় দেশি বুনো ফুল। ভাটের গাছ খুব একটা বড় হয়না, ১-২ মিটার উচ্চতার ছোট ছোট গাছে তোড়ার মত ফুটে থাকতে দেখা যায় ভাট ফুল। মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল ফুটে। ভাট ফুলের রং ধবধবে সাদা। প্রতিটি ফুলে ৫টি করে পাপড়ি থাকে। পাপড়ির গোড়াতে থাকে সামান্য বেগুনী রঙের পোঁছ। ফুলের কেন্দ্র থেকে ৪টি করে ৩ সেন্টিমিটারের মত লম্বা মঞ্জুরি (পুংকেশর) ফুলের সামনের দিকে বেরিয়ে আসে, সামনের অংশে থাকে কালো দানার মত।
(ভাট ফুল ফুটে এভাবেই তোড়ার মত করে)
এই ফুলের অনেকগুলি বাংলা প্রচলিত নাম রয়েছে যেমন - ভাট ফুল, ভাইটা ফুল, ভাত ফুল, ঘেঁটু ফুল, ঘণ্টাকর্ণ ইত্যাদি। এছাড়াও আরো কিছু কমন নাম এর আছে, যেমন – Hill Glory Bower, নেপালি – রাজবেলি, সংস্কৃতি – ভান্ডিরা ইত্যাদি।
(স্বর্ণলতায় জড়িয়ে আছে ভাট ফুল)
বৈজ্ঞানিক নাম: Clerodendrum viscosum, গোত্র: Verbenaceae, রাজ্য: Plantae, পরিবার: Lamiaceae, গোত্র: Clerodendrum, প্রজাতি: infortunatum
যাইহোক কদিন আগে ৬/৩/২০১৬ইং তারিখে জয়দেবপুরের পরে ট্রেনের রাস্তার ধারে দেখলাম অজস্র ভাট ফুল ফুটে আছে। সঙ্গে থাকা Nikon D80 ক্যামেরা দিয়ে অনেকগুলি ছবি তুলে ছিলাম ভাট ফলের। আমার বৃদ্ধ-দুর্বল হয়ে যাওয়া ক্যামেরায় নিজের অপারগতার কারণে কোনরকমে চলনসই ছবি দিয়েই আজকের এই ছবি পোস্ট।
(ভাটের ঝোপ)
সব শেষে জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা
"কোথাও মঠের কাছে”
"কোথাও মঠের কাছে — যেইখানে ভাঙা মঠ নীল হয়ে আছে
শ্যাওলায় — অনেক গভীর ঘাস জমে গেছে বুকের ভিতর,
পাশে দীঘি মজে আছে — রূপালী মাছের কণ্ঠে কামনার স্বর
যেইখানে পটরানী আর তার রূপসী সখীরা শুনিয়াছে
বহু বহু দিন আগে — যেইখানে শঙ্খমালা কাঁথা বুনিয়াছে
সে কত শতাব্দী আগে মাছরাঙা — ঝিলমিল — কড়ি খেলা ঘর;
কোন যেন কুহকীর ঝাড়ফুঁকে ডুবে গেছে সব তারপর
একদিন আমি যাব দু-প্রহরে সেই দূর প্রান্তরের কাছে,
সেখানে মানুষ কেউ যায় নাকে — দেখা যায় বাঘিনীর ডোরা
বেতের বনের ফাঁকে — জারুল গাছের তলে রৌদ্র পোহায়
রূপসী মৃগীর মুখ দেখা যায়, — শাদা ভাঁট পুষ্পের তোড়া
আলোকতার পাশে গন্ধ ঢালে দ্রোণফু বাসকের গায়;
তবুও সেখানে আমি নিয়ে যাবো একদিন পাটকিলে ঘোড়া
যার রূপ জন্মে — জন্মে কাঁদায়েছে আমি তারে খুঁজিব সেথায়।"
সব্বাইকে ভাট ফুলের শুভেচ্ছা।