সিনেমা কি আসলে? মানে সিনেমা কেন দেখেন? এই প্রশ্নের উত্তরে কে কি বলবেন? একই প্রশ্ন আমাকে জিজ্ঞাসা করলে একটাই উত্তর দিব, বিনোদন। নির্মল বিনোদন যা যে কোন ধরণের সিনেমাতেই পাওয়া সম্ভব শুধু কিছু ব্যাপার মাথায় থাকলেই হয়। বাংলা সিনেমা নিয়ে আশা ভরসা আর আকাঙ্খা আমাদের অনেক বেশি এই কারণেই হয়তো কেউ কখনোই স্যাটিস্ফেকশন লেভেলে পৌছাতে পারে না। আমি নিজেও খুব বেশি যে পৌছাতে পারি তা বলবো না। তবে নেগেটিভ জিনিষ পজিটিভলি বলা আর নেগেটিভ কথা দিয়ে পজিটিভ ব্যাপার ব্যাখ্যা করার একটা বদ অভ্যাস আমার সব সময়েই ছিল এখনো আছে আজকেও সেই রকমই কিছুর অপচেষ্টা করবো হয়তো।
বাংলা সিনেমা দেখতে যাই কোন রকম এক্সপেক্টেশন ছাড়া। কারণ আমাদের সিনেমার অনেক অনেক প্রতিবন্ধকতার সাথে সরাসরি কিংবা আড়াল থেকে আংশিক কিংবা সম্পূর্ণভাবেও জড়িত ছিলাম। সিনেমা বানানো আর মানুষকে দেখানো কত কষ্টের ব্যাপার সেইটা খুব বেশি মানুষের ধারণা আসলেই নাই। মানুষ চায় পয়সা উসুল হোক (টু বি অনেস্ট)। আর অনেক কিংবা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা উসুল করা সম্ভব হয়না কারণ সেই প্রতিবন্ধকতা গুলোই। তার পরেও “ছুয়ে দিলে মন” সিনেমা অনেকাংশেই (কিছু অংশ বাদ দিলে) সেই আশা পূরণ করবে সবারই।
সবচাইতে ভাল লাগা ব্যাপার মিউজিক যথেষ্ট ভাল ছিল। গান গুলোর কম্পোজিশন যথেষ্ট ভাল লাগবে দর্শক ও শ্রোতাদের। এছাড়াও লোকেশন, গল্প (কিছু অসামঞ্জস্যতা বাদে) বেশ ভালই শুধু টিপিক্যাল বাংলা সিনামা ভাব থেকে বের হতে না পারা টা চোখে পরে। গল্পের অসামঞ্জস্যতা পরেই বলি। অভিনয় বলতে গেলে আরেফিন শুভ্র ছ্যাবলামী ভাব ভাল্লাগে নাই। ইরেশ জাকেরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আকর্ষনীয় অভিনয়ে দর্শক হাসির খোরাক সহ সিরিয়াস কিছুও পাবে। সাথে মিশা সওদাগর আর তার সাথে আলী রাজ মূল চরিত্রের সবাই মেন্টেইন করার চেষ্টা করেছে যার মাঝে সফল ব্যাক্তি ইরেশ যাকেরকেই মনে হয়েছে।
সিনেমার গল্পের কথায় আসি। গল্পটা কিছুটা এই রকম।
গল্প:-- হৃদয়পুরে জন্ম নেয়া ছেলে আবীর যে ভালোবাসে মিউজিক করতে এবং বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে সেই আবীরকে হৃদয়পূর থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয় নীলাকে ভালোবাসার অপরাধে। নিয়তি আবার তাকে সেই শহরে ফিরিয়ে আনে। সে খুঁজতে থাকে তার ভালোবাসাকে। এমনই প্রেম কাহিনী নিয়ে নির্মিত ছুয়ে দিলে মন।
গল্প একটা সিনেমার মেরুদন্ডের মতন। গল্প ভাল মেকিং ভাল হইলে সিনামা নিয়া আর কিছুই বাদ থাকেনা। একটা ভাল গল্প যে কোন সিনেমাকে অন্য কাতারে নিয়ে যেতে পারে মুহুর্তেই। গল্পের বিচারে তেমন বলিষ্ঠ কোন গল্প ছিল না। টিপিক্যাল বাংলা সিনেমার গল্প গুলো যেমন হয় বেশ অনুমানযোগ্য গল্প। তারপরেও দেখতে খারাপ লাগবে না এইটুকু বলতেই পারি।
~স্পয়লার এলার্ট~
গল্পের শেষ দিকে এসে বেশ কিছু অসামঞ্জস্যতা খুব বেশি চোখে লাগে। যেমন একঃ হঠাত একটা কালচারাল অনুষ্ঠান ক্কোন একটা মফস্বল এলাকায় কি কারণে করা হবে? তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা খুজে পাই নাই।
দুইঃ নায়ক নায়িকা পালাইয়া যাবে কিন্তু কই যাবে তা ভিলেন কেম্নে খুইজ্জা পাবে তার কোন সোর্স পাই নাই।
তিনঃ এইটা পজেটিভ। শিহাব শাহীন মায়ক নায়িকা মারে নাই। দুই জনে ফালাইয়া পানিতে পইরা মইরা যাওনের কথা ছিল মানে আশা করছিলাম টিপিক্যাল বাংলা সিনামা হিসাবে। সেইটা হয় নাই ভাল্লাগছে।
চারঃ পুরা সিনামাতে আরেফিন শুভ একটা মাইর খাওইন্যা পোলা। মাইর খাইতে খাইতে হঠাত তাহার এক পাঞ্চ (কি জানি নাম পাঞ্চের মনে নাইক্কা) দিয়া ইরেশ যাকেরের মতন ভুড়ি ওয়ালা ভিলেনেরে উড়াইয়া ফালাইল এইটার কারণ বুঝি নাই।
পাঁচঃ নতুন কিছু মুখ ছিল যাদের ওভার একটিং চোখে পরে।
বাংলা সিনামা দেখতে যাওয়ার আগে মাথায় যত আশা আকাঙ্ক্ষা আছে বাসায় রেখে যেতে পারলে বিনোদন খুজে পাবেন অবশ্যই। আর আকাঙ্ক্ষা আর গ্রহণ যোগ্যতা দুইতার মাঝে সামঞ্জস্যতা করার ব্যাপারে আমার একটা নিজস্ব মতামত “আকাঙ্ক্ষা কম আর গ্রহণ করার ক্ষমতা বেশি” হওয়া। এইটা শুধু সিনেমা নয় যে কোন ক্ষেত্রে কাজে লাগে।
এর পরেও বলবো আগের তুলনায় দিন দিন আমাদের সিনামা সামনের দিকেই যাচ্ছে। এই ধরণের সিনামা এটলিস্ট দর্শকের সংখ্যা বাড়াবে। আরো অনেক অনেক দর্শক আসবে সিনেমা দেখতে। FasT & Furious 7 এর যেমন আজকের শোর সব শো হাউজ ফুল ছিল এইরকম কখনো হয়তো “ছুয়ে দিলে মন” (কিংবা অন্য কিছুও ছুইতে পারেন যার যার বিবেচনা কি নিয়া ছুয়া ছুয়ি খেলবেন) বা অন্য কোন নতুন বাংলা সিনামায় টিকিট না পাইয়া ঘুইরা আসবো। সেই দিন হবে সবচাইতে আনন্দের দিন ।
সিনেমার নাম : ছুয়ে দিলে মন
জেনারঃ রোম্যান্টিক
কাহিনীঃ শিহাব শাহীন
চিত্রনাট্য ও পরিচালনাঃ শিহাব শাহীন
সঙ্গীত পরিচালনাঃ হাবীব ওয়াহীদ, সাজিদ সরকার
প্রযোজনা : সারাহ জাকের
শ্রেষ্টাংশে: যাকিয়া বারী মম, আরেফিন শুভ, ইরেশ যাকের, আলী রাজ, মিশা সওদাগর সহ অনেকেই।
✘✘✘ দয়া করে কোন বাংলাদেশী মুভির ডাউনলোড লিংক শেয়ার করবেন না। বাংলা মুভি সিনেমাহলে গিয়ে অথবা অরিজিনাল ডিভিডি কিনে দেখুন। দেশের চলচ্চিত্র রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন।