কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে একটা দোকানে ঢুকলাম। বললাম মোবাইল বিক্রি করতে চাই। দোকানদার সেট দেখে জিজ্ঞেস করল কেন বিক্রি করব? বললাম আমরা নিঝুম দ্বীপ ঘুরতে আসছি, টাকা একজনের কাছে ছিল, সে হারিয়ে ফেলছে। তখন মিথ্যা বলা ছাড়া উপায় ছিল না কারন আমরা কোন পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই নিঝুম দ্বীপ এ ঘুরতে যাচ্ছি এইটা মানুষকে শুনিয়ে হাসির পাত্র হতে চাই নি। কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর দোকানদার বলল মোবাইল বিক্রি করে কি করবেন? তার থেকে বরং আমার মোবাইল এ কারো মাধ্যমে ১০০০ টাকা ফ্লেক্সি করে দেন, আমি আপনাদের টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি।আমরা তো একেবারে আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম । মাসুম তার বড় ভাইকে ফোন দিলো। ভাইয়াকে বলার পর উনি অনেক বকাবকি করার পর টাকা পাঠাতে রাজি হলেন। আমরা দোকানে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ঐখানে আরও কিছু লোক আসলো। একজন aristopharma তে চাকরি করে আর বাকি দুইজন গ্রামীণ শক্তি তে, বাকিদের কথা মনে নেই। সবাই চাকরিসূত্রে হাতিয়া তে। বাড়ি নোয়াখালী, কুমিল্লা আর উত্তরবঙ্গে। সবার সাথে ভালই আড্ডা জমল। তারা আমাদের অনেক আপ্যায়ন করলো। কিছুক্ষণ পর দোকানদার এর মোবাইল এ টাকা চলে এলো। আমরা টাকা নিলাম। একজন বলল দেখো নিঝুম দ্বীপ এইখান থেকে ও অনেক দূরে আর যে হরিণ দেখার জন্য যাচ্ছ তা সবসময় দেখা ও যায় না। এইখানে ও কেওড়া বন আছে এবং তা অনেক সুন্দর।নিঝুম দ্বীপ এ যাওয়ার দরকার নেই। আমাদের সবার মোটরসাইকেল আছে চল সবাই মিলে ঘুরে আসি। কাল সকালে হাতিয়া ঘুরে দুপুর ২ টার লঞ্চে চলে যেও। অতি উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু যে দেবীর দর্শন লাভ করার জন্য এত দূরে আসা তার দর্শন লাভ না করেই চলে যাবো এইটা চিন্তা করে কেমন যেন লাগছিল । যাই হোক তারা যখন বুঝল আমাদের ফেরানোর কোন উপায় নেই তখন বলল সরাসরি এইখান থেকে নিঝুম দ্বীপ এর ঘাট পর্যন্ত সরাসরি মোটর সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়, মোটরসাইকেল এ গেলে ভালো হবে। তারপর একজন বলল তোমাদের সাথে যা টাকা আছে তা দিয়ে মনে হয় নিঝুম দ্বীপে ঘোরা হবে না। তিনি আমাদের ১০০০ টাকা দিলেন। তার এক আত্মীয় মাসুম এর পরিচিত। টাকাটা তাকে ফেরত দিলেই হবে। আমরা তাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিয়ে হংকং এর দিকে যাত্রা করলাম।
হোটেল এ গিয়ে দেখি তারা সব রমেই আছে। বলল তারা মোটরসাইকেল এ যাবে। আমাদের জন্য ও ২ টার কথা বলা হয়েছে। ফজর এর নামাজ এর পর মোটরসাইকেল হোটেল এ চলে আসবে। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে গেলাম। পরের দিন ফজরের আজানের সাথেই ঘুম থেকে উঠলাম। কিছুক্ষণ পর ৫ টা মোটরসাইকেল আসলো। প্রতি মোটরসাইকেল এ দুই জন করে আমরা উঠে বসলাম। ঘাটের দিকে আমরা রওনা হলাম। ভোরে ফাঁকা রাস্তায় মোটর সাইকেল এ যেতে অনেক ভালো লাগছিলো। কিন্তু কাঁচা রাস্তায় উঠার পরেই সব আরাম হারাম হয়ে গেলো। রাস্তাই বটে একখান। কয়েক জায়গায় মোটরসাইকেল থেকে নামা লাগলো। অবশেষে যখন মনে হল হাত পায়ের নাট- বল্টু সব খুলে আসবে তখন চালক বলল আমরা এসে গেছি। মোটরসাইকেল থেকে নেমে নদীর পাড়ে আসলাম। দূর দিগন্তে দেখা যাচ্ছে আমাদের সেই কাঙ্খিত নিঝুম দ্বীপ। যাক অবশেষে দেবীর দর্শন লাভ করলাম ।