নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। দ্বীপটা হরিণ এর আবাসস্থল এর জন্য বিখ্যাত। বাড়ি নোয়াখালী তে হওয়ার কারনে অনেকদিন থেকে ইচ্ছা ছিল নিঝুম দ্বীপ এ ঘুরতে যাওয়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাওয়াটা যে এইরকম হুট করে আর এইভাবে হবে তা কখনো চিন্তা ও করি নি। আগেই বলে রাখি আমি কিন্তু নিঝুম দ্বীপ নিয়ে কোন সাহিত্য রচনা করছি না। আমি নিঝুম এ যাওয়া আসা আর কিছু ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করব।
গত বছরের কুরবানির ঈদ এর ৩ বা চার দিন পরের কথা। সকালের নাস্তা করছি এমন সময় আমার বন্ধু মাসুম ফোন দিলো। বলল বের হতে। মাসুম আর আমি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ি,তার বাড়ি কুমিল্লা তে। তার বাবার চাকরীর কারনে তারা এখন নোয়াখালীতে। বাসা থেকে বের হয়ে দেখি মাসুম আরও দুই জন কে নিয়ে অপেক্ষা করছে, পরিচয় করিয়ে দিলো তার দুই খালাতো ভাই। মাসুম বলল চল কোথাও ঘুরতে যাই। আমি চিন্তা করে দেখলাম হাতে যখন সারাদিন সময় আছে, মেঘনা নদীর পাড় আর চিংড়ি প্রোজেক্ট থেকে ঘুরে আসি। জায়গাটা আমাদের বাসা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুরে। হাতিয়া যাওয়ার লঞ্চ ও ঐখান থেকে ছেড়ে যায়। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে পোঁছালাম।কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে দেখি হাতিয়া যাওয়ার জন্য একটা লঞ্চ অপেক্ষা করছে। কৌতূহলবসত লঞ্চ এর এক কর্মচারীর সাথে গিয়ে গল্প জুড়ীয়ে দিলাম। লোকটা বলল যে ২ টার দিকে লঞ্চ ছেড়ে যাবে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হাতিয়া থেকে নিঝুম দ্বীপ যেতে হয় কি ভাবে আর কত সময় লাগে? লোকটা বলল যে হাতিয়া আর নিঝুম দ্বীপ এর মাঝখানে মেঘনা নদী। মেঘনা নদী পাড় হওয়ার জন্য ট্রলার পাওয়া যায় আর এইখান থেকে হাতিয়া যেতে জনপ্রতি ৬০ টাকা করে ভাড়া। ওই লোকটা থেকে বিদায় নিয়ে আসলাম। কিছুক্ষণ পর মাসুম বলল সবার কাছে সব মিলিয়ে কত আছে হিসেব করতে। হিসেব করে দেখলাম চার জনের কাছে সব মিলিয়ে ১৭০০ টাকার মতো আছে। নিজেরা হিসেব করে দেখলাম হাতিয়া যেতে যদি ১ ঘণ্টা সময় লাগে তাহলে বিকেল এ নিঝুম দ্বীপ ঘুরে সন্ধ্যার পর এ লঞ্চে ফিরে আসতে পারব। বাসায় আসতে না হয় রাত ১০ টা বাজবে। টিকেট কেটে লঞ্চ এ উঠে বসলাম। ২ টার দিকে লঞ্চ ছেড়ে দিলো। ওইটা ছিল আমার জীবনের প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ। আগে মনে করতাম লঞ্চ এ উঠলে লঞ্চ ঢেউ এর সাথে দুলবে। কিন্তু দেখলাম যে লঞ্চ এ আপনি চোখ বন্ধ করে যদি আপনি বসে থাকেন তাহলে আপনি বুঝবেন এ না যে আপনি চলার মধ্যে আছেন। আমাদের বয়সী কয়েকজনকে পেয়ে গেলাম। তারাও নিঝুম দ্বীপ যাবে। লঞ্চ এ খুব ভালো সময় কাটল। লঞ্চ সাড়ে ৩ টার দিকে হাতিয়া পোঁছাল। হাতিয়া নেমে হোল আমি লাফ দিয়ে কয়েক যুগ পিছনে চলে গেছি।অদ্ভুতদর্শন কিছু গাড়ি আমার সামনে দাড়িয়ে আছে। গাড়িগুলো কি রকম আপনাদের একটা ধারনা দিতে পারি। দেখতে লেগুনার মতো তবে সাইজ এ লেগুনার তিন গুন আর তিন সারিতে লোক নেয়া হয়। এক একটা গাড়িতে প্রায় ৩৫-৪০ জন করে লোক। আমরা তো ভাবলাম কাছে ধারেই হবে নিঝুম দ্বীপ। একটা ট্রলার পেলেই ঘুরে আসব। ওইখানের মানুষ কে জিজ্ঞেস করতেই তারা বলল নিঝুম দ্বীপ হাতিয়ার অন্য পাশে। আর আজ যেতে পারব না। জিজ্ঞেস করলাম কেন? বলল এইখান থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে নিঝুম দ্বীপ যাওয়ার ঘাট। গাড়িতে যেতে হবে জাহাজমারা পর্যন্ত। এর পর কাঁচা রাস্তা, যেতে হবে মোটরসাইকেল বা রিক্সায় করে। সব শুনে তো মাথায় হাত। আমাদের তো টাকায় হবে না। তো কি আর করা? চিন্তা করলাম ফিরেই যাই। গিয়ে শুনি আজ ফিরতে পারব না। জোয়ার ছাড়া লঞ্চ চলবে না। আগামিকাল দুপুর ২ টায় লঞ্চ।
চলবে