অনেক ঝক্কি ঝামেলার পর ঈদ এর ছুটির পর বাড়ি থেকে হল এ ফিরল আনিস। ঈদ শেষ হল প্রায় ১০ দিন হোল কিন্তু বাস মালিকদের মনে হয় ঈদ এখনো শেষ হয় নি। এখনো বাস এ অন্য সময়ের চেয়ে প্রায় তিন গুন ভাড়া। তাই বাধ্য হয়ে ট্রেন এ পুরো পথ দাঁড়ীয়ে আসতে হয়েছে। ট্রেন থেকে নামার পর দেহ আর চলছিল না, তাই মন চাইছিল একটা সিএনজি ভাড়া করে হল পর্যন্ত চলে আসে। কিন্তু এই টুকুন পথ কেউ ২০০ টাকার কম এ যাবে না। কি আর করা, কষ্ট করে লোকাল বাস এ বাদুড়ঝোলা হয়ে হল পর্যন্ত আসা। হল এ আসার পর পরেই আনিস এর বন্ধু স্বপন এর আগমন। দোস্ত আমরা কিন্তু সামনের সপ্তাহেই সুন্দরবন যাবো।বাড়ি যাওয়ার আগে যে বললাম বাড়তি ৩০০০ টাকা করে আনতে, এনেছিস তো?না রে দোস্ত... আনিস এর কণ্ঠ দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। তুই তো জানোস আমার বাবা স্কুল শিক্ষক আর আমরা তিন ভাই বোনই বাইরে পড়াশোনা করি।ঈদ এ তো আর খরচ কম হল না, তাই আসার সময় টাকা চাওয়ার সাহস পাই নি। তোরে যাওয়ার সময় কি শিখাইয়া দিছিলাম? বললাম না তোর বাবাকে বলবি কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি হতে হবে, এই জন্য ৩০০০ টাকা লাগবে। একেবারে যে বলিনি এমনটি নয়। একদিন রাতে খাওয়ার সময় কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম।সব শুনে বাবা বলল পরে করিস, এই মাসে টাকা হবে না। তুই কিছু বললি না? আমি আর কি বলব, বললাম ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে, পড়ার চাপ কম, এখন করে ফেললে ভাল হত।আচ্ছা, আর কি করা, তোরে অনেক বেশি মিস করব।
ইকবাল সাহেব যে তার বড় ছেলের আবদার ভুলে গেছেন এমনটি নয়। কিন্তু কি করবেন? ঈদ এ দুই মাসের বেতন আর বোনাস পেয়েছিলেন। কিন্তু ঈদ এর কেনাকাটা এবং ধার শোধ করে টাকা প্রায় শেষ এর দিকে, আগামী মাস কি ভাবে চলবেন আল্লাহ মালুম।কিন্তু ছেলের জন্যও খারাপ লাগছে। ছেলেটা তার কষ্ট বোঝে, তাই তার মানা সত্ত্বেও দুইটা টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ নিজেই চালায়। তিনি তার ঘনিস্ট বন্ধুদের কাছে ধার এর জন্য গিয়েছিলেন কিন্তু ঈদ শেষ এ কারও কাছেই টাকা নেই। তাই ছেলে যাওয়ার সময় টাকাটা দিতে পারেন নি। শেষ পর্যন্ত ইদ্রিস মিয়ার কাছে গিয়েছেন। তিনি দুই দিন পর আসতে বলেছেন। ইদ্রিস মিয়া সুদে টাকা ধার দেন। ৩০০০ টাকা তাকে এক মাস পর ৫০০ টাকা সুদ সহ জমা দিতে হবে।
তিন দিন পরের কথা। আনিস মন খারাপ করে শুয়ে আছে। বন্ধুরা সবাই সুন্দরবন যাচ্ছে, কিন্তু সে যেতে পারছে না। এমন সময় বাবার ফোন আসলো। জানালেন টাকা পাঠীয়ে দিয়েছেন। টাকা কাল পেয়ে যাবে। আনিসের মনটা খুশীতে ভরে উঠল। বন্ধুদের সবাইকে গিয়ে খবরটা দিলো।অনেকদিন পর সবাই মিলে সারারাত আড্ডা দিলো।
পরের দিন আনিস খুশী মনে টাকা তুলতে গেল। কিন্তু টাকাটা যখন হাতে পেলো তখন তার চোখ ছলছল করে উঠলো। কি করে সে পারলো তার বাবার সাথে প্রতারনা করতে?
বিশিষ্ট শিল্পপতি একরামুল খান এর একমাত্র ছেলে রাজিব। পড়াশোনা করছে ঢাকার একটি বিখ্যাত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এ। আজ তার গার্লফ্রেন্ড নিশির জন্মদিন। কয়েকদিন আগে ক্যাফে তে খাওয়ার সময় টিভি তে আইফোন ৫ এর অ্যাড দেখে নিশি খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলো। তাই রাজিব ওই দিনেয় ঠিক করল জন্মদিনে তাকে একটা আইফোন ৫ গিফট দিবে। সকালবেলা নাশতার টেবিল এ বাবার সাথে দেখা। বাবাকে গিয়ে বলল, বাবা আমার একটা কোর্সে ৫০০০০ টাকার মত লাগবে। একরামুল সাহেব অফিস এর ফাইল দেখায় ব্যাস্ত ছিলেন। মুখটা ফাইল থেকে না তুলেই বললেন, আমি ম্যানেজার কে বলে দিবো, তুমি টাকা নিয়ে নিয়ো।খুসিমনে রাজিব বেড়ীয়ে পড়ল।