সকালে হাসপাতালে আবদুল জলিল ভূইয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, তার শরীর আগের তুলনায় ভালো হয়েছে। তবে শরীরের নিম্নাঙ্গে যেখানে ১৪টি ইনজেকশন পুশ করা হয়েছিল সেখানটাতে সামান্য ব্যথা রয়েছে। লিজা ইনজেকশন পুশ করেনি এবং তার আইনজীবী আদালতে প্রমাণ উপস্থাপন করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কে কী বলল তাতে কোনো লাভ নেই। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সেদিন কী ঘটেছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রথমে ডাক্তার শাহনেওয়াজ (নারায়ণগঞ্জ বিএমএ’র সভাপতি) তাকে ইনজেকশন দিয়েছেন। সে সময় ঘরে লিজা, তার পরকীয়া প্রেমিক দিপু ভূইয়া ওরফে জিকুসহ আরও ৪ যুবক ছিল। ইনজেকশন দেয়ার পর তার হাত-পা ঘরের জানালার সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। তিনি দড়ি ছিঁড়ে ফেলায় তাকে পরে শিকল দিয়ে বাঁধা হয়। এ সময় লিজা তাকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে বলে তিনি জানান। এ প্রতিবেদককে হাত-পায়ে শিকলের দাগ দেখান। সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতির বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, তাকে যখন একদিনে ১৩টি ইনজেকশন দেয়া হয়েছিল তখন তিনি পানি খেতে চেয়েছিলেন। তখন তাকে পানি খেতে দেয়া হয়নি। লিজা কীভাবে পরকীয়ায় জড়িয়ে গেল—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তিন বছর আগে তিনি জানতে পেরেছিলেন, লিজা যে সংগঠন করত (নারীকল্যাণ সংস্থা ও সার্বিক উন্নয়ন সংস্থা) তার উপদেষ্টা ছিল শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বাহাদুর। বড় বোন তাসলিমার মাধ্যমে বাহাদুরের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর ঘনিষ্ঠতা থেকে পরকীয়া। এ বিষয়টি তাসলিমার দেবর অ্যাডভোকেট আওলাদও জানতেন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আরও জানান, লিজা তাকে প্রায়ই নানা বাহানায় ইসলামিক কর্মকাণ্ড যেমন তাবলীগের চিল্লায় যেতে বলত। এরপর তিনি কখনও তিন দিন আবার কখনও সাত দিন অথবা দশ দিনের জন্য যেতেন। এসময় লিজা তার বাড়িতে রঙ্গলীলা বসাত বলে তিনি জানান। এছাড়া বিভিন্ন সময় লিজা ট্রেনিংয়ের কথা বলে ৭ থেকে ২১ দিন বাড়ির বাইরে থাকত। প্রতিদিন রাতে দেরি করে বাসায় ফেরা ছিল তার রুটিন ওয়ার্ক। ঢাকায় ট্রেনিংয়ের নাম করে সারাদিন বাড়ি আসত না। পরকীয়া প্রেমিক বাহাদুরকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত। তাদের দু’জনকে কক্সবাজারেও দেখা গেছে বলে তিনি জানান। স্ত্রীর পরকীয়ায় কখনও প্রতিবাদ করেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লিজাকে বারণ করলে সে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে বলত, আমি যার সঙ্গে খুশি মেলামেশা করব, তাতে তোর কী? কোনো স্ত্রী স্বামীকে এ ধরনের কথা বলতে পারে কিনা এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন জলিল ভূইয়া। স্ত্রী লিজার সম্পর্কে তিনি বলেন, সে ছিল ইন্টারন্যাশনাল নর্তকী। লিজার বিষয়ে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে বিরূপ মন্তব্য শুনেছেন বলে জানান। এ বিষয়ে তিনি ব্যবসায়ী লাভলুকে জানিয়েছিলেন। তবে কোনো ফল হয়নি। এদিকে আরও কোনো ব্যক্তির সঙ্গে লিজার পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেও তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে ডা. শাহনেওয়াজ জানান, লিজার সঙ্গে তার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে দেখা হতো। তবে তিনি কখনও লিজার বাসায় যাননি বলে দাবি করেন। ইনজেকশন পুশ করা সম্পর্কে তিনি জানান, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কখনও কারও বাসায় কলে যাই না। তিনি সুস্থ অবস্থায় এগুলো বলেছেন কিনা আমি জানি না। ভদ্রলোককে (আবদুল জলিল ভূইয়া) আমি চিনতাম। তবে তিনি যে লিজার স্বামী তা জানতাম না। ঘটনার (১৩ অক্টোবরের) ৪-৫ দিন আগে তিনি এসে লিজা সম্পর্কে আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন। যেহেতু তাদের পারিবারিক বিষয়, তাই এ বিষয়ে আমি আর অগ্রসর হইনি।
উল্লেখ্য, গত ১৩ অক্টোবর সকালে শহরের পাইকপাড়া ভূইয়াপাড়া এলাকায় নিজ বাসভবনে স্বামী আবদুল জলিল ভূইয়াকে ১৩টি নেশাজাতীয় ইনজেকশন পুশ করে হত্যার চেষ্টা ও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হন সুন্দরী নারীনেত্রী রহিমা খাতুন লিজা ও তার পরকীয়া প্রেমিক দিপু ভূইয়া ওরফে জিকু। সে সময় চার দিন ধরে আবদুল জলিল ভূইয়ার দেখা না পাওয়ায় এলাকার লোকজনের সন্দেহ হয়। সকালে তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে লিজা ও দিপুকে দেখতে পান। আবদুল জলিলের কথা জিজ্ঞেস করলে লিজা একেক সময়ে একেক রকম কথা বললে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। পরে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে তারা জলিলকে শিকল দিয়ে বাঁধা ও অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় এলাকাবাসী তাদের উত্তমমধ্যম দিয়ে পুলিশে খবর দেয়।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকাকে গ্রেফতার করে। আবদুল জলিল ভূইয়ার ভাই তাদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। অচেতন অবস্থায় আবদুল জলিল ভূইয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় শহরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি লিজার জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়। লিজা ও তার পরকীয়া প্রেমিক বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছে।