ফেজবুক খুলতেই একটা ধাক্কা খেলাম... সবাই তার মায়ের ছবি আপ করছেন। কেবল আমি ছাড়া। তাহলে কি আমি আমার মাকে ভালোবাসি না? নাকি মায়ের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশটা একটা ছবি দিয়ে প্রমাণ করতে পারলাম না। করা উচিত ছিল হয়তো। এরপর ছোটখাটো কিছু ভাবনার উড়াউড়ি... আমি অতি আধুনিক না, এটা একটা সমস্যা। ভাবনা কিংবা ভালোবাসার বহিপ্রকাশটা আমার উচ্ছ্বসিত নয, মনে প্রাণে ভালোবেসে নিরবে প্রয়োজনে প্রাণ দিতে পারি, কিন্তু লোক দেখানো হৈচৈগুলো করতে পারি না। এ কারণে ব্যক্তিগত জীবনেও সমস্যা হয়। কাছের অতি প্রিয় মানুষগুলোও আমাকে বুঝে উঠতে পারেন না। এত মুখচোরা মানুষ আমি, এত চাপা স্বভাবের, তবু যে মানুষটা আমার মুখ দেখেই বুঝে ফেলেন মনে কি আছে, তিনি আমার মা। বুঝতেন বাবাও। একবার মুখের দিকে তাকিয়ে খোলা বইয়ের মতো পড়ে ফেলতে পারেন ভেতরটা। তাই মন খারাপ থাকলে আমি তাদের সামনে যেতাম না। আমার কষ্টে তার মনটাও বিষন্ন হয়ে উঠবে বলে। বেশি রাত হলে বলে দিতাম বাইরে খেয়ে ফেলেছি। জানি, নইলে তিনি না খেয়ে বসে থাকবেন। অতি আধুনিকতার অভাব আর মধ্যবিত্তীয় অবস্থানের কারণে কখনো মাকে জড়িয়ে ধরে বলাও হয় না আম্মা আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি। তবে, আম্মা আমার ভালোবাসা ঠিকই টের পান। যত দূরে যাই, যেখানেই থাকি। ভালোবাসার জন্মটাতো শাব্দের উচ্চারণে নয়, বুকের গহীন থেকে। একদিন ঠিকই মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলব, 'এত টেনশন করেন কেন? আমরা আপনাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক।' জানি তো কি হবে তখন, আম্মর চোখ দুটো জলে ভরে উঠবে। চশমাটা খুলে শাড়ির অচলে সেই জল মুছবেন তিনি। বিড়িবিড় করে বলবেন, তোমরা ভালো থাকলেই আমি খুশি। নিশ্চিত আমার চোখদুটোও ঘোলা হয়ে উঠবে, ঝাপসা হবে দৃষ্টি, ভারি হয়ে উঠবে বুক। সত্যিকারের ভালোবাসা কষ্টের জন্ম দেয়। কষ্টবিলাসি মানুষ সেই কষ্টটাই প্রত্যাশা করে প্রতিনিয়ত। পৃথিবীর সব মায়েদের প্রতি আকুণ্ঠ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ভালোথাকার প্রত্যাশা...
- আকাশ থেকে