একজন ছাত্র/ছাত্রীর মনে কি চলছে তা সহজে বলে দেওয়া যায় সেই ছাত্র/ছাত্রীর স্কুল খাতার শেষ পাতার দিকে তাকিয়ে। ছাত্রজীবনে এরকম ছেলে/মেয়ে খুব কমই পাওয়া যায় যে কিনা খাতার শেষ পাতায় এসে কলম দিয়ে আনমনে আচড় কাটেনি। ভাবখানা এমন যেন পাতাটিকে সফেদ আর অব্যবহিত রাখাটাই বিরাট এক অন্যায়। সুয়েজ খালগুলোতে যেমনিভাবে নগরীর সব বাসা-বাড়ির ময়লা আবর্জনারা এসে মিলিত হয় ঠিক তেমনিভাবে মনের অর্থপূর্ণ, অর্থহীন সব কথাগুলোর স্থায়ী নিবাস হলো খাতার এই শেষ পাতা। দিন শেষে এরা এখানেই মিলিত হয়। Student life 101 এর প্রথম চাপ্টারেই এই ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা আছে। খাতার শেষ পৃষ্টাটাই যেন প্রত্যেক ছাত্রের সবচাইতে কাছের বন্ধু যার কাছে অনায়াসে সব বলা যায়। তার বুকে কলমের চোখা অংশ দিয়ে অনবরত ক্ষত বিক্ষত করে গেলেও সে নীরবে সব সয়ে যায়, মন সামান্য উদাস হলেই সে নিজে সব দায়ভার গ্রহণ করে আমাদের সব আনমনা আঁকিবুকিকে শাস্তি হিসেবে মাথায় তুলে নেয়। একটি চুম্বকের নর্থ সাইডের সাথে যেমনি অন্য আরেকটি চুম্বকের নর্থ সাইড জোড়া লাগানো অসম্ভব একটি কাজ ঠিক তেমনি একজন ছাত্রের খাতার শেষ পাতা সাদা থাকাও যেন অত্যন্ত দুরূহ আর অসাধ্য একটা ব্যাপার। ফেইসবুকে যতবার লগইন করি ততবার খালি জিজ্ঞেস করে what's in your mind? কতজনই বা মন খুলে লিখতে পারে what's in their mind. Self-censorship হলো পৃথিবীর সবচাইতে বড় আর কড়া সেন্সর বোর্ড। লেখাটা অন্যের মনে আঘাত হানবে কিংবা ক্ষোভের জন্ম দিবে কিনা সেটা চিন্তা করতে করতে Backspace button এর জোয়ারে এরকম কত লেখারই যে সলিল সমাধি হয়েছে তা কেবল কিবোর্ডের বাটনগুলো জানে আর জানে নিজের হাতের তর্জনীটি। আজ ফেইসবুকের রব চারদিকে, আগামীতে প্রযুক্তির আশীর্বাদে আরো হাজারো facebook, facelibrary বের হবে কিন্তু মনের তলদেশের কথাগুলো লেখার মত social website কোনো কালেই বের হবে না। ওগুলো লেখার জন্য শুধুমাত্র শেষ পাতারা আছে, পূর্বেও ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। আমাদের অগ্রজরা একাজ করে গিয়েছে, এখন আমরা করছি আর আগামীতে এই লিগ্যাসি বহন করে নিয়ে যাবে আমাদের অনুজরা। সময় বদলাবে, শিক্ষক বদলাবে, ক্লাসরুমের আয়তন বাড়বে কিন্তু শেষ পাতা সে একই রয়ে যাবে কারণ এ পাতাই তো মূলতঃ আমাদের শেখায় what's in my mind শুধুই যে অর্থপূর্ণ বাক্য হতে হবে সেটা জরুরি নয়। হাবিজাবি আঁকিবুকিও যে হাজারটা অব্যক্ত কথার বহিপ্রকাশ হতে পারে, শত শত আইডিয়ার জন্মস্থান হতে পারে কিংবা ভালোলাগার মানুষটির নামের পাশে "+" চিহ্ন বসিয়ে নিজের নাম লেখা দেখতে কেমন লাগে সেটাও শেখায়।
জয় হোক ছাত্রজীবনের
জয় হোক খাতার শেষ পাতার
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪