শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
নারী দিবসে আজ যতগুলো নারী নিয়ে লেখা পড়লাম সবগুলোতেই নারীদেরকে মর্যাদার আসনে বসিয়ে মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে। নারীদের এই মূল্যায়ন কারা করবে? এই প্রশ্নের উত্তরে যা বোঝা গেল পুরুষ দ্বারাই নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরুষকেই বেশিরভাগ ইঙ্গিতে বোঝানো হচ্ছে। কিন্তু নারীর দ্বারা যে নারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এ বিষয়ে কোথাও উল্যেখ নেই বললেই চলে।
নারীরা নারীদের উপর কি পরিমাণ অত্যাচার করে তার কিছু উদাহারণ তুলে ধরা হলো - --
গৃহকর্মীদের উপর অত্যাচার ঃ অনেক বাড়িতেই পরিচারিকা আছে। গৃহকর্মীহিসাবে কোন বাড়িতে বয়স্কা মহিলা আবার কোন বাড়িতে ছোট ছোট শিশু বাচ্চা বা অল্প বয়সী তরুণীদের রাখা হয়। যে বয়সে পুতুল খেলার কথা, বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে এরা অভাবে পড়ে পেটে ভাতে কাজ করতে আসে। অথচ এইসব গৃহকর্মীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা তো দূরের কথা বাড়ির গিন্নিরা সামান্য ত্রুটি পেলেই অকথ্য অত্যাচার করে থাকে। কথায় কথায় চামুচ দিয়ে বাড়ি মারে, চুলায় খুন্তি গরম করে গায়ে ছ্যাকা দেয়, গরম পানি গায়ে ঢেলে দেয়, চুল ধরে দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়, গালে চিমটি দিয়ে গালের মাংস তুলে নেয়, লাঠি দিয়ে গরুর মত পিটায়, লাথি মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পাড়ায় ইত্যাদি নানা প্রকার অত্যাচার করে থাকে। মহিলা পরিচারিকাদের এই অত্যাচার কিন্তু পুরুষরা করে না বাড়ির গিন্নিরাই করে থাকে। শুধু অত্যাচারই করে না অনেক সময় অত্যাচার করতে করতে মেরেই ফেলে। অনেক সময় বাড়ির গিন্নিদের অত্যাচার কুলোতে না পেরে গৃহকর্মীরা ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকে। এমনও দেখা যায় অনেক গৃহকর্মীকে গভীর রাতে বাড়ির গেটের বাইরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়। গভীর রাতে এইসব তরুনী বা মহিলারা কোথায় যাবে, কি করবে, কার হাতে পরবে, কি ধরনের বিপদে পড়বে সেসব কথা এতটুকুও চিন্তা করে না। এই অত্যাচারী মহিলারাই আবার সভা সমিতিতে গিয়ে মহিলাদের অধিকার নিয়ে কথা বলে থাকে। ধিক এইসব নারী নির্যাতনকারী মহিলাদেরকে।
পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় গৃহকর্মী নির্যাতনের খবর, গৃহকর্মী মেরে ফেলার খবর। এইসব গৃহকর্মী নির্যাতন ও মেরে ফেলার খবরের নেপথ্যে বাড়ির গিন্নিদের অত্যাচারের কাহিনীই বেশির ভাগ থাকে।
আজ নারী দিবসে নারীদের কাছে অনুরোধ। কাজের মেয়ের কাজ যদি ভাল না লাগে বা তার স্বভাব চরিত্র খারাপ দেখেন, দয়া করে তাকে তার বাবা মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন কিন্তু অত্যাচার করে মেরে ফেলবেন না। সে আপনার কাজের মেয়ে হলেও মেরে ফেলার অধিকার আপনার নাই। আপনিও মহিলা সেও মহিলা। আপনার নারীর অধিকার আদায়ের অধিকার থাকলে তারও ভালভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে।
বউ শ্বাশুরীর অত্যাচার ঃ আগে প্রায়ই শুনতাম শ্বাশুরীরা বউকে অত্যাচার করে, এখন কিন্তু বিষয়টি উল্টে গেছে। এখন বউরা শ্বাশুরীকে অত্যাচার করে। বৃদ্ধ বয়সে শ্বাশুরীরা অনেক সময় ঠিক মত দু’বেলা ভাতই পায় না। গ্রামে অনেক মহিলাকেই দেখেছি বৃদ্ধ বয়সে বউ ভাত দেয় না বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে খায়। এমনও দেখা যায় শ্বশুর মারা গেছে উপর্জনক্ষম ছেলের বউ স্বামীর মগজ ধোলাই করে শ্বাশুরীসহ ননদদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এইসব অসহায় মহিলারা কোথায় যাবে, কি খাবে, এসব্ চিন্তা ওইসব বউদের মাথায় নেই। আবার ছেলে মারা গেছে শ্বাশুরী বচ্চাসহ ছেলের বউকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এরকম অসংখ্য ঘটনা কল্পনায় নয় বাস্তবেই চোখে পড়ে। কিছু কিছু মহিলা নিজে সুখে থাকার জন্য এইসব নিষ্ঠুর কাজ করতে এতটুকুও দ্বিধাবোধ করে না।
এই তো কিছুদিন আগে একটা ঘটনা স্বচক্ষে দেখলাম। ছেলে ঢাকায় চাকরি করে। যেখানে থাকে সেই এলাকায় গোপনে প্রেম করে গোপনেই বিয়ে করেছে। বিষয়টি বাবা মা কেউ জানে না। বিয়ের কিছু দিন পরে ছেলের সাথে মেয়ের কি নিয়ে ঝগড়া হওয়ায় ছেলে আর রাগ করে মেয়ের কাছে যায় না। মেয়ে থানায় গিয়ে মামলা করেছে। সব কিছুই হয়েছে গোপনে অথচ মামলা করার সময় ছেলের বাবা মাকে আসামী করা হয়েছে। মামলা করার পর পুলিশ গিয়ে আর কাউকে খুঁজে না পেয়ে ছেলের মাকেই ধরে নিয়ে জেল হাজতে ঢুকিয়ে দিয়েছে। নিরীহ মহিলা, জীবনে কোনদিন কোন অপরিচিত লোকের সামনে যায় নাই, না খেয়ে থাকলেও কোনদিন দোকানে যায় নাই, বাজার করে নাই, সারা জীবন ঘরের কোনায় থেকেছে, সেই মহিলা নির্দোষ হয়েও প্রেম ঘটিত ছেলের বউয়ের কারণে ১৪দিন জেল হাজত খেটে আসল। পুলিশ ধরে নেয়ার সময় মহিলার সেকি কান্না, তার গগণ বিদারী চিৎকারে চোখে জল ধরে রাখা যায় না। কিন্তু গগণ বিদারী চিৎকারেও পুলিশ ছাড়ল না। প্রেম করলো গোপনে, বিয়ে করলো গোপনে, ছেলের মা কিছুই জানে না অথচ জেল খাটানোর সময় নিরাপরাধ জেনেও ওই মাকেই জেল খাটানো হলো। একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর উপরে এটা কি ধরনের অত্যাচার।
আমার প্রশ্ন হলো-- আপনারা মহিলা হয়ে যদি এক মহিলা আরেক মহিলাকে অত্যাচার করেন, তাহলে আপনাদের নারী অধিকার আদায় করে কি লাভ? নারীর অধিকার আদায়ও করবেন আবার নারী হয়ে নারীকে ঘাড় ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেবেন, তাহলে নারীর অধিকার থাকলো কই? নারী দিবসে প্রত্যেকটি নারী শপথ নিন, ঝি-চাকরানী, বউ শ্বাশুরী যেই হোন না কেন, কেউ কাউকে অত্যাচার করবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১১:২৪