কয়েক দিন আগে গিয়েছিলাম ঢাকা সাভারের সিআরপিতে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত রুগীর অভাব নাই। হাঁটতে চলতে পারে না। ট্রলিতে করে ঠেলে ঠেলে আত্মীয়স্বজনেরা এদিক থেকে ওদিকে নিয়ে যায়। অনেকে হাত পা নাড়াতে পারে না আবার অনেকে ঠিকমত মুখও নাড়াতে পারে না। তাদের কষ্ট দেখে খুব খারাপ লাগে। এমন রোগ যেন বিধাতা আর কাউকে না দেয় এই কামনা করি।
তবে সিআরপির পরিবেশটা চমৎকার। গাছ গাছালিতে ভরপুর। গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলে ছায়াঢাকা কোকিল ডাকা মনোরম পরিবেশ থেকে আসতে মন চায় না। মাঝে মাঝে ফুলের বাগান দেখলে মন ভরে যায়। পূর্বপাশে শানবাঁধানো ছোট একটি পুকুর আছে। চারদিকে গাছ দিয়ে ঘেরা। গাছের নিচে আরামে বসার জন্য সুন্দর সুন্দর বেঞ্চ বসানো। একবার পুকুর পারে বসলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। পক্ষাঘাতগ্রস্ত রুগিদের জন্য এত সুন্দর পরিবেশে এত ভালো চিকিৎসার হাসপাতাল বাংলাদেশে আর নেই বললেই চলে।
যে ভাবে সিআরপি শুরু হয়েছিলঃ
সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজ্ড (Centre for the Rehabilitation of the Paralysed – CRP) বাংলাদেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী ফিজিওথেরাপি সংগঠন। এর মূল কাজ শারীরিকভাবে অক্ষমদের পরিপূর্ণ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটির মূলে আছেন বাংলাদেশে বসবাসরত একজন ইংরেজ ফিজিওথেরাপিস্ট যিনি জীবনের অধিকাংশ সময়ই বাংলাদেশে মানবসেবায় ব্যয় করেছেন এবং এখনও করছেন। তিনি হলেন ভেলরি এ. টেইলর।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ১৯৭৯ সালে অনেক কষ্ট এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই হাসপাতালের দুইটি পরিত্যক্ত গুদাম ঘর পান ভ্যালেরি টেইলর। এখানেই প্রথম একেবারে ছোট আকারে প্রতিষ্ঠা করেন ফিজিওথেরাপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিআরপি এবং রোগী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেন। প্রতিষ্ঠার পর অক্লান্ত পরিশ্রম করতে থাকেন এর উন্নতির জন্য। সাইকেলে চেপে বিভিন্নজনের ঘরে ঘরে যেতেন সাহায্যের জন্য। এজন্য তাঁকে অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনাও সহ্য করতে হয়েছিল। এভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি একসময় নিজের পায়ে দাঁড়াতে সমর্থ হয়। পরিণত হয় ৪০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি দাতব্য ক্লিনিকে। এই প্রতিষ্ঠানের অগ্রযাত্রার এক পর্যায়ে তাঁকে নেতৃস্থানীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে এটি দাতব্য থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্তমানে অবশ্য তার পদ তিনি ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু এর উদারনৈতিক স্বেচ্ছাসেবার অভিযান অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে।
১৯৯০ সালের পূর্ব পর্যন্ত তিনবার তাঁর চিকিৎসা কেন্দ্রের স্থান পরিবর্তিত হয়। পরে ঢাকা মহানগরীর অদূরে ১৩ একর জমির ওপর মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হয় সিআরপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়। বর্তমানে ভ্যালেরির এই কেন্দ্রটি সিআরপি নামে সমধিক পরিচিত।
সিআরপি’র জন্ম যদিও ১৯৭৯ সালে ও রেজিস্ট্রেশন অর্জন ১৯৮১ সালে কিন্তু বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের নিয়ে ভেলোরির কার্যক্রম প্রায় ৩৪ বছর। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য তার মূল্যবান অবদানের জন্য ব্রিটেনের রানী তাঁর বিশেষ খেতাব প্রদান করেছেন। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মানব কল্যাণের জন্য ১৯৬৬ সালে তিনি হল্যান্ডের ওয়ার্ল্ড অর্থোপেডিক কনসার্ন কর্তৃক ‘আর্থার আয়ার ব্রুক’ স্বর্ণপদকে ভূষিত হন। বাংলাদেশের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিশেষ ভূমিকা রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সরকার তাকে বাংলাদেশের সম্মানজনক নাগরিকত্ব প্রদান করে। এ ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতা পদক (২০০৪), মিলেনিয়াম অ্যাওয়ার্ড, খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদক (২০০৮), মহাত্মা গান্ধী শান্তিপদক (২০০৯), যুক্তরাজ্যের ইয়র্ক সেন্ট জন ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রিসহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত এই মহামানবী এখনও বিয়ে করেন নাই। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৪ইং সালে
কেন্ট, যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম উইলিয়াম টেইলর মাতার নাম মেরি টেইলর।
(তথ্য সুত্র উইকিপিডিয়া)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৬