somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আত্মকথা

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমার আত্মকথা !!

আমি বেগুন। কেউ বলে বাগুন! আমার গালভরা একটা ইংরেজী নামও আছে। দক্ষিন এশিয়ায় আমার ইংরেজি নাম Brinjal আর বৈজ্ঞানিক নাম lanum melongena. অনেকের ধারণা আমার আদি নিবাস দক্ষিন এশিয়ার ভারতে, যেখানে আমার ব্যপক বৃদ্ধি হতে থাকে। আবার অনেকের মতে আমার বৃদ্ধি আফ্রিকাতেও হতে পারে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব মতে বিশ্বে অন্তত ২৪৭ টি বেগুনের জাত আছে। বাংলাদেশের এলাকাভেদে কৃষকরা কমপক্ষে ৪০ জাতের বেগুন চাষ করেন। বাংলাদেশে আমার অনেক প্রজাতি ও আকৃতি আছে। যেমন, তাল বেগুন, সবুজ বেগুন, কাঁটা বেগুন, লম্বা বেগুন (যাকে এক বিশেষ কারনে কলেজ বেগুনও বলে)। কাঁটা বেগুন নামে ডাকলেও তা আমি হজম করে নেই কিন্তু কলেজ বেগুন নামে ডাকলে শরীরটা কেনো যেনো ঘৃনায় রীরী করে ওঠে। সে যা হোক আমাদের দেশের কৃষক ও নারীদের জন্যই বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাতে টিকে আছে বিভিন্ন জাতের বেগুন। আকার ও প্রজাতি ভেদে এর রয়েছে অনেক ব্যবহার ও স্বাদ। কেউ কেউ লম্বা বেগুন ও শুটকী মাছের চচ্চরি, কেউ তাল বেগুন ভাজি, কেউ সবুজ বেগুন ও ইলিশ মাছের ঝোল তরকারী পছন্দ করেন। তবে অনেক নিষ্ঠুর গৃহিনী বেগুনকে চুলার গন গনে আগুনের পুঁড়ে বেগুন ভর্তা খেতে খুব পছন্দ করেন। বেগুন ভর্তা হল একপ্রকার বাঙালি খাবার। তিলে তিলে কি যন্ত্রনা দিয়ে লবন মরিচ, পেয়াজ, ধুনে পাতা আর সরিষার তেল দিয়ে বেগুন এর ভর্তা বানানো হয় দেখুন তার মর্মন্তুদ করুন কাহিনীঃ


বেগুন ভর্তা একটি নিরামিষ খাবার। বেগুন ভর্তা বানাতে প্রথমে আমাকে গ্যাসের চুলার গনগনে আগুনে অথবা কাঠকয়লার আগুনের আঁচে পুড়ে পুড়ে বা গরম পানিতে সিদ্ধ করে আমার গায়ের সমস্ত চামড়া ছিলে নিয়ে তেল, লবণব পেয়াজ, মরিচ ধুনে পাতাসহ অন্যন্য উপদান সহযোগে দলাই মর্দনে মিহি করে প্রস্তুত করা হয়। মাখার উপরও কিন্তু ভর্তার স্বাদ হেরফের হয়। প্রবাদ আছে "নুন মরিচ চর্তা এই তিনে মিলে হয় ভর্তা"। অর্থাৎ লবণ মরিচ এবং মাখানো এই তিনটি সঠিক মাত্রায় হলেই ভর্তা মজা হয়। কাঠকয়লার আগুনের আঁচে পুড়ে ভর্তা করা হলে ভর্তায় কিছুটা ধোঁয়াটে গন্ধ থাকে। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে বেগুন ভর্তা খাওয়া হয় তবে অঞ্চলভেদে এটা তৈরির পদ্ধতি এবং খাওয়ার রীতি কিছুটা ভিন্ন হয়। আমাদের দেশে সাধারণত গরম ভাতেই বেগুন ভর্তা খাওয়া হয়। তবে পান্তাভাত, কালাইরুটি বা সাজেরপিঠা, ছিটারুটি দিয়েও বিভিন্ন ভর্তা খাওয়া হয়। বেগুনী বানাতেও বেগুনের জুড়ি নেই। এটি গ্রামবাংলার অনেক সুস্বাদু ও জনপ্রিয় একটি খাবার। বিশেষত রমজান মাসে ইফতারের জন্য বেগুনী একটি জনপ্রিয় খাবার। তবে রমজান মাসে এই নগন্য বেগুনের দাম অত্যাধিক হারে বেড়ে যায়। এ কারনে এ মাসে বেগুন থাকে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। বেগুনের কোনও গুণ নেই, এ কথা যারা বলেন তারা এই সবজিটির অনেক গুণের কথাই জানেন না। বেগুনে আছে ভিটামিন এ, বি, সি, শর্করা, চর্বি, আমিষ, আয়রন। পুষ্টিবিদদের মতে, বেগুন এর উদ্ভিজ্জ আমিষ শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করে। পুষ্টিগুণে ভরা বেগুন আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যার মতো একাধিক শারীরিক সমস্যার সমাধানে বেগুন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


বেগুনে flavedon, kolinergik এসিড নামে এক ধরনের এসিড রয়েছে, যা শরীরে প্রবেশকৃত রোগ জীবাণু, টিউমারের জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। বেগুনে ফাইবার, ভিটামিন বি ১, বি ৬, বি ৩, সি, কে তে ভরপুর থাকে। এছাড়াও এতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে বলে বেগুন হৃদপিন্ডের জন্য উপকারি একটি খাবার। হৃদপিন্ডের জন্য অপরিহার্য ফ্ল্যাভোনয়েড যা বেগুনেই বিদ্যমান থাকে। তাই নিয়মিত বেগুন খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় অনেক ক্ষেত্রে। বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের টক্সিক উপাদানের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বেগুনে থাকা ফাইবার কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের খাদ্যতালিকায় বেগুণ রাখতে পারলে উপকার পাওয়া যায়। বেগুনে থাকা ফলিক অ্যাসিড গর্ভবতী মহিলাদের শরীর সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বেগুনে রয়েছে উচ্চমাত্রার আঁশ-
জাতীয় খাদ্য উপাদান যা বদ হজম দূর করে।
তবে অনেকে অভিযোগ করেন যে বেগুনে রয়েছে এলার্জির উপাদান। বিশেষ করে শীতকালে বেগুন খেলে তাদের চুলকানির মাত্রা বেড়ে যায়। কোন ময় মুরুব্বীর পরোয়া না করে অ-যায়গায়, বে যায়গায় শুধু চুলকাতেই থাকে!


বেগুন বাংলাদেশের একটি বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয় সবজি। আমাদের দেশে সারা বছরই বেগুনের চাষ হয়ে থাকে। স্বাদ ও পুষ্টিমান বিবেচনায় বেগুন একটি ভালো সবজি। আমার এত গুন থাকা সত্ত্বেও অতি মাত্রায় কেউ যদি বেগুন খেয়ে অথবা দেহে এলার্জি প্রতিরোধের ক্ষমাতা না থাকায় চুলকানি হবার দায় আমার উপরে চাপিয়ে দেন তা হলে বলতেই হয় পোঁড়া বেগুনের পোঁড়া কপাল।

দুঃখিনি পোঁড়া বেগুন!
তথ্য সূত্র ও ছবিঃ উইকিপিডিয়া/জিনিউজ অনলাইন ও গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫২
১৩২ বার পঠিত
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:২২

কাশ্মীরে বন্ধুকধারীদের হামলায় ২৬ জনকে হত্যা; নেপথ্যে উগ্রবাদী মোদীর বিতর্কিত কাশ্মীর নীতি!

পেহেলগাম, ছবি গুগল থেকে প্রাপ্ত।

কাশ্মীরে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। বিশ্লেষকদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসর্জনের ছাই

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:০৯




একদিন দগ্ধ ঘাসে ভালোবাসা পুড়িয়ে দেব।
সর্বাংগে ওর ছাই মেখে আমি বৈরাগ্য নেব।
রগড়ে রগড়ে ধুয়ে ফেলব শ্রবন মেঘের জলে।
কায়াটা কে শুকতে দেব তোমার বাড়ির উঠনে।

পায়ের নখে গজিয়ে উঠবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু আশা, কিছু হতাশা, কিছু বাস্তবতা

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯



বাংলাদেশ যেন একটা রোলার কোষ্টারে সওয়ার হয়ে চলছে এখন। প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে; একটা সংযোজন-বিয়োজনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমরা সরকারের কর্মকান্ডে আশান্বিত যেমন হচ্ছি, তেমনি হতাশায়ও নিমজ্জিত হচ্ছি;... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:১২


এই উষ্ণতায় ইচ্ছে করে ঘুরে বেড়াই নদীতে সমুদ্দুরে
বালুচরে হেঁটে বেড়াই,
ঢেউয়ে থাকি বসে, জল এসে ছুঁয়ে দিক আমায়,
হিম হাওয়া এসে ভাসিয়ে নিয়ে যাক সুখের সপ্ত আসমানে।

এই বৈশাখে ইচ্ছে করে পুকুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২


আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×