পাঠককে যদি বলা হয় যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে বেশী জীবাণূপূর্ণ নোংরা স্থান আর নোংরা জিনিসটি হচ্ছে আমাদের টয়লেট আর সেখানকার কমোড, তাহলে কেউ কি অস্বীকার করবেন? আমারতো মনে হয়না কেউ চিন্তা ভাবনা করার পর অস্বীকার করবেন। আমিও অস্বীকার করতাম না, যতক্ষণ পর্যন্ত না নীচের কথা গুলো জানতে পারলাম -
আমাদের টয়লেট
পাঠক কি জানেন যে, আমাদের বাসা বাড়ির টয়লেটের কমোডটির প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে কয়টি ব্যাক্টেরিরা থাকে? যদি না জানেন তাহলে বলি- গড়পড়তা প্রায় ৫০ (পঞ্চাশ) টি।
অন্য দিকে -
বরফ
জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভীষণ সচেতন খোদ আমেরিকাতেই এক সার্ভে তে পাওয়া গেছে যে, সেখানকার রেস্টুরেন্ট গুলোতে খাদ্য বা পানীয়ের সাথে যে বরফ খেতে দেয়া হয় তাতে নাকি টয়লেটের পানির চাইতে শতকরা সত্তুর ভাগ বেশী ব্যাকটেরিয়া থাকে। সেখানেই যদি এ অবস্থা হয়, আমাদের দেশে কি অবস্থা হতে পারে কল্পনা করুন তো?
বাসার লাইট ফ্যানের সুইচ
আমাদের বাসা বাড়িতে যে সুইচ ব্যবহার করি তাতে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় ২১৭ টি ব্যাক্টেরিয়া থাকে। বলি ওরা কি ওখানে সুইচ টেপাটেপি করার জন্য থাকে নাকি?
মোবাইল ফোন
যা বাবা, দিলাম নাকি মেজাজ খারাপ করে? মোবাইলেও? জ্বী। আপনার কমোডের সিটের চেয়েও আপনার মোবাইলে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১০ গুণ বেশী ব্যাক্টেরিয়া থাকে। কি বিশ্বাস হয়? হয় না, তাই না? তা হবে কিভাবে? সারাক্ষণ তো মোবাইল গালের সাথে লাগিয়ে রাখেন, কমোডের সিটে কি পারবেন এভাবে গাল ছোঁয়াতে?
কি বোর্ড
আপনার কম্পিউটারের কি বোর্ডে থাকে কমোডের সিটের চেয়ে ২০০ গুণ বেশী ব্যাক্টেরিয়া। বলি, ওরা নিশ্চয়ই কাজ করে ওখানে।
অফিস ডেস্ক
এবার তো যাবেন স্যারেরা ক্ষেপে, তার পরেও বলি- স্যার, আপনি অফিসে যে ডেস্কে বসে কাজ করেন সেখানে আপনার টয়লেটের চেয়ে প্রায় ৪০০ গুণ বেশী জীবাণু থাকে । আমি বলি কি? এর চেয়েতো টয়লেটে বসেই কাজ করা ভালো, অন্তত জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা তো কম থাকবে তাই না? সাথে বারবার উঠে টয়লেটেও যেতে হবে না, ওখানে বসেই কাজটা সেরে ফেলতে পারলেন! এক ঢিলে দুই পাখি!
রেস্টুরেন্টের মেন্যু বই
শতকরা ৯৯ জনেরও বেশী মানুষ নাকি রেস্টুরেন্টে ঢুকে আগে সাবান দিয়ে হাত ভালো করে হাত ধুয়ে নেয়। তারপর ধীরে সুস্থে তার আসনে এসে আরাম করে বসে রেস্টুরেন্টের মেন্যু বই টা দেখে খাবারের অর্ডার দেয়।
জানি, আপনারা বলবেন যে, তাতে সমস্যা কি? আরে ভাই সমস্যা তো ওখানেই! আপনি তো রেস্টুরেন্টে ঢুকেই হাত একেবারে জীবাণু মুক্ত করে ফেললেন, কিন্তু তারপর যে ঐ মেন্যু বইটা ধরলেন! ঐ বইটাতে তো আপনার কমোডের সিটের চেয়েও ১০০ গুণ বেশী জীবাণু বিদ্যমান! পারবেন নাকি ওটার চেয়েও অনেক কম জীবাণু সমৃদ্ধ আপনার কমোডটিতে হাত ঘষে তারপর খাওয়া খেতে? জানি পারবেন না। যত দোষ ঐ কমোডটারই, তাই না?
ও, একথা আবার ভুলেও রেস্টুরেন্ট মালিকদের বলতে যাবেন না যেন, বলেছেন তো মরেছেন। ব্যাটারা খাওয়ার বিলের সাথে সাথে ঐ জীবাণু গুলোর বিলও হাতে ধরিয়ে দেবে, আফটার অল খেয়েছেন তো ?
কার্পেট
আপনার বাসার কার্পেটে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে থাকে প্রায় দুই লক্ষ ব্যাক্টেরিয়া। আপনার কমোডের সিটের চেয়েও প্রায় ৪০০০ গুণ বেশী।
টাকা
টাকারও একই অবস্থা, কার্পেটের মতই। এ জন্যই বোধ হয় বলা হয় যে, টাকা হচ্ছে হাতের ময়লা। সুতরাং টাকা ধরলেই হাত ধুয়ে ফেলুন।
কিচেন স্পঞ্জ
বাক্টেরিয়া ও জীবাণূর আরেক আখড়া। প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে এক কোটিরও বেশী ব্যাকটেরিয়া থাকে এ বস্তুটিতে। আবার এ ছাড়া আমাদের চলেই না। সমাধান? আছে, কয়েকদিন পরপরই বদলে ফেলুন আপনার কিচেন স্পঞ্জটি।
পাবলিক রেস্টরুমের ফ্লোর
সারপ্রাইজের কিছুই নেই। প্রতি স্কয়ার ইঞ্চিতে ২০ লক্ষ ব্যাক্টেরিয়া! অবশ্য আমরা তো জুতা পড়েই যাই, তাই না?
অ্যাপ্লায়েন্স রিমোট কন্ট্রোল
টিভি, এসি কিংবা অন্যান্য অ্যাপ্লায়েন্স গুলোর রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করেন না? ওটাও বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া আর জীবানূর আখড়া, আর অবশ্যই তা আপনার টয়লেটের চেয়ে অনেক বেশী।
দরজার হাতল
আপনার কমোডের ভেতরকার চেয়েও নোংরা এই জিনিসটি আপনি প্রতিদিন ধরছেন, তাও দরজা খোলার সময় আর বন্ধ করার সময়।
কিচেন সিঙ্ক
টয়লেটের কথা ভুলে যান, আপনার সমস্ত টয়লেটের যে কোন স্থানের চেয়েও অনেক অনেক বেশী নোংরা হচ্ছে আপনার এই কিচেন সিঙ্ক।
চপিং বোর্ড
এটি এমন একটি জিনিস যা দেখতে আপাত নিরীহ মনে হলেও তা সবসময়েই নিয়োজিত থাকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া আর রোগজীবাণু উৎপাদনে, বিশেষ করে এতে গোস্ত কাটার পর। আর এটি এ কাজে খুব সহজেই হারিয়ে দেয় আপনার কমোডটিকেও ।
টুথ ব্রাশ
বেশীর ভাগ মানুষেরাই তাদের টুথ ব্রাশ রেখে দেন টয়লেটে, আর এ ছাড়া রাখবেনই বা কোথায়? এ তো আর ডাইনিঙয়ে বা রিডিং টেবিলে রাখার জিনিস না, ঠিক না? বলি, যেখানেই রাখুন না কেন, অন্ততঃ আপনার টয়লেটের কমোড থেকে ছয় ফিট দূরে রাখুন। কেন? আপনার কমোড যখন ফ্লাশ করেন তখন কমোডের ব্যাক্টেরিয়া গুলো নাকি বাতাসে উড়ে যায়। এভাবে উড়ে সেগুলো ছয়ফিট পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে আর বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে দুই ঘন্টা পর্যন্ত। আর জানেন এ সময়ে তাদের সবচেয়ে পছন্দের আশ্রয়স্থল কোনটা?। জ্বী, আপনার টুথব্রাশ।
বালিশ
আপনার শরীরের মৃত কোষ গুলো যে ব্যাক্টেরিয়া গুলো এবং অন্যান্য সকল মাইটস্ কে আকর্ষণ করে সেগুলোর অতি পছন্দের আবাসস্থল গুলির মধ্যে একটি হচ্ছে আপনার বালিশ । সেগুলো জানে যে, রাত হলেই আপনার মাথা এখানে রাখতে হবে । আর এগুলো সংখ্যায় কত? আপনার কমোডের চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বেশী।
তোষক
গড়পরতা প্রায় দশ বছরে আমাদের খাটের তোষক গুলি ওজনে দ্বিগুন হয়ে যায়। কেন জানেন? ঐ বিভিন্ন ধরণের মাইটস্ আর তাদের বর্জ্যের কারণে।
শাওয়ার হেড
অনেকে ঝর্ণাও বলেন। এটি কিন্তু কোন ব্যাক্টেরিয়ার আবাসস্থল না, কি শান্তি লাগছে, না? হ্যা শান্তিরই কথা। এটি হচ্ছে ব্যাক্টেরিয়াদের ম্যাটার্নিটি। মানে ওদের বংশ বৃদ্ধির যায়গা আরকি। বলি, শাওয়ার হেড গুলোকে একটু যত্নে রাখবেন, ছোট ছোট বাচ্চা ব্যাক্টেরিয়া গুলি, আহ্, চিন্তা করেই আমার চোখে জল এস যাচ্ছে।
আপু মনিদের হ্যান্ডব্যাগ
আপু মনিদের বলছি, মনে করতে পারবেন শেষ কবে আপনার হ্যান্ড ব্যাগটি ধুয়েছেন? মনে করতে পারছেন না, তাই না? ঠিক আছে, শুধু এটুকু মনে রাখলেই চলবে যে, আপনার কমোডের চেয়ে কয়েক লক্ষ গুণ বেশী নোংরা ও জীবাণূ পরিপূর্ণ হচ্ছে আপনার এই হ্যান্ডব্যাগ।
বারবার ব্যবহার উপোযোগী বাজারের ব্যাগ
আচ্ছা আমরা পুরুষেরা যে আন্ডারওয়্যার পড়ি, সেটা কি নিয়মিতই ধোয়া হয়না? জানি সবাই বলবেন, হ্যা হয়। আচ্ছা তাহলে বলি- ধরেন, আপনার পরনের আন্ডারওয়্যারটি ধোয়া হয় না, মানে নিয়মিত ধোয়া হয় না তা বলছি না, বলছি কখনোই ধোয়া হয় না। তো এমন একটি আন্ডারওয়্যারে করে যদি আপনি বাজার করে নিয়ে আসেন তাহলে আপনার গিন্নি কি খুশী হবেন? নাকি আপনার মাথায় এই বাজার ছুঁড়ে মারবেন? আমিতো বলি খুশীই হবেন, কারণ সবসময়ইতো হচ্ছেন। আপনি ঐ যে নিয়মিত না ধোয়া বাজারের ব্যাগে বাজার করছেন, তা নিয়মিত না ধোয়া আন্ডারওয়্যারে করে বাজার নিয়ে আসারই সমতুল্য। বরং কিছু দিক দিয়ে না ধোয়া এই বাজারের ব্যাগ ওটার চেয়েও নোংরা অবস্থানে পড়ে।
তাহলে কি কারণে কমোড এত স্বাস্থ্যসম্মত ?
তাহলে কি আমি বলতে চাচ্ছি উপরের সবকটির চেয়ে আমাদের বাসার কমোডই সবচেয়ে বেশী স্বাস্থ্যসম্মত? না, মোটেই না। বরং আমরা নিজেরাই এই সব জিনিসগুলির চেয়ে আমাদের টয়লেটের কমোডটিকে অনেক বেশী স্বাস্থ্যসম্মত করে রাখি। আপনার কমোডটিকে আপনি যেভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে এতভাবে জীবানূমুক্ত করছেন, আপনার মোবাইল ফোন, হ্যান্ডব্যাগ, দরজার নব বা উপরে লেখা জিনিসপত্র গুলোর দিকে সেভাবে কি কোনদিন কোন গুরুত্ব দিয়েছেন? যদি না দিয়ে থাকেন তাহলে ওপরের সবকটি বিষয়ই আপনার জন্য প্রযোজ্য।
সবশেষে একটি হাদিস-
চলবে -
এই সিরিজের অন্যান্য পোষ্টগুলিঃ
১। কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১
২।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-২
৩।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৩
৪।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৪
৫।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৫
৬।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৬
৮।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৮
৯।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-৯
১০।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১০
১১।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১১
১২।কত কিছু জানি নারে ? পাঠক নিজ দায়িত্বে হজম করিবেন-১২
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৫