“ভালবাসার রঙ”। একটাই যদি মন্তব্য যদি করতে হয় তাহলে বলতে হবে এর প্রিন্ট। পর্দার দিকে তাকালেই মন জুড়িয়ে যাবে। ঝকঝকে তকতকে বলতে যা বোঝায় তাই। তবে মন জুড়ানো ভাব সরে গিয়ে হাসি আসতে সময় লাগবে না আপনার। ব্যাপার আর কিছুনা। চৌধুরী সাহেবের(রাজ্জাক) বডিগার্ড এর বাহারী দৃষ্টিনন্দন পোশাক আপনার দৃষ্টি কেড়ে নেবে। লুঙ্গি পরে পেট উচিয়ে আছে। এটা কোন ব্যাপার না। কিন্তু সাথে যে আবার আর্মি বেল্ট ও পরে আছে! (অফ টপিকঃ সেনাবাহিনীতে গত মাস থেকে বেল্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। এখন আর্মিতে কেউ বেল্ট পরেনা কমব্যাট ড্রেসের সাথে। আমার মনে হল বেল্টের এমন নিদারুন ব্যবহার দেখে সেনাবাহিনী লজ্জা পাইছে। তাই তারা আর বেল্ট পরেনা!)
রেড ক্যামেরা দিয়ে সিনেমা বাংলাদেশে এই প্রথম। স্বাগতম জানাই তাদের এই শুরু করা। কিন্তু প্রচলিত বানিজ্যক ধারা থেকে কতটুকু বেরিয়ে আসতে পেরেছে এই "রেড ক্যামেরা"। কাহিনী গতানুগতিক। নায়ক বাপ্পী সর্বগুনে গুণান্ন্বিত যথারীতি। "নায়ক হইছে তার মানে সব পারে"- এই রীতি থেকে কবে আমরা বের হতে পারবো জানিনা। যাই হোক তার পছন্দ হয় চৌধুরী সাহেবের নাতনী মাহিকে। তবে তাদের প্রথম সাক্ষাৎ বেশ রোমাঞ্চকর! প্রথম দেখাতেই মাহি বাপ্পীর পাছায় গুলতি দিয়ে হিট করে নির্ভুল ভাবে! নায়িকার কাছে সব সময় গুলতি রেডী থাকে। ভাবলাম নায়িকা কি আবার গেছো টাইপ নাকি রে বাবা! যাই হোক পাছা ডলতে ডলতে চৌধুরী বাড়ী থেকে বের হয় বাপ্পী। প্রাকটিস করতে থাকে মাহিকে কিভাবে, কি ভঙ্গিতে প্রোপোজ করবে। করেও ফেলে প্রোপোজ। পরিচালক এখানে নায়ককে পানিতে হাবুডুবু খাইয়ে একটু ভিন্নমাত্রা আনার চেষ্টা করেছিলেন। তা ব্যার্থ হয়েছে।
এরপর শুরু হয় হিন্দি সিরিয়াল। মাহি বাপ্পীকে বলে তুমি আমার দাদুর ছড়িটা যদি চুরি করে আনতে পার, তবে আমি তোমাকে ভালবাসব। বাপ্পী যায়। চুরি করে নিয়ে আসে। এত পাহারা চৌধুরী বাড়িতে। কিন্তু সব দরজা খোলা থাকে। বাপ্পী মনের সুখে শিস দিয়ে গান গাইতে গাইতে ছড়ি নিয়ে আসে। তারপর,তুমি আমার চাচীর টেপরেকর্ডারটা নিয়ে আসতে পারলে ভালবাসব। এই টেপরেকর্ডার আবার বড়ই আজিব। চব্বিশ ঘন্টাই চাল্লু থাকে। যথারীতি আবার বাপ্পী আসে। টেপরেকর্ডার নিতে। এইখানে বড়ই আজব দৃশ্য দেখা যায়। মুখে কড়া মেকাপ নিয়ে মাহির চাচি নাকি মামি শুয়ে আছে। পাশে তার হাজব্যান্ড। দরজা খোলা। পাটভাঙ্গা ইস্ত্রি করা বিছানার চাদরে উপরে দুইজন নিদ্রারত। আর টেপরেকর্ডার এ গান চলছে! তবে ওই যে কথায় আছে না, যে চোরের দশদিন আর গৃহস্থের একদিন। এইদিন প্রায় ধরা খায় বাপ্পী। কোনরকমে বেচে আহত রক্তাক্ত অবস্থায় পালিয়ে যায় জঙ্গলে। নায়িকা মাহি তা জানতে পেরে ঐ রাত্রেই জঙ্গলে যায় স্যাভলন নিয়ে। ব্যস হয়ে গেল প্রেম। ডিস্টিং ডিস্টিং গান। তবে গান গুলো কিন্তু একেবারে খারাপ করে নাই।
এদিকে কাহিনী নতুন মোড় নেয়। দেখা যায় যে মাহি আসলে চৌধুরী সাহেবের নাতনী না। তাকে কুড়িয়ে পেয়ে মানুষ করছেন তিনি। মাহি আসলে "ফারিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ" এর একমাত্র উত্তরাধিকারী। তাকে তুলে নিতে আসে ভিলেন অমিত হাসান। চৌধুরী সাহেব খুন হন। সাথে তার লুঙ্গি আর বেল্ট পরা গার্ড ও। মাহি কোনরকমে পালিয়ে বাপ্পীর কাছে যায়। বাপ্পীর বাবা ওদের দুইজনকে নীলগিরির পাহাড়ে চলে যেতে বলে। সেখানে পুরান এক বাংলো বাড়িতে আশ্রয় নেয় ওরা। ঘটনাক্ররমে ওই বাড়িতেই আশ্রয় নেয় অমিত হাসানের ছোটভাই। সে অমিত হাসানেরর লিভার অপারেশনের টাকা গাপ করে পালিয়ে এসেছে। ভাইকে খুজতে এসে মাহিকে পেয়ে যায় অমিত হাসান। ব্যস, পুরো সম্পত্তি তাদের হাতের মুঠোয়। পরিচালক দেখলেন আরে এখন ভিলেনদেরকে মারবে কে? তাই নিজেরাই নিজেদের কে গুলি করে। একজন আরেকজঙ্কে। ভাগ বেশি পাওয়ার আশায়। তারপর আর কি? যথারীতি ঘটনার শেষে পুলিশের আগমন। অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল টাইপ ব্যাপার। এবং ডিস্টিং ডিস্টিং গান।
## কিছু অসাঞ্জস্যতা প্রকটভাবে চোখে পড়ে। নায়িকা পুরোটা সময়ই কড়া মেকাপে ছিল। এমনকি ঘুমের মধ্যেও তার কড়া মেকআপ এতটুকু ম্লান হয়নি। এক্ষেত্রে শুধু নায়িকা না। চৌধুরী সাহেব নিজেও মেকাপে কম যাননা।
## কাবিলা মামা বেশ কিছু সময় দর্শককে হাসিয়েছে। তার নিখুত বরিশালের ভাষা এর মূল কারণ। তারপর মনে হল চরিত্রটা হঠাৎ ই হারিয়ে গেল। তবে তার একটা গান আছে। সেই গানে তার ড্রেসআপ সেইরকম। খুব খিয়াল কইরা দেইখেন। নইলে মজা মিস!
## পুরো সিনেমায় অমিত হাসানের অভিনয় ছিল বেশ সাবলীল। তার “ওই কারো হাত থাকবোনা, কারো পাও থাকবোনা!” ডায়লগটা ভাল ছিল। তবে একেবারে শেষের দৃশ্যে তার অভিনয় আর ডায়লগ খুবই বিরক্তিকর। তবে এজন্য দায়ী তিনি নন। পরিচালক শাহীন সুমন এই দায় এড়াতে পারেননা।
## সংলাপ যিনি লিখেছেন উনাকে একবার দেখতে মুঞ্চায়! নীলগিরির বাংলোতে নায়িকা শুয়ে আছে নায়কের কোলে মাথা রেখে। নায়িকা তার দু;খের কথা বলছে। তখন এই আবেগঘন পরিবেশে নায়কের ডায়লগ ছিল “মাহি, যারা অন্যায় করে আল্লাহ তাদের নিজেই শাস্তি দেন”। খুবই ভাল কথা, কিন্তু পুরো হল হাসিতে ফেটে পড়ে। তারপর “বাপ্পী মরে যাবে কিন্তু তোমার গায়ে আচড় লাগতে দেবেনা”। এটাও ব্যাফুক বিনুদুন দিছে দর্শককে। কেউ কেউ শিস ও দিয়ে উঠেছেন।
শেষ দিকে বিরাট অ্যাকশান। অমিত হাসান পিস্তল কেড়ে নেয় পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে। তখন পুলিশ অফিসারের ডায়লগ এইরকম “পিস্তল দে, ওই আমার পিস্তল দে”।ভাবখানা এমন যে ওই তুই আমার পিস্তল নিছস ক্যা? আব্বারে কইয়া দিমুই কিন্তুক! তারপর আবার অমিত হাসান কট। তখন তার ডায়লগ “পালাবার দে আমারে”। কি আবদার! ওই তোরা সর, আমারে পালাবার দে!
## গানগুলা খারাপ না। কিন্তু গান শুরু হয় একেবারে বেমক্কা জায়গায়। নীলগিরির জঙ্গলে নায়ক নায়িকা পলায়নরত। একটু ঝোপ পাইয়া তার মধ্যে ঢুইকা গেছে। মাথার উপ্রে ভিলেনের লোকজন। টানটান উত্তেজনা। এই পরিস্থিতিতে শুরু হইল গান।
## অ্যাকশন দৃশ্যে স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহারের চেয়ে গানেই ব্যবহার বেশী। নায়িকার পাহাড়(মাটির ঢিলা) থেকে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য আর নায়কের উদ্ধারের ভঙ্গি দর্শক হাসিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে স্পষ্ট যে, নায়িকা ইচ্ছা করে হাতপা ছুড়ছে। কয়েকবার মুখ দেখালো, সেখানে কোন এক্সপ্রেশনই নেই! জাস্ট সিম্পল মুখভঙ্গি। অথচ সে পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছে।
ভুলগুলো মূলত পরিচালকের। কাহিনীর পরম্পরা ঠিক রাখতে না পারলে রেড ক্যামেরা একা আর কতটুকু কি করবে? তবে এই প্রিন্ট এর ছবির জন্য "জাজ মাল্টিমিডিয়া" একটা ধন্যবাদ পেতেই পারে
অঃটঃ কিছু কারণে আমার আগের নিকটাতে লিখছিনা। আর এই নিকটা সেফ করার জন্য বিগত আট মাসে কিছু অনিয়মিত পোস্ট দিসিলাম। সেগুলো ড্রাফটে নিলাম। মুভি রিভিউ এর মাধ্যমেই শুরু হল এই নিকের পথচলা।