#জাকির_ওরফে_জ্যাকি
১ম খন্ডঃ
ঢং ঢং শব্দে বেল পরতেই হাফ ছেরে বাচলাম যেন।
অবশেষে পরিক্ষা শেষ হল আমার।
টিচার এসে আমার খাতা নিয়ে গেল।
গেট থেকে বের হয়েই দেখি জাকির একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।
আমি গিয়ে বললাম "কিরে ব্যাস্ত নাকি"
২ মিনিট দোস্ত।
একটু দূরে গিয়ে দারালাম।
শুনতে পেলাম জাকির বলছে
এখনো কিন্তু তুমি বলনি। দেখ নামটা তো জানতেই পারি।
মেয়েটা একটু রহস্যময় ভাবে হেসে বলল
-ভাইয়া আমি রহস্য। এটাই আমার নাম।
- মজা করছ?
আমি একটু বেশি দুরেই চলে এলাম। জাকিরের হাত চলছে। নেরে নেরে কথা বলছে। মেয়েটা বলছে কম হাসছে বেশি।
১০ মিনিট পরেও যখন জাকির এলোনা এবার আমি গেলাম।
-এই জাকির। ২ মিনিট হতে কয় মিনিট লাগে?
মেয়েটা হেসে দিল।
জাকির আমার দিকে রাগী রাগি ভাবে তাকিয়ে ইশারায় চুপ করতে বলল। আমি সরে আসলাম।
জাকির তার নাম জ্যাকি বলেই পরিচয় দেয়।
ভার্সিটি তে জ্যাকি নামেই পরিচিত।
আমরা যারা ওর আসল নাম জানি, তারা ফটকা নামেই ডাকি। নামের এহেন পরিবর্তন কোন সমাস, প্রক্রিতি বা প্রত্যয় না মেনেই হয়েছে।
জাকির তার এই নাম কারো কাছে বলতে চায়না। জ্যাকিই নাকি স্মার্ট।
ফটকার ডাকে ফিরে তাকালাম।
- হাটে হাড়ি না ভাঙলে হয় না তোর?
- কি করলাম!
- জাকির নামটা না বললে কি হত?
- আমি হেসে দিলাম। দোস্ত তোরে ভাল ভাবে কইলে তুই আরো ১০ মিনিট দেরী করতি। আচ্ছা চল।
- তুই যা বাল। আমি যামু না। মারা দিয়া এখন আড্ডা। যামুনা যাহ বলেই হন হন করে নিচে নেমে গেল।
আমিও পেছন পেছন নেমে আসলাম।
আমি বাইক নিয়ে চা এর দোকানের সামনে এসে হর্ন দিলাম। জাকির না তাকিয়েই বলল যা ভাগ যামুনা। আমি ক্লাচ ধরে রেখেই পিক আপ বারালাম।
গো গো শব্দ করছে। আমি সামনে তাকানো। পেছনে কেউ বসলো। দেখার প্রয়োজন নেই। ছেরে দিলাম ক্লাচ।
- স্যরি জ্যাকি। মেয়েটার সামনে আর কোনদিন জাকির বলব না।
-অফ যা, সাইফকে চেনা আছে আমার।
এইবার নিয়া ৪।
- তিন দোস্ত।
- ৪ কারন তমার সামনে ২ বার বলছিস।
- মেয়ে তো তিনটা।
- তো? বলছিস তো চার বার।
- আচ্ছা। হইসে। বাদ দে। খিদা লাগছে। টাকা পয়সা আছে কিছু?
- ৫০ টাকা আছে বাল।
- আমার কাছে আছে ২০০ চল বার্গার খাই।
- টেস্টি ট্রিটে ৬০ টাকায় বার্গার। ওটা খাই।
- চল
খেয়ে বের হয়ে মোহাম্মাদপুর বাস স্টান্ড পার হতেই ট্রাফিক ধরলো। ড্রাইভিং লাইসেন্স বাইকের লাইসেন্স চেক করে বলল ইন্সুরেন্স এর কাগজ।
দেখালাম।
দেখে বলল এটার তো মেয়াদ নেই।
সাইডে আসেন।
আমি বললাম মেয়াদ দেখেন কয়েকদিন আগেই গিয়েছে।
তিনি সাইডে আসেন বলেই কাগজ নিয়ে পাশে গেল। আমি বাইক থামালাম। জ্যাকি পুলিশের সাথে কথা বলছে।
পাশের একটা দোকানের দিকে নির্দেশ করে কিছু একটা বলল।
কিছুক্ষন কথা বলার পরে জাকির আমাকে আসতে বলল। আমি আসলাম।
আস্তে বলল কেস করলে ৬০০ বা ৭০০ টাকা লাগবে। কিন্তু ওই দোকানে মামার নাম বলে ২০০ টাকা দিলেই হবে।
-দোকানে কেন! হাতে দেই?
-না লোকজন দেখলে আবার ঝামেলা।
- টাকা তো ২০০ হবেনা।
-আচ্ছা আমি দেখতাছি বলেই পুলিশের কাছে গেল। কিছু কথা বলে আমাকে বলল দোস্ত ওই দোকানে গিয়া ২০০ টাকা দিয়া আয়।
আমি বললাম কিন্তু.....
আমাকে থামিয়ে ও বল্লো আচ্ছা আমি দিতাছি, তুই কাগজ গুলা নিয়ানে। জ্যাকি চলে গেল ওই দোকানে।
মামা আমাকে কাগজ দিলেন। আমি বললাম মামা আপনার দেশের বাড়ি কোথায়!
- মাদারিপুর।
-আমারো মাদারিপুর।
-মাদারিপুরের কোথায়?
-আমার বাসা সদর থানায়।
এমন সময় জ্যাকির ডাকা তাকালাম।
সে পাচ আংগুল দেখিয়ে বলছে কত মামা ৫০০?
আমি মনে মনে গালি দিলাম শালা কই ১০০ কইবে তানা ২০০ রে ৫০০ কিনা জিগায়।
আমি আগে চিৎকার দিয়া কইলাম ২০০।
জ্যাকি মামারে জিজ্ঞেস করল আবার
মামা ২০০ না ৫০০।
মামা ২ টা আংগুল দেখিয়ে বলল ২০০।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল ৫০০ বলে কেন?
আমি চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম ওর মাথায় একটু প্রব্লেম আছে। দেখা যাবে এসে বলতেছে আপনি ১০০ টাকা দিতে বলছেন।
এই মুহুর্তে জ্যাকি হাজির। হাতে একটা কোকের বোতল।
বল্লো মামা একবার ৫০০ বলেছিল পরে ২০০ বলেছিল। আমি আউলাইয়া গেছিলাম।
আমি আস্তে আস্তে বললাম শালা ১০০ কইয়া ভুলতে পারতি।
পুলিশ মামা চা খেতে বললেন।
আমি রাজি কিন্তু জ্যাকি বলল আজ না।
আরেকদিন। একটু কাজ আছে।
আমরা চলে আসলাম।
জ্যাকি বলল এদিক দিয়ে না সামনে গিয়ে ইউ টার্ন নিয়ে অই গলি দিয়ে যা।
-কেন?
আছে।
ঘুরে গলি দিয়ে বের হয়ে মিরপুর রোডে উঠতেই জ্যাকি উচ্চ শব্দে হেসে দিল।
-হাসিস কেন??
- কাম তো একটা করেছি।
- কি?
-পুলিশ মামা আমারে ২০০ টাকা দিতে বলেছিল। আমি তো নিয়া আসছি।
-মানে?
- মানে দোকানে গিয়ে বলছি উনি আমার মামা হন, আমার কিছু টাকা দরকার ৫০০ হলেই হবে। মামার কাছে চাইলাম আপনার এখান থেকে নিতে বলল। যদিও মামা আমাকে ২০০ নিতে বলেছে, আপনি ৫০০ দেন। আমি বলে দিচ্ছি।
দোকানদার বলল না আগে জিজ্ঞেস করি কত দিব।
সে জিজ্ঞেস করার আগে আমিই ডাক দিয়া জিগাইলাম মামা ২০০ না ৫০০, মামা নিজ হাতে ২০০ কইল।
দোকানদার বলে ভাই সে কইলে আমি ১০০০ ও দিতে পারব। যেহেতু ২০০ বলেছে আমি বেশি দিতে পারব না।
২০০ নিলাম আর কোকের ক্যান টা নিয়া কইলাম মামা দিবে।
সে আর কিছু কইলো না।
২ জনেই হাসতে লাগ্লাম।
জ্যাকি পারেও।
এর আগেও একবার এক অন্ধ ভিখারী একটা থাল পেতে ভিক্ষে করছিল।
তাতে ৫০ টাকার একটা নোট, ২ টাকা ৫ টাকা আর কিছু কয়েন ছিল।
জ্যাকি আমার থেকে ২ টাকার একটা কয়েন নিয়ে গেল। ভিখারির থালায় বেশ উপর থেকে কয়েন্টা ছেরে দিন। ঝনঝন শব্দ হল। আস্তে ৫০ টাকার নোট টা তুলে নিল।
অন্ধ ভিখারি অপলক চোখে তাকানো।
জ্যাকি দারাতেই অন্ধ মানুষ বলে কি করেন মামা?
জ্যাকি টাকা টা দিয়ে বলল দেখালাম আসলেই অন্ধ কিনা।
ফটকামি ছেরে দাও মিয়া বলে চলে আসলো।
(চলবে)