পাকিস্তানের সমরশক্তি নিয়ে লেখা পড়তে চেয়েছেন। এটি দেয়া হলো।
মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর জার্নালের নাম আর্মড ফোর্সেস জার্নাল। জার্নালটিতে নিবন্ধ লিখেন রালফ পিটার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একজন অবসরপ্রাপ্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তা। ২৫ বছর ধরে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করছেন পিটার। ২০০৬ সালের জুলাই সংখ্যায় তিনি একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধের শিরোনাম ছিল ‘ব্লড বর্ডার্স’। বংলায় অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘রক্তের সীমানা’। নিবন্ধটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- সৌদি আরব, তুরস্ক, মধ্য এশিয়া হয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত সব মুসলিম দেশের বর্তমান সীমানা মুছে দিয়ে এগুলোকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো। পিটার তার পরিকল্পনায় বলেছেন, সৌদি আরবের মধ্য থেকে পবিত্র ধর্মীয় স্থান মক্কা-মদিনাকে নিয়ে গঠিত হবে ‘পবিত্র রাষ্ট্র’ বা ‘সিক্রেট স্টেট’। ইরাক হবে ত্রিখণ্ডিত। বসরাকে নিয়ে হবে দক্ষিণের শিয়া রাষ্ট্র। মধ্যখানে সুন্নি রাষ্ট্র। কুর্দিদের নিয়ে কুর্দিস্তান। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর নিয়ে হবে স্বাধীন বেলুচিস্তান রাষ্ট্র। সীমান্ত প্রদেশ যাবে আফগানিস্তানে। শুধু পাঞ্জাব আর সিন্ধু থাকবে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত। তবে লণীয় হলো, রালফ তার মহাপরিকল্পনা পাকিস্তান পর্যন্ত এসে শেষ করেছেন, আর এগোননি।
পাঠক উপসাগরীয় যুদ্ধের পর বর্তমান বাস্তবতা একটু লক্ষ করুন। এই যুদ্ধের পর ইরাককে কার্যত তিন অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট দেশটি তিনটি অংশ করার আনুষ্ঠানিক প্রস্তবও দিয়েছে। এ দিকে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর উপস্থিতির পর হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বেলুচিস্তান সমস্যা দিন দিন যেভাবে স্পষ্ট হয়ে উঠছে তা দেখে অন্তত ইরাক আর পাকিস্তানে নিকট ভবিষ্যতে রালফ পিটারের মহাপরিকল্পনার ছায়া যদি কেউ দেখে, তাহলে তা কি খুব অবাস্তব বলা যায়?
দেশরক্ষর নামে সেনাবাহিনী অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সম্পর্কে সম্প্রতি লন্ডন থেকে একটি গবেষণামূলক বই বেরিয়েছে। বইটি লিখেছেন পাকিস্তানের সামরিক বিশেস্নষক ও লেখিকা আয়েশা সিদ্দিকা। বইটির নাম মিলিটারি ইনকর্পোরেটেড-ইনসাইড পাকিস্তানি মিলিটারি ইকোনমি। এতে দেখানো হয়েছে দেশরার নামে সেনাবাহিনী আসলে কী সাঙ্ঘাতিক অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। এতে যা দেখানো হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত চিত্র এখানে তুলে ধরা হলো।
পাকিস্তান দেশটির যাবতীয় ভারী শিল্প-কারখানার এক-তৃতীয়াংশ এখন সেনাবাহিনীর মালিকানাধীন। এক কোটি ২০ লাখ একর সরকারি জমি ও শতকরা ৭ ভাগ বেসরকারি সম্পদের মালিকও এই সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যবসায় সম্পদের পরিমাণও হাজার হাজার কোটি ডলার। কল্যাণ ফাউন্ডেশন হিসেবে পরিচিত সামরিক বাহিনীর পাঁচটি সুবিশাল কনগেস্নামারেট রাস্তার পাশের পেট্রোল পাম্প থেকে শুরম্ন করে অতিকায় শিল্প, সিমেন্ট থেকে শুরম্ন করে কর্নফে তৈরির কারখানা পর্যন্ত হাজার হাজার ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠান চালিয়ে আসছে। শুধু চুলকাটার সেলুন বাদে পাকিস্তানের প্রায় প্রত্যেকটি ব্যবসা-কারবারের সাথেই সেনাবাহিনী যুক্ত। পাকিস্তানের কোম্পানিগুলো ও সেগুলোর মূল সম্পদ এখন ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু সিনিয়র আর্মি অফিসারদের হাতে।
বইটিতে আরো বলা হয়েছে, পাকিস্তানের ৬০ বছরের ইতিহাসের ৩২ বছরই সরাসরি দেশ শাসন করেছে সেনাবাহিনী। শাসনমতার কারণে তারা রাষ্ট্র, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কতৃêত্ব দখল করতে পেরেছে। ফলে তাদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য হয়ে উঠেছে সর্বগ্রাসী। পাকিস্তান রাষ্ট্রে এখন তাই সেনাবাহিনী নিজেই আরেক রাষ্ট্র। তাদের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের মুনাফাই এখন রাজনৈতিক মতা নিয়ন্ত্রণের চালিকাশক্তি। আর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মতার প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে সামরিক বাহিনী এখন স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও সর্বগ্রাসী মতাধর শ্রেণী। ল করার মতো আরো কয়েকটি বিষয় হলো, অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের মূলধন ও মুনাফা শুধুই সামরিক বাহিনী তথা সংখ্যালঘু অফিসারদের কল্যাণে নিয়োজিত। এই অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য ও মুনাফাই সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের জন্য দায়ী। এই সাম্রাজ্যের কারণেই সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক মতা পরিত্যাগ করে ব্যারাকে ফিরে যেতে রাজি করানো যায় না। এই অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যই সামরিক বাহিনীকে বার বার মতার কেন্দ্রে টেনে আনে। গবেষণা থেকে দেখানো হয়েছে, সুদীর্ঘকাল দেশ শাসন করার ফলেই তাদের প েএই অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়া সম্ভব হয়েছে।
সামরিক বাহিনীর অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গোপন রাখা হয়
বইটিতে তুলে ধরা আরেকটি গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সামরিক বাহিনীর এই অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যের সবটাই দেশের জনগণের কাছে গোপন রাখা হয়। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মূলধন এখন কত তা কেউ জানে না। বিপুল সম্পদের উৎস কোথায় সাধারণ মানুষ তা জানে না। সামরিক বাহিনীর এই মূলধনের রেকর্ড প্রতিরা বাজেটেও দেখানো হয় না। এই মূলধনকে ঘিরে যেসব কার্যক্রম চলে তারও কোনো উলেস্নখ থাকে না বাজেটে। এই মূলধন ও কার্যকলাপের জন্য রাষ্ট্রের কাছে জবাবদিহিতার প্রচলিত পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয় না। এক কথায় রাষ্ট্রের কারো কাছেই সামরিক বাহিনীকে দায়বদ্ধ থাকতে হয় না। আর এ জন্যই তাদের মূলধন বা পুঁজির ব্যাপারে দেশের মালিক জনগণকে কিছুই জানতে দেয়া হয় না।
১৯৫৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সহায়তা পায় পাকিস্তান
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খান মতা গ্রহণের পর থেকে অব্যাহতভাবে এখনো যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য দিয়ে চলেছে দেশটিকে। অতীতে সরাসরি সামরিক খাতে সাহায্য দেয়া হলেও এখন সামরিক শব্দটির পরিবর্তে স্থান করে দেয়া হয়েছে বেসামরিক বিশেষণটির। তবে সামান্য পাশ কাটিয়ে বলে দেয়া হয়েছে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিরম্নদ্ধে লড়াইয়ে সামরিক সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ ব্যয় করা যাবে। জেনারেল আইয়ুব খান, জেনারেল ইয়াহিয়া খান, জেনারেল জিয়াউল হক ও সব শেষে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ পর্যায়ক্রমে সামরিক সাহায্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তবে এখনকার দেয়া সাহায্যের শর্তে বলে দেয়া হয়েছে অবশ্যই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে এ বরাদ্দ ব্যয় করতে হবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দীর্ঘ সময় যেসব উন্নয়নকামী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সাহায্য পেয়েছে সে তালিকায় পাকিস্তানের নাম ওপরে। শুধুই আর্থিক সাহায্য নয়, পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী ড· কাদির খান তো স্বীকারই করেছেন পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরো সহায়তা না থাকলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সহজ হতো না। ড· কাদির খানের যুক্তির সমর্থনে অনায়াসেই বলা যায় ইরান ও উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সোচ্চার হলেও পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কখনোই কোনো মন্তব্য করেনি।
কাবুলে রাজনৈতিক কর্মসূচির অনেক আগেই ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের সাথে সখ্য গড়ে তুলেছিল
কাবুলের সোভিয়েতপন্থী সরকার উৎখাতের রাজনৈতিক কর্মসূচির অনেক আগেই ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের সাথে সখ্য গড়ে তুলেছিল। এই সখ্যের মূল ল্য ছিল তিনটি। প্রথমত, উপমহাদেশে সোভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধু ভারতের প্রতিপ েএকটি শক্ত রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি গড়ে তোলা। দ্বিতীয়ত, শত্রম্নর শত্রম্ন আমার মিত্র, এই সমীকরণে চীনকে পাকিস্তানের মধ্যস্থতায় বন্ধুর কাতারে নিয়ে আসা। তৃতীয়ত, ইসরাইলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হয়েও বিকল্প আঙ্গিকে মুসলিমপ্রধান দেশ পাকিস্তানের সাহায্যকারী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে একটি পৃথক অবস্থান তৈরি করা।
পাকিস্তান ২০১২ সালের দিকে ভৌগোলিক অখণ্ডতা হারাবে!
ভারতীয় সাপ্তাহিক আউটলুক ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগন পরিবেশিত এশিয়াকে নিয়ে তাদের মহপরিকল্পনা প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মহাপরিকল্পনাটি পাওয়া যাবে এশিয়া ২০২৫ নামের এক প্রতিবেদনে। সাপ্তাহিক আউটলুক এশিয়া ২০২৫-এর বরাত দিয়ে লিখেছে, পাকিস্তান ২০১২ সালের দিকে পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাবে এবং তার ভৌগোলিক অখণ্ডতা হারাবে। এ-সংক্রান্তô আউটলুকের ওই প্রতিবেদনকে ভারতীয় প্রপাগাণ্ডা মনে করা হলেও সাম্প্রতিককালের ঘটনাপ্রবাহ বিশেষ করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পরিস্থিতির পর অনেকে এটা নিয়ে ব্যাপক চিন্তôাভাবনা শুরম্ন করেছেন। পেন্টাগন প্রণীত এশিয়া ২০২৫ পূর্ণাঙ্গরূপে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। আউটলুক ছাড়াও ওয়াশিংটন পোস্ট (১৭ মার্চ ২০০০) ও মালয়েশিয়ার প্রভাবশালী দৈনিক স্ট্রেইট টাইমসের ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০০ সংখ্যায় প্রতিবেদনের চুম্বক অংশ মন্তôব্যধর্মী সংবাদ হিসেবে প্রকাশিত হয়।
ওয়াশিংটন পোস্টের ওই প্রতিবেদনে বলা হয় ‘গত বছর গ্রীষ্ণকালে পেন্টাগনের ঝানু ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা আন্দ্রে মার্শালের নেতৃত্বে রোড আইল্যান্ডের নৌবাহিনী কলেজে এক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আলোচনার পর সহকারী প্রতিরা সচিবের গ্রীষ্ণকালীন প্রতিবেদন এশিয়া ২০২৫ হিসেবে তৈরি করা হয়।
স্ট্রেইট টাইমসের মতে, পেন্টাগনের কর্তাব্যক্তি আন্দ্রে মার্শাল ও তার সহযোগীরা চীনকে সামনে রেখে এশিয়ার পাঁচটি সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দৃশ্য তুলে ধরেন। তার মধ্যে একটি চিত্র হতে পারে এ রকম- ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা মধ্যপ্রাচ্য ও ইন্দোনেশিয়ার জোগানদাতাদের শক্তিশালী করবে এবং ইরান, মধ্য এশিয়া, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ওপর বিশ্ববাসীর বিশেষ দৃষ্টি পড়বে।
পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে পারমাণবিক শক্তির মোকাবেলা ত্বরান্বিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র চায় পাকিস্তôান ও ভারতের মধ্যে একটি পূর্ণ মাপের পারমাণবিক শক্তির মোকাবেলাকে ত্বরান্বিত করা। সাপ্তাহিক আউটলুক এশিয়া ২০২৫-এর বরাত দিয়ে আরো লিখেছে, উগ্রবাদীদের ওপর পাকিস্তôান এক সময় তার নিয়ন্ত্রণ হারাবে। আর উগ্রবাদীরা অনুপ্রবেশ করবে কাশ্মীরে। ভারত চাইবে পাকিস্তান তার জঙ্গিবাদীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করম্নক। পাকিস্তান তা করতে ব্যর্থ হলে, ভারতীয় বাহিনী আজাদ কাশ্মীরে প্রবেশ করবে। জবাবে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের হুমকি দেবে। চীন পাকিস্তôানের সাথে সুর মিলিয়ে নেপাল ও ভুটানের মাঝখানে তার সেনাবাহিনী মোতায়েন করে ভারতের মিজোরাম-নাগাল্যান্ড-আসাম-সিকিম সীমানাকে হুমকিতে ফেলে দেবে। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাবে এবং আরো অনেক জায়গা থাকা সত্ত্বেও সে বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনী পাঠাবে ও চীনকে হুঁঁশিয়ার করে দেবে। পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করতে পারে এ ভয়ে ভারত পাকিস্তানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর প্রচলিত অস্ত্র দিয়েই হামলা চালাবে যা মূলত সফল হবে না। জবাবে পাকিস্তান দু’দেশের মধ্যবর্তী সীমান্তে অবস্থিত ভারতীয় বাহিনীর ওপর মরিয়া হয়ে পারমাণবিক হামলা চালাবে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অতিরঞ্জিত পদËেপর উদ্দেশ্য পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে একটি পূর্ণমাপের পারমাণবিক শক্তির মোকাবেলাকে ত্বরান্বিত করা। যুক্তরাষ্ট্র বি-২ বোমারম্ন বিমান থেকে গভীর ল্যভেদী ওয়ারহেডের সাহায্যে পাকিস্তানের অবশিষ্ট পারমাণবিক শক্তিও ধ্বংস করে দেবে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র মৈত্রীর বাস্তব অবস্থা দেখে চীন ভারতের উত্তরাঞ্চল থেকে পিছু হটবে। পাকিস্তানে সর্বাত্মক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করবে। ভারতীয় বাহিনী সেখানে শৃঙ্খলার জন্য ঢুকে পড়বে। দেশটি বিভাজিত হয়ে পড়লে পাকিস্তানের অঞ্চলগুলো ধীরে ধীরে ভারতে একীভূত হয়ে যাবে। সিন্ধু, বালুচ আর সীমান্ত প্রদেশের পার্লামেন্ট ভারতের নেতৃত্বাধীন কনফেডারেশনে যোগদানের প েভোট দেবে। ভারতীয় কনফেডারেশন তৈরি হওয়ার ফলে পাঞ্জাব একাকী টিকতে না পেরে একীভূত হয়ে যাবে ও ভারতীয়রা পাঞ্জাবের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহৎ পাঞ্জাব রাজ্য তৈরি করবে।
বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে মোকাবেলা করা সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব
পাকিস্তôানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আসলাম বেগ সম্প্রতি তার ‘এষড়নধষ ঈড়হংঢ়রৎধপরবং অমধরহংঃ চধশরংঃধহ’ শীর্ষক নিবন্ধে লিখেছেন ‘যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও অন্যান্য শক্তি যেভাবে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলোকে আফগানিস্তান থেকে উন্নত অস্ত্র, প্রশিণ ও গোয়েন্দা শক্তি জোগাচ্ছে, তাতে এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে মোকাবেলা করা সেনাবাহিনীর প েপ্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ সাবেক আফগান মুজাহিদ নেতা গুলবুদ্দীন হেকমতিয়ারের কথাও এ Ëেত্র ফেলনা নয়। আলজাজিরা চ্যানেলের সাথে এক সাাৎকারে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তি ধ্বংস ও দেশটাকে খণ্ডবিখণ্ড করার জন্য আফগানিস্তানে ঘাঁটি গেড়েছে।’ একই কথা বলা হয়েছে আউটলুকের ওই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে এশিয়াতে আরো কয়েকটি সম্ভাব্য দৃশ্যের অবতারণার কথা বলা হয়েছে। মার্কিন মুলুকের একটি প্রভাবশালী সাময়িকী মাসিক আটলান্টিক (গড়হঃযষু অঃষধহঃরপ, ঝবঢ়ঃবসনবৎ ২০০০) সেপ্টেম্বর ২০০০ সংখ্যায় পাকিস্তানের ওপর দীর্ঘ এক পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ‘মোশাররফ শাসিত পাকিস্তান পরিণতিতে সাবেক যুগোস্স্নাভিয়ার মতো টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।’
পাকিস্তানকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে মিডিয়ার সাথেও
পাকিস্তôানকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে মিডিয়ার সাথেও। গত বছরের ২১ অক্টোবর মার্কিন সাময়িকী ঘবংিবিবশ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে বলছে, ‘পাকিস্তান এখন বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ দেশ। প্রভাবশালী জার্মান ম্যাগাজিন ডার স্পিগেলও গত সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে পাকিস্তানকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় মৌলবাদী উৎপাদনের কারখানা’ বলে অভিহিত করেছে। একই বছর ১৮ নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদভাষ্যে বলা হয় ‘সেই পাঁচ বছর পূর্ব থেকেই যুক্তরাষ্ট্র মোশাররফ সরকারের সাথে পাকিস্তানের পারমাণবিক শক্তিকে নিরাপদ রাখার ব্যাপারে গোপনে সহযোগিতা করছে।’ আরেকটি বিষয়ে এখানে না বললেই নয়, সাম্প্রতিককালে কিছু ঘটনা প্রমাণ করে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আর জনগণকে পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছে।
‘এশিয়া ২০২৫’ মহাপরিকল্পনা নিছক উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা নয়
এশিয়া ২০২৫ পরিকল্পনা সম্পর্কে ইসলামাবাদভিত্তিক ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর খুরশিদ আহমদ মাসিক ‘তরজমানুল কুরআন’ পত্রিকায় লিখেছেন, ‘আমরা পাকিস্তানের জনগণ ও মুসলিম উম্মাহকে নিয়ে পশ্চিমা শক্তি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যে ষড়যন্ত্র করছে, তার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ থাকতে আহ্বান জানাই। এশিয়া ২০২৫ ও এর সমগোত্রীয় ষড়যন্ত্রগুলো আমরা নিছক উর্বর মস্তিষ্কের কল্পনা বলে উড়িয়ে দিতে চাই না।’
বিষয়টি নিয়ে ইন্টারনেটে প্রপাগান্ডাও চলছে বেশ জোরেশোরে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জঅড-এর সাবেক কর্তাব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে স্যাগ, (ঝঅঅএ, ঝড়ঁঃয অংরধহ অহধষুংরং এৎড়ঁঢ়, xি·িংধধম·ড়ৎম)· এটি নব্য গোয়েবলসীয় সংস্করণ বলেও মনে করেন অনেকে। এটি মূলত বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের ুদ্র রাষ্ট্রগুলোর অখণ্ডতার বিরম্নদ্ধে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রোপাগান্ডা ফোরাম হিসেবে কাজ করছে। সেখানেও খোলা হয়েছে নতুন ফ্রন্ট। জনৈক সৈয়দ জামালউদ্দীন দ্বারা ভিডিও ও বই প্রকাশ করা হয়েছে। যার শিরোনাম পাকিস্তôানকে খণ্ডবিখণ্ড করে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার জন্য আন্তôর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসঙ্ঘের প্রতি আহ্বান। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, ইন্টারনেটেও পাকিস্তানের যে ছিন্নভিন্ন মানচিত্র দেখানো হয়েছে, তার সাথে রালফ ও এশিয়া ২০২৫-এর অনেকটাই মিল রয়েছে।
শেষ কথা
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের কাছে পাকিস্তানের গুরম্নত্ব কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। তবে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর পশ্চিমাদের দৃষ্টি আবারো পাকিস্তানের ওপর নিবদ্ধ হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন আফগানিস্তানে হামলা চালানোর সময় পাকিস্তানও তাতে যোগ দেয়ায় ওয়াশিংটন ইসলামাবাদকে ন্যাটো জোটের বাইরের সামরিক মিত্র হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডবিস্নউ বুশ তার শাসনামলের শেষের দিকে আফগানিস্তানে আরো বেশি সংখ্যায় সৈন্য পাঠায় এবং মার্কিন সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তারা পাকিস্তানের সরকার, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর তীব্র সমালোচনা শুরম্ন করে। আলকায়দা ও তালেবান দমনে পাকিস্তান কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলে তারা। যদিও পাকিস্তানের কর্মকর্তরা এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। কিন্তু দেশটির উপজাতি এলাকায় অব্যাহতভাবে মার্কিন বিমান ও পেণাস্ত্র হামলা চালানো থেকে বোঝা যায় ওয়াশিংটন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর আস্থাশীল নয়। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই তালেবানবিরোধী অভিযান পরিচালনা করবে এটি নিশ্চিত বোঝা যায়। অবশ্য তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের মদদেই এত দূর এসেছে বলে অনেকের মন্তôব্য। পাকিস্তôান ও আফগানিস্তôানে যুক্তরাষ্ট্রের এই তালেবানবিরোধী অভিযান অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কিনা তা সহজেই অনুমেয়। দণি এশিয়ার ব্যাপারে সাম্প্রতিক মার্কিন নীতি বিশেস্নষণ করলে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের চেয়ে ভারতকেই বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। একই সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আফগানিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তানকেও তার দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অন্যতম প্রধান হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছে। পরমাণু Ëেত্র সহযোগিতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সাথে চুক্তি করা থেকে বোঝা যায় ওয়াশিংটন সব Ëেত্র নয়াদিলিস্নকেই অগ্রাধিকার দেবে। এ কারণে পাকিস্তôানও প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের পাশাপাশি তার দেশের সাথেও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আন্তরিকতার নিদর্শনস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অনুরূপ চুক্তি স্বাড়্গরের দাবি জানিয়েছে। প্রকৃত অর্থে যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তôান ও ভারতের এই সুযোগ করে দেয়া দড়্গিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথকেই সহজ করে দিচ্ছে। এর থেকে শুধু ভারত আর পাকিস্তôান নয়, বাংলাদেশ কিংবা মিয়ানমার কারোরই স্বস্তিô পাওয়ার কথা নয়।
পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয়
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে পাকিস্তôান একমাত্র দেশ যাকে ভারত ও ইসরাইল উভয়ের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে।
সংস্থাটিকে ১৯৪৮, ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ভারতের সাথে ও ১৯৬৭ ও ১৯৮৪ সালে ইসরাইলের সাথে ক্রসফায়ারে পড়তে হয়।
এটি একমাত্র মুসলিম ফোর্স যারা আকাশ থেকে আকাশে কমব্যাট মিশনে ভারতীয় ও ইসরাইলি বিমান বাহিনীর বিমানকে গুলি করে।
১৯৬৫ সালে এই বাহিনী ভারতের বিমান বাহিনীর পাঁচটি যুদ্ধবিমান মাত্র ৩০ সেকেন্ডে ধ্বংস করে। এখন পর্যন্তô এটি একটি বিশ্বরেকর্ড।
১৯৬৭ সালে তিনটি ইসরাইলি বিমান এই বাহিনী গুলি করে ভূপাতিত করে। ওই সময়ে ইসরাইলি বাহিনী জর্দানে বিমান হামলা শুরম্ন করেছিল।
১৯৮৪ সালে এই বাহিনী ভারত ও ইসরাইলের যৌথভাবে পাকিস্তôানের পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলাকে বন্ধ করতে পেরেছিল।
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে পাকিস্তôান একমাত্র দেশ যার লং রেঞ্জ মিসাইল একসাথে ভারত ও ইসরাইলের যেকোনো প্রান্তেô আঘাত হানতে সড়্গম।
এই বাহিনীর মতো একসাথে বন, পাহাড়, সাগর, উন্মুক্ত ও মরম্নভূমি এলাকায় যুদ্ধ পরিচালনা করা অন্য কোনো মুসলিম দেশের পড়্গে সম্ভব নয়।
মুসলিম দেশের মধ্যে পাকিস্তôানই একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দেশ।
অথচ বাংলাদেশের মতো দুর্বল সামরিক শক্তির কাছে হেরে যেতে হয়েছে পাকিস্তানকে।
(কিছু ফন্ট ভেঙে গেছে। পড়তে অসুবিধা হওয়ার জন্য দু:খিত)