০.
একমোচড়ে কলতলার ট্যাপ খুলে দিলে শানবাঁধানো মেঝেতে জলের ধারা ভরবেগের সংরক্ষন করে আছড়ে পড়ে তার সাদা সালোয়ারে।ওড়নাটা বুকের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত করে চর্চিত কায়দায় কোমরে পেঁচিয়ে দেয়।ন্যাকড়ার ঘষায় চায়ের কেটলি আর কাপ-গেলাস ঝকঝকে আয়না হয়ে গেলে একপাশে সরিয়ে একটানে ওড়না আর কামিজের বন্ধনমুক্ত হয়ে ঝর্না ছাড়ে।অভ্যস্থ হাতের ঝাপটায় কলতলার খিড়কি আগেই আটকে গেছে নির্ধারিত আংটায়।সাবানের ফেনা ঘষে ঘষে কাল রাতের ঘুম নিশ্চিহ্ন করে চায়ের কেটলির মত নিজেকেও পরিচ্ছন্ন করে মাথায় প্যাঁচানো তোয়ালে কলতলা হতে হাসিমুখ বেরিয়ে আসে।
০০.
চকচকে কেটলি আলতো করে চুলোয় বসিয়ে দেশলাইয়ের মাত্র এক কাঠির ছোট্ট ঘর্ষণে আগুন ধরে উঠে গ্যাসের শরীরে।স্মিত হেসে সে এবার নিজের শরীরে নজর ফেরায়।তোয়ালে চেপে চুলের ফাঁকে আটকে থাকা শেষ জল ফোঁটা ও নিয়ে কৌটোর অনেকখানি তেল মাখে।চিরুনী টেনে চুলগুলো খোঁপা সাজায়।বাগানের টকটকে লাল গোলাপটার অভাব নিত্যকার মত আজো প্রকট হয়ে উঠে!!
সবার দৃষ্টি এড়িয়ে গতরাতে ইস্ত্রি করে রাখা সালোয়ার কামিজের উপর ওড়না জড়াতে গিয়ে বামহাতের স্পর্শে কেঁপে উঠে তার অর্ধগোলকীয় দেহাংশ।লাজে নুইয়ে পড়ে পাপড়ি।যদি ও কখনো....ভাবতে পারে না সে।কেটলির জলের সাথে টগবগ ফুটে উঠে তার গহীনের কোথাও একটুকরো মেঘ!!
০০০.
ঝটপট চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপিষ্টিক মাখা হয়ে গেলেই সে চায়ের কাপে ব্যস্ত হয়ে উঠে।মুখস্ত দু'চামচ চিনি আর দুধে ঘন লিকার নাড়িয়ে যৌবনবতী হয়ে উঠে চায়ের পেয়ালা।ওড়নার প্রস্থ বুকে ঝুলিয়ে ধীর পায়ে সিঁড়ি ভাঙে।রোজকার মত দরোজা খোলাই আছে।ভেতরে শূন্যবিছানায় এলোমেলো চাদর আর লাগোয়া গোসলখানায় জলপতনের শব্দ ঝুলে থাকে স্থির বাতাসে।পেয়ালা নামিয়ে বিছানায় ব্যস্ত হয়ে উঠে তার হাতজোড়া।চুড়ির রিনঝিন আর জলপতনের শব্দে মাদকতা তার মস্তিষ্কের ভেতর ঘনীভূত হতে থাকে।
০০০০.
গোসলখানার দরোজা খুলে গেলে মদির চোখে তাকায় সে।কোমরে তোয়ালে জড়ানো দেহের উর্ধাংশে উদোম বুকের ঘনমেঘ লোমের ডগায় ডগায় জমা জলবিন্দু ছাড়িয়ে তার দৃষ্টি থামে দেহমালিকের পুরু ঠোঁটজোড়ার মাঝে।ওখানে একচিলতে হাসি ঝুলছে।তোয়ালের নিচের লোমঢাকা পা দুটো তার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।চোখে চোখ পড়তেই তার অবচেতনা ফাঁক করে তোলে নিজ অধর-বন্ধন।দেহমালিক সেখানে চারঠোঁটের মিলন ঘটাবে মাত্র....এমন সময়ে ঝপ করে মোহসৃষ্টিকারক জলপতন শব্দ থেমে গেলে সে চমকে বাস্তবে ফিরে আসে।
অনিয়ন্ত্রিত ভাবনা হেতু নিজের প্রতি বিরক্ত হবার সাথে সাথে গাল জোড়া রক্তিম করে তোলে লাজে!!
০০০০০.
বিছানার অনুষঙ্গ গুলো যথাস্থানে ফিরিয়ে দিয়ে কোমরের ভাঁজ গুলো সোজা করবার আগেই তার কানে আছড়ে পড়ে মাঝারি একটা ধমকের স্রোত! ধমককর্তার আদেশ অনুসারেই গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে যায় সে মেঝের দৈর্ঘ্য মেপে মেপে।নতচোখের কোণে জমা বাষ্প আয়নায় চুল বিন্যস্তকরণে ব্যস্ত কর্তার গোচরীভূত হয় না।
০০০০০০.
দোতলার বারান্দায় যেখানে টবের বন্দীত্বে হাঁসফাঁস করছে কতগুলো মানিপ্লান্ট,তাদের সাথে সেও শামিল হয়।আড়চোখে কর্তার অপসৃয়মান গাড়ির নিতম্ববাতির লালে সে নিজের ছায়া খুঁজে বের করার চেষ্টা চালায়।দৃষ্টির পথ মাড়িয়ে যন্ত্রদানব আর মানবের শরীর অদৃশ্য হয়ে গেলে সমগ্র পথটাই ঝাপসা হয়ে উঠে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে তাকায় আধমরা মানিপ্লান্টের ডগায়।রোজ কয়েকবার পথের দিকে তাকিয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে আর কিছু না হোক, মানিপ্লান্টগুলোর সাথে তার একটা সখ্যতা হয়ে উঠেছে।
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
উৎসর্গ: হাসান মাহবুব ...যিনি গল্প লিখেন না।গল্প বলেন।যার হাতে গল্প আপনাতেই সৃষ্টি হয়।
ছবি: খোমাখাতা বন্ধু বাঁধনের খোমাছবি।