সূত্র: আমারব্লগে ব্লগার চোরের পোস্ট
বছর ছয় / সাত আগের কথা। একটা রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কামলা দেই। কাজ সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। তাগো দুইজন ফুলটাইম সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর আছে, একজন লিনাক্সের বস, একজন উইন্ডোজ। আমার কাজ সাধারণত ইউজারগো খোঁজখবর নেয়া। যে ডিপার্টমেন্টে কাম করি, তার ডিরেক্টর আবার চাংকু। ৩৯ বছর বয়সেই প্রফেসর। ডিপার্টমেন্টে যারা গবেষণা করতে আসে, তাদের বেশির ভাগও চাংকু। অপারেটিং সিস্টেমে চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাক লাগানোর পরেও ক্যান বাটনগুলা ইংরেজিতে, প্রিন্ট করতে দিয়েও কেন প্রিন্টার পাচ্ছে না - এই জাতীয় সমস্যা সমাধানেই ডাক পড়তো বেশি। এর বাইরে ছিলো ডিপার্টমেন্টের সার্ভার এবং অন্য ইউজারদের কম্পুর সাথে ফাইল শেয়ার। আর নতুন কোনো রিসার্চার গ্রুপে যোগ দিলে বা স্বল্প সময়ের জন্য ভিজিটে আসলে তার জন্য ওএস ইনস্টল করে কম্পু সেটআপ করে দিতে হতো। সিস্টেম অ্যাডমিনদের যে লিনাক্সে বস ছিলো, তার সাথে এক রুমে বসতাম, ভদ্রলোক মেক্সিক্যান, আমার চেয়ে বছর দুয়েকের বড়, সিস্টেম অ্যাডমিনের কাজের দায়িত্বের পাশাপাশি পিএইচডি করছে। চরম হেল্পফুল। তার কাছেই প্রথম লিনাক্স ইনস্টল করা শিখি, ফাইল সিস্টেম টাইপ, হার্ডডিস্কের পার্টিশনের মাজেজা, কত RAM থাকলে পার্টিশন কেমন হবে -এইগুলা জানতে থাকি। আইটির স্টুডেন্ট। তার মধ্যে আবার দিনকে দিন সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হয়ে উঠতেছি - একটা অন্যরকম ভাব। তবে কিছুদিনের মধ্যেই দেখি, জিনিসটা তেমন কঠিন কিছু না। আবার অনেক সময়ই ট্রায়াল অ্যান্ড এরর সিস্টেমে কাম হয়। সুতরাং ভাবের কিছু নাই। কিন্তু সেই কথা আর চাংকু রিসার্চারগুলার কাছে প্রকাশ করি না। তাদের কম্পুর ডাক্তারি করতে ভাবের ঘাটতি যাতে না হয়, সে বিষয়ে টনটনে সচেতন থাকি।
যাউকগা, ভূমিকা বাড়ায়া লাভ নাই। আসল কথায় আসি। এই যে ধর্ম ধর্ম কইরা পাগল করা লোকগুলা - এদের ধর্ম কিংবা ঈশ্বর বিশ্বাস নিয়া যতোই ভাবি, ততোই মনে হয়, এদের ঈশ্বর বিশ্বাসের ভিত্তিই সবচেয়ে দুর্বল। ধর্ম সত্য, না মিথ্যা সেই আলোচনায় না গিয়ে বলা যায়, ধর্মগুলার প্রবক্তারা সাধারণত শান্তিপিয়াসী মানুষই ছিলেন। ইতিহাসের অতিরঞ্জন বাদ দিয়েও সামগ্রিক অর্থে পাবলিকের মাথা ঠোকাঠুকির জন্য ধর্মগুলোর সৃষ্টি হয় নি বলেই আমার মনে হয়। কিন্তু ধর্মগুলোর সোকলড রক্ষকরাই এর ভক্ষক হয়েছে বারবার।
চার্চগুলো এখন আর যীশুর বাইবেলে চলে না, পোপ আর ফাদাররাই সব। ধর্ম বজায় রাখতে চার্চগুলো মাসিক হারে বেতন থেকে টাকা কেটে নেয়। সেই টাকা না দিলে তার সৎকারে চার্চের ভূমিকা পালটে যায়, তার ছেলেমেয়েকে খ্রিস্টান বলে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। খুব প্রশ্ন জাগে মনে, এই ফাদারগুলা কি আসলেই ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী! ঈশ্বরকে বিশ্বাস করলে এই জাগতিক লাভের ব্যাপারগুলোতে এত ফোকাসড হয় কেমনে?
ছোটবেলা দেখেছি হিন্দুদের গুরুভক্তি। অনেক ভক্ত নাকি আবার বিয়ের প্রথম রাতে গুরুকে দিয়েই বউয়ের ইনিংস উদ্বোধন করায়। এটা যতো অস্বাভাবিক বলে মনে হয়, নরবলি দেয়া কাস্টমের সাথে তুলনায় এটা মোটেই অসম্ভব নয়। এক এক গুরুর আবার বিশাল ভক্তবাহিনী থাকে। গুরুরা ধ্যান করেন। ধ্যানে বসে বিশ্বভ্রমণ করেন। ক্লাস এইটের স্কলারশীপে ইংরেজি পরীক্ষায় আমার রচনা কমন পড়ে নি শুনে এক স্যার বলেছিলেন, আগে জানলে উনার গুরুর কাছ থেকে জেনে নিতেন কোন রচনা আসবে।
আচ্ছা, এই গুরুরা কি জানেন না, তারা ভন্ড? তারা কি জানেন না, তারা ভগবানের প্রতিনিধি হিসেবে শিষ্যদের কাছ থেকে যে জাগতিক সমৃদ্ধ ভক্তি গ্রহণ করছেন, তা লোক ঠকানো মাত্র? তারা জানেন বলেই তো মনে হয়। জানলে, তারা ভগবানে বিশ্বাসী হোন কি করে?
হিন্দু গুরুদের মুসলমান কাউন্টারপার্ট পীরেরা। এরশাদ লুচ্চাটার আমলে আটরশি আটরশি শুনতে শুনতে কান পঁচে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ গিয়ে এসব পীরদের মুরিদ হয়, পীরের মুরিদদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি হয়। মুরিদরা তবুও পীরদের বাতে ধরা পা টিপে। বন্ধ্যা দম্পতি পীরের পানিপড়া খেয়ে সন্তান লাভ করে। অবশ্য স্ত্রীটিকে তার জন্য পীরের সাথে কিছু সময় বন্ধ ঘরে কাটাতে হয়। ধূপ-ধোঁয়া চিকিৎসা চলে, মাসিকের সময়টা পীরেরা দেখা করেন না, তখন মেয়েলোক নাপাক থাকে। মাসিকের সময়ে পীরের পানিপড়ার ধারও কম হয় বই কি! আচ্চা, এই যে পীরগুলা আল্লাহর নামে মানুষদেরকে ঠাকায়, এই পীরগুলা কি আল্লাহকে বিশ্বাস করে? আল্লাহকে বিশ্বাস করলে মানুষ ঠকানো ব্যবসায় অটল থাকে কিভাবে?
ইসলামে ধর্মপ্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করে ক্ষমতা আরোহনের কোনো নির্দেশ নাই। কোরআনে কোথাও আল্লাহ ভুলেও বলেন নাই, ইসলামী রাষ্ট্র বলে কোনো কিছুর কথা। তাহলে ইসলামী ব্যানারে রাজনোৈতিক দল আসে কিভাবে? হুম! আসবে না কেন? আল্লাহ তো ইসলাম নিয়ে রাজনীতি করতেও নিষেধ করেন নাই! কী চমৎকার যুক্তি(?)! তাইলে আল্লাহর নিষেধ না থাকলে সবকিছুকেই ইসলামী বলা যাবে! যেমন, আল্লাহ চন্দ্রাভিযানে নিষেধ করেন নাই, অতএব, আর্মস্ট্রংরা ইসলামী তরিকায়ই চাঁদে গেছিলো। আল্লাহ ইন্টারেনেটে ব্লগিং করতে নিষেধ করেন নাই, অতএব আমি-আপনি যে ব্লগিং করছি, তা ও ইসলামী ব্লগিং। মনে করেন, আপনার ছোট ভাইকে চটকানা মারতে আপনার বাপে নিষেধ করেন নাই, অতএব, তাকে চটকানা মেরে নির্দ্বিধায় বলে দিলেন, চটকানাটির দায়িত্ব আপনার বাপের! ইসলামের ট্যাগ লাগাতে সে নির্দেশ যে ইসলাম থেকে আসতে হয়, এই সহজ জিনিসটা এদেরকে বুঝাতে পারলে আমার গোয়ালের কালা বলদটা আপনার!
এরা কি আসলেই কিছু বুঝে না? আমার তা মনে হয় না। নতুন জিহাদী জোশওয়ালা ছাগুরা হয়তো ব্রেইন ওয়াশের শিকার, কিন্তু টপ লেভেল ইসলামী নামধারী পলিটিশিয়ান বা টেরোরিস্টরা ঠিকই বুঝে এগুলা ইসলামে নাই। তারপরেও তারা এগুলা করে। আল্লাহকে বিশ্বাস করলে কি এগুলা করা সম্ভব? আল্লাহকে বিশ্বাস করলে কি নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা সম্ভব? আল্লাহকে বিশ্বাস করলে কি মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা সম্ভব? আল্লাহকে বিশ্বাস করলে কি আশেপাশের মানুষগুলোর সাথে বেঈমানী করা সম্ভব?
এই ইসলামী ট্যাগধারী ভন্ডগুলার আল্লাহতে বিশ্বাস বলে কি আদোউ কিছু আছে? এরা কি সবচেয়ে বড় অবিশ্বাসী নয়?