somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুখ ও মুখোশ, ঘোমটার আড়ালে খ্যামটা নাচ

২১ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক পোংটা চাচার কাছে শোনা গল্প। স্বচ্ছল পরিবারের এক দাদু তার একমাত্র মেয়েকে খুবই খুবই আদর করতেন। ফুলের ঘায়ে মুর্ছা যাওয়া বাগধারার চাক্ষুস উদাহরন হিসেবে মেয়েকে লালন-পালন করে বড় করে তুললেন। এদিকে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে গেল। দাদু গড়িমসি করেন - কার ঘরে যাবে, কেমন আদর-যত্ন হবে, তিনি কিছুতেই মেয়েকে ছাড়তে চান না। এদিকে গ্রাম-গাঁয়ের ব্যাপার, কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। তিনি বাধ্য হয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হলেন।

শুরু হল সুপাত্র খোঁজার পালা। এত এত পাত্র আসে, দাদু এই খুত, ওই খুত ধরে নাকচ করে দেন। অবশেষে কঠঠিন নুরানী চেহারার এক মাদ্রাসা পড়ুয়া সদ্য আলেমকে পাত্র হিসেবে আনা হল। ছেলে ধুম সুশীল। 'আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু ওয়া পুরা খানদান জান্নাতুহু' বলে দাদুকে সালাম দিয়ে সেই যে চোখ নিচু করেছে, চোখ আর তোলে না। আহ! কি মোলায়েম তার ভাষা। কথায় কথায় আল্লাহ রসুল পীর ওস্তাদের নাম। দাদুর ছেলে পছন্দ হল।

মহা ধুমধামের সাথে বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু দুই মাসের মাথায়ই দাদু কপাল চাপড়ে 'আমার কী সর্বনাশ হল রে!' বলে পাড়া মাথায় তুললেন। ঘটনা আর কিছুই না, মেয়ে পোয়াতি। এমন মোলায়েম স্বরের মাওলানা সা'ব যে এটা করতে পারেন, বিয়ের আগে দাদু ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করেন নি।

গল্প শেষে বাস্তবে আসি। আমি ব্লগে লিখি কম, পড়ি বেশি। ইদানিং দেখছি, একদঙ্গল নব্য সুশীলের আগমন হয়েছে। তারা গালির বিরুদ্ধে ধনুক হাতে নেমে গেছে, তারা আবার হেব্বি দেশপ্রেমিক; কিন্তু রাজাকারদেরকে কেউ গালি দিলে তাদের অন্তরে গালিটা খুব পীড়া দেয়। অবশ্য অভিনয় আর কত করা যায়! মুখ ফসকে ছিটেফোটা বেরিয়েই যায়। মুহূর্তের অসচেতনতায় এদের সুশীল বোরখার কোনা উড়ে যায়, কাছা একদিক সামলাতে গিয়ে অন্যদিক উদোম হয়ে যায়, অন্যকে আক্রমন করে এবং প্রবল বিক্রমে অন্যকে শিখাতে সচেষ্ট হয়, অথচ নিজের শিক্ষার ব্যারোমিটার যে সর্বসাধারনকে মহা নিম্নচাপ প্রদর্শন করে, সে কথা বেমালুম বিস্মৃত হয়।

এদের একজন আজ আবার দেখলাম অন্যকে বিদেশি খিচুড়ী ভাষায় জিহবা ছিড়ে ফেলার হুমকি দিয়েও 'মুই গালিবাজ নেহি' চিৎকারে পাড়া মাতোয়ারা করছেন। ওদিকে কাছা কিন্তু খুলতেই আছে। একজন আগন্তুনক মহাজ্ঞানী পিএইচডি আবার রাজাকার প্রতিরোধে গালি এলার্জিতে ভুগে ভুগে যারা ব্লগের জন্মলগ্ন থেকে রাজাকারদেরকে দৌড়ের ওপর রেখেছে, তাদেরকে জ্ঞানদান করছেন, উহু, তোমরা রাজাকারদের সাথে মুখ খারাপ করো না বাছারা। তিনি নিজে অবশ্য তার ব্লগে তার মতের বাইরে কেউ কিছু বললেই আক্রমনে চলে যাচ্ছেন।

ব্যাপক সার্কাস। আমি পাঠক। পড়ি। মুখ টিপে হাসি। করুনাও হয়। গ্রাম সম্পর্কীয় সেই দাদুর জামাইয়ের কথা মনে পড়ে। হু, বোরখাওয়ালীরাও প্রেম করে, মোলায়েম কথা বলা হুজুরের বউও দুইমাসের মাথায় পোয়াতি হয়! সাথে মনে পড়ে, মিষ্ট কথা বলা জ্যামিতিক জামাতিদের। মুখে মধু, অন্তরে বিষ, মিছরির ছুরিতে শান দেয়া ধান্দাবাজদের চেহারাগুলো এক কাতারে এসে সব মীরজাফরে সর্বসম হয়ে যায়।

কিছু আলো তবু বেঁচে থাকে। অধিকাংশ মানুষই আলোকে বাঁচিয়ে রাখে। রাজাকার বাঁচানোর তাগিদে সুশীল সুবিধাবাদীদের ভূমিকায় অভিনয় করা সিজনাল দালালদের মুখোশকে থোড়াই কেয়ার করে। সেই আলোকিত মানুষগুলোকে - স্যালুট!

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৪২
১৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×