এক পোংটা চাচার কাছে শোনা গল্প। স্বচ্ছল পরিবারের এক দাদু তার একমাত্র মেয়েকে খুবই খুবই আদর করতেন। ফুলের ঘায়ে মুর্ছা যাওয়া বাগধারার চাক্ষুস উদাহরন হিসেবে মেয়েকে লালন-পালন করে বড় করে তুললেন। এদিকে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে গেল। দাদু গড়িমসি করেন - কার ঘরে যাবে, কেমন আদর-যত্ন হবে, তিনি কিছুতেই মেয়েকে ছাড়তে চান না। এদিকে গ্রাম-গাঁয়ের ব্যাপার, কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। তিনি বাধ্য হয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হলেন।
শুরু হল সুপাত্র খোঁজার পালা। এত এত পাত্র আসে, দাদু এই খুত, ওই খুত ধরে নাকচ করে দেন। অবশেষে কঠঠিন নুরানী চেহারার এক মাদ্রাসা পড়ুয়া সদ্য আলেমকে পাত্র হিসেবে আনা হল। ছেলে ধুম সুশীল। 'আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু ওয়া পুরা খানদান জান্নাতুহু' বলে দাদুকে সালাম দিয়ে সেই যে চোখ নিচু করেছে, চোখ আর তোলে না। আহ! কি মোলায়েম তার ভাষা। কথায় কথায় আল্লাহ রসুল পীর ওস্তাদের নাম। দাদুর ছেলে পছন্দ হল।
মহা ধুমধামের সাথে বিয়ে হয়ে গেল। কিন্তু দুই মাসের মাথায়ই দাদু কপাল চাপড়ে 'আমার কী সর্বনাশ হল রে!' বলে পাড়া মাথায় তুললেন। ঘটনা আর কিছুই না, মেয়ে পোয়াতি। এমন মোলায়েম স্বরের মাওলানা সা'ব যে এটা করতে পারেন, বিয়ের আগে দাদু ঘুনাক্ষরেও কল্পনা করেন নি।
গল্প শেষে বাস্তবে আসি। আমি ব্লগে লিখি কম, পড়ি বেশি। ইদানিং দেখছি, একদঙ্গল নব্য সুশীলের আগমন হয়েছে। তারা গালির বিরুদ্ধে ধনুক হাতে নেমে গেছে, তারা আবার হেব্বি দেশপ্রেমিক; কিন্তু রাজাকারদেরকে কেউ গালি দিলে তাদের অন্তরে গালিটা খুব পীড়া দেয়। অবশ্য অভিনয় আর কত করা যায়! মুখ ফসকে ছিটেফোটা বেরিয়েই যায়। মুহূর্তের অসচেতনতায় এদের সুশীল বোরখার কোনা উড়ে যায়, কাছা একদিক সামলাতে গিয়ে অন্যদিক উদোম হয়ে যায়, অন্যকে আক্রমন করে এবং প্রবল বিক্রমে অন্যকে শিখাতে সচেষ্ট হয়, অথচ নিজের শিক্ষার ব্যারোমিটার যে সর্বসাধারনকে মহা নিম্নচাপ প্রদর্শন করে, সে কথা বেমালুম বিস্মৃত হয়।
এদের একজন আজ আবার দেখলাম অন্যকে বিদেশি খিচুড়ী ভাষায় জিহবা ছিড়ে ফেলার হুমকি দিয়েও 'মুই গালিবাজ নেহি' চিৎকারে পাড়া মাতোয়ারা করছেন। ওদিকে কাছা কিন্তু খুলতেই আছে। একজন আগন্তুনক মহাজ্ঞানী পিএইচডি আবার রাজাকার প্রতিরোধে গালি এলার্জিতে ভুগে ভুগে যারা ব্লগের জন্মলগ্ন থেকে রাজাকারদেরকে দৌড়ের ওপর রেখেছে, তাদেরকে জ্ঞানদান করছেন, উহু, তোমরা রাজাকারদের সাথে মুখ খারাপ করো না বাছারা। তিনি নিজে অবশ্য তার ব্লগে তার মতের বাইরে কেউ কিছু বললেই আক্রমনে চলে যাচ্ছেন।
ব্যাপক সার্কাস। আমি পাঠক। পড়ি। মুখ টিপে হাসি। করুনাও হয়। গ্রাম সম্পর্কীয় সেই দাদুর জামাইয়ের কথা মনে পড়ে। হু, বোরখাওয়ালীরাও প্রেম করে, মোলায়েম কথা বলা হুজুরের বউও দুইমাসের মাথায় পোয়াতি হয়! সাথে মনে পড়ে, মিষ্ট কথা বলা জ্যামিতিক জামাতিদের। মুখে মধু, অন্তরে বিষ, মিছরির ছুরিতে শান দেয়া ধান্দাবাজদের চেহারাগুলো এক কাতারে এসে সব মীরজাফরে সর্বসম হয়ে যায়।
কিছু আলো তবু বেঁচে থাকে। অধিকাংশ মানুষই আলোকে বাঁচিয়ে রাখে। রাজাকার বাঁচানোর তাগিদে সুশীল সুবিধাবাদীদের ভূমিকায় অভিনয় করা সিজনাল দালালদের মুখোশকে থোড়াই কেয়ার করে। সেই আলোকিত মানুষগুলোকে - স্যালুট!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১:৪২