"প্লাস-মাইনাস ফাইভ মিনিটস!" তার বেশি হলেই তুমি অপেক্ষা করবে না। বিকেল ৫ টায় তোমার সাথে দেখা হবে। আগাম অফিস ফেরত জনকোলাহলে ট্রাফিক জ্যাম ঠেঙ্গিয়ে উত্তরা থেকে টিএসসি আসতে আসতে মধ্যবিত্ত লোকাল বাসের সময়ের চুলচেরা হিসেব যেহেতু অসম্ভব, তাই ঘন্টাখানেক প্লাসে রেখেই বেরিয়ে পড়ি। এর মধ্যে চল্লিশ মিনিট তবুও হারিয়ে যায় জ্যামের মারপ্যাচে। ৪ টা চল্লিশ মিনিটে রোকেয়া হলের গেটে পৌঁছে হাফ ছেড়ে বাঁচি, যদিও উৎকণ্ঠার হাঁপানি এখনো স্বাভাবিক প্রশ্বাসে রূপ নেয় নি, পাট করে আঁচড়ানো চুলেরও দফারফা এবং ভাঁজ করা ইস্ত্রীর আভাস আর মেলে না শার্টের চেহারাসুরতে।
ঠিক সময়ের আগে তোমাকে কল দেয়া যাবে না। আরো দশ মিনিট বসে থাকি। নিশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে এসেছে তখন। মামুর হাতে চিরকুট ধরিয়ে দেই, জুঁই, অ্যানেক্স বিলডিং রুম নাম্বার ত্রিশ।
তুমি রেডি হয়েই ছিলে। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কাঁটায় কাঁটায় পাঁচ টায় হেটে আসো, চলার ভঙ্গিতে আত্মবিশ্বাস। আমাকে দেখে হাসো। এতক্ষনের ক্লান্তি, অবসন্নতা, উৎকন্ঠা এক হাসির ঝলকে উধাও হয়ে যায়।
"চলো, আজ শুধু হাঁটবো আমরা।" আদেশের ভঙ্গিতে প্রস্তাব দাও তুমি।
"তথাস্তু, মহারাণী। কোন পথে হাঁটবে?"
"যে পথে পথিক নেই।" ফোড়ন কাটো তুমি, "চলো, মৈত্রীর দিকে যাই।"
সংসারে যেন শুধু আমরাই দুটো প্রাণী, আর সব মিথ্যে, আর সব দূরাহত কোলাহল, হেঁটে চলি, পাশাপাশি, হৃদয়ে হৃদয়ের অদৃশ্য বৈদ্যুতিক বন্ধন অনুভবে ছেয়ে যায়। এত শব্দ, গাড়ির হর্ন, টোকাইয়ের চিৎকার, চেঁচামেচি ব্যস্তসমস্ত মানুষের, আরো কত যুগলবন্ধী প্রেমিক-প্রেমিকা, সব তুচ্ছ এখন, স--ব।
সূর্য ডুবে গেছে তখন। নিয়ন আলোয় কমলারঙা রাজপথ। ফিরতি পথে ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের শান্ত কোলাহলহীন পায়ে চলা পথ।
"তুমি কে?" তাকে শুধাই।
"আমি আকাশের পূর্ণিমার চাঁদ। জ্বলজ্বল করি, আকর্ষণ করি, তবু কাছে টেনে নিতে পারি না হয়তো ঠিক। তুমি?"
আমার মন ভার হয়। এ কেমন অলুক্ষণে কথা হে!
"আমি কেউ না। আই অ্যাম নো বডি!"
তুমি হি হি করে হাসো, মজা পাও। আমি কেমন যেন দুলতে থাকি ভালোলাগা-মন্দলাগা এক অনিশ্চিত অনুভূতিতে ছেয়ে থাকে সারাটা মন। সময় দৌড়ায়। তোমার গেট বন্ধ হবে ৯ টায়।
"এই খালি, শাহবাগ যাইবা?" আমি ফেরার পথ ধরি। কত সুন্দর সময় কাটাই তোমার সাথে, মিশ্র অনুভূতিটা তবু কেন যেন আঁকড়ে ধরে বসে থাকে। ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে ভাবতে থাকি। ছবিগুলো গড়ে ওঠতে ওঠতে আবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে যায়।