নান্দনিক ফটোগ্রাফির রচনা কৌশলে আলো-আধারির খেলা অতিগুরুত্বপূর্ণ। আলো আধারির খেলায় যে রহস্যময়তা তৈরী হয় তা ফটোর আবেদনকে বাড়িয়ে দেয় অনেকগুন। তাই চেষ্টা করবে তোমার ফটোগ্রাফে আলো আধারির খেলা যেন ব্যবহার হয়। আসো আলোর খেলা নিয়া আলোচনায় ব্রত হই।
প্রথমে যে বিষয়টা আসবে তা হইলো কনট্রাষ্ট – সাধারণ ভাবে বলা হয় একটি ফটোগ্রাফে কনট্রাষ্ট হইতেছে ফটোগ্রাফের মধ্যে কোন রঙ এর টোনের পরিমানের পার্থক্য বা আলো-আধারের পার্থক্য বা সাদা ও কালোর পার্থক্য অথবা গাঢ় রঙ এবং হালকা রঙের পার্থক্য যা আমাদের মনোযোগ কাড়ে নিজের অজান্তে ।
আমরা জানি একটি ফটোগ্রাফের দিকে কোন দর্শক যখন তাকায় তখন তার মনোযোগ প্রথমে যায় সেন্টার অব ইন্টারেষ্টের দিকে। যদি ফটোগ্রাফের উপদান গুলি অবস্থান এমনভাবে করা হয় যাতে কনট্রাষ্ট তৈরী হয় তাহলে দর্শকের মনোযোগ বাড়িয়ে দিবে অনেকগুণ – এইটা হলো ফটোগ্রাফে কন্ট্রাষ্টের কর্যকরী ব্যবহার।
কন্ট্রাষ্ট নিয়া যখন আলোচনা শুরু করলাম তখন সাদাকালোর tonal contrast এবং হালআমলের color contrast দুইটা নিয়াই আলোচনা করা উচিত।
Tonal Contrast সাদা-কালো ফটোগ্রাফীতে কনট্রাষ্ট হয় high অথবা নরমাল বা লো কনট্রাষ্ট এই দুই ধরণে হয়।
হাই কন্ট্রাষ্ট বলিতে আমরা বুঝবো যদি কোন ফটোগ্রাফে সাদা এবং কালো এই দুই রং বিদ্যমান এবং ধূসর রং অনুপস্থিত থাকে সেটা হবে হাই কন্ট্রাস্ট ফটোগ্রাফ। নীচের ছবিটা দেখ - ছবি শুধু - সাদা এবং কালো এই দুই রং দৃষ্টি গোচর হয় মধ্যবর্তী ধূসর নিতান্ত কম।
মনে রাখবে - সাদাকালো ছবিতে হাই কন্ট্রাস্ট অনুভুতির তীব্রতা / শক্তি ও ক্ষমতা প্রকাশ করে।
সাধারনভাবে তোলা আমাদের অধিকাংশ ফটোগ্রাফ নরমাল কন্ট্রাস্টের হয়ে থাকে। আলোর তরতম্য যদি ছবিতে বেশী খেলা করে তাহলে কন্ট্রাষ্ট তৈরী হয় যা কার্যকরী ব্যবহার ছবির আবেদন বাড়িয়ে দেয়।
লো কন্ট্রাস্ট বলতে আমরা বুঝবো ফটোগ্রাফে যদি বস্তু বা সাবজেক্ট এবং তার ছায়া এর পার্থক্য খুব বেশী না হয়। সাদাকালো ফটোগ্রাফে বিভিন্ন রং তেমন একটা পার্থক্য করে না। নীচে ছবিটা দেখ -
মনে রাখবে - লো কন্ট্রাস্ট ফটোগ্রাফ - নমনীয়তা ও মাধূর্যতা প্রকাশ করে।
শিল্পাচার্য - জয়নূল আবেদিনের কথামনে আছে ? - তার দূর্ভিক্ষের স্কেচ গুলা দেখি -হাই কন্ট্রাস্ট তৈরী করে এমন মাধ্যম তিনি বেছেনিয়েছিলেন।
Click This Link
এইবার বলো হাই কন্ট্রাষ্ট কি প্রকাশ করে ?
আসো লো কন্ট্রাস্ট দেখি ...
ফটোগ্রাফিতে আরও দুইটা জিনিস পাওয়া যায় যা হইলো হাই কি ফটোগ্রাফী এবং লো কি ফটোগ্রাফী ।
হাই কি এবং লো কি বলতে আমরা বুঝবো এক বিশেষ ধরনের আলোকচিত্র চিত্রায়ন – প্রাপ্ত আলোকচিত্রে উচ্চমাত্রায় যথাক্রমে সাদা ও কালো রং ব্যবহৃত হয়। অর্থাত, হাই কি ফটোগ্রাফ হবে অতিমাত্রায় উজ্জ্বল ,উচ্চমাত্রায় সাদা রং ব্যবহৃত হবে, অপরদিকে লো কি ফটোগ্রাফে কম আলোতে কালোরঙের অধিক ব্যবহৃত হবে যেখানে আলোকচিত্রের অধিকাংশ স্থান আন্ধকারচ্ছন থাকবে।
হাইকি আলোকচিত্রে সাধারনভাবে – আনন্দ ও সতেজতা উত্তমরূপে প্রকাশিত হয়। হাইকি এই বৈশিষ্ট্যের কারণে হই চিলড্রেন পোর্ট্রেট, বিজ্ঞাপন চিত্র, মডেল ফটোগ্রাফি ও প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফিতে জনপ্রিয়। হাই কি ফটোগ্রাফির আলোক উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্যে জন্য প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফিতে বিশেষ স্থান দখল করে আছে। হাইকি আলোকচিত্রে কস্ট্রাস্ট এর পরিমাস থাকে কম এবঙ লাইটিং দ্বারা শেডোবিহীন সাবজেক্টের প্রকাশিতরূপ দর্শকের নিকট ধরা দেয় এক ভিন্নমাত্রায়। ম্যাক্রো ফটোগ্রাফ হাইকি অন্য মাত্রা নিয়ে আসে। ফুলের/পুস্পের আলোকচিত্রে হাই কি তার সৌন্দর্য্য ফুটিয়ে তোলে চমত্কার ভাবে। সুতরাং নিজেক প্রস্তুত করো এবং তুলে ফেল কয়েকটা হাইকি আলোকচিত্র।
হাই-কি লাইটিং নীচের ছবি অনুযায়ী করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
লো কি
লো-কি ফটোগ্রাফি
লো-কি ফটোগ্রাফি হইলো বিশেষ ধরনের আলোকচিত্র-চিত্রায়ন যেখানে প্রাপ্ত ফটোগ্রাফ কম আলোতে কালোরঙের অধিক ব্যবহৃত হয় এবং আলোকচিত্রের অধিকাংশ স্থান আন্ধকারচ্ছন থাকে। ফটোগ্রাফে আভিজাত্য, রহস্যময়তা, নাটকীয় ভঙ্গিমা ফুটিয়ে তুলতে এর জুরি নেই।
মনে রাখবে - সল্প আলোতে আন্ডার এক্সপোজ অন্ধকারাচ্ছন ফটো তোলা মানেই লো-কি ফটোগ্রাফ নয় বরং সুপরিকল্পিত ভাবে সুবিন্যস্ত আলোক প্রক্ষেপন দ্বারা ছবির সাবজেক্টের কোন নিদৃষ্ট অংশ আলোকিত করে আলোকচিত্র চিত্রায়ন করা হইলো লো-কি ফটোগ্রাফির মূল বিষয়।
লো- কি ফটো তুলতে - আইএসও সর্বনিম্ন পর্যায়ে সেট করে নাও। এরপর শুধুমাত্র এপারচার ও শাটারস্পিড কন্ট্রোল করে তোমার কাংখিত ফটোগ্রাফ বের করে আনো। মনে রাখবে অতি ধীর লয়ের শাটার স্পিডে ট্রাইপড ব্যবহার বাঞ্চনীয়।
নীচের চিত্র অনুযায়ী লাইটিয় করলে লো-কি ফটোগ্রাফে ভাল ফল পাওয়া যায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:১১