ইমানি শক্তির বলে বলিয়ান হয়ে বাংলার তওহিদি জনতা সকল বাধার প্রাচির উপেক্ষা করে ঢাকার রাজপথে নেমেছিল লাখো মানুষের ঢল। অগণিত মানুষ ছুটে আসেন ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলে। এ ছিল তৌহিদি জনতার এক মহাজাগরণ। দেশের হাজার বছরের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক রচিত হলো গতকাল।শাপলা চত্বরের মহাসমাবেশ রুপনেয় ইসলামি জাগরন মঞ্চে। মহাসমাবেশে উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করা হয়েছে আল্লাহ রাসূল সা:-এর বিরোধী নাস্তিক-মুরতাদদের ঠাঁই নেই বাংলাদেশের মাটিতে। মুরতাদদের পৃষ্ঠপোষকতা করে আওয়ামি সরকার আগেও নাস্তিকদের দোসরে পরিণত হয়েছে।জাতিয় বেইমানে পরচিতি তাদের অনেক আগে থেকেই। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে এই নাস্তিক্যবাদী সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তাদের করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। আল্লামা শাহ আহমদ শফী বিশাল জনসমুদ্রে তার ভাষণে বলেন, ইসলামবিরোধী এই সরকারের পরিণাম হবে ভয়াবহ।
দেশবরণ্য ওলামায়ে কেরামের দৃপ্তকণ্ঠের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা। নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবারÑ স্লোগানে মুখরিত পরিবেশে বক্তারা বলেন, ইসলামের বিরুদ্ধে আল্লাহ রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকার যে অন্যায় করেছে, লংমার্চে আসার ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে তার দাঁতভাঙা জবাব দেয়া হবে। সরকার তৌহিদি জনতার সাথে মুনাফেকি করেছে। এক দিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে অন্য দিকে সমাবেশে আসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধাবিঘœ সৃষ্টি করেছে। নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন সংগঠনকে দিয়ে হরতাল-অবরোধ ডেকে তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
ধর্মপ্রাণ মানুষের রোষ থেকে বাঁচতে চাইলে অবিলম্বে সংবিধানে আল্লাহও ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি পুনঃস্থাপন এবং নাস্তিক ও ধর্মদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে সংসদে আইন পাস করাসহ হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা; অন্যথায় সরকারের পরিণত ফেরাউন-নমরুদের মতো করুণ হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
বক্তারা অবিলম্বে নাস্তিকদের নেতৃত্বদানকারী ডা: ইমরানকে গ্রেফতার এবং শাহবাগী মঞ্চ অবিলম্বে ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানান। বক্তারা ঘাদানিক সভাপতি শাহরিয়ার কবির ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে বলেন, এরা নাস্তিকদের পক্ষ নিয়ে লংমার্চ প্রতিরোধের নামে হরতাল ডেকেছে।এখানে কেউ টাকার বিনিময়ে কিংবা এক বেলা বিরিয়ানি খাউয়ার জন্য আসেনি। জিবনের নিরাপত্তা নেই,বাড়ীতে ফিরার নিশ্চয়তা নেই, শহিদ বা গাজি হবার তিব্র আকাংখা নিয়ে রাসুল সা; এর প্রতি গভির ভালবাসা নিয়ে লাখ জনতার এই স্রোত। মহাসমাবেশকে সামনে রেখে হরতাল অবরোধের অজুহাতে সরকার রেল যোগাযোগ, নৌ যোগাযোগ বন্ধ করে এবং পরিবহন মালিকদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞ আরোপ করে শুক্রবার সকাল থেকেই ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিছিন্ন করে দেয়। ফলে হেফাজতের লংমার্চের গাড়ি বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনাই দিতে পারেনি। এর প্রতিবাদে চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক জেলা ও বিভাগীয় শহরে তৌহিদি জনতা অবস্থান নিয়ে জেলাভিত্তিক লংমার্চ শুরু করে। অন্য দিকে বিভিন্নভাবে কিছু গাড়িবহর গতকাল সকাল পর্যন্ত এবং কিছু মানুষ বিভিন্নভাবে ঢাকায় পৌঁছতে সক্ষম হন। ফলে লংমার্চে অংশগ্রহণকারী ৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা থাকলে সেটি হয়নি। এত বাধা প্রতিবন্ধকতার পরও শাপলা চত্বরের আশপাশের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড় হয়ে প্রেস কাব, উত্তরে ফকিরাপুল মোড় পার হয়ে নাইটিংগেল মোড় পর্যন্ত, দক্ষিণে টিকাটুলি মোড় ছাড়িয়ে রাজধানী সুপার মার্কেট পর্যন্ত কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। মূল মঞ্চের কাছে জনস্রোতের চাপে স্বেচ্ছাসেবকদের হিমশিম খেতে হয়।
বক্তাদের জ্বালাময়ী বক্তব্যে ক্ষণে ক্ষণে উত্তেজনা দেখা দিলে পরিস্থিতি শামাল দিতে মঞ্চ থেকে ঘোষণা দিতে হয় বারবার। মহাসমাবেশের দৃশ্য অনেক টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি প্রচার করে। মহাসমাবেশে অংশগ্রহণকারী সংখ্যা নিয়ে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেই বিভিন্ন আলোচনা চলতে থাকে।
বিশাল এই মহাসমাবেশে দূর-দূরান্ত থেকে আগত মানুষকেও বেশ উজ্জীবিত দেখা যায়। অনেকে এ ধরনের মহাসমাবেশ বিশেষ করে রাসূল সা:-এর কটূক্তির প্রতিবাদে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। মহাসমাবেশ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে এমনটি আশা করছিল বেশির ভাগ অংশগ্রহণকারী। তাদের বক্তব্য ছিল শাহবাগী নাস্তিকেরা অনুমতি ছাড়াই যদি দেড় মাস শাহবাগে অংশ নিয়ে দাবি আদায় করতে পারে, ধর্মপ্রাণ লাখো মানুষ কেন ঈমানী দাবিতে শাপলা চত্বরে অবস্থান নিতে পারবে না?
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুসলমানেরা বাতিলের ভয়ঙ্কর থাবায় আক্রান্ত, সংবিধান থেকে আল্লøাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস মুছে দিয়ে ফিরাউনি ও নমরুদি শাসনব্যবস্থা কায়েমের অপচেষ্টা দেশকে খোদায়ি গজব অনিবার্য করে তুলছে। আল্লøাহকে কটা করার মতো দুঃসাহস দেখানো হচ্ছে। আমার পেয়ারা নবী সা: এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় ধর্ম ইসলামের অবমাননা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীকে কটা করার কারণে তার শাস্তির ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয়া হলেও আল্লøাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে কটূক্তিকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কোনো উদ্যোগ পরিলতি হচ্ছে না; বরং হাইকোর্টের একজন বিচারপতি এ বিষয়টি সহযোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গেলে তার বিরুদ্ধে সরকারি নির্দেশে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে হয়রানিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ব্লগার রাজীবকে শহীদ আখ্যা দেয়া হয়েছে, সংসদে তার প্রতি সম্মান দেখানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগের নাস্তিক ব্লাগারদের ইসলামের বিরুদ্ধে উসকে দেয়া হয়েছে। তারা ইসলামি রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে স্পিকারকে স্মারকলিপি দেয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছে। ইসলামের নিদর্শনাবলিকে চরমভাবে অবমাননা করা হয়েছে।
কুরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি, ইসলামবিরোধী শিানীতি পাস করা হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন মসজিদে নামাজের সময় বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং আলেম, ইমাম, খতিবদের হক কথা বলার কারণে তাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালানো হচ্ছে, হত্যা, হুমকি-ধমকি, হামলা-মামলার মাধ্যমে তাদেরকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা ও চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। কাদিয়ানি এনজিওসহ ইসলামবিরোধী অপশক্তিকে বিভিন্নভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে। মুসলিম সভ্যতা সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে বিজাতীয় সভ্যতা সংস্কৃতি ও বেহায়াপনা বেলেল্লøাপনা আমদানি করা হচ্ছে। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপনসহ শেরেকি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুসলিম এ দেশটিকে অগ্নিপূজারী ও মূর্তিপূজারীদের দেশ বানানোর চক্রান্ত হচ্ছে। ইসলামের কথা বললেই তাকে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের অপবাদ দিয়ে এ দেশ থেকে চিরতরে ইসলাম উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ দমনের নামে ইসলাম নির্মূলের উদ্দেশ্যে বিদেশী সৈনিকদের এ দেশে ডেকে আনার পাঁয়তারা চলছে।
এ দেশের কোটি কোটি তাওহিদি জনতাকে সাথে নিয়ে হেফাজতে ইসলাম শান্তিপূর্ণ উপায়ে দেশ ও ইসলামবিরোধী এসব অপতৎপরতা বন্ধে বদ্ধপরিকর। কোনো অপশক্তিই হেফাজতে ইসলামকে তার অভীষ্ট ল্য অর্জনে দমাতে পারবে না। এ ল্েযই হেফাজতে ইসলাম দেশ ও ঈমান রার তাগিদে সুস্পষ্ট ১৩ দফা দাবি পেশ করে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এসব দাবি কোনো রাজনৈতিক দাবি নয়। মতা থেকে কাউকে সরানো বা কাউকে মতায় বসানোর দাবি নয়। কিন্তু মতায় থাকতে হলে এসব দাবি মেনেই থাকতে হবে, আবার মতায় যেতে হলেও এসব দাবি মেনেই যেতে হবে।
এই আন্দোলন ঈমান ও দেশ রার অহিংস আন্দোলন। এ আন্দোলনকে দমানোর অপচেষ্টা করা হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। সরকার নির্বাচনের আগে ইসলামবিরোধী, কুরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো কাজ না করার অঙ্গীকার নিয়ে মতাসীন হলেও এখন তারা সুস্পষ্ট ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সরকার আমাদের দাবিদাওয়ার প্রতি কর্ণপাত না করে দেশের কোটি কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আমাদের আজকের এই লংমার্চ কর্মসূচিকে একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও সরকার লাখো কোটি জনতার এই কর্মসূচি বানচালের সব চেষ্টাই চালিয়েছে। সরকারের সহযোগী নাস্তিক-মুরতাদদের ঘাদানিক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পরিকল্পনা মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম এবং শাহবাগি নাস্তিক মুরতাদদের তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে হরতাল ও অবরোধ আহ্বান করিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। তার পরও আজকের এই মহাসমুদ্র প্রমাণ করে এ দেশে নাস্তিক-মুরতাদদের, ইসলামবিরোধীদের ঠাঁই নেই। ঈমানদার জনতাই এ দেশ নিয়ন্ত্রণের অধিকার রাখে।
আজ সারা বাংলাদেশে মহাগণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত এই আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ ধারণ করবে। যে আন্দোলনের তোড়ে এই ইসলামবিরোধী সরকারের পরিণতি হবে ফেরাউন, নমরুদ, সাদ্দাদ, হামান, আবু জাহল, আবু লাহাবের চেয়েও আরও ভয়াবহ। তাই এখনো সময় আছে আল্লøাহর গজব আসার আগেই আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে নিজেরাও বাঁচুন, দেশকে ও দেশের জনগণকে বাঁচান।