শিক্ষার গুরুত্ব :
যে বৈশিষ্ট্যটি মানুষকে অন্য সব প্রাণীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে তা মানুষের জ্ঞান বা বুদ্ধি। এই জ্ঞান বা বুদ্ধির বিকাশ ও সমৃদ্ধি ঘটে শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষাই মানুষকে মর্যাদার শিখরে পৌঁছে দেয়। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তাই বলা হয় ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। স্বভাবতই ইসলাম তাই এ গুরুত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে গোড়া থেকেই। শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রেরিত প্রথম ওহীই ছিল ‘আপনি পড়ুন’। আর ইসলামের নবী ইলম হাসিল ও জ্ঞানার্জনের প্রতি আরোপ করেছেন অশেষ গুরুত্ব।
জ্ঞান অর্জনের চিরন্তন দুই ধারা :
পৃথিবীর আদি মানব আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা ইহ ও পরজগতের প্রয়োজনীয় সব জ্ঞান শিক্ষা দেন। সে থেকেই মানুষের জ্ঞান উন্নয়নের পথ চলা শুরু। পরবর্তীতে মানুষ ওই আসমানী জ্ঞানের আলোকে নিজেদের প্রয়োজনে জাগতিক জ্ঞানের নানা দিগন্ত উন্মোচন করতে থাকে। আসমানী জ্ঞানের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব যত দীর্ঘ হয়েছে ততই তারা বস্তুর প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। তাদের জ্ঞান হয়ে পড়েছে বস্তুনির্ভর। তাই বলা যায় পৃথিবীর প্রায় সূচনা লগ্ন থেকেই মানুষ দুইভাবে জ্ঞান আহরণ করে আসছে। এক. ইলমে ওহী বা সরাসরি জগৎস্রষ্টা আল্লাহর দূতের মাধ্যমে। দুই. মানব গোষ্ঠীর মধ্যে যারা জ্ঞানে অগ্রসর, যারা নিজেরাই অনেক নতুন জ্ঞানের দ্বার উম্মোচন করেন তাদের মাধ্যমে। মানুষ নিজের উদ্ভাবিত জ্ঞানের মাধ্যমে তাদের জাগতিক অগ্রগতি ও জীবন মানের উন্নতি করতে পেরেছে। কিন্তু রবের প্রেরিত জ্ঞান ছাড়া প্রকৃত শান্তি ও সাফল্য লাভ করতে পারে নি। পরবর্তীতে আরও অনেক উন্নতি করতে পেরেছে। আকাশে উড়েছে, হিমালয়ে উঠেছে, সমুদ্রের বুকে ঢুকে অমূল্য বস্তু আহরণ করেছে, চাঁদে গমন করতে পেরেছে, এমনকি মঙ্গলগ্রহে পর্যটন করেছে। তথাপি একটি জিনিসই পারে নি। পারে নি আদর্শ মানুষ হতে। অকৃত্রিম অপার্থিব আদর্শের বিভায় ধূলির ধরাকে শান্তির নীড় জান্নাত বানাতে পারে নি। হ্যাঁ প্রকৃত শান্তি লাভ করতে হলে, মানুষকে মানুষ হতে হলে, মানবিক গুণ অর্জন এবং চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন করতে হলে অবশ্যই তাকে ইলমে ওহী বা আসমানী জ্ঞান অর্জন করতে হবে। মানুষের জ্ঞান সসীম তাই এর দ্বারা শুধু বাহ্যিক জ্ঞান ও জাগতিক বিদ্যাই অর্জন সম্ভব। এর সমৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন সম্ভব। কিন্তু এই দৃশ্য জগতের বাইরেও যে অনেক কিছু আছে। বর্তমান জীবনের পরেও যে আরেকটি জীবন আছে। অনন্ত এক জীবন। যার শুরু আছে; শেষ নেই। তার জ্ঞান ওহীর মাধ্যম ছাড়া অর্জন করা সম্ভব নয়।
মানুষ নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে দেহের বহিরাংশের সব চাহিদা মেটাতে পারে। কিন্তু সব চাহিদা পূরণের পরও তার শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত হয় না যাবৎ সে দেহের ভেতরাংশ তথা অন্তরের খোরাকও যোগাতে সক্ষম হয়। বলাবাহুল্য, ওহীর বিদ্যা ছাড়া এই খোরাক যোগানো সম্ভব নয়। তাই যুগে যুগে মানুষের মাঝে এ বিদ্যার প্রচার ও বিস্তার ঘটিয়েছেন নবী-রাসূলগণ। আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত মহামানব দল। নবীর অনুপুস্থিতিকাল যখনই দীর্ঘ হয়েছে মানুষ ততই নিজের তৈরি অক্ষম জিনিসের দাসত্বে লিপ্ত হয়েছে। তাদের অর্জিত জ্ঞান এতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে নি। ওহীর জ্ঞানের ধারকরাই যুগে যুগে মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন ‘মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি’। তাই সে নিজের হাতে গড়া কোনো কিছুর অর্চনা বা দাসত্ব করতে পারে না। মানুষের স্বকল্পিত জ্ঞান তাকে এতোটা বিপথগামী ও অর্বাচিন বানিয়ে দেয় যে তারা বড় কিছু দেখলেই তাকে পূজা করতে শুরু করে। অহীর শিক্ষাই তাদেরকে এ গোলামী থেকে মুক্তি দিয়েছে।
সত্যি বলতে কি পৃথিবীতে যদি এক খোদার আসমানী বিদ্যা না আসত তাহলে মানুষ কখনো মহাকাশ গমন বা মঙ্গল জয়ের স্বপ্ন দেখতে পেত না। কারণ তারা তো এসব জিনিসকে এতোটা ভয় করত যে এসব জয়ের কল্পনা করার সাহসই তাদের ছিল না। যার দাসত্বের শৃঙ্খলে এরা বন্দি কীভাবে তারা তা জয়ের স্পর্ধা দেখাবে?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাদরাসা শিক্ষা :
আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত পর্যন্ত এ ওহী-জ্ঞানের ভাণ্ডার হিসেবে নাযিল করেছেন পবিত্র কুরআন। এ কুরআনের বাস্তব ব্যাখা হিসেবে সুরক্ষিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীস ভাণ্ডার। আর কুরআন ও সুন্নাহ অনুধাবন এবং এ উৎসদ্বয় থেকে সর্ব যুগের সব মানুষের জীবনদিশা দিতেই গড়ে ওঠেছে ইসলামী শিক্ষার বাকি সব শাখা-প্রশাখা। মানুষের জাগতিক চাহিদা পূরণে যেমন চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ নানা বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ সম্প্রদায়ের প্রয়োজন, তাদের ইহ ও পরকালীন দীনী প্রয়োজন মেটাতেও দরকার তেমন ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে পারদর্শী বিশেষজ্ঞ শ্রেণীর। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহর হুকুম ও সঠিক নির্দেশনা পেতে যাদের কাছে ছুটে যাবেন আল্লাহর অনুগত দীনদার মুসলিমগণ।
এ কারণেই অধিকাংশ মুসলিম দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখার পাঠদান করা হয় গুরুত্বের সঙ্গে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমের এ বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষার প্রতি রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা সন্তোষজনক নয়। বলা যায় দায়সাড়া গোছের। স্কুল-কলেজগুলোতে জাগতিক শিক্ষাগুলোর প্রতিই যত সব মনোযোগ ও গুরুত্ব প্রদান করা হয়। ‘ইসলাম শিক্ষা’ নামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে একটি অপর্যাপ্ত ও চির অবহেলিত সাবজেক্ট রয়েছে, যা বড় অনাদর ও অযত্নে পড়ানো হয়। এমতাবস্থায় এ দেশের মাদরাসাগুলোই কোটি কোটি মুসলিমের ধর্মীয় পিপাসা মেটাতে কম-বেশি সেবা করে যাচ্ছে।
বৃটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ‘ধর্মবিহীন কর্মশিক্ষা’র মোকাবেলায় তাই ধর্ম ও কর্মমুখী ইসলামী শিক্ষা বেগবান করা দরকার। রাষ্ট্র ও জনগণ সবারই এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে। সরকারকে যেমন পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে জনগণকেও তেমন ইসলামী শিক্ষার প্রতি তাদের ভালোবাসা ও গুরুত্ব প্রমাণ করতে হবে। জীবিকার প্রয়োজনে সাধারণ শিক্ষার প্রতি সব গুরুত্ব ন্যস্ত করে শুধু কোনোমতে ‘কালেমা ও নামাজ শিখে নিজের দীনী প্রয়োজন মিটে গেছে’ এমন হঠকারি মনোভাব পরিহার করতে হবে।
মাদরাসা শিক্ষার দুই ধারা : উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষার দু’টি ধারা রয়েছে। কওমী তথা বেসরকারি মাদরাসা শিক্ষা এবং আলিয়া তথা সরকারি মাদরাসা শিক্ষা। কওমী শিক্ষাধারায় নৈতিকতা ও হাতে-কলমে ইলম অনুযায়ী আমলে অভ্যস্ত করার প্রতি অধিক মনযোগ ও গুরুত্ব দেয়া হয়। তবে বিশেষ প্রেক্ষাপটে তথা মুসলিমদের শাসনব্যবস্থা বিলুপ্ত হবার পর ইংরেজদের ইসলামী শিক্ষা নির্মূলের চক্রান্তের প্রেক্ষাপটে এ ধারার শিক্ষা প্রবর্তিত হওয়ায় তাতে সে সময়ের আবেদন ও প্রয়োজনের প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব বর্তমান। সঙ্গত কারণেই এতে পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক প্রয়োজনীয় শাখা যথাযথ গুরুত্ব পায় নি।
তাই এর সিলেবাসকে যুগোপযোগী করার তীব্র প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন খোদ এ ধারার অভিজ্ঞ শিক্ষকমহল পর্যন্ত। তাছাড়া এ ধারার মাদরাসাগুলোর সিলেবাসের মৌলিক কিতাবাদিতে মোটামুটি মিল থাকলেও বুনিয়াদি অনেক বিষয়ে বিভিন্ন মাদরাসার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। একই সিলেবাসের অধীনে সবগুলো বোর্ডের যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়ন তাই সময়ের দাবি। তবে এ ধারার প্রতি সরকারের স্বীকৃতি বা পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় কওমী মাদরাসা থেকে বেরিয়ে আসা হাজার হাজার যোগ্য ব্যক্তিরাও ইসলাম ও সমাজের জন্য কাঙ্ক্ষিত পরিসরে অবদান রাখতে পারছেন না।
পক্ষান্তরে আলিয়া ধারায় যুগচাহিদা ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানকে উদারভাবে আত্মীকরণ করা হলেও ইলম অনুযায়ী আমলের দিকটি যথাযথ গুরুত্ব পায় না। হাতে গোনা কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী আলিয়া মাদরাসা ছাড়া অধিকাংশতেই স্কুল-কলেজের সঙ্গে প্রতিযোগিতার দিকটিই বেশি গুরুত্ব পায়। কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানে পারঙ্গমতার বদলে সাধারণ শিক্ষার মতো এখানেও কেবল রেজাল্ট ভালো করে ভালো চাকরির জন্য সব রকমের চেষ্টার প্রবণতা দিনদিন প্রবল হচ্ছে। এই মানসিকতায় পরিবর্তন এনে সবার উচিত ইসলামী শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে সজাগ হওয়া। তেমনি রাষ্ট্রেরও কর্তব্য এ ধারায় শিক্ষিতদের যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথ অবাধ ও সুগম করা।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা : বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উৎকর্ষের এ যুগে মাদরাসা শিক্ষার গুরুত্ব পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের যখন যা প্রয়োজন বিজ্ঞান মুহূর্তেই তার সামনে হাজির করছে। আজ মানুষ সব পাচ্ছে। যখন যা দরকার মুহূর্তেই তা পেয়ে যাচ্ছে। এতে মানুষের স্বস্তি হয়তো এসেছে কিন্তু তার মূল আরাধ্য তথা আত্মিক প্রশান্তি ও মানসিক পরিতৃপ্তি হারিয়ে যাচ্ছে অদৃশ্য চোরাবালিতে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আল্লাহরই নেয়ামত। এর ভালো ও মন্দ উভয় দিক রয়েছে। সৎ ব্যবহার কল্যাণ বয়ে আনে। অসৎ ব্যবহার অশান্তি ডেকে আনে। দিন দিন প্রযুক্তির দান যত বৃদ্ধি পাচ্ছে ততধিক বেড়ে চলেছে এর নেতি ও অপ ব্যবহার। মানুষের কল্যাণে যে পারমাণবিক শক্তির আবিষ্কার; তা আজ সমগ্র মানব জাতির শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা ও সমৃদ্ধিতে যে বিমানের আবিষ্কার তা দিয়ে বোমা ফেলে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশে আজ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে অস্ত্র কেনার। সেরা জীব মানুষের খাদ্য ও প্রয়োজন না মিটিয়ে বাজেটে সমরাস্ত্র কেনার প্রতিই দেয়া হচ্ছে অধিক গুরুত্ব। তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও আদান-প্রদান সহজের জন্য যে তথ্য প্রযুক্তির আবিষ্কার তা আজ সাইবার ক্রাইমের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তাই দেখা যায় উন্নত বিশ্বের নাগরিকরা সব পেয়েও আজ শান্তির জন্য হাহাকার করছে। আত্মিক প্রশান্তির অন্বেষায় দিগ্বিদিগ ছোটাছুটি করছে।
বাস্তবতা হলো, মানুষকে মানুষ বানাতে, প্রযুক্তির অপব্যবহার রুখতে এবং পৃথিবীতে কাঙ্ক্ষিত শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসলামী বা নৈতিক তথা মাদরাসা শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এর প্রমাণ হিসেবে বর্তমান যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের সাম্প্রতিক কিছু টিত্র তুলে ধরাই যথেষ্ট মনে করি। সরকারের চলমান মাদক বিরোধী অভিযান আমাদের সামনে নৈতিকতাহীন শিক্ষার কুফল তুলে ধরেছে। বহুল আলোচিত মাদক বড়ি ইয়াবা ও আইসপিলের ক্রেতা ও ভোক্তা কারা? তারা কি গোমূর্খ নাকি অভদ্র ঘরের সন্তান? মিডিয়ার কল্যাণে দেশবাসী জেনেছেন, তারা সম্ভ্রান্ত পরিবার পথভ্রান্ত শিক্ষিত সন্তান। কিন্তু কোন হীন কাজটাই আছে যা তারা করে নি বলুন? র্যা বের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মারফত জানা যায়, এদের ঘরে যা পাওয়া যাচ্ছে তা মিডিয়ার সামনে আনা তো দূরের কথা এর আলোচনাও করার মত নয়।
পত্রিকা মারফত সবাই জেনেছেন, হাজার হাজার কলেজ-পড়ুয়া আলট্রা মডার্ন শিক্ষিতা সুন্দরীরা অভিযাত হোটেলগুলোয় গিয়ে কী করে? কাগজে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ধনীর দুলাল-দুলালীরা কাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে? শিক্ষা, প্রাচুর্য, বংশকৌলীণ্য- কোনটার অভাব এদের? কোনোটারই অভাব নেই। অভাব শুধু নৈতিক শিক্ষার। নৈতিক শিক্ষা ছাড়া মানুষ আর সব হলেও পারে না শুধু মানুষ হতে। বলাবাহুল্য, আমাদের নৈতিক শিক্ষার সর্বোৎকৃষ্ট উৎস ইলমে ওহী যা এ দেশের মাদরাসাগুলোয় শেখানো হয়।
শেষ কথা : সমাজের এই অবক্ষয় দেখে আজ দেশবাসী চমকে ওঠেছেন। এদের প্রতিরোধে সরকারও চালিয়ে যাচ্ছে সক্রিয় তৎপরতা। মাদক রোধে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রক্ষায় বুদ্ধিজীবী কলামিষ্টরাও সরকারকে অনেক উপদেশ দিচ্ছেন। তারা বলছেন না শুধু আসল কথাটিই। বলছেন না, নৈতিকতার চর্চা ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটানো হোক।
মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চলে আসছে অনেক আগে থেকেই কিন্তু এর রেজাল্ট কী? রেজাল্ট কি এই নয়, যা আমরা দেখতে পাচ্ছি? মাদকের বিরুদ্ধে যারা শ্লোগান দেন তারাই তো ধূমপান করেন। অনেকে একধাপ এগিয়ে বিভিন্ন তারকা বিশিষ্ট হোটেলে গিয়ে গঞ্জিকা সেবন না করলেও বিয়ার, শ্যাম্পেন বা এর চেয়েও দামীগুলো সেবন করেন। কিছু বুদ্ধিজীবী কলামিষ্ট আছেন এক পেগ মদ না গিললে যাদের কলম থেকে লেখাই বেরোয় না। এদের মধ্যে নিষিদ্ধ পল্লীর বিরল প্রজাতি খদ্দের একেবারেই যে দুর্লভ; তাও কিন্তু নয়। আজকের মিডিয়াগুলো মাদককে না বলা এসব স্বেচ্ছাসেবীদের তৎপরতাকে কত মহৎ হিসেবে প্রচার ও উপস্থাপন করে। অথচ সত্যিকার অর্থেই যারা মাদক থেকে যোজন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে, মাদকের কালো হাত যাদের কখনো স্পর্শ করতে পারে না সেই নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার আলয় তথা মাদরাসা শিক্ষার কথা মিডিগুলোয় গুরুত্ব পায় না।
ধর্মীয় বা মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত বিশাল জনগোষ্ঠীর দিকে তাকিয়ে দেখুন এদের কয়জন মাদকাসক্ত? ক’জন তথাকথিত অভিজাত হোটেলগুলোর সদস্য? এসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের জন্য স্ত্রী নির্যাতন, পরকীয়ার টানে ঘরের বৌ খুনসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কয়টি এদের হাতে সংঘটিত হয়? এসব অপরাধের বিরুদ্ধে এদেরকে আলাদাভাবে সচেতন করতে হয় না। অপরাধ যে অপরাধ তা বুঝানোর জন্য এত সেমিনার ও প্রচারাভিযানের প্রয়োজন হয় না। এর কারণ কী? কারণ, ওহী তথা আসমানী শিক্ষার আদ্যোপান্তই মানুষকে নৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও বলীয়ান করে তোলে।
অতএব দেশ ও জগতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে, সকলের ইহ ও পরকালের শান্তি ও সাফল্য নিশ্চিত করতে আসুন মাদরাসা তথা ইসলামী শিক্ষাকে বেগবান করি। নিজেরা এ শিক্ষায় আলোকিত হবার পাশাপাশি সবাই আমরা ইসলামী শিক্ষা প্রসারে সাহায্য ও সহযোগিতা করি। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। আমীন।
মূল লেখক ঃ আলী হাসান তৈয়ব