ফেসবুকে ১০ টাকার খাবারের জন্য অনেকে হয়ত ট্রল করছেন। কিন্তু অনেকের সামর্থ্য নাই, সেই ১০ টাকার খাবার নিয়মিত কিনে খাবার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে অনেক ছাত্রছাত্রী থাকে, যারা পরিবার থেকে নূন্যতম টাকা পেয়ে থাকে সারামাস চলার জন্য। তাদের কাছে এই ১০ টাকাই অনেক টাকা।
আমি নিজে হলে থেকে পড়ালেখা করেছি প্রায় দেড় যুগ আগে আগে। তখন হলের ক্যান্টিনে ২টাকা পরটা, ২টাকা ডাল-ভাজি, এককাপ চা ২টা, মোট ৬ টাকা দিয়ে সকালের নাস্তা। বিলাসীতা করলে সাথে একটা ডিম, দাম মনে হয় ৩ কি ৪ টাকা ছিল। সাধারণ নাস্তা ৬টাকা, বিলাসীতা করলে ১০ টাকা। বিকালের নাস্তায় ছিলো, ছোলা ২টা, বেগুনী, পেয়াজু ১টাকা করে, সিঙ্গারা, চমুচা ২ টাকা করে। চা ২ টাকা। হয়ত পেট ভরতো না, সাইজে ছোট বলে। কিন্তু সাময়িক ক্ষুধাকে তো চাপা দেওয়া যেত। ঢাবির ক্যান্টিনে অনেক আগে (প্রায় ১০ বছর আগে) একবার খেয়েছিলাম, কিন্তু দাম দর ঠিক মনে নাই। আমি জানি না এখন দাম কেমন।
কেউ কি জানাতে পারবেন, ১০ টাকায় আসলে সিঙারা, সমুচা, চপ আর চা পাওয়া যায় কিনা?
তবে আমি অবিশ্বাস করছি না, হয়তো পাওয়া যায়, হয়তো সাইজে ছোট। কেউ কি রিসেন্ট খেয়েছেন ঢাবিতে, আমি ১০ টাকার সেই খাবারের প্লেটের ছবি দেখতে চাই।
ফাস্ট ইয়ারে বাসা থেকে সারা মাসের খরচের জন্য ২০০০ টাকা পেতাম, তিনবেলা খাবার, বইখাতা, সব খরচের জন্য কম মনে হত। কিন্তু যেদিন শুনলাম আরেকজন ১৫০০ টাকা পায় সারামাস চলার জন্য, সেদিন থেকে আর ২০০০ টাকাকে কম মনে হয় নাই। পরে অবশ্য টিউশনি করিয়েছি অনেক, বাসা থেকে আর টাকা নেওয়া হয় নাই, দ্বিতীয় বর্ষ থেকে।
আমাদের কালচারে আছে, কোন বড়ভাই এর সাথে দেখা করতে গেলে বড়ভাই খাবারের বিল দিবে। ২০০৩ কি ২০০৪ সালের দিকে পাশের হলের ক্যান্টিনে গিয়েছিলাম, বিকালে নাস্তা করার জন্য। পুরোনো পরিচিত বড়ভাইও নাস্তা করছিলেন, কথার ফাঁকে জানলাম, উনার কর্মক্ষম বাবা মারা গেছেন কয়েকদিন আগে। টিউশনি করেই চলতেন, এখন উলটো গ্রামে থাকা বৃদ্ধা মায়ের খরচও উনাকে টিউশনি থেকে দিতে হবে। তাই উনি আমার খাবারের বিলটা (একটা সিঙারা আর এক কাপ চা , ৪টাকা মনে হয়) উনি দিতে পারছেন না বলে লজ্জিতবোধ করছেন। যদিও উনি এর আগে আমাকে কয়েকবার অ্যাপায়ন করিয়েছিলেন উনার হলে।
সেই বড়ভাই এখন খুব ভালো আছেন, বিদেশে, নামকরা তরুন বৈজ্ঞানিক হিসাবে কোন এক বিদেশী ম্যাগাজিনে উনার ছবিও এসেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:১৯