১৮৮০ সালের দিকে তৎকালীন বার্মাতে বৃটিশ কলোনীর ইচ্ছে ছিলো, বার্মা হতে থাইল্যান্ড হয়ে চায়না পর্যন্ত একটা স্হায়ী রেলপথ নির্মানের। কিন্তু পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে সেই পরিকল্পনা থেমে যায়।
পরবর্তীতে ২য় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ১৯৩৯ সালে জাপানীরা যখন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আধিপত্য করা শুরু করলো, তখন তারা আবার নতুন করে বার্মা রেলপথের কথা ভাবা শুরু করলো। অনেকটা কৌশলগত কারণেই সিদ্ধান্তটা নেওয়া হলো। যুদ্ধক্ষেত্রে মালামাল, রসদ নিরাপদের বহনের জন্য একটা রেলপথ নির্মানের চিন্তা করলো জাপান। এছাড়াও এই রেলপথ নির্মাণ হলে ব্রিটিশ অন্যান্য কলোনীতেও (ভারত বর্ষে) সহজে আক্রমণ করা যাবে, আধিপত্য বিস্তার করা যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক অমানবিক ঘটনার অন্যতম হলো বার্মা রেলওয়ে নির্মাণ।
জাপানীরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে প্রায় ৪১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বার্মা রেলওয়ে নির্মাণ করে যেটা সংযুক্ত করেছে বার্মার (বর্তমানে মিয়ানমার) রাজধানী রেংগুনের সাথে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকককে। যৌথভাবে রেংগুন এবং ব্যাংকক থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিলো এবং ১৯৪৩ সালের অক্টোবরে দুইপ্রান্ত এক হয়। মাত্র ১৬ মাসে নির্মিত হয় এই রেলপথ। গহীন জঙল, পাথুরে পাহাড় কেটে , নদী পার হয়ে নির্মিত হয় ৪১৫ কিলোমিটারের এই রেলপথ। উপরে রঙিণ ছবিগুলো দেখলে বুঝা যায় এই রেলপথ নির্মাণ কতটা বিপদ সংকুল ছিলো।
লক্ষাধিক মানুষের জীবনের বিনিময়ে নির্মিত হয়েছে এই রেলপথ। প্রায় একলক্ষ আশি হাজার শ্রমিক, ষাট হাজার যুদ্ধবন্দী নিয়োজিত ছিলো এই রেলপথ নির্মাণে যার মধ্যে প্রায় একলক্ষ ছয় হাজার মানুষ মৃত্যু বরণ করে এই বিপদ সংকুল রেলপথ নির্মাণ করতে গিয়ে। এই বার্মা রেলওয়ে নির্মাণ জাপানীদের যুদ্ধাপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
Hiroshi Abe নামের একজন লেফট্যানেন্টে অধীনে এই রেলপথের নির্মাণ শুরু হয় যাকে পরে বিচারে দোষী সাব্যাস্ত করা করা হয়। তাকে প্রথমে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিলো, পরে ১৫ বছরের সাজা হয়। সে বলেছিলো,
"The construction of the railway was in itself a war crime. For my part in it, I am a war criminal.''
আজো সারাবিশ্বে বার্মা রেলপথ ডেথ রেলওয়ে নামে পরিচিত।
শ্রমিকদের করুণ অবস্হা:
যুদ্ধাপরাধীদের জীবন কিভাবে কেটেছিলো, সেটা কয়েকজন বন্দী শিল্পী রংতুলিতেও এঁকে ছিলো। তারা মাথার চুলকে ব্রাশ, গাছের রস আর শরীরের রক্তকে রং হিসাবে ব্যবহার করেছিলো। ক্যানভাস হিসাবে ব্যবহার করেছিলো টয়লেট পেপারকে।
শ্রমিকেরা আমাশন, ম্যালেরিয়া, বেরিবেরি, কলেরাতে বেশি আক্রান্ত হতো। ছিলো না পয়ঃশিষ্কাশন ব্যবস্হা।
কিছু ছবি দেখুন এবার।
খুব সুন্দর রেলপথ, তাই না? আসুন দেখি এই রেলপথ কিভাবে নির্মিত হলো।
যারা উপরের সুন্দর রেলপথ নির্মাণ করেছিলো, তারা কিভাবে ছিলো? সে ছবি দেখুন।
এতবড় রেলপথ নির্মাণ করেও মুক্তি পায়নি বন্দি শ্রমিকেরা। তাদেরকে রেলপথ তদারকী, পরিচালন কাজের জন্য রেখে দেওয়া হয়। ট্রেনের ইঞ্জিন চালানোর জন্য জংগল কাঠ জোগাড় করতে হতো তাদের।
এই রেলওয়েটা চালু থাকলো ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত, যতক্ষণ না জাপানীরা যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করলো। এরপর রেলপথটা আর ব্যবহার করা হয় নাই, বার্মিজরা তাদের অংশটুকু থাই সরকারের কাছে বিক্রি করে দিলো ১৯৪৭ সালে। সেই টাকা যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় করা হলো।
তবে ১৯৫৭ সালের দিকে থাই সরকার এই রেলপথের কিছু অংশ চালু করেছে। এবং এখনো তা চালু আছে।
এটা (নিচে) সেই রেলপথের স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে রাখা হয়েছে। ৩০ মিটার লম্বা এই রেল ও স্লিপার অরিজিনাল বার্মা রেলপথ থেকে আনা হয়েছে।
এটা সেই প্রথম ইঞ্জিন, সেটা প্রথম এই রুটে ব্যবহার করা হয়েছিলো।
বার্মা রেলপথ নির্মানে নিহত কয়েকজন যুদ্ধবন্দীর কবর।
সূত্র: উইকিপিডিয়া
http://www2.gvsu.edu