সাব্বির নেওয়াজ(দৈনিক সমকাল)
শিক্ষা বাণিজ্যের সঙ্গেই রাজনীতি। জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র ফদ্ধন্ট ইসলামী ছাত্রশিবির দেশের বিভিল্পু স্ট’ানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির কোচিং দেওয়ার জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কোচিং সেন্টার চালু করে সেগুলোর মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ে সংগঠনে কর্মী-সদস্য সংগ্রহের কাজ কৌশলে করে চলেছে। আদর্শগতভাবে শিবিরের প্রতি আকৃ®দ্ব করার কার্যত্রক্রম ছাড়াও ছাত্রাবাসে আসন সংগ্রহ করে দেওয়া, অভাবীদের জন্য আর্থিক বৃত্তি প্রভৃতি বৈষয়িক প্রলোভন ও শর্তে দলে টানা হয়।
কোচিং সেন্টারগুলো রাজনৈতিক বা রিত্রুক্রটিংয়ের জন্যÑ এ কথা পরিচালকরা স্ট^ীকার না করলেও সেগুলোর পরিচালক ও শিক্ষকরা যে সর্বাংশে জামায়াত-শিবিরের নেতা ও কর্মকর্তা, তা সুপ্রতিষ্ঠিত। জানতে চেয়ে প্রশু করা হলে অনেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য গোপন করতেও পারেননি। কোচিং সেন্টার থেকে অর্জিত অর্থ সাংগঠনিক কাজেও ব্যয় করা হয়।
বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ‘ফোকাস’, মেডিকেলে ভর্তির জন্য ‘রেটিনা’, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য ‘কনত্রিক্রট’, ‘কনসেপ্টল্ট’, ‘স্ট‹লার’ ও ‘এক্সিলেন্ট’ কোচিং সেন্টারগুলো জামায়াত-শিবিরের বিভিল্পু ফাউন্ডেশনের নামে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত।
অনুসল্পব্দানে জানা যায়, ছাত্রশিবির পরিচালিত দেশের সবচেয়ে বড় কোচিং সেন্টার ‘ফোকাস’। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ক্যা¤ক্সাসে নিহত ছাত্রশিবিরের সাথী আবদুল মালেকের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘শহীদ আবদুল মালেক ফাউন্ডেশন’ এটি পরিচালনা করছে। উভয় প্রতিষ্ঠানেরই কর্তাব্যক্তিরা জামায়াত ও শিবিরের বিভিল্পু পর্যায়ের নেতা-কর্মী। ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সুপরিচিত নেতা ও ফার্মেসি অনুষদের সাবেক ডিন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় তিনি বাংলাদেশ শিল্কপ্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআরÑ সায়েন্স ল্যাবরেটরি বলে পরিচিত) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ লাভ করে দায়িÍ^ পালন করছেন। ফাউন্ডেশনের অন্য ১৩ সদস্য শিবিরের সাবেক বা বর্তমান নেতা, বিশ^বিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থি শিক্ষক এবং ইসলামী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ফোকাস কোচিংয়ের মহাপরিচালক ও মালেক ফাউন্ডেশনের সাধারণ স¤ক্সাদক মীর্যা গালিব ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিবিরের শীর্ষস্ট’ানীয় নেতা এবং ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগের ছাত্র। ফোকাসের পরিচালনা পর্ষদের অন্য সবাই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিবির নেতা।
মীর্যা গালিব সমকালকে বলেন, ‘ছাত্রশিবির ঠিক সরাসরি ফোকাস পরিচালনা করে না। তবে নেপথ্যে থেকে তাদের সহযোগিতা আমরা পাই।’
ঢাকায় চারটিসহ সারাদেশে ফোকাসের মোট ১৬টি শাখা আছে। অন্য জায়গাগুলো হলোÑ ময়মনসিংহ, কুমিল্কèা, যশোর, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, বগুড়া, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, নারায়ণগঞ্জ ও পাবনা। ফার্মগেটে প্রধান শাখা এবং শাহবাগ, মৌচাক ও রায়সাহেব বাজারে শাখাগুলোর অফিস দামি আসবাবপত্রে সুসজ্জিত।
ফার্মগেট শাখার কর্মকর্তা মুহল্ফ§দ রফিকুল ইসলাম কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা সবাই ছাত্রশিবিরেরÑ এ কথা স্ট^ীকার করেন। তিনি জানান, কোচিং সেন্টারে মহিলা শিক্ষক নেওয়া হয় না।
শাহবাগ শাখার পরিচালক সাইফুল ইসলাম ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এসএম হলের শিবির সভাপতি। তিনি তথ্য দিতে অস্ট^ীকার করে বলেন, মিডিয়ার সঙ্গে মহাপরিচালক ছাড়া অন্যদের কথা বলা নিষেধ।
ফোকাসের প্রসপেক্টাসে দাবি করা হয়েছে, গত বছর তাদের ১ হাজার ৩৪৬ জন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মহাপরিচালক মীর্যা গালিবের দেওয়া হিসাব মতে, গত বছর এ কোচিংয়ে শিক্ষার্থী ছিল সাড়ে তিন হাজার। বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্য প্রতিটি ইউনিটের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোচিং ফি নেওয়া হয় ৬ হাজার ৫০০ টাকা করে। কেউ কেউ একই সঙ্গে দুটি ইউনিটের ক্লাস করেন। সে হিসাবে গত বছর ফোকাসের মোট আয় ছিল কমপক্ষে ২ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তবে কোচিংয়ের একাধিক সহৃত্র জানায়, প্রকৃত ছাত্রসংখ্যা অনেক বেশি। বাণিজ্যিক কারণে ছাত্রসংখ্যা কম দেখানো হতে পারে।
ভর্তি মৌসুমের আগে কোচিং সেন্টারের আশপাশে শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট’ায়ী মেস চালু করা হয়। কোচিংয়ের কয়েকজন সাবেক ছাত্র জানান, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ইসলামী বইপত্র, শিবিরের বিভিল্পু গানের ক্যাসেট বিনামহৃল্যে সরবরাহ করা হয়। সরবরাহ করা ভর্তি গাইডের প্রতি পৃষ্ঠার নিচে কোরআন ও হাদিসের বাণী মুদ্রিত আছে।
জানতে চাইলে মীর্যা গালিব বলেন, ‘ছাত্রদের আবাসন সুবিধা দিতেই মেস ভাড়া নেওয়া হয়। মেস ও কোচিং সেন্টারের কোনোটিই রিত্রক্রুটমেন্ট সেন্টার হিসেবে ব্যবহƒত হয় না।’
জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিল্পু পর্যায়ের নেতারা বিনা পারিশ্রমিকে কোচিংয়ে শ্রম দেন। মীর্যা গালিব এ কথা স্ট^ীকার করে বলেন, ‘আমরা স্টে^চ্ছাসেবী হিসেবে কোচিংয়ে কাজ করছি।’
শিক্ষকদের পারিশ্রমিক না দিয়েও শিবির পরিচালিত কোচিং সেন্টারগুলো অন্য বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারের সমানই ফি নিচ্ছে। ঢাকায় ফি সাধারণত প্রতি ইউনিটে ৬ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। দুটো ইউনিটে ভর্তি হলে কিছু রেয়াত হয়।
অর্জিত অর্থ দিয়ে ছাত্রশিবির ছাত্রবৃত্তি প্রদানসহ রাজনৈতিক দাওয়াতি ও প্রচারমহৃলক কাজ করে থাকে বলে জানা যায়।
তবে মালেক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ফোকাস কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে বলে আমার জানা নেই। এটিকে শিক্ষামহৃলক প্রতিষ্ঠান বলে জানি।’ বিনা পারিশ্রমিকে শিবির নেতাদের কাজ করার বিষয়টি অবশ্য তিনি ব্যাখ্যা করতে পারেননি। তিনি রাগ করে বলেছেন, ‘শিবিরের অনেক অনুষ্ঠানে তো আমি গিয়েছি। এ জন্য কি প্রমাণ হবে আমি শিবির করি? শিবিরের কেউ কেউ হয়তো কোচিংয়ের সঙ্গে থাকতে পারে, তাতে ক্ষতি কী?’
খুলনা ব্যুরোর রকিবুল হাসান জানান, খুলনা মহানগরীতে ছাত্রশিবির নিয়šিúত কোচিং সেন্টারের মোট সাতটি শাখা। রেটিনা কোচিং সেন্টারের দুটি, কনত্রিক্রট কোচিং সেন্টারের দুটি, বিএল কলেজে ভর্তির জন্য কনসেপ্টল্ট কোচিং সেন্টারের একটি, কমার্স কলেজে ভর্তির জন্য স্ট‹লার কোচিং সেন্টারের একটি এবং সরকারি সিটি কলেজে ভর্তির জন্য এক্সিলেন্ট কোচিং সেন্টারের একটি শাখা আছে।
তবে সরকারি কলেজগুলোতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তির প™ব্দতি পরিবর্তনের কারণে এক্সিলেন্ট কোচিং সেন্টার এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির জন্য কনত্রিক্রট কোচিং সেন্টারের কার্যত্রক্রম গত দু’তিন বছর ধরে বল্পব্দ আছে।
নগরীর শামসুর রহমান রোডে অবস্টি’ত প্রথমবারের মতো চালু হওয়া ফোকাস বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টারের খুলনা শাখা ছাত্রশিবির নিয়šিúত কি-না জানতে চাইলে নির্বাহী পরিচালক মোঃ মনিরুল ইসলাম পাল্পুা বলেন, ‘ফোকাস কোচিং সেন্টারের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের সংশিè®দ্বতা নেই। এটি শহীদ আবদুল মালেক ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান।’
তবে ছাত্রশিবিরের খুলনা মহানগরীর সেত্রেক্রটারি মিয়া মুজাহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ছাত্রশিবির নিয়šিúত কোনো কোচিং সেন্টার ব্যবসায়িক মানসিকতা নিয়ে চালানো হয় না। এগুলো একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়।
এসব সেন্টারে কোচিং নেওয়া ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর তাদের জোরপহৃর্বক ছাত্রশিবির করতে বাধ্য করা হয়Ñ এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা সত্য নয়। বরং এখানে একটানা ৫-৬ মাস ক্লাস করার পর সংগঠনের আদর্শ, নীতি ও শৃগ্ধখলার প্রতি মু¹ব্দ হয়ে বেশির ভাগ ছাত্রছাত্রীই ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে।’
সিলেট ব্যুরো জানায়, এই শহরে কয়েকটি কোচিং সেন্টার শিবিরের সরাসরি নিয়šúণে চলছে। আবার অনেক কৌশলে পরোক্ষভাবে শিবির নিয়šúণ করে। কোচিং ফি হ্রাস, ক্ষেত্রবিশেষে পুরোপুরি মওকুফ, হ্যান্ডনোট ও বই সরবরাহসহ পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশ^াস দিয়ে প্রলুব্ধ করার চে®দ্বা করা হয়। যারা কিছুটা ঝুঁকে পড়েন তাদের দলীয় দাওয়াত ও বিনামহৃল্যে দলীয় বই দিয়ে সেগুলো পড়তে বলা হয়। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিশ^বিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনেক ছেলেমেয়েকে তারা টেনেছে এবং শিবিরের কর্মীসংখ্যা বাড়াতে পেরেছে বলেও জানা যায়।
সিলেটে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আল্ফ^রখানায় ‘রেডিয়াম’ এবং মেডিকেলে ভর্তির জন্য চৌহাট্টায় ‘রেটিনা’ কোচিং সেন্টার শিবিরের নিয়šúণে চলছে। প্রথমটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় শাখা শিবিরের এবং রেটিনা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখা শিবির কর্মীদের ™^ারা পরিচালিত হচ্ছে। ক্লাসও করান সিনিয়র শিবির নেতা-কর্মীরা যারা কেউ শিক্ষক, কেউ এখনো ছাত্র।
এই শহরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘নিউক্লিয়াস’, ‘সানরাইজ’ প্রভৃতি নামে ও নাম ছাড়াই আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে শিবির কর্মীরা কয়েকটি কোচিং সেন্টার চালাচ্ছেন। তবে দলীয় পরিচয় তারা সাধারণত গোপন রাখেন।
রাজশাহী ব্যুরোর মেহেরুল হাসান সুজন জানান, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যই গড়ে তোলা ‘কনটে¯দ্ব কোচিং সেন্টারের’ কার্যত্রক্রম চলছে ২২ বছর ধরে। দীর্ঘদিন প্রকাশ্যেই এই কোচিং সেন্টারটি ‘ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচালিত’ বলে লেখা থাকলেও এ বছর তা নেই।
শিবিরের রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় (রাবি) শাখার এক সাবেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে তাদের নিজেদের সংগঠনের আয়ত্তে নিয়ে আসার কৌশল হিসেবেই তাদের কোচিং সেন্টারগুলোর কর্মকা শুরু হয়। পাশাপাশি কোচিং থেকে পাওয়া অর্থ সংগঠনের কাজেও লাগানো হয়।
কনটে¯দ্ব কোচিং সেন্টারের বর্তমান উপদে®দ্বাম লীর তালিকায় রয়েছেন জামায়াত নেতা তাসনীম আলম, ছাত্রশিবির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, সাবেক শিবির নেতা নহৃরুল ইসলাম বুলবুল, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা রেজাউল করিম, জামায়াতের মহানগর প্রচার সল্ফক্সাদক ইমাজ উদ্দিন ম ল, জামায়াত নেতা মাইনুল ইসলাম, সিদ্দিক হোসাইন ও রাবি ছাত্রশিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী।
কোচিং সেন্টারটিতে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা কোর্স ফি নেওয়া হয়। জিপিএ-৫ পাওয়াদের জন্য সামান্য কিছু ছাড়ের ব্যবস্ট’া আছে। গরিব শিক্ষার্থীদের জন্যও। প্রতি বছর নগরীতে কনটে¯েদ্বর চারটি শাখায় গড়ে দু’হাজারের বেশি ভর্তিচ্ছু কোচিং নেন। প্রতি বছর মোট ফি আদায় হয় প্রায় ৯০ লাখ টাকা। শিক্ষক রয়েছেন ৬০ জন। লেকচারপ্রতি তাদের ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। সপ্টøাহে প্রতি জনের চারটি করে লেকচার ধরে শিক্ষক খাতে বছরে ব্যয় হয় প্রায় ৬ লাখ টাকা। গাইড ছাপতে খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকা। ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষা ও লেকচারশিট বাবদ আরো এক লাখ। বছর জুড়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় ২ লাখ টাকা। বাড়িভাড়া, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অনুষ্ঠান আয়োজনসহ অন্যান্য খাতে আরো ২ লাখ টাকা ব্যয় ধরে এক বছরে প্রায় ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা কোচিং খাতে খরচ করে কনটে¯দ্ব। বাকি থেকে যায় ৭৬ লাখ টাকা। এই মুনাফা শিবিরের আয় হিসেবে গণ্য হয়। এ থেকে নতুন শিবির রিত্রক্রুটদের প্রয়োজনমতো আর্থিক সহায়তা দেওয়া ও সাংগঠনিক কাজে ব্যয় হয়।
কনটে¯দ্ব কোচিং সেন্টারের প্রসপেক্টাসে লেখা রয়েছে, ভর্তিচ্ছুদের জানিয়েও দেওয়া হয় যে, বিশ^বিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা দহৃরীকরণ ও আর্থিক সমস্যাসহ সব বিষয়ে সহযোগিতা দিয়ে থাকে তারা। ‘আবাসিক সমস্যা দহৃর’ করতে বিশ^বিদ্যালয়সংল¹ু বিনোদপুর এলাকায় শিবিরের পরিচালনায় চালু রয়েছে দুটি ছাত্রাবাস।
ভর্তির সময় প্রতি হল শাখা শিবির সভাপতির কক্ষ ব্যবহƒত হয় অভ্যর্থনাকক্ষ হিসেবে। কনটে¯েদ্ব কোচিং নেওয়া শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিবিরনিয়šিúত কক্ষগুলোতে থাকতে দেওয়া হয়। কনটে¯েদ্বর পরিচয়পত্র শিবিরের সহযোগিতা পাওয়ার নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।
কনটে¯দ্ব কোচিং সেন্টারের প্রধান পরিচালক আলাউদ্দিন ম ল দাবি করেন, সেন্টারটি ‘ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ নামের একটি সেবামহৃলক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত। এ ক্ষেত্রে তারা যে অর্থ পান সেগুলো শিক্ষার্থীদের উল্পুয়ন ও সহযোগিতার কাজেই ব্যবহার করা হয়।
রাবি শিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী বলেন, কনটে¯েদ্বর কোনো অর্থ তাদের সংগঠনে আসে না। এ টাকা খরচের বিষয়ে তারা কোনো সি™ব্দাšøও নেন না। তারা কেবল কোচিং সেন্টারটির উপদে®দ্বা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোতে ভর্তির জন্য রাজশাহীতে রয়েছে রেটিনার একটি শাখা। ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা পরিচালনা করেন। তারা জানান, এটি ‘রেটিনা এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের’ একটি প্রতিষ্ঠান। শিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ রেটিনার কেন্দ্রীয় উপদে®দ্বাদের একজন। রাজশাহী শাখার উপদে®দ্বাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মহানগর জামায়াতের সেত্রেক্রটারি জেনারেল আবুল কালাম আজাদ ও মহানগর শিবির নেতা রোকন উদ্দিন।
প্রসপেক্টাসেই লেখা আছে, ‘মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও রেটিনার ভাইয়াদের সঙ্গে সল্ফক্সর্ক ছিল্পু হয়ে যায় না। মেডিকেলে অধ্যয়নকালীন পুরো পাঁচটি বছর তা বজায় থাকে।’ রেটিনা রাজশাহী শাখার পরিচালক নাজমুল হক অবশ্য জানান, ‘শিবির রেটিনা পরিচালনা করে না।’
রাজশাহীতে প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য রয়েছে কনত্রিক্রট কোচিং সেন্টারের শাখা। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও রাবি শিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী কনত্রিক্রট রাজশাহী শাখার উপদে®দ্বাম লীর অন্যতম। এখানে প্রতি বছর প্রায় ৪ শ’ জন ভর্তিচ্ছুকে কোচিং দেওয়া হয়। জনপ্রতি ফি সাড়ে ৬ হাজার টাকা। কোচিং সেন্টার থেকে সংশিল্গ®দ্ব প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় ক্যাল্ফক্সাসে শিবির নেতাদের কাছে শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয় যাতে তাদের শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত করা যায়।
২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষে কনত্রিক্রটে কোচিং নিয়ে রুয়েটে সুযোগ পেয়েছেন এমন এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভর্তি হওয়ার পরও সেন্টার থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি নিজে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেননি। তবে তার সতীর্থদের অনেকেই এখন শিবিরের রাজনীতি করছেন।
কনত্রিক্রট রাজশাহী শাখার পরিচালক শহিদুল হক শাহিন সেন্টারটি ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচালিত বলে স্ট^ীকার করলেও এখান থেকে রাজনৈতিক কোনো প্রত্রিক্রয়া চালানো হয় না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘কনত্রিক্রটে কোচিং করার পরও আমাদের সঙ্গে কারো সল্ফক্সর্ক শেষ হয় না। ভর্তির পরও আমরা তাদের সহযোগিতা করি। কেউ যদি আমাদের এসব সহযোগিতায় খুশি হয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়িত হন, তাহলে সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে কোনো জোর-জবরদস্টিøর ব্যাপার নেই।’
কনত্রিক্রটের উপার্জিত অর্থ শিবিরের রাজনীতিতে ব্যবহƒত হয় না বলে দাবি করে তিনি জানান, ঢাকায় কনত্রিক্রটের নিজস্ট^ ভবনের কাজ চলছে। সেখানে তারা উপার্জিত অর্থ কাজে লাগাচ্ছেন।

১. ০৯ ই জুন, ২০০৭ সকাল ৯:১২ ০