বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে সাত জনই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ খেতাব বীরোত্তমপ্রাপ্ত হলেন একজন, বীরপ্রতীকপ্রাপ্ত রয়েছেন দু’জন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের চরমপত্রখ্যাত সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুলের লেখা ‘আমি বিজয় দেখেছি’ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের তালিকায় তাদের নাম রয়েছে।
বইটির ২৬ পৃষ্ঠায় ১ নম্বর সেক্টর ও জেড ফোর্সে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনা কর্মকর্তাদের তালিকায় শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লে. কর্নেল অব. এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী বীরবিক্রম, ২ নম্বর সেক্টর এবং কে ফোর্সের সেনা কর্মকর্তাদের তালিকায় মেজর অব. এম এ আজিজ পাশা ও মেজর অব. বজলুল হুদার নাম রয়েছে।
৪ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের নামের তালিকায় ৩ নম্বরে রয়েছেন লে. কর্নেল অব. শরিফুল হক ডালিম বীরউত্তমের নাম। একই সেক্টরে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের জন্য বীরপ্রতীক খেতাব পান লে. কর্নেল অব. এ এম রাশেদ চৌধুরী।
লে. কর্নেল অব. সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানের নাম রয়েছে ৬ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের নামের তালিকার ৫ নম্বরে।
এছাড়া কর্নেল অব. সৈয়দ ফারুক রহমানও মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে ফারুক রহমান উল্লেখ করেন, তিনি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া বিভিন্ন যুদ্ধেও অংশ নেন তিনি।
তাদের অনেকেই তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তারা বিদ্রোহ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কেউ কেউ পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট থেকে জীবনবাজি রেখে পালিয়ে আসেন এবং যুদ্ধে অংশ নেন। এদের মধ্যে লে. কর্নেল অব. সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর অব. বজলুল হুদা, মেজর অব. আজিজ পাশা পাকিস্তান ক্যান্টনমেন্ট থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
সম্মুখযুদ্ধে জীবনবাজি রেখে বীরত্বের জন্য লে. কর্নেল অব. শরিফুল হক ডালিম জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ খেতাব বীরউত্তম উপাধি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধে চার নম্বর সেক্টরের কমান্ডার সি আর দত্তের অধীনে যুদ্ধ করেন লে. কর্নেল অব. শরিফুল হক ডালিম। অনেক সম্মুখযুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে জীবনবাজি রেখে পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করেন এবং নিজ এলাকাকে শত্রুমুক্ত করেন।
১ নম্বর সেক্টর ও জেড ফোর্সে বীরত্বপূর্ণ সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য লে. কর্নেল অব. এসএইচবিএম নূর চৌধুরী বীরবিক্রম খেতাব লাভ করেন। বিভিন্ন জায়গায় তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।
মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।