somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তুবীরের উপাস্য (পর্ব -৩)

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘাড় ঘুরিয়ে শ্রীকে দেখে অনেকটা ভুত দেখার উপক্রম হয়। মূহুর্তে কাশি যায় থেমে। এমন অসময়ে শ্রীকে দেখবো কল্পনাই করতে পারিনি।কী আর করার। অগত্যা ধরফর করে উঠে দ্রুত পা চালিয়ে বাজারের দিকে রওনা দেই। মাঝে একবার পিছনে ফিরে তাকিয়েছিলাম বটে কিন্তু সেদিকে ভালো করে ভ্রুক্ষেপ করতে পারিনি।এক ঝলকে চোখ পড়েছিল নেহার দিকে। জানিনা ও মেয়ের কপালে কী লেখা আছে। তবে নেহাকে আমার খুব বুদ্ধিমতি মেয়ে বলেই মনে হয়।শ্রীর শ্লেষ ও গায়ে মাখবে বলে মনে হয় না। যাইহোক মূহুর্তে যেটা চোখে পড়েছে ও হাসি হাসি মুখে শ্রীর দিকে তাকিয়ে ছিল।কী কথা হচ্ছিল সে সব বোঝা দূর থেকে আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তবে আমার অবশ্য তাগিদ ছিল নিজেকে নিয়ে। কাজেই নেহা টেহা নয় আপাতত নিজেকে বাঁচানোই শ্রেয় বিবেচনা করে উর্ধ্বশাসে পা চালাই। কিছুসময় পর আরেকবার পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখি শ্রী আমার পিছু নিয়েছে। যদিও তখন দুজনের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই ছিল। আশেপাশের কয়েকজনকে উৎসুকভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারি আমার আচরণের মধ্যে নিশ্চয় অস্বাভাবিকত্ব কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে। মূহুর্তে পিটুইটারি গ্ল্যান্ডে কে যেন ধাক্কা মারে। কাজেই নুতন করে আর না ছুটে গতি কমিয়ে দেই।আসলে বেগ কমানোর মধ্যে শ্রীর জন্য কিছুটা অপেক্ষা করার তাগিদ অনুভব করি। আমার স্লো মোশন বুঝে শ্রী বোধহয় একটু জোরেই পা চালিয়েছিল।বেশ কিছুক্ষণ পরে দেখি ও প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। অস্বীকার করবো না ও কাছাকাছি চলে আসায় আমার অস্বস্তির স্পন্দন ক্রমশ বাড়ছিল। কী করে যে ওর সামনে স্বাভাবিক হতে পারবো বুঝতে পারছিলাম না। মাথায় মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল, এভাবে নেহার সঙ্গে আমাকে দেখে ফেলায় সবকিছু বিগড়ে গেলো। এখন কী করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবো সেই ভাবনা ঘূর্ণিপাকের মত আমার অন্তরাত্মাকে তোলপাড় করতে থাকে।

হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে শ্রী একদম পাশে চলে আসে।কয়েক সেকেন্ডের জন্য দুজনের চোখাচোখি হয় বটে। কিন্তু আমিই চোখ নামিয়ে নেই। ভিতরে ভিতরে অপরাধবোধ আমাকে দগ্ধ করে তোলে।আর হবে নাই বা কেন। একঘন্টা সময় দিয়েছিল বাজার করে ফেরার জন্য।আর সেই আমিই কিনা পথে অন্য নারীর সঙ্গে গল্পে আটকে গেছি রান্না ঘরের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে। অগত্যা বেচারাকে আমাকে খুঁজতে রাস্তায় পর্যন্ত নামতে হয়েছে। সুতরাং আগ বাড়িয়ে কিছু বলা সাজে না। আমার নিরবতা দেখে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,
-তোমার বমি হচ্ছিল শুনলাম থেমে গেছে?
বুঝতে পারছিলাম না যে ও বমির কথা জিজ্ঞেস করছে ব্যঙ্গ করে নাকি সত্যিই বলছে। যাইহোক মুখে কিছু না বলে আমি বরং ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি।মনে মনে বলি হঠাৎ বমির কথা জিজ্ঞেস করলে কেন। কয়েক মূহুর্ত নিজেকে নির্বিকার রেখে এবার উল্টে জিজ্ঞেস করি,
-আমার বমি হচ্ছিল তুমি জানলে কীভাবে?
শ্রী উত্তর দেয়,
-দুধওয়ালা দাদার কাছ থেকে শুনেছি।
মনে মনে বলি যাক বাবা বাঁচা গেল।বড় ধরণের গোলমাল থেকে রক্ষা পেলাম।
দুধওয়ালা মানে পাড়ারই দুধ ব্যবসায়ী কার্তিকদা। প্রতিদিন সকালে যে বাড়িতে দুধ দিয়ে যায়।
প্রশ্ন করি,
-কী বলেছে কার্তিকদা?
শ্রী জানায়, দুধ দিতে এসে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,
- বৌদি দাদাবাবুকে পথে বমি করতে দেখলাম।উনি কি অসুস্থ ছিলেন?কানে আসছিলো উনি অনবরত কেশেই চলেছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন দিদি জোগান বাড়িতে তাড়া থাকার জন্য আমি দাদাবাবুর ওখানে সময় দিতে পারিনি।তবে ঔষধের দোকানের মেয়েটাকে দেখলাম দাদাবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
খবরটি শুনে আমি আর দেরি করিনি।যে অবস্থায় ছিলাম ঐ অবস্থায় বেরিয়ে এলাম। কিন্তু এখানে এসে কানে যা শুনলাম তাতে মনে হলো আমি না এলেই ভালো করতাম; এসে বরং তোমাদের অসুবিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছি।
- আরে! খালি খালি অসুবিধার কথা বলে আর লজ্জায় ফেলো না তো।
শ্রী আদুরে গলায় বলে,
- উলি বাবারে আমার লজ্জাবতী রে! কী লজ্জাটাই না পেয়েছে।
পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক হয়েছে বুঝে মনে মনে খুশি হই।
কিন্তু পরক্ষণেই শ্রী বলে ওঠে,
-আচ্ছা একটা উত্তর তুমি দাও দেখি।দোকানী ছুড়িটা তোমার বমি করার সময় পাশে ছিল। আমি তোমার বৌ হয়ে তোমার অসুস্থতা জানতে পারছিনা অথচ ও কীভাবে ঠিক সময়ে হাজির হচ্ছে আমার মাথায় আসছে না। সেদিন যেমন মাফলার পরিষ্কার করে নিয়ে এলো। আজকে আবার দাঁড়িয়ে থেকে তোমার সেবা করেছে।দুধওয়ালা একা নয় পাড়ার অনেকেই নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছে।

শ্রীর কথার মধ্যে একটা শ্লেষ ছিল। বুঝতেই পারি মোক্ষম জায়গায় ঘা দিয়েছে। অপরাধ করে ফেলেছি। কাজেই অপ্রিয় হলেও ঠান্ডা মাথায় কনফেস করতে হবে। কিন্তু সেটা মুখে কিছু না বলে বরং গম্ভীর হয়ে নীরবতাই শ্রেষ্ঠ উপায় বলে নিশ্চুপ থাকি।
খানিক বাদে শ্রী আবার জিজ্ঞেস করে,
-তুমি দোকানী ছুড়িটার মায়াবী হৃদয়ের প্রশংসা করছিলে ভালো কথা।যদিও নিজের স্বামীর মুখে অন্য নারীর এমন প্রশংসা যে কোনো নারীর ভালো না লাগারই কথা। এখন এই ভালো লাগা না লাগার জন্য তো আর পৃথিবী থেমে থাকবে না। কিন্তু তুমি হঠাৎ ছুটে পালালে কেন এটাই বোধগম্য হচ্ছে না।
এবারেও আমি শ্রীর প্রশ্নে নীরব থাকি। মুখে কিছু না বললেও আমার অনুল্লেখিত শব্দমালা মুখাবয়ব থেকে হয়তো সে যা বোঝার বুঝতে পেরেছিল।তাই কিছুটা স্বর্গোক্তি করে বলে,
-আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না যে দোকানি ছুড়িটাকে আমি যতোই অবজ্ঞা করি বা ঘৃণা করি না কেন ও আমার পিছু ছাড়ছে না। আমি সত্যিই ওকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি।

একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি,গতকয়েকদিনে শ্রীময়ীর আচরণ অনেকটাই বদলে গেছে।যে মেয়ে সুযোগ পেলে আমাকে দুধের শিশু বানিয়ে হাতে করে বড় করে তোলার দায়িত্ব পালন করেছে। কখনো বা আমার বাবা মা আমাকে ঠিকমতো আদব কায়দা সৌজন্যতা শেখাতে পারেনি বলে আমাকে শাপশাপান্ত করে অভীসম্পাত করে বা সময়ে অসময়ে শিল-নোড়ায় বাটনা বাটে। সেই শ্রীময়ী যেন এখন অনেকটাই বদলে গেছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই বদলানোর প্রধান কারণ নেহা।আগে দিনে কতোবার বলতো আমার মতো অকর্মণ্য আমড়া কাঠের ঢেঁকি নাকি ওর জীবনটা শেষ করে দিয়েছি। আমি ওর হাড়মাস জ্বালিয়ে খাচ্ছি। এখন সেই শ্রীময়ী আমাকে নিয়ে আশঙ্কায় ভোগে। এইজন্যই আমাকে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখতে চায়। ওদিকে নেহা আদৌ হয়তো জানে না ওকে নিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে কী ভয়ানক অস্থিরতা চলছে। তবে শ্রী যেটাই ভাবুক ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য লাগছে। এতো দিন পর মনে হচ্ছে আমি আমার স্ত্রীর কাছে কিছুটা হলেও সম্মান পাচ্ছি।

যাইহোক এরকম অম্ল মধুর কথা আলোচনা করতে করতে আমরা একসময় বাড়ির সামনে চলে আসি। গেটের মুখে এসে দেখি নিতাইদা দাঁড়িয়ে আছে।
- আরে নিতাইকাকা যে। কী ব্যাপার? সূর্য আজকে কোন দিক দিয়ে উঠেছে? প্রশ্ন করতেই খুব উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
- হ্যারে সন্তু তোর জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করতে করতে পা লেগে গেছে রে ভাতিজা। শুনলাম তুই বাজারে গিয়েছিস এক্ষুনি ফিরবি। কিন্তু এতোক্ষণ সময় লাগবে বুঝতে পারিনি।
- স্যরি কাকা তুমি অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছো শুনে খারাপ লাগছে।
-শোন যে দরকারে এসেছিলাম।

চলবে.....






সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৪
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এখানে আর নিরাপত্তা কই!=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৩


কোন সে উন্নয়নের পথে হাঁটছি বলো
এই গিঞ্জি শহর কি বাসের অযোগ্য নয়?
শূন্যে ভাসমান রাস্তা-নিচে রাজপথ
তবু কি থেমে আছে যানজট কিংবা দুর্ঘটনা?

দৌঁড়ের জীবন-
টেক্কা দিতে গিয়ে ওরা কেড়ে নেয় রোজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই শহর আমার নয়

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:০২




এই শহর আমার নয়
ধুলিমলিন, পোড়া ধোঁয়ায় ঘেরা
ধূসর এক স্বপ্নহীন চেহারা।
এই শহর, আমার নয়।

ঘোলাটে চোখে জমে হাহাকার,
চেনা মুখেও অচেনার ছাপ।
পথে পথে স্বপ্নরা পোড়ে,
আলোর ছায়ায় খেলে আঁধার।

এই শহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

টিউবওয়েলটির গল্প

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৪



এটা একটি টিউবওয়েল।

২০০৯ সালে, যখন আমি নানী বাড়ি থেকে লেখাপড়া করতাম, তখন প্রতিদিন এই টিউবওয়েল দিয়েই গোসল করতাম। স্কুল শেষে ক্লান্ত, ঘামাক্ত শরীর নিয়ে যখন ঠান্ডা পানির ঝাপটায় নিজেকে স্নান... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজায় গণহত্যা : মুসলিম বিশ্বের নীরব থাকার নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


গাজার প্রতিটি বিস্ফোরণে কেবল ধ্বংস হয় না —প্রতিধ্বনিত হয় একটি প্রশ্ন: মুসলিম বিশ্ব কোথায় ? মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির আয়নায় এই প্রশ্নটি এক খণ্ড অন্ধকার, যা শুধু আন্তর্জাতিক রাজনীতির ব্যর্থতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লেখকের প্রাপ্তি ও সন্তুষ্টি

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০০

একজন লেখক যখন কোন কিছু লিখেন, তিনি কিছু বলতে চান বলেই লিখেন। বলাটা সব সময় সহজ হয় না, আবার একই কথা জনে জনে বলাও যায় না। তাই লেখক কাগজ কলমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×