ওষুধের দোকানের বিপত্তির ঠিক দুদিন পরে সকাল সাতটা তিরিশ চল্লিশের দিকে হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠে। রান্নার দিদি খুব ভোরেই চলে আসে। কাজেই এ সময় বাড়িতে তেমন কারোর আসার সম্ভাবনা থাকে না। আমি অবশ্য তখনও বিছানায় শুয়েছিলাম। ওদিকে রান্নাঘরে শ্রীময়ী রান্নার দিদির সঙ্গে কাজে ব্যস্ত। প্রথমবার কলিং বেলের শব্দতরঙ্গ রান্না ঘরের ব্যস্ততা ভেদ করে ওদের কর্ণকুহরে পৌঁছেছে বলে মনে হলো না।অন্তত আপন মনে দুজনের কর্মব্যস্ততা ও গল্পগুজবে মশগুল দেখে আমার সেটাই মনে হলো। যাইহোক এত সকালে কে আসতে পারে ভেবে কিছুটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে দোতলায় ঘরের জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই দেখি নেহা দাঁড়িয়ে আছে। সর্বনাশ!এই অসময়ে নেহা!বুক দুরু দুরু করে ওঠে। কী আছে কপালে কে জানে।কী করি কী করি ভাবতেই মূহুর্তে একটা আইডিয়া চলে আসে। না আর সময় নেওয়া ঠিক হবে না। তড়িঘড়ি কম্বল মুড়ি দিয়ে চুপচাপ আগের মতই শুয়ে থাকি। খানিক বাদে প্রত্যাশা মতো আবার কলিং বেল বেজে ওঠে। এবার রান্নাঘর থেকে শব্দ এলো,
- এই একটা লোক! এখন সাড়ে সাতটা আটটার সময়েরও ধুমসো মোষের মতো ঘুমিয়ে যাচ্ছে।বলি একটু নিচে গিয়ে দেখ দেখি কে কলিং বেল বাজাচ্ছে।
শ্রী যেটাই বলুক না কেন, মনে মনে বলি মাথা খারাপ? তোমার কথা শুনে নিচে গিয়ে নেহার সামনে হেনস্থা হওয়ার সুযোগ করে দিতে কিছুতেই পারবো না। কাজেই শ্রীর ডাককে পাত্তা না দিয়ে কম্বলের নিচে গুটিসুটি মেরে চুপচাপ শুয়ে থাকি। অপেক্ষায় থাকি পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াচ্ছে তার দিকে।
খানিক বাদে পা দাপাদাপির সঙ্গে মুখে অগ্নিবর্ষন করতে করতে শ্রীর বারান্দায় যাওয়ার শব্দ কানে আসে। আমিও এই সুযোগে উপরের স্লাইডিং জানালা দিয়ে নিচের দিকে চোখ রাখি।নেহাকে দেখে শ্রী অনেকটা কর্কশ কন্ঠে বলে,
- আরে তুমি! এতো সকালে কী মনে করে?
নেহা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,
- দিদি একটা দরকারে এসেছিলাম।একটু নিচে নামবেন?
বলেই ব্যগ থেকে কী একটা জিনিস বের করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ওকে ব্যাগ হাতড়াতে দেখে মনে হলো শ্রী একটু খুশিই হয়েছে।
-দাঁড়াও আসছি, বলে নেহার ডাকে সাড়া দিতে শ্রী বারান্দা থেকে বের হয়ে সিঁড়ির দিকে পা চালালো। আমিও উৎসুক হয়ে ততক্ষণে নেহার দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষণ ব্যাগের এ চেন ও চেন খুলে অবশেষে খবরের কাগজে মোড়ানো একটা প্যাকেট বের করে এগিয়ে ধরলো।
কাগজে মোড়ানো প্যাকেটটি দেখে শ্রী প্রশ্ন করলো,
-কী ওটা?
- দিদি সেদিন আপনারা দোকানের সামনে ঝগড়া করতে করতে চলে আসার পর দেখি এই জিনিসটা ওখানে পড়ে আছে। মনে হয় ভুল করেই কাকু সেদিন এই জিনিসটা ছেড়ে এসেছিলো।
মূহুর্তে শ্রীময়ীর রূপ বদলে গেলো,
- তুমি তো খুব বেয়াদব মেয়ে দেখছি। টুকটাক আমাদের মধ্যে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছিল ঠিকই তাই বলে তুমি সেটাকে ঝগড়া বানিয়ে দিলে? আর আমরা তোমার দোকানের সামনে ঝগড়া করছিলাম কেন করছিলাম সেটা কী তোমার বোধগম্য হয়েছিল?তা এই ঝগড়া ঝগড়া শব্দ বলে কানভাঙানি কি তোমার কাকুর কানে পৌঁছে দিয়েছ?
নেহা শ্রীর ধমকানিতে অনেকটা গুটিয়ে আমতা আমতা করে মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।
শ্রী চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে,
-প্যাকেটের ভেতরে কী আছে বাছা?
- মাফলার দিদি।
শ্রী ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে ওঠে,
- তুমি তো বেশ লক্ষী মেয়ে দেখেছি, কাকুর মাফলারটাও চিনে রেখেছো।তো লক্ষ্মী মেয়ে আর একটা উত্তর দাও দেখি, কাকুর আর কী কী জিনিস তুমি চেনো?
নেহা কী একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু শ্রী কোনো সুযোগ না দিয়ে মুখ ঝামটা দিয়ে হাত থেকে ছোঁ মেরে কাগজে মোড়ানো প্যাকেটটা নিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে,
- সামান্য একটা মাফলারকে এতোটা যত্নআত্মী করে আনার কারণ কী জানতে পারি?
-আজ্ঞে দিদি আপনারা চলে আসার পর দুটো কুকুর দেখি ওটা নিয়ে টানাটানি করছিল।আমি একটা লাঠি নিয়ে ওদেরকে তাড়িয়ে মাফলারটি উদ্ধার করি।পরে বাড়িতে গিয়ে ভালো করে ডেট্রল ওয়াশ করে তবেই নিয়ে এসেছি।
- ও মাই গড! কুকুর টানাটানি করছিল? ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা... আর তুমি সেটা উদ্ধার করে আবার ডেট্রল ওয়াশ করে নিয়েও এসেছ? খুবই লক্ষীমেয়ে তুমি মানতেই হবে। এমন একটা কাজে তোমার কাকু দারুণ খুশি হবে নিশ্চিত।
নেহা বোকা বোকা চাহনিতে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে থাকে। শ্রী আবারো তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,
- এতো ভালো একটা কাজ করেছ যখন তখন তো একটা পুরস্কার তোমার প্রাপ্য। আমি আর কী দেবো, তো তোমার কাকুকে বলে একটা পুরস্কার নিয়ে নিও কেমন?
নেহা শ্রীর ব্যঙ্গাত্মক কথা বুঝতে না পেরে সরলতার সঙ্গে জানায়,
- না না দিদি কোনো পুরস্কারের লোভে আমি এটা করিনি। আমাদের কোম্পানি একটা সুন্দর ডেট্রল বাজারে নিয়ে এসেছে।সেন্টেড ডেট্রল। খুবই সুন্দর গন্ধ। জামাকাপড় ওয়াশ করার পর দারুণ সুগন্ধ হয়। একবার মাফলারটা সুখে দেখুন দিদি ভারী চমৎকার গন্ধ।
- আরে! বলো কী? তুমি আমার হ্যাজব্যান্ডের মাফলার সুখে বেড়াচ্ছ?আর তোমার কাছ থেকে শুনেই আমাকে ওর মাফলারে গন্ধ শুঁকতে হবে?হা ভগবান! এ কার পাল্লায় পড়েছি?
- না না দিদি আপনি খারাপ ভাবে নেবেন না প্লিজ। আমি শুধু আমার কোম্পানির ডেট্রলের সুগন্ধির কথা বলতে চেয়েছি।
- রাখো তোমার সুগন্ধি।ডেট্রলের আর কী সুগন্ধি আছে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি সুগন্ধি তো তুমি নিজেই ছড়াচ্ছ বাছা।
- দিদি ভুল বুঝবেন না প্লিজ। আমি কোম্পানির প্রোডাক্টের গুণাগুণ সম্পর্কে বলতে চাইছিলাম।
এবার কিছুটা ধমকের সুরে,
- শোনো আমার এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার কোম্পানির অ্যাডভেটাইজ শোনার সময় নেই।
তারচেয়ে বলি কী এখন থেকে বরং তোমার কাকুর জিনিসগুলো তুমি নিয়ে গিয়ে ডেট্রল ওয়াশ করে নিয়ে এসো কেমন?
- দিদি আপনি শুধু শুধু আমার উপর রাগ করছেন।
এবার শ্রী একরাশ বিরক্তি নিয়ে,
- দেখো বাপু! তোমার সঙ্গে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভদ্রতা রক্ষা করার ইচ্ছা ও সময় কোনোটাই আমার নেই। তুমি এবার আসতে পারো,বলেই শশব্দে দরজা বন্ধ করে উপরে চলে আসে। আমিও সেই সুযোগে আবার কম্বলের ভেতর ঢুকে পড়ি।
উপরে এসে রাগে গজগজ করতে করতে ঘরে এসে সজোরে একটা হ্যাচকা টান দিয়ে আমার কম্বলটি মেঝেতে ফেলে দুহাত কোমরে দিয়ে কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি পড়িমড়ি করে উঠে বসি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে হাত দুটো শূন্যে ছুঁড়ে আড়ামোড়া খেয়ে ওর দিকে তাকিয়েই আবারো চমকে উঠি। ঘড়িতে তখন আটটা বাজে। কিছুটা দুঃখ দুঃখ মুখে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে,
- সরি শ্রী অনেকটাই বেলা হয়ে গেছে। এতোক্ষণ ঘুমানো উচিত হয়নি। অবশ্য তুমি আগেই আমাকে ডেকে দিতে পারতে।
- থাক আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না।
রাজপুত্তুরের মতো ঘুমিয়ে যাচ্ছ। আর আমরা দাস-দাসী খেটে মরছি। এদিকে একটু বাজারে যাওয়ার ছিল জাঁহাপানা।
- নিশ্চয় যাবো,বলে আমি শশব্যস্ত হয়ে চোখেমুখে জল দিতে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।
ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তোয়ালেটা এগিয়ে ধরে শ্রী শান্তভাবে আমার দিকে এগিয়ে আসে। কিছুটা হাসি হাসি মুখে বলে,
-তোমাকে একটা কথা বলবো বলবো বলে ঠিক বলা হচ্ছে না।
- কী কথা মাই সুইটহার্ট?
- আর নাটক করো না।আমি কি আর তোমার সুইটহার্ট আছি? সেই কবেই তোমার হৃদয় থেকে আমি হারিয়ে গেছি। খুবই ভয় হচ্ছে গো..
- আরে না না মিছে মিছে কেন এমন ভয় পাচ্ছ? আমি তোমাকে ভালোবাসার তাজমহল বানিয়ে দেবো। তুমি হবে সেই মন্দিরের উপাস্য দেবী।
সঙ্গে সঙ্গে আমার নাকটি ধরে,
- ওরে আমার সন্তুবীররে! আমার জন্য নাকি তাজমহলের মতো ভালোবাসার মন্দির বানাবে। আপাতত ওইসব মন্দির পর্যন্ত ভাবতে পারছিনা। আমার এখন প্রধান মাথাব্যথা ওষুধের দোকানের ঐ মেয়েটাকে নিয়েই।ওর মতিগতি ভালো ঠেকছে না গো।বড্ড নাটুকেপনা গায়ে পড়া স্বভাবের। আজকে সকালে এসেছিল তোমার মাফলারটা নিয়ে।
-কোন মাফলার?
-সেদিন নাকি তুমি ঝগড়া করার জন্য মনের ভুলে মাফলারটা ছেড়ে এসেছিলে, বলে হাতে ওটা ধরিয়ে দেয়।
মাফলারটা দেখে আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই। কি বলে গেছে তা তো আমি আগেই জেনেছি। তবুও জিজ্ঞেস করি কিছু বলে গেছে?
-হুম অনেক কিছুই তো বলে গেছে। যাইহোক আমি আর আগ্রহ দেখালাম না। মাফলারটি কয়েকদিন আগে ওকে দিয়েছিলাম। সন্ধ্যা সাড়ে আটটা নয়টার দিকে দোকানে গিয়ে দেখি মেয়েটি জবুথবু হয়ে বসে আছে। মোবাইলে টেম্পারেচার বারো ডিগ্রি দেখাচ্ছে। আড়ষ্টতা দেখে মনে হল ঠান্ডায় মেয়েটির কাঁপুনি শুরু হয়ে গেছে। উল্লেখ্য গলা ও মাথায় কিছুই ছিল না। প্রচন্ড ঠান্ডায় আমি আমার মাফলারটি অফার করতেই প্রথমে একটু কিন্তু কিন্তু করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যায়। ঠিক করেছিলাম পরে দোকানে গিয়ে মাফলারটি নিয়ে আসবো। কিন্তু সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো না। আজকে সকালেই চলে এসেছে।
যাইহোক নেহাকে নিয়ে শ্রীমতির আশঙ্কা দূর করতে,
- আরে না না ওকে নিয়ে এতো দুশ্চিন্তা করার কী আছে? ও আছে ওর জায়গায় আর তুমি আছো তোমার জায়গায়।
শ্রী প্রতিবাদ করে,
- না ও মেয়ে ওর জায়গায় নেই।আর এখানেই আমার যতো দুশ্চিন্তা।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শ্রী আবার বলতে শুরু করে,
-আমি চাই না তুমি ওর সঙ্গে মেলামেশা করো।
আমি অবাক হয়ে,
- মেলামেশা মানে! আর তাছাড়া ও আমাকে কাকু বলে ডাকে।
কিছুটা ধমকের সুরে,
- রাখো তোমার ওসব কাকুটাকু। বরং ও আমাকে যেমন দিদি বলে তোমাকেও তেমনি দাদা বলে ডাকতে বলো।
- তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে শ্রী? হাঁটুর বয়সী একটি মেয়েকে দাদা বলার প্রস্তাব দেওয়া যদি একবার জানাজানি হয়ে যায় তাহলে পাড়ায় যে ঢিঢি পড়ে যাবে সেকথা কি তুমি একবার ভেবেছ?
- থাক তোমার ঢিঢি। হাঁটুর বয়সী হলেও লীলা খেলা তো আর থেমে থাকছে না।
আমি আর তর্কে গেলাম না। ভালো ভাবে জিজ্ঞেস করলাম,
- বাজার থেকে কী কী আনতে হবে জানাও।
ও মাথার উপড়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
- থাক আজ আর সময় নেই। তোমার অফিসে দেরি হয়ে যাবে। আগামীকাল সকালেই না হয় নিয়ে এসো।
আমি বেশ সেটাই হবে বলে অন্য কাজে মন দিলাম ।
পরেরদিন সকালে একটু আগেভাগেই ঘুম থেকে উঠি পড়ি। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেস হতে না হতেই চা চলে আসে।খেতে খেতেই শ্রী হাতে ফর্দটা ধরিয়ে দেয়। একঝলক চোখ বুলিয়ে দেখলাম বেশ বড় ফর্দ। বিভিন্ন রকম আনাজ পাতির সঙ্গে মুদির দোকানের নানান দ্রব্যও রয়েছে সেখানে।
ফর্দটা ধরিয়ে দেওয়ার সময় জানিয়ে দেয়,
- তোমাকে এক ঘন্টা সময় দিলাম। এরমধ্যে ফিরে আসতে হবে। বেশকিছু জিনিস না হলে রান্নায় বিঘ্ন ঘটবে।
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।
খানিক বাদে আবার জানালো,
-আর একটা কথা। এখন থেকে ঔষধপত্র যা লাগবে সবকিছু আমিই নিয়ে আসবো। তোমাকে আর ঐ ঔষধের দোকানে যেতে হবে না।
আমি আবারও মাথা নেড়ে
- গুড ডিসিশন বললাম। সঙ্গে আরও বললাম,
- বেশ ভালো সিদ্ধান্ত তোমার। বাজারটা আমি করবো আর ঔষধের দোকানে তুমি যাবে।
আমি আবারও একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে,
-একদম ভেবো না সোনা।
আমার হাসির উত্তরে শ্রীময়ীও একটা হাসি দিয়ে আবার নাকটি ধরে,
- এই যে আমার সন্তুবীর দেরি করোনা কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরে এসো..
বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে আসতেই দেখি দূর থেকে নেহা হাসি হাসি মুখে এগিয়ে আসছে। সাতসকালে চোখের সামনে এমন পরীকে দেখলে যে কোনো বয়সের পুরুষের হার্টবিট বেড়ে যাওয়ারি কথা। মাথায় একটা রংবেরং এর টুপি। টুপির তিনদিকে ছড়িয়ে দেওয়া ঘন কালো চুল। শরীরের উর্ধাঙ্গে পিঙ্ক কালারের মাঝে কালো বর্ডারের উলের কুর্তি।নিচে অফ হোয়াইট উলের জেগিংস।পায়ে পাওয়ার কোম্পানি স্নিকার। মুক্তোর মতো বাঁধানো দাঁত। সাক্ষাৎ যেন এক দেব কন্যা। উজ্জ্বল ফর্সা কপালের মাঝে ছোট্ট একটা কালো টিপ। হাসিতে যেন মুক্ত ঝরে পড়ছে। কাছাকাছি আসতেই ফর্সা হাস্যজ্জল চেহারার নেহাই আগে মুখ খুললো,
- কাকু খুব ব্যস্ত আছেন মনে হচ্ছে?
- না তেমন ব্যস্ত নয়।একটু বাজারে বের হয়েছি কিনা এইযা....
মুখে হাল্কা ভাবে কথাগুলো বলে গেলেও একটা অজানা আশঙ্কায় মনের মধ্যে হাতুড়ি পিটতে থাকে।আসার সময় শ্রী সময় বেঁধে দিয়েছিল। জানতে পারলে রক্ষা নাই যে নেহার সঙ্গে পথে দেখা হওয়াটাই বিলম্বের কারণ।
যতটা সম্ভব হৃদয়ের ভয়কে আড়াল করে স্বাভাবিক ভাবেই বললাম,
- কিছু বলবে নেহা?
-আজ্ঞে আপনার তো ঠান্ডা লাগার ধাত আছে।কথা বলতে বলতে প্রায়ই আপনাকে কাশতে শুনেছি।এখন কাশিটা কেমন আছে কাকু?
নেহার মুখে কাশির কথা শুনতেই একনাগাড়ে বেশ কয়েকটি কাশি চলে আসে। ইচ্ছা করে কাশি এসেছে কিনা জানিনা তবে পরে যেন আর থামাতেই পারছিলাম না। একদিকে এক অনির্বচনীয় আনন্দে চোখ বুঁজে আসে। অপরদিকে এমন বিরামহীন কাশিতে চোখে জলও চলে আসে। একসময় নিজেকে সামলাতে না পেরে কাশতে কাশতে রাস্তায় বসে পড়ি।নেহা ব্যস্ত হয়ে আমার মাথায় হাত দিতে এগিয়ে এলে আমি হাত দিয়ে ইশারা করে ওকে থামিয়ে দেই।
খানিক বাদে কাশিটা একটু থেমে এলে নেহা প্রশ্ন করে,
- নিশ্চিত আপনি ঔষধ খাচ্ছেন না,তাই তো?
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দেওয়ায়,
- বুঝেছি যা করার আমাকেই করতে হবে। সম্ভব হলে একটু সময় নিয়ে দোকানে আসবেন। আপনাকে ঔষধগুলো ঠিকঠাক বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।
আমি অনেকটা আবেগমথিত হয়ে জিজ্ঞেস করি,
- আচ্ছা নেহা তোমার হৃদয়ে উপরওয়ালা কেন এতো মায়া দিয়েছেন বলতে পারো?
আমার কথা শেষ না হতেই পিছন থেকে কর্কশ কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে কে যেন বলে উঠল,
- তো..মা...র...হৃ..দ.য়ে কে..ন .. পর্যন্ত বলতেই পিছনে তাকাতেই বুঝতে পারি সর্বনাশ।পালে বাঘ পড়েছে। বাবাগো মাগো বলে বাজারের ব্যাগ নিয়ে দিলাম ছুট.....
বিশেষ দ্রষ্টব্য - শ্রীময়ীকে লেখক আদর করে শ্রী বলে ডাকেন।