বসুদেব যে রাতে শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে সাগর পাড়ি দিয়েছিলেন, আমাদের রাতটা ছিল সে রাতের মতোই নিকোষকালো রাত। গুড়ুমগুড়ুম বজ্রপাত, সাথে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। প্রকৃতি যে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, আগ্রাসী হতে পারে, তা আমরাই তখন অনুধাবন করেছিলাম। তবে প্রকৃতির এই বিধ্বংসী রূপ আমাদের কাজের জন্য পুরোটাই অনুকূলে ছিল। আমরা দরজা ভেঙে ওদের ঘরে প্রবেশ করি।
গল্পের এদ্দুর শেষ করেই ডাকাত সর্দার লালমোহন থেমে যায়। মুখ ফিরিয়ে জানালার বাইরে চোখ রাখে। যেন ঐ সময়টাতে ফিরে গিয়েছে সে।
- তারপর, তারপর কী হয়েছিল বাবা ?
পাশে শোয়া তেরো বছরের তন্দ্রা লালমোহনকে প্রশ্ন করে।
বাংলাদেশ সবে স্বাধীন হয়েছে। আমাদের সবার হাতেই ছিল মরণাস্ত্র। সুযোগ বুঝে অামরা ঐ বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ি। বাড়িতে ছিল মাত্র তিনজন । মা,বাবা আর তাদের একমাত্র সন্তান। বাড়ির একমাত্র পুরুষ আমাদের সাথে দস্তাধস্তি শুরু করে। ঠাস্ ঠাস্ করে গুলি ছুঁড়ে বলাই ডাকু। ক্ষণিকের মধ্যে দুটা লাশ লুটিয়ে পড়লো মাটিতে। রক্ত, রক্ত....
গল্প শুনে তন্দ্রার শরীরের লোমগুলো কেঁপে ওঠে। তারপর আস্তে করে বলে,
- বাচ্চাটার কী হলো বাবা ?
এমনটা হওয়ার কথা ছিলনারে মা। এমন আকস্মিকতায় আমার পা দুটো কাঁপতে শুরু করে। আমি ভয়ে থিতু হয়ে যাই। আমার সহযোগীরা আমাকে রেখে পালিয়ে যায়। কিন্তু বাচ্চাটার জন্য আমার খুব মায়া হয়। এই রাতেই সবাইকে নিয়ে বর্ডার ক্রস করি আমি। সময় গড়ায়। আমরা হয়ে যাই ভারতীয় নাগরিক !
লালমোহনের কথা আটকে যায়। গলায় যেন কেউ নুড়িপাথর ঢুকিয়ে দিয়েছে।
এদিকে গল্প শেষ হতে না হতেই তন্দ্রা ঘুমিয়ে পড়ে। লালমোহন ছলছল চোখে ঘুমন্ত তন্দ্রার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার ভেতরের কলজেটায় যেন কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে । জ্বলছে, খুব জ্বলছে । মনের কথাটা মুখে এসেও থমকে গেছে । দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার।
পরিবারের ক'জন ছাড়া তন্দ্রার বংশপরিচয়ের এমন নিষ্ঠুর সত্যটা যে এ শহরের আর কারো জানা নেই !
ছবি: গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১২:০৪