আমাদের দেশের অভিজ্ঞতায়ও বিষয়টি খুব স্পষ্ট। নানা কৌশলে সুদখোররা মজলুম মানুষকে প্রলুব্ধ করছে এবং তাদের ভাগ্যোন্নয়ন ও কল্যাণের নামে সর্বস্বহারা করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সুদ সম্পর্কে ইসলামের বিধান অত্যন্ত কঠোর। হাদিসে উল্লেখ আছে, সুদ খাওয়ার পক্ষে ছলছুতা ও চাতুরীর আশ্রয়ের প্রকারভেদে সুদখোরদের আল্লাহপাক হাসরের দিন কুকুর ও শূকর বানিয়ে উঠাবেন। যেমন_ বনী ইসরাইলের এক দল লোক, তাদের জন্য পবিত্র শনিবার মাছ শিকার করা নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া সত্ত্বেও চাতুরির মাধ্যমে মাছ ধরার নিয়তে জলাশয়ের পাশে বড় বড় গর্ত খুঁড়ে রাখত। শনিবার সেই গর্তগুলোতে মাছ জড়ো হতো এবং রোববার তারা তা শিকার করে আনত। এ ষড়যন্ত্রমূলক চাতুরীর জন্য আল্লাহপাক তাদের বানর ও শূকরে পরিণত করে দিয়েছিলেন। একইভাবে সুদ খাওয়ার কোনো ফন্দি-ফিকির আল্লাহর কাছে অজ্ঞাত থাকে না। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। তাকে সহায়তা করা অপর মুসলমানের কর্তব্য। কেউ বিপদে পড়লে অথবা কারোর অর্থের প্রয়োজনে তাকে ধার দিয়ে সহায়তা করা যায়, কিন্তু তার বদলে সুদ গ্রহণ চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ। বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আইয়ুব সুখতিয়ানী (রহঃ) বলেন : ‘তারা আল্লাহকে এমনভাবে ধোঁকা দিতে চায়, যেমন_ কোনো শিশুকে মিথ্যা আশ্বাসে তারা প্রবঞ্চনা দিয়ে থাকে। তারা তা না করে যদি স্বাভাবিকভাবে সুদ খেত, তবে হয়তোবা তাদের শাস্তি কিছুটা লঘুও হতে পারত।’ রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন : ‘সুদের গুনাহ সত্তরটি। তার মধ্যে অপরাধের দিক দিয়ে সর্বনিম্ন গুনাহটি হলো_ আপন মায়ের সঙ্গে ব্যাভিচারের গুনাহর সমান। আর সবচেয়ে জঘন্য প্রকারের সুদ হলো সুদের পাওনা আদায়ের জন্য কোনো মুসলমান ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি করা বা তার সম্পদ দখল করা।’_তারারানী ও ইবনে মাজা।
এ থেকে উপলব্ধি করা যায়, সুদ কত বড় জঘন্যতম অপরাধ।
সুদ কতটা জঘন্য ও পাপের কাজ তা বোঝানোর জন্য এর সঙ্গে ব্যভিচারের তুলনা করা হয়েছে। ইসলামী বিধানে ব্যভিচার মৃত্যুদণ্ডতূল্য অপরাধ। কিন্তু যারা সুদ গ্রহণ করে তাদের পাপ ব্যভিচারীদের চেয়ে যে বেশি তা বোঝানোর জন্যই এই তুলনা করা হয়েছে।
হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ (স.) আমাদের উদ্দেশে এক ভাষণে সুদের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে বলেছেন : সুদ থেকে অর্জিত এক দিরহাম পরিমাণ অর্থ ইসলামের দৃষ্টিতে ৩৬ বার ব্যভিচার করা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ। _আবিদ্দুনইয়া, বায়হাকী।
রাসূলুল্লাহ (স.) আরও এরশাদ করেন : ‘প্রকারভেদে সুদের ৭০ প্রকার গুনাহ রয়েছে, তন্মধ্যে সর্বনিম্ন গুনাহ হচ্ছে নিজের মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমান।’ _ইবনে মাজা, বায়হাকী।
সুদ শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়। সমাজবদ্ধ মানুষের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এ ব্যবস্থা। সুদ এমনই এক প্রথা যা সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টিতে অবদান রাখে। যে কারণে ইসলাম শুধু সুদ গ্রহণকেই অবৈধ ঘোষণা করেনি সুদ দেয়াকেও নিষিদ্ধ করেছে।
হযরত আবু বকর (রা.) বলেন : মূলধনের বেশি গ্রহণকারী এবং বেশি প্রদানকারী উভয়েই দোজখী। অর্থাৎ যে সুদ নেবে এবং যে দেবে, উভয়েই সমান গুনাহগার।
আল্লাহ আমাদের যে কোনো ধরনের সুদ ব্যবসা থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন।