somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোথায় দেখবেন জোসনা?- জোসনা প্রিয়দের জন্য একটি গাইড পোষ্ট - ১ ম পর্ব

২৭ শে মে, ২০১২ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জোসনা ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর। আবার অনেকে আছেন জোসনা বলতে পাগল। আমি এ দলের। জোসনা রাত আমাকে পাগল করে দেয়। খুব ছোটবেলা নানাবাড়ি বেড়াতে যেতাম। সেসময় সূর্যমনির মেলা বলে একটা মেলা হতো বরিশালের বানারীপারা, আমার নানাবাড়ি থেকে মাইল ছয়েক দুরে। সে মেলায় গ্রামের আত্মীয় স্বজনদের সাথে আমিও যেতাম। ওরা বাড়ির সব কাজ শেষ করে রওনাই হতো সন্ধ্যার দিকে। মেলায় ঘোরা শেষ করে ফিরতে ফিরতে রাত ১ টা। সে রাতে সদ্য ধান কাটা ক্ষেতের মাঝ দিয়ে উথাল পাথাল জোসনার যে ভয়ংকর রুপ আমি দেখেছি তা এ জীবনে ভুলতে পারবোনা।

সে থেকে জোসনা পাগল আমি। আমি জানি এমন আরো অনেকেই আছেন। তবে ঢাকা বা বড় শহরগুলোতে জোসনা দেখার সুযোগ কম। তবু চেষ্টা থাকলে কিনা হয়। আমিও কয়েকটা জায়গা বের করে ফেলেছি জোসনা দেখার জন্য। সময় পেলেই চলে যাই। আপনিও যে কোন জোসনা রাতে বন্ধু বা প্রিয়তমাকে নিয়ে চলে যান নীচের যে কোন জায়গায় :

১. ঢাকার আগারগাওয়ে অবস্থিত শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

ঢাকার সবচে সেরা স্থান এটি জোসনা দেখার জন্য। চীন মৈত্রির সামনে নেমে রিক্সায় সোজা পশ্চিম দিকে রাস্তা। এখানকার কয়েকটি স্থান আছে :

- দক্ষিন দিকের গেট দিয়ে ঢুকে একেবারে উত্তর দিকে যেতে হবে। এরপর একটু পুব দিকে এগোলেই একটা বড় পুকুর। এ পুকুরের জংলা ঘাটটায় বসে পরুন।

- মুল ভবন (সম্ভবত রেজিষ্টার ভবন) এর সামনে ধান ক্ষেতের মাঝে বড় বাধানো চত্বরটায়

- লেডিস হলের কাছে গাছ পালা ঘেরা জায়গাটায়।

এসব জায়গায় এক বক্স ভুনা খিচুরি, এক ফ্লাক্স চা আর কিছু স্নাক্স নিয়ে কয়েকটা ঘন্টা কাটান কোন এক চাদনী রাতে, বাচতে ইচ্ছে করবে আরো হাজার বছর।

২. বিকেল ৬ টার সময় চড়ে বসুন বরিশালগামী রকেট ষ্টিমারে। কেবিন নয়, সোজা চলে যান ছাদে, মাষ্টারের রুম পার হয়ে একেবার ষ্টিমারটির সামনের দিকে। মুন্সিগন্জ পার হবার পর মনে হবে একি পৃথিবী নাকি স্বর্গ নেমে এসেছে দুনিয়াতে। সময় কম থাকলে রাত ১টার দিকে চাদপুর নেমে যান তারপর ফিরতি রকেটে (রাত ২ টায়) ঢাকা পিরে আসুন। এ ট্রিপটা শুধু চাদনী রাত নয়, অন্ধকার রাতগুলোতে করতে পারেন। তখন দেথবেন অনন্ত নক্ষত্র বীথি।

৩. মাওয়া চলে যান বিকেলের দিকে। ইলিশ মাছ ফ্রাই দিয়ে গরম ভাত খেয়ে একটা ফেরির ছাদে উঠে বসুন (রো রো ফেরিতে উঠবেন না, উঠবেন ডাম্প ফেরিতে। ডাম্প ফেরি মানে যে ফেরিগুলো অন্য একটি টাগবোট টেনে নেয়।) টাগবোটের ৩ তলার মাষ্টার ব্রিজের সামানে একটা নামাজের জায়গা আছে। আকাশের দিকে মুখ করে সোজা শুয়ে পরুন। ঘন্টা আড়াই পরে পৌছাবে কাওড়াকান্দি ঘাটে। ফিরতি ফেরিতে আবার ফিরে আসুন। ভাড়া নেবে মাত্র ২০ টাকা করে।

৪. নরসিংদির উয়ারী বটেশ্বর এ বিরাট এক ধানক্ষেতের পাশে একটি সরকারী গেষ্ট হাউস আছে। এটির বৈশিষ্ট হলো ২ য় তলায় বিশাল রুমটির সামনে বিরাট একটি খোলা ছাদ। অসাধারন একটি জায়গা। এই গেষ্ট হাউজটিতে বুকিং দেয়া একদম সোজা, ভাড়াও কম। বাজার ও রান্নার দায়িত্ব অনায়াসে দেয়া যায় এর কেয়ারটেকারের ওপর। রাতের খাবার খেয়ে রুমের সামনে খোলা জায়গাটিতে বসে যান। রাত কখন শেষ হবে টেরও পাবেন না।

৫. টংগীর পুবাইলের ক্যাপ্টেন বাড়ির কথা হয়তো অনেকে জানেন। প্রাকৃতিক এক ভুমিকে অবিকৃত রেখে আরো প্রাকৃতিক করা হয়েছে ডিজাইনারের নিপুণ ছোয়ায়। এক জোসনা রাতে আগে থেকে থবর দিয়ে চলে যান সেখানে। প্রাকৃতিক গাছপালা আর শান্তু বিলের পারে বসে কাটিয়ে দিন রাতটা।

খরচ : এখানে জনপ্রতি নেয়া হয় ২০০০ টাকা নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার সহ। যোগাযোগ - ০১৯১৯৭৮২২৪৫

সময় বেশী থাকলে :

৬. টাংগাইলের ধনবাড়িতে একটা পুরোনো রাজবাড়ি আছে যা এখন রিসোর্ট হিসেবে চালু হয়েছে। নাম ধনবাড়ি রয়্যাল রিসোর্ট। এখাকার মুল Palace এর ভাড়া বেশী তাই সেখানে না থেকে কাচারী বাড়িটা ভাড়া নিন আর সামনে বিশাল মাঠে বসে জোসনা উপভোগ করুন।

যেভঅবে যাবেন - ঢাকার মহাখালি থেকে সরাসরি ধনবাড়ির বাস ছাড়ে। সময় নেবে ৪ ঘন্টা আর ভাড়া সম্ভবত ২০০ টাকা। রয়্যাল রিসোর্ট এর ভাড়া ২০০০ টাকা থেকে শুরু। তবে এরা বিভিন্ন ট্রাভেল ফেয়ারে ৫০% ডিসকাউন্ট দেয়। সে সময় বুকিং দিয়ে রাখবেন। ঢাকা অফিস : লাইট হাউস গ্রুপ, বিএসআরএস ভবন, ৭ ম তলা, কারওয়ান বাজার, ঢাকা ফোন- ৯১৩০৯০০, ০১৭২৩-৫৪১৩৪৬ (নামজমুল হাসান)

৭. ময়মনসিংহ শহর পার হয়ে মুক্তাকাছার দিকে মাইলতিনেক গেলে হাতের ডানে খাগডহরে ব্রম্মপুত্র নদী তীরে গড়ে উঠেছে River Palace নামে আনিন্দ সুন্দর এক রিসোর্ট। এ রিসোর্ট এর বারান্দায় বা পেছনের নদী তীরে বসে একটা রাত কেনো গোটা জীবনটাই পার করে দেয়া যায়।

যেভাবে যাবেন : ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাসে। বাস ষ্ট্যান্ড থেকে কাচিঝুলি পর্যন্ত যাবেন রিক্সায়। এরপর মুক্তাকাছার ম্যাক্সিতে উঠে বসবেন। রিসোর্ট ভাড়া ১০০০, ১৫০০ এবং ২০০০ টাকা। ঠিকানা : হোটেল River Palace, খাগডহর, ময়মনসিংহ। ফোন : ০১৭১০-৮৫৭০৫৪

৮. শ্রীমংগল শহর থেকে মাইল চারেক দুরে আছে রাধানগর ইকো কটেজ। একটা ছোট ছড়ার পাশে অবস্থিত ছন বাশ দিয়ে তৈরী কটেজটির সামরে উঠোনে বসে একটা জোসনা রাত কাটান। জীবেনর কাছে আর কিছুই চাইবার থাকবেনা।

যেভাবে যাবেন : শ্রীমংগল পর্যন্ত বাসে বা ট্রেনে। সেখান থেকে সিএনজিতে রাধানগর শামসু মিয়া ইকো কটেজ বল্লেই নিয়ে যাবে। ভাড়া নেবে ১০০ টাকা। কটেজ ভাড়া ১৫০০ টাকা। ফোন : ০১৭১-৫০৪১২০৭ (শামসু)

৯. মনপুরা দ্বীপ হতে পারে আরেকটি দারুন জায়গা জোসনা দেখার। এখানকার মেঘনা নদী তীর ঘেষা যে কোন একটি জায়গায় ক্যাম্প করে জোসনা দেখতে পারেন কম খরচে।

যেভাবে যাবেন : ঢাকার সদরঘাট থেকে টিপু-৫ / পানামা নামে একটি লঞ্চ ছেড়ে যায় সন্ধে সাড়ে ৫ টার সময়। এটি মনপুরা হয়ে হাতিয়যায়। মনপুরা পৌছাবে সকাল ৭ টার সময়।

ভাড়া- ২০০ টাকা (ডেক), ৮০০/১৫০০ (কেবিন), ফোন : পানামা ০১৭৪০৯৫১৭২০। টিপুর নম্বর এখান থেকেই নিতে পারবেন কারন মালিক একজনই।

১০. বান্দরবান এর পর্যটর মোটেলটি আরেকটি প্রিয় জায়গা আমার জোসনা দেখার। এর একপাশে লেখ আর অনপাশের পাহাড় জোসনা রাগতুলোতে যে কি পরিমান অপার্থিব লাগে তা যিনি না গেছৈন বুঝতে পারবেন না।

যোগাযোগ- ফোন ০৩৬১-৬২৭৪১, ভাড়া- ১০৫০/১৮০০ টাকা

(এ পোষ্টটিতে কোন ছবি দিলাম না। কারন রাতের বেলা যে অসাধারন রুপ ধারন করে এসব জায়গা তা ছবিতে কখোনো প্রকাশ পাবেনা। নীচে কমেন্টের ঘরে কয়েকটা ছবি দেবো।



সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:৩২
৪০টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×