somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের চ্যানেলে নাস্তানাবুদ রবীন্দ্রনাথ আর ভারত রাষ্ট্রে উপেক্ষিত রবীন্দ্রনাথ। শেষবিচারে রবীন্দ্রনাথের শেষ ঠিকানা গর্বিত বাংলাদেশী বাঙালীর হৃদয়মাত্র।

০৮ ই মে, ২০১২ রাত ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জীবনের সব ক্ষেত্রেই কোনোনা কোনোভাবে নিত্যই রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধিতে আসে। অধিক দুঃখে রবীন্দ্রনাথকে মনে পড়ে, জীবনের কঠিন বাস্তবতায়-‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু।’ অতি আনন্দেও রবীন্দ্রনাথের কাছেই ধর্ণা দেওয়া, ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’। শিশুকাল থেকেই আমাদের বাংলাদেশের বাঙালীদের জীবনে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান একেবারে অনিবার্য্য, সেই ছোট নদী চলে বাকেঁ বাকেঁর বাকঁ থেকেই। প্রথম শ্রেনী থেকেই বাধ্যতামূলক রবীন্দ্রনাথ আমাদের মাথায় প্রবেশ করেছে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। কাঠখোট্টাদের কাছে সাহিত্য যখন নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে চরম যন্ত্রণাময়, তখনো অবসরে কিংবা দুঃখ ভুলাতে মন গিয়েছে রবীন্দ্রনাথের কাছে। প্রেমিকার মন ভুলাতে দুর্জন আমি মিথ্যাকরে বলেছি‘‘আমি নিশিদিন তোমায় ভালবাসি, তুমি অবসরে বাসিও’’। প্রতারণা বুজেও প্রিয়তমা তার বিবাহের আয়োজনের ব্যস্ততার মধ্যে আমাকে লিখেছে, ‘‘কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও, তারই রথ নিত্য উধাও, জাগাইয়াছে অন্তরীক্ষে হৃদয়ের স্পন্দন-----------বক্ষফাটা তারার ক্রন্দন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মেধা, প্রভিতা, যোগ্যতা নিয়ে মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার নেই-রবীন্দ্র গবেষকরাই ভালো বলতে পারবেন। রবীন্দ্রনাথকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাকে যদি কেউ বা কোনো গোষ্ঠি অপদস্ত করতে অগ্রসর হয় কেবল বাণিজ্যিক কারণে, তাহলে রবীন্দ্রপ্রেমী, গবেষকদের দায়িত্ব হবে এর বিরোদ্ধে সোচ্চার হওয়া, প্রতিবাদ করা। চলমান রবীন্দ্র জয়ন্তীতে অবিশ্বাস্যভাবে আমাদের মিডিয়া গুলোর এমন সব আয়োজন দেখে মনে হয়েছে, তারা রবীন্দ্রপ্রেমিক নন, তারা শ্রেফ রবীন্দ্র উপাসক। রবীন্দ্রউপাসক হলেও আপত্তি থাকতোনা-যদিনা তারা ভন্ডামী করে কেবল একদিনের জন্য এভাবে রবীন্দ্রনাথকে অতি আদর করতে গিয়ে নাজেহাল না করতো।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি চ্যানেল আজ সারাদিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এমন আদিখ্যাতা দেখালো যে দর্শক হিসাবে আমরা যেমন ক্লান্ত, তেমনি রবীন্দ্রনাথও চেতনার মধ্যে থেকেই বিষাদগ্রস্ত। একটি চ্যানেলে দেখলাম রবীন্দ্রনাথের রান্না বিষয়ক একটি প্রোগ্রাম। যেখানে এক রবীন্দ্ররাধুনী রবীন্দ্ররান্না দেখাবেন। এই রাধুনীগবেষক রবীন্দ্রনাথকে রান্নাঘরে নিয়ে খুন্তিপেটা করছেন-এটা বাণিজ্যিক কারণেই হচ্ছে-বিস্তারিত আর নাই বা বললাম। আগামীদিনে কোনো নরসুন্দর যদি রবীন্দ্রগবেষক হিসাবে আর্ভিভূত হয়ে রবীন্দ্রনাথের চুল/কেশকর্তন বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখান-অবাক হবোনা। কিংবা টাইলসের বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ আসবে-তাতেও জাতি মহা উপকৃত হবে!!!
বাংলাদেশের চ্যানেল গুলোর যে পরিমান বাড়াবাড়ি, তাতে মনে হয়েছে সে তুলনায় ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলোর তেমনি নির্বিকার অবস্থা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। আজ যদি রবীন্দ্রনাথ কোনোভাবে এই দুই বাংলার দৃশ্য দেখতে পেতেন, তাহলে নিশ্চিত করে বলতে পারি-তিনি বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে এসব অতিভন্ডামী বন্ধ করার দাবী জানাতেন। আর ভারতীয় দাদাদের চ্যানেলগুলোর নির্বিকারদৃশ্য দেখে হতাশ হয়ে নাগরিকত্ব বাতিলের চিন্তা করতেন। সনি আট, জিবাংলা, ইটিভি, স্টার জলসা, সঙ্গীত জলসা-এদের কোনো রবীন্দ্রপ্রীতি আমার চোখে পড়েনি। কেবল তারা-বাংলা টিভিতে একটি প্রামান্যচিত্র চোখে পড়েছে-যা সত্যজিতের তৈরী। যাদের নাগরিক, যারা রবীন্দ্রমালিকানার গর্বিত মালিক তাদের কাছে এভাবে রবীন্দ্র উপেক্ষা কষ্ট দিয়েছে। একই সাথে বাংলাদেশে অতিভক্তি দেখাতে গিয়ে আমাদের চ্যানেলগুলো রবীন্দ্রনাথের চেয়েও বড় বাঙালী সেজেঁ দিনব্যাপী রবীন্দ্রকাটাছেড়ায় অস্থির করেছে তাদের দর্শর্কদের। একই দিনে প্রায় একই সময়ে এই প্রীতিপ্রচারে নাকাল হয়ে কোনো অনুষ্ঠানই ঠিকমতো দেখা হলোনা। চ্যানেল গুলো যদি প্রতিমাসে অন্তত একটি করে নাটকও রবীন্দ্রনাথকে সন্মান করে প্রচার করতো-তাহলে দর্শক হিসাবে আমরা আজকের মতো বঞ্চিত হতাম না, ক্লান্তও হতাম না।
আমাদের রাষ্ট্রের সর্বোচচ পর্যায়েও রবীন্দ্রনাথকে যে পরিমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তার তুলনায় ভারতের সরকার চারআনাও করেছে বলে আমি জানিনা। যদিও দাওয়াত খেতে এসে প্রণববাবু রবীন্দ্রনাথকে ধন্য করেছেন। কিন্তু দুর্জনেরা বলে যে, প্রণববাবু রবীন্দ্রনাথের জন্য আসেননি, পর্দার অন্তরালে বহু অমিমাংসিত বিষয়ে সরকারকে শান্তনা দিতে এসেছিলেন। উদারহস্ত সরকার উজারকরে দিলেও যখন মমতার কাছে ধরাশয়ী, তখন প্রণববাবু ব্যাথানাশক মলম নিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশে।

একথা আজ নিশ্চিত করে বলতে চাই, রবীন্দ্রনাথকে যদি বেচেঁ থাকতে হয়, তাহলে তাকে বাচঁতে হবে বাংলাদেশে। পৃথিবীর আর কোথাও রবীন্দ্রনাথের জায়গা আছে বলে মনে করিনা। আমাদের জীবনে রবীন্দ্রনাথকে আসতে হবে সত্যের সন্ধানে, আলোকের রশ্মি হয়ে জীবনবোধকে আলোকিত করতে, অর্ন্তগত চেতনাকে আরো মানবিক করতে। চ্যানেলগুলোর রবীন্দ্রউপাসকতা কেবল বাণিজ্যের জঘন্যতম কৌশল, যার ভিতর দিয়ে শিল্পের বিকাশ হয়না, কেবল জন্ম নেয় শিল্পের বিকলাঙ্গ শিশু। ।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১২ রাত ৯:০১
৩৪টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আসলেই কি নির্বাচন হবে?

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:২৩

আপনারা যদি নির্বাচনের পর সংস্কার সত্যি করতে পারবেন তাহলে ৫৩ বছর পারেননি কেনো?

- উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

এই যে কয়েকদিনের মধ্যে এই কথাগুলো উঠছে এর মানে হলো আপাতত নির্বাচন হচ্ছে না ভাই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

লিখেছেন নতুন নকিব, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪

শেখ হাসিনার মডেল মসজিদ প্রকল্প: ভণ্ডামির আরেক নমুনা

রংপুর জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে তৈরী মডেল মসজিদের ছবিটি উইকি থেকে নেওয়া।

বাংলাদেশে ইসলামের নামে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও বাস্তবে তার অনেকগুলোই... ...বাকিটুকু পড়ুন

AI-এর লগে গ্যাঁজাইলাম =p~

লিখেছেন জটিল ভাই, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(স্ক্রিনসট)

সামহোয়্যার ইন ব্লগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালন সাঁইজির আধ্যাতিকতা,পরিচয় ও মানবতাবাদ

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

লালন সাঁই ছিলেন একজন বাউল সাধক, দার্শনিক ও মানবতাবাদী। তাঁর আধ্যাত্মিকতা মূলত গুরু-শিষ্য পরম্পরা, সাধনা ও অন্তর্জ্ঞানভিত্তিক। তিনি ধর্ম, জাতি, বর্ণভেদ মানতেন না এবং বিশ্বাস করতেন, "মানুষের ওপরে কিছু নাই।"... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ছোট কালের ঈদ।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০১ লা এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৫



ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, নতুন টাকা আর আনন্দের ঝলক। ছোটবেলার সেই ঈদগুলো এখনো স্মৃতির মণিকোঠায় জ্বলজ্বল করে।



আমার নানা সোনালী ব্যাংকে চাকরি করতেন। আমি তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×