সময়ের আলোচিত বিষয় ‘‘বস্তায় টাকা ও মদের বোতল’’ নিয়ে নিরাপত্তাজোনে প্রবেশ-যেখানে আমাদের বহু সেনানীর রক্ত এখনো কোথাও কোথাও লেগে আছে। রাত ১১-০১ টা টাকার বস্তা নিয়ে কোনো সুস্থ্য মানুষ ব্যাংকে যায়না। এটা দেশবাসী জানে। টাকার অবস্থান এবং গন্তব্য ফারুকের জবানবন্দীতেই বেরিয়ে এসেছে। শুনেছি ড্রাইভারের কথাও, আরটিভির এক্সক্লোসিভ নিউজটির সৌজন্যে। মন্ত্রীর বানী এবং এ্যাটিটিউট দেখে মনে হয়েছে তিনি ভীত এবং রাগান্বিত। দুটো কারণে মন্ত্রীর এই দশা হওয়ার কথা-একটি কারণ হলো এতগুলো টাকা তার হাতছাড়া হওয়া। আরেকটি কারণ হলো তার এতদীর্ঘজীবনে অর্জিত রাজনৈতিক ক্লিন ইমেজ। অনেক দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল নাগরিক হতাশ হয়েছেন, ক্ষুদ্ধ হয়েছেন গুপ্তবাবুর গুপ্ত মিশনে অর্জিত অর্থের এমন কেলেংকারীতে। চোরের সাক্ষী গাটকাটাকে দেওয়ার মতো করেই এপিএসের তদন্ত করবেন পিএস-এটি যেমন হাস্যকর তেমনি আশংকাজনক। মৃধা চোট্টার একটি ধারণকৃত মোবাইল অডিও যা প্রথম আলোর কল্যাণে জানা গেলো, সেই চোরের তদন্ত করবেন সচিব। একই চুরির যাত্রায়য় ভিন্ন ফলাফল!! এই তদন্ত কমিটির চেহারা দেখে যারা সুরঞ্জিতের সম্পৃক্ততা বিশ্বাস করতে চায়নি-তাদের বিশ্বাস আরো প্রবল হলো কিংবা সুরঞ্জিত নিজেকে আরো খেলো করলেন।
আজ চট্টগ্রাম রেলওয়ের কর্মচারীরা ইউসুফ মৃধার বিরোদ্ধে মিছিল করে নিয়োগ বাণিজ্যের কথা বলেছেন। মানুষ নিশ্চিত জানে এই টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমেই অর্জিত। কারণ এতগুলো টাকার লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করা সন্দেহজনক এবং কোনোনা কোনো পর্যায়ের জন্যই তা প্রমান হিসাবে থেকে যেতো-তাই বস্তায় ভরতে হলো। রাত ১ টায় একজন আঞ্চলিক জিএম মন্ত্রীর বাসায় যান-কোন প্রয়োজনে, কোন এ্যাপোয়েন্টমেন্ট এর ভিত্তিতে-তা অনুমান করতে কারো অসুবিধা হয়না।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬ব্যাচের ধর্ষকগ্রুপের চাঁদাবাজ ফারুক নকলের দায়ে বহিস্কার হওয়ার পর সার্টিফিকেট নিয়ে ঢাকা ফিরে পরের বছর। এখনো যার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরীগেইট ও ক্যাফে সংলগ্ন দোকানদাররা টাকা পায়-তার ঢাকা শহরে ফ্লাট হয়, নোয়া গাড়ী হয়। তার গাড়ীতে বস্তাভর্তি টাকা পাওয়া যায়-এটা যেকোনো সচেতন নাগরিকই বুঝতে পারেন। এই কুলাংগাররা যখন একই মিশনে একই উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করেন, এবং তার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ভাগাভাগি করেন-তখন আমাদের একলক্ষ্ জাগ্রত ব্লগবিবেকের মধ্যে কয়েকজনকে দেখলাম এর পক্ষ্যে কথা বলতে, কিংবা সুরঞ্জিতের গা বাচাঁতে তৎপর। অথচ সুরঞ্জিতের এই কেলেংকারী দল এবং সরকার ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং গত সরকারের অনেক অপরাধী নিজেদের হালকা ভাবার সুযোগ পাচ্ছেন।
কথায় কথায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী জিয়াপুত্রদের উত্তমমাধ্যম দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এমন তাচ্ছিল্যের সুরে কথা বলেন যেন, তিনি তাতে ব্যাপক খুশী এবং যারা উত্তম-মাধ্যম দিলেন তাদেরকে সুযোগ থাকলে স্বাধীনতা কিংবা একুশে পদকে ভূষিত করতেন। তবুও এত উত্তম মাধ্যমের পরও বিগত পতিত মইনরা কোনো বস্তা কিংবা কোনো ব্যাংক এ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা আবিস্কার করতে পারেননি। উপায়হীন হয়ে এই সরকারও ৩ বছর পর গ্রেনেড মামলা দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করছেন। অথচ ব্যাপক দূর্নীতির যে অভিযোগ আছে সেখানে সরকার কিছু আবিস্কার করতে পারলোনা। কথায় কথায় মিথ্যাচারী হাসিনা সরকার তাদের পাকিপীর আসাদ দূররাণীর মহানবানী হাজির করলেন দীপাননামক এক জারজের ফাঁদে পড়ে। মহান সংসদে মিথ্যাচার করে, মুখে গোবর লেপ্টে বাকশালী প্রপাগান্ডামেশিন অবশেষে পীরের বিবিসি সাক্ষাৎকার আর পাকপররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিবৃতির প্রেক্ষিতে হালে পানি পেলো খালেদা জিয়া চরিত্রহননের মিশন। বহুচেষ্টা করেও যখন জিয়া পরিবারের দূর্নীতির কোনো ঠোঙ্গাও আবিস্কার হলোনা, তখনই মাতলো সমুদ্রজয় নিয়ে। বাংলাদেশের দালালগোস্ঠি সরকারের অর্জন না থাকায় বেশী ভূমি পাওয়া মায়ানমারের অর্জনকে প্রকাশ না করে বাংলাদেশের মামলায় জেতাটাকে বিশাল অর্জন হিসাবে দেখাতে তৎপর হলো।
কিন্তু বিধিবাম। ইন্দোনেশিয়ার সুনামীর বাতাস বাংলাদেশের আম্লীগ সরকারের ধুতি এভাবে বিজিবি গেইটে উড়িয়ে দিবে তা তারা বুঝতে পারেননি। এ যেন অত্যাচারী শাসকের মাথায় বিনা মেঘে ঠাডা পড়ার মতো ব্যাপার। চুপসে গেলেন আম্লীগ চাপাবাজরা। কেবল কথা বললেন তরুন রনি। তার কথায় জানলাম দাদা যদি এই অপকর্ম করে থাকেন, তাহলে তার পদত্যাগ করা উচিত। আর যদি তার অধীনস্তরা করে থাকেন তাহলে তার আত্মহত্যা করা উচিত। কারণ সর্ষের মধ্যে ভূত রেখে কি সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো যাবে? আজ হানিফ বলছেন তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। আমার খুব জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করছে, তাহলে খালেদা জিয়ার দূর্নীতি নিয়ে কথা বলার আপনি কে, কোথাকার হনু?
অবিশ্বাস্যভাবে বহু পোস্ট সুরঞ্জিত গুপ্তের বিরোদ্ধে আসছে ব্লগে, এর মধ্যে একজন কানাডিয়ানভাড় পোস্ট দিলেন ছেড়াগেঞ্জি নিয়ে-যেহেতু তার ধুতি উঠছে বাংলার আকাশে। মুখ লুকানোর জায়গা কোথাও আজ নেই। কোথাও কোথাও দেখলাম ফান পোস্ট দিয়ে খালেদা জিয়ার চরিত্রহননের প্রচেষ্টা। এসব যে সুরঘুষের ব্যাপারটি থেকে দৃষ্টি অন্যত্র রাখা-তা বুঝতে বেশী আয়োডিন লাগেনা। ব্লগ বিবেক হিসাবে এতদিন যারা হাওয়া ভবনের দূর্নীতি, খাম্বা খাওয়ার দূর্নীতি, গোয়েন্দাটাকা নেওয়ার দূর্নীতি নিয়ে বিলাপ করলো, তারা এখন নুন্যতম পদত্যাগের কথাও বলতে পারছেনা, তদন্তের কথাও বলতে পারছেনা। তাহলে এই বিবেকহীনদের মনুষত্ব নিয়ে কি কোনো সন্দেহ থাকে? ব্লগের সচেতন পাঠকলেখকদের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন থাকলো-এদের হঠাৎ হঠাৎ জাগ্রত বিবেক কি কেবল অভিনয় নয়? এই চরিত্রহীনদের চিনে রাখুন বস্তাভর্তির টাকার দূর্নীতি নিয়ে যারা কথা বলেনা, বলতে পারেনা-তাদের নিয়ে দেশ ও জনগনের দু’পয়সার কল্যাণ কেউ আশা করতে পারেনা।
তবে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ব্লগে আমার সাথে ভিন্নমতের মাত্র ৪জন ব্লগারকে দেখেছি, তারা সুরঞ্জিতের পদত্যাগদাবী করেছেন। তারা এখনো মানুষের পর্যায়ে আছেন, বিবেকহীন হতে পারেননি। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাই জানাতে হয়-ব্লগার চ্যাংড়া, ব্লগার হাসান কালবৈশাখী, কলাবাগান১ ও শ্রদ্ধেয় জিসান ভাই। আমরা এই ঘটনার সঠিক তদন্ত আশা করি, উপযুক্ত বিচার আশা করি। আমাদের কাছে কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে আম্লীগের কে বিএনপির-এটা মুখ্য নয়। আমরা দূর্নীতির বিরুদ্ধে, চুরির বিরোদ্ধে যথাযথ এ্যাকশন আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১২:১৪