দুই মাস আগের ঘোষিত কর্মসূচীতেও বাধাঁ প্রধানের জন্য ১২ই মার্চ দলীয় কর্মসূচী দিয়েও ব্যাপক জন সমালোচনার মুখে, পাবলিক থুঁতুতে পিছলা খেয়ে বাকশালী কর্মসূচীকে পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়ে এখন যেকোনো মূল্যে এই কর্মসূচী ভন্ডুলের পায়তারা করছে। প্রশ্ন করা যায়, বিরোধী দল দাবী দাওয়া নিয়ে সরকারের সমালোচনা করতে, সরকারকে জনতার কথা শুনাতে আন্দোলন করতে পারে, কিন্তু আম্লীগ কার বিরোদ্ধে কোন দাবীর জন্য বিরোধী দলের সাথে সাথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে চায়। তারা কার কাছে দাবী নিয়ে যেতে চায়? কে বা কারা তাদের দাবী পূরণ করতে পারে? এটা কি সরকারী তামাশা নয়। রাষ্ট্রযন্ত্রকে সর্বোচ্চদলীয় ব্যবহার করে সরকারী গুন্ডাপান্ডা ও পুলিশ দিয়ে ঘরে ঘরে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার আর মামলা হামলার ভয় দেখিয়েও আজ প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত হতে পারছেন না, ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক মনে করতে পারছেন না। কেবল ভয়- সেদিন যদি সত্যিই তাহরির স্কোয়ারের মতো কিছু হয়! ব্রুটমেজরিটি পাওয়া একটি সরকার এতটা কাঙাল ও জনবিরোধী হয়ে গেলো মাত্র ৩ বছরের মাথায়, কিভাবে? কেন জনবিশ্বাস হারালো-এটা নিয়ে দলীয় ভৃত্যদের গবেষণার দরকার পড়েনা। চারদিকে তাকিয়ে অর্থনীতি, সমাজনীতি,রাজনীতি,শেয়ারবাজার, দ্রব্যমূল্য, পররাষ্ট্র, সুশাসন, গণতন্ত্র আর নির্লজ্জ দলবাজি দেখলেই বুঝা যায়- কিভাবে এই সরকার এতিমত্ব অর্জন করেছে। জনমতকে চাপিয়ে রাখতে এতদিন কামুকরুল-হানিপাদের মতো গজায়মান হাইব্রিড দিয়ে হুমকি ধামকি দিয়েও কাজ না হওয়ায়- এখন শেষ ভরসা হিসাবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ‘খবর থিয়োরী’ নিয়ে হাজির হলেন! ঠিকই তো, খবর তো একটা প্রধানমন্ত্রী দিবেনই-যা নাটক হিসাবে পাবলিকের কাছে প্রতিভাত হবে বরবরের মতোই। খবরের অন্তরালের খবরও আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র তৈরী করবে নিপূণভাবে, যা বিরোধীমত ও পথকে স্তব্ধ করতে কাজে লাগানো হবে।কিন্তু এদেশের মানুষ বিগত ৩ বছরে বহু খবর দেখেছে, বহু খবরের বিশ্লেষণও করেছে। জনগণও সরকারকে বহু খবর উপহার দিয়েছে বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফলের খবর, বিমানবন্দর স্থাপনের খবর, রূপগঞ্জের খবর, শেয়ারবাজারের খবর, সীমান্ত হত্যার খবর-ভিডিও, সাগর-রুনির খবর, বিদ্যুৎ খাতের সীমাহীন লুটপাটের খবর, রেন্টাল জালিয়াতির খবর, জ্বালানী খাতের গোপন চুক্তির খবরসহ ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের খবর!!
বাংলাদেশের মানুষ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘‘খবর তত্ত্বের’’ ভিত্তিতে আরো কতিপয় বিষয়ের জেনুইন খবর জানার প্রত্যাশা করে-যা জানানো তাঁর শপথের মধ্যেই পড়ে। আজ তিনি না জানাতে চাইলেও আগামী দুই বছর পর জনতার আদালতে কিংবা আইনী হেফাজতে জানাতেই হবে।
যে খবর গুলো জনতা জানতে চায়ঃ
>> সরকার গঠনের পরপর ভারত ভ্রমনের সময় ভারতের সাথে কি কি গোপন চুক্তি হয়েছে, সেই খবর জানতে চাই। সংসদে কিংবা দলীয় কিংবা কোনো সভা সেমিনারের মাধ্যমেও সরকার কোনো ভাবেই এই সফরের কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলেন নি। অর্থচ তিনি রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার সময় শপথ করেছিলেন। ভারতের কাছে কোন কোন বিষয়ে দাসখত দিয়ে এসেছেন জানান এবং তার বিনিময়ে ব্যক্তিগত লাভ কতটা হয়েছে সেটাও জানান। এই খবর জানতে মন চায়।
>> কিবরিয়া হত্যাকান্ডের সাথে কে বা কারা জড়িত তা জানান। দ্বিতীয় কিংবা বার না রাজি দেওয়া আসমা কিববিয়ার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার মতো খবর জানান। কোনো ধরণে চালবাজি জনতা আর বিশ্বাস করেনা। বিগত সরকার ব্যর্থ হলেও আপনার কেন এই হত্যাকান্ড নিয়ে কানামাছি খেলছেন কিবরিয়া হত্যাকান্ড নিয়ে? দলীয় আপনাদের কোন কোন নেতা জড়িত-এই খবর জানান।
>> বিডিআর হত্যাকান্ডের সাথে দেশ বিদেশী এবং দলীয় কোন কোন নেতা জড়িত এই-খবর জানান। যেকোনো বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও বেশী অফিসার হত্যাকান্ডের শিকার হলেও নির্লজ্জভাবে কেন একই বাহিনীর নাম পরিবর্তন ও পোষাক পরির্বতনের ফতোয়ার মানে কি? অপরাধের স্বরূপ উদঘাটন ছাড়াই কিভাবে জঙ্গীদের নাম আসলো এই হত্যাকান্ডের সাথে? মন্ত্রীরা কিভাবে জানলো এই ঘটনায় জঙ্গীরা জড়িত, ভারতের মিডিয়া কিভাবে জানলো আমাদের মিডিয়ার আগে? এসব ঘটনার অন্তরালের খবরটি জনতা জানতে চায়। বিডিআর হত্যাকান্ডের পর ঘটনায় থেমে যাওয়ার পর এতদিনে কতজন বিডিআর সদস্য নাই হয়েছে-সেই খবরও জনগণ জানতে চায়।
>> ভারতকে ট্রানশিপমেন্ট দেওয়ার বিনিময় কি বাংলাদেশ পেয়েছে? নাকি আম্লীগ পেয়েছে-এটাও জনগণ জানতে চায়। এই খবরটিও আপনাকে জানাতে হবে একদিন।
>> বর্ডার কিলিং এর বিষয়ে বিএসএফ প্রধান ও আম্লীগ দলীয় মন্ত্রীদের একই বাক্য ব্যবহারের মাধ্যমে সীমান্ত হত্যাকান্ডকে চালিয়ে রাখার পেছনের খবরটি জনতা জানতে চায়। এটাও আপনাকে কিংবা দলীয় ভৃত্যদের জানাতে হবে এখন কিংবা আগামী নির্বাচনে।
>> সীমাহীন ভারতপ্রীতির পেছনের খবরটি কি? বিনা সুবিধায় বন্দর দেওয়া, নদীতে বাধঁ দিয়ে গাড়ী পার করা,কিংবা সীমান্তহাট স্থাপন-এসবের পেছনের খবর গুলো জনতা জানতে চায়। ভারতের মিডিয়া কিভাবে বাংলাদেশের সেনাঅভ্যুথ্থানের সংশ্লিষ্টতা লন্ডনের সাথে পায়-সেই খবরও জনতা জানতে চায়।
>> শেয়ার বাজারে আম্লীগদলীয় দূর্বত্তদের ব্যাপারে ইব্রাহিম খালেদ কর্তৃক তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসাদের বিষয়ে সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কিংবা কেন নেওয়া হয়নি-এই খবর গুলো জনতা জানতে চায়।
>>হাওয়াভবন সিন্ডিকেট নাকি জনগণের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী ছিলো। সকাল বিকাল কোরাস খাওয়া আম্লীগের র্বতমনা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনের খবরটি জানতে চাই।দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পেছনে তাহলে ক্ষুধাসদন কেন দায়ী থাকবেনা?
>> সানাউল্লাহ বাবু, লোকমান হত্যাকান্ডের সর্বশেষ খবর জনতা জানতে চায়।ইব্রাহিম হত্যার খবরও জনতা জানতে চায়। বাবু হত্যকারীকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমায় মেয়র করা হয়েছে, লোকমান হত্যাকারীরা মেয়ার নির্বচনে লোকমানের ভাইকে দলীয় সমর্থনও দিতেও দেয়নি।ইব্রাহিম হত্যাকারীরা কোথায়? এসব হত্যাকারীরা এখন কোথায় সরকারী সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে-এই খবরও জনতা জানতে চায়।
>> সর্বশেষ সাগর-রুনি হত্যকান্ডের নিজ জিম্মায় মনিটরিং এ থাকা এই খুনটির সর্বশেষ অবস্থা কি। এই হত্যাকান্ডে কারা কিভাবে কেন জড়িত, সরকার কেন লুকোচুরি আর নাটকের মহড়া দিচ্ছে-এই খবরটিও জনতা জানতে চায়। এত এত খবর দেওয়া দায়িত্ব যখন নিজে নিয়েছেন, তাহলে খবরতো দিতেই হবে। আজ না হোক কাল কিংবা ২ বছর পর।
খারাপ কথা বলার চাইতে, না বলা ভালো। ভালো কথা বলতে হলে শিক্ষা সংস্কৃতি, মানসিকতা, রুচিবোধ এবং অন্তরের শুভ্রতা প্রয়োজন-এটা অর্জন করার চেষ্টাতে সময় ব্যয় করলেও আখেরে অনেক কিছু অর্জিত হতে পারে। কিন্তু এভাবে অরুচিকর,কুৎসিত প্রয়োজনহীন,হিংস্র মানসিকতা দিয়ে নরম পলিমাটিতে রাজনীতি হয়না হতে পারে অপরাজনীতি,হতে পারে সাময়িক লাভ।রাষ্ট্রের এত বড় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, সরকার প্রধান হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর মুখে এধরনের হুমকি আমাদের লজ্জা দেয়, আমাদেরকে হিংস্রজাতি হিসাবে পরিচিত করায়।জনতার সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে জনতাকে পিষ্টকরার হাক্যকর প্রচেষ্টার খবর জনতা শুনতে চায়না।এই তাশামার অবসান চাই চিরতরে।
একটি অনুরোধঃ
বিরোধীদলের কাছে একটি অনুরোধ থাকবে-কোনো ধরণের ফাঁদে যেন তারা পা না রাখেন। সরকার যা চাইছে,তা হলো যেকোনো মূল্যে জনতার অধিকার আদায়ের আন্দোলন-সংগ্রামকে সরকারী নির্বাহী আদেশ কিংবা আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ করে দিতে।এমনকি ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে সরকার সংসদে ন্যায্য আন্দোলন সংগ্রামের বিরোদ্ধে আইন পাসও করতে পারে।যার নজির ইতিমধ্যেই আমাদের চোখে পড়েছে বিভিন্ন জ্ঞানীর বিভিন্ন কথাবার্তায়।যার প্রথম ধাপটি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও দলীয়রাই আবার জয়লাভের তামাশা।বিরোধীদল ও জোটকে মনে রাখতে হবে, সাধারণ মানুষের জন্য আন্দোলন করে সাধারণ মানুষের সম্পদ ধ্বংস করা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। নিয়মাতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামকে আমরা সমর্থন জানাবো। কিন্তু সরকারের ফাঁদে পড়ে কোনো ধরণের বিশৃংখলাকে সমর্থন দিতে পারিনা আমরা। কাউকে ল্যাংড়া-লুলা করতে যাবেন-এটাও আমরা সমর্থন করিনা। রাজনীতির মোকাবিলা রাজনীতি দিয়েই করুন। কারণ আমরা বিশ্বাস করি আপনাদের হাতে ইতিমধ্যেই বহু ইস্যু আছে যা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে যথেষ্ঠ। তাই বলবো যেকোনো উস্কানীকে পরিহার করুন, বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের পরিচয় দিন, দায়িত্বশীল হউন।
আমার মতো বিভ্রান্তদের বর্তমান করনীয়ঃ
আমরা যারা দিন আনি দিন খাই,রাজনীতির সময় পাইনা- তারা স্বপ্নে বিভোর হয়ে দিন বদলের কথায় বিশ্বাস করে বিগত সরকারকে ভোট দিয়ে প্রতারিত ও অপমানিত হয়েছি-তারা এখন সরকার প্রধানকে জিজ্ঞাসা করতে ভয় পাই, ‘‘দিন বদলের খবর কি? এত খবর দিলেন এটার খবর কি? ঘরে ঘরে চাকুরীর খবর কি? দশ টাকা সের চাউলের খবর কি? জানি প্রধানমন্ত্রী এই খবর দিবেন না কোনোদিন, কিংবা অস্বীকার করবেন বরাবরের মতোই।আমরাও আগামী ইলেকশনে প্রধানমন্ত্রীকে খবর উপহার দিবো। কিন্তু আরো দুই বছর কি করবো, আমার মতো সুবিধাবাদী বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের সীমাহীন নির্যাতনে একটু ঘৃণাও কি করতে পারবোনা অত্যাচারীদের কর্মকান্ডের? বধির আমি বসে বসে কাজের ফাঁকে বিগত দিনের ভুলের জন্য,জনগণকে ছেড়ে যাওয়া সরকারকে উদ্দেশ্য করে গাইতে থাকবো-কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু,ছেড়ে যাইবা যদি।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১২ রাত ১:৫৪