বেডরুমের নিরাপত্তা নিয়ে মহা বিরক্ত ও চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী। সত্য কথাই বলেছেন, ঘরে ঘরে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়, এটা তার সাম্প্রতিক আবিস্কার। যদিও জনগণ বহু আগে থেকেই জানে বেডরুমের নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিতে পারবেনা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে কে বেডরুমের নিরাপত্তা দাবী করেছিলো জানতে মন চায়। আগ বাড়িয়ে কথা বলা যার ক্রনিক বাচালতা, তিনি এভাবেই জনতার চোখে হাস্যরস আর তিরস্কারের সন্মুখীন হবেন এটাই বাস্তবতা। অতিকথনে সিদ্ধমুখী আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সময়ের বানী গুলো এদেশের ইতিহাসের তাজা উপাদান হয়ে থাকবে।
জননিরাপত্তাঃ বেডরুম টু সীমান্ত, কোথায়?:
বেডরুমের নিরাপত্তা জনতা চায়নি, তবুও রঙহেড থেকে এমন একটি বানী নির্গত হলো যখন সারা দেশের মানুষ সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকারীকে গ্রেফতারের দাবীতে উচ্চকণ্ঠ। অপরাধী গ্রেফতারের দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের তামাশামার্কা অবজ্ঞা, পুলিশের লুকোচুরি আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চরম অসহায়ত্বকে জনগণ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করছে। গুজব ডালপালা বিস্তার লাভ করছে, চরিত্রহননের পর্যায়েও চলে গিয়েছে। মিডিয়ার সক্রিয় কর্মী হত্যার ব্যাপারে সরকারের যে অবস্থান, তাতে সাধারণ মানুষের খুন খারাপীতে সরকারের নুন্যতম নিরাপত্তার দায়বোধ আছে বলে মনে করার কারণ নেই। নাটোরের সানাউল্লাহবাবুর মতো উপজেলা চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে খুন হলেন, ভিডিওতে দৃশ্যধারণ এবং প্রচারের পরও এই প্রধানমন্ত্রী সেই খুন নিয়ে প্রকাশ্যে মিথ্যাচার করেছেন, খুনীকে পৌরমেয়র করেছেন। নরসিংদীর মেয়র বেডরুমে ছিলেন না-যখন তিনি খুন হন। এই হত্যাকারীরাও নির্বাচন করলো প্রকাশ্যে। ইব্রাহিম বেডরুমে ছিলেন না, তারপরও খুনীকে এমপি বানানোর পুরস্কার দেওয়া আম্লীগ সরকারের রক্তপিপাসার নির্লজ্জতা ছাড়া আর কি?
জনতার চাপে শেষ পর্যন্ত আসামী আদালত পর্যন্ত গেলেও বিচারের রায়ের পর আছেন একজন হেকিম-যার কাজ কেবল অপরাধীকে ক্ষমার দাওয়াই দেওয়া। তাহের পুত্র সৌভাগ্যবান কুলাংগার বিপ্লব, সাজেদা তনয় ১৭ বছরের জেলপ্রাপ্তকে, নাটোরের গামা হত্যাকারী খুনীদের শাস্তি না দিয়ে পুরস্কার দিলে খুনকে জাতীয়করণ করা হয়-এটা না বুঝার মতো বেকুব দেশে নেই।
সীমান্তে খুন নিয়ে আম্লীগ বাকশালীদের মন্তব্য- ‘‘খুন হয়েছে, হচ্ছে, হবে।’’ এই কথা বলার পর এদের জাতীয়তা বাংলাদেশী কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে। খোদ ভারতের মাটিতে বসে কুলদীপ নায়াররা যখন সীমান্ত হত্যার বিচার দাবী করে, তখন বাকশালীদের মুখে সীমান্ত হত্যাকান্ডকে জাস্টিফায়েড করতে দেখলে বালতি বালতি থুতুঁ দিতে ইচ্ছে করে। এরা কি বাংলাদেশের মন্ত্রী নাকি ভারতের নিয়োগপ্রাপ্ত মন্ত্রী?
পুলিশ নিশ্চিত না হয়ে নাকি কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনা। তাহলে লোকমান হত্যার পর ৩ ঘন্টার ব্যবধানে ঢাকা থেকে খায়রুল কবির খোকনকে কোন নিশ্চয়তায় গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ? লিমনকে কোন নিশ্চয়তায় পায়ে গুলি করেছিলো আইন শৃংখলাবাহিনী কিংবা ঢাবির কাদেরকে কোন নিশ্চয়তায় গ্রেফতার করে থানায় বসিয়ে চাপাতির আঘাত করেছিলো? আজ সাগর-রুনি দম্পতির খুনের ঘটনায় সরকারের লুকোচুরি, প্রধানমন্ত্রীর বেডরুম থিওরী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ঘন্টা তত্ত্বের ১৫দিন অতিবাহিত সময়-জনগণ সরকারকে সন্দেহ করছে। সরকার কি এই হত্যাকান্ডকে নাটক বানাচ্ছে নাকি প্রবন্ধকারেই প্রকাশ করবে? সত্যিই একটি নাটক লিখে আবার তা দর্শকের সামনে মঞ্চস্থ করতে ৪৮ঘন্টা খুবই কম সময়-এটাতো আর পথনাটক নয়। আজ প্রধানমন্ত্রী বলছেন মিডিয়া নাকি স্বাধীনতা পেয়ে যা খুশী তাই লিখছে। এই বানীতেও প্রকাশ পায় একদলীয় মানসিকতা কখনোই সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা রাখেন না, অতীতেও পারেনি। এদের মুখে গণতন্ত্র থাকলেও চরিত্রে হিংস্রতা, হিংসা আর অসহিষ্ণুতা অবিচেছদ্য অংশ। প্রকাশ্যে হত্যাকরার কথা যারা বলেন, ১টার বদলে ১০টা লাশের চাহিদাকারীরা আজ পুরো বাংলাদেশকে তাদের বিপক্ষে ভাবছেন। তাই দলীয় খুনীভৃত্য সুইপাররাই তাদের শেষ ভরসা। ভালো মানুষের জায়গা আম্লীগে আজ নেই, থাকার কথাও নয়। যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি দিন শুরু হয় অন্যের সমালোচনা আর বিষোদগারের মধ্যে দিয়ে-সেই রাষ্ট্রের জাতীয় সংহতি কিংবা সামাজিক শান্তি কখনোই থাকতে পারেনা। খুনের বিচার করতে না পারলেও শান্তির মডেল দিতে লজ্জাশরমের দরকার পড়েনা। সাগর-রুনির হত্যাকান্ড এবং এর সাথে সরকারের কোনোরূপ দায়সারার চেষ্টাই সরকারকে গদিহীন করে দিবে-এটা কামুকরুল হানিপাদের বুঝে না আসলেও তোফায়েলদের বুঝতেই হবে।
ভাগ্যবান বিপ্লব, ভাগ্যবান মেয়র জাকির, ভাগ্যবান এমপি শাওন-সরকারের খুনপ্রীতির নির্লজ্জ দলিল। কোন মুখে আমাদের ক্ষমতাসীনরা গণতন্ত্র আর সুশাসনের কথা বলে? খুনী কুলাংগারের ভাগ্যেও যদি জনতার জুটতো তাহলে আমরা এই সরকারকে বিশ্বাস করতাম। তাই জনগনের দায় পড়েনা সরকারকে সহযোগিতা করতে, পড়তে পারেনা। খুনীরাই আজ আম্লীগের সম্পদ। এই খুনীরাই আগামী নির্বাচনে আম্লীগকে জিতিয়ে আনবে। সানাউল্লার কন্যারা, নুরুল ইসলামের সন্তানেরা, লোকমানের পরিবারের সদস্যরা আজন্ম অভিশাপ দিবে হত্যাতোষণকারী শান্তির মডেলদানকারী সরকারকে। হালে নতুন আমদানী গুম-এ যেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেশবাসীর জন্য নতুন আতংকপুরুস্কার। ধন্য ধন্য দেশবাসী, এই গণতন্ত্রের জন্য।
বিশ্বব্যাংকে ড. ইউনুসঃ প্রধানমন্ত্রীর নির্মম তামাশা।
সুদখোর, ঘোষখোর, রক্তচোষা মহাজন ড. ইউনুসকে বিশ্বব্যাংকের প্রধান করতে নাকি প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয়দের প্রস্তাব করেছেন-এটা শুনে হাসবো না কাদঁবো বুঝতে না পেরে কতক্ষন টাসকি খেয়ে থাকলাম। কিছুদিন আগে এই প্রধানমন্ত্রী কতটা আক্রমনাত্মক হয়ে নির্লজ্জভাবে প্রকাশ্যে জনসভায়, বিভিন্ন ফোরামে বিষোদগার করেছেন ইউনুসের বিরোদ্ধে। হিংস্র মানসিকতা থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের হাতে গড়া, আত্মার সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান থেকে ড. ইউনুসকে সরিয়ে দিয়েছে এই সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নোবেল স্বপ্নেবিভোরতা থেকে ইউনুসের সমালোচনার সাথে সাথে কোরাস গাইলো পুরো দল। বাকশালী বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, দালাল ব্লগার-সাংবাদিকসহ দলীয় ভৃত্যবৎ সুইপাররা পর্যন্ত এই ইউনুসকে অপমান অপদস্ত করেছেন। ইউনুসের একটি লোম সোজাকরনের যোগ্যতা যাদের নেই, তারা ইউনুসবিরোধী গবেষণা হাজির করলো, বাংলাদেশকে দারিদ্রমুক্ত করার ফর্মূলা দিলো, ইউনুসের ফর্মূলাকে চ্যালেঞ্জ জানালো! মামলা দিয়ে আদালতে আদালতে দৌড়ের উপর রাখা হিংস্রবাকশালীরা তখন আরেক নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকে নিয়ে অমৃতপানে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু অর্মত্য সেনই এই বাকশালীদের দুর্ভিক্ষ নিয়ে যে গবেষণা করে নোবেল পেয়েছেন, সেই গবেষণায় দেখিয়েছেন ‘‘দুর্ভিক্ষের কারণ সম্পদের অপর্যাপ্ততা নয়, বন্টনের অদক্ষতাই দায়ী।’’ তার এই গবেষণাতেই বেরিয়েছে তখন দেশে খাদ্য সরবরাহ কম ছিলোনা, ছিলো চুরি, লুটপাট-যা আম্লীগের চরিত্রকে তুলে ধরেছে আয়নার মতো। কিন্তু আম্লীগ ভুলে গিয়েছে অমর্ত্য সেনের গবেষণার ফাইন্ডিংস কি ছিলো? দেশে এক নোবেল জয়ীকে দাওয়াত দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেনা যারা, তারাই ভারত থেকে হায়ার করে আনে আরেক নোবেলজয়ীকে-এটাকে ‘‘ভাত খায় ভাতারের, গীত গায় লাঙ্গের’’ সাথে তুলনা যায়। এখন প্রধানমন্ত্রীর ‘‘বিশ্বব্যাংকে ইউনুস’’ প্রস্তাবের পেছনে সৎ ইচ্ছা নাকি মতলব-তা বুঝতে জনগণ অতীতের দিকেই তাকাবে, যেখানে রয়েছে হিংস্রতা আর পরশ্রীকাতরতার জলন্ত প্রমান।
কেন প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব করলেন-
অনুমান-১: আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. ইউনুসকে বাংলাদেশ থেকে কোনোভাবে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া।
অনুমান-২: ড. ইউনুস এর জনপ্রিয়তা আর বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতায় বেদিশা সরকার আপোষের পায়তারা এবং হিংস্রতা ও পরশ্রীকাতরতাকে চাপা দেওয়ার কৌশল নেওয়া।
অনুমান-৩: আমেরিকার চোখে ভাল সাজার সঙ করা। বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগকে ধামাচাপা দেওয়ার অসার অপচেষ্টায় আপোষের চেষ্টা।
অনুমান-৪: অন্তরের অন্তস্থল থেকে বিগত সময়ের মিথ্যাচারকে উপলব্ধি করে অনুশোচনায় প্রাশচিত্ত করা, আগামী নির্বাচনকে টার্গেটে রেখে নাকে খত দেওয়ার চর্চা চালু করা ।
প্রিয় ব্লগারগণ মতামত দিবেন। আমার অনুমান ভুলও হতে পারে, হতে পারে আপনাদের অনুমান সঠিক এবং তা মানতে কার্পণ্য থাকবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ২:৩৫