somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ শাবকী দেবী

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুর আগের কথাঃ
"আমি অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছি । এই অভিশাপ তুই, তোর লোকজন আর তোর পরের সবাই বহন করবে । যতদিন তুই আর তোদের মানুষ তোর রক্তের কোন মেয়েকে আমার মত করে কষ্ট দিতে থাকবি ততদিন তোর গ্রাম বেঁচে থাকবে"

লম্বা চুলের মেয়েটি আরও কিছু বলতে যায় কিন্তু আর পারে না ! পুরিহিত নিজ হাতে লম্বা চুলের মেয়েটির ঠোট সেলাই করে দিল ! তীব্র একটা চিৎকার বেরিয়ে আছে কিন্তু সেটা গলা দিয়ে বের হতে পারলো না !



এক
-শরীরের যত ছিদ্র আছে সব সেলাই করে দেওয়া হয় ! বুঝেছো ?

কথাটা বলেই জেন অন্য দিকে তাকালো ! ওর চোখ অন্য দিকে হলেও ওর ঠোঁটে একটা দুষ্ট হাসি দেখতে পাচ্ছিলাম ! আমি খানিকটা অবাক হয়ে জেনের দিকে তাকালাম । ওর বুচা নাকে ও একটু হাত দিয়ে ঘসে আবারও আমার দিকে তাকালো ! চোখে ওখনও একটা দুষ্টামী রয়েছে ! আমি ব্যপারাটা ভাবতেই আমার গায়ে একটু কাটা দিয়ে উঠলো ! আর এই মেয়ে নাকি হাসছে ! আমি চিন্তাটা দুর করার চেষ্টা করলাম ! কিন্তু কিছুতেই মন থেকে সেটা দুর করতে পারলাম না !

জেন বলল
-এমন করছো কেন ? একবার ভেবে দেখো তুমি ভাবতেই পারছো না আর অন্য দিকে একটা মেয়ের উপর এরকম টা করা হয়েছে ! আমাদের পূর্বপূরুষেরা করেছে !
-এখন করে না তো ?
জেন হেসে বলল
-না ! এখন করা না !
-যাক ! বাবা ! আচ্ছা আর কোন বিকল্প নেই ! তুমি বলছিলে শাবকী দেবীর অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য আরও একটা উপায় নাকি আছে !
কথা বলতেই জেনের চোখে একটা কিছু উকি দিয়েই আবার নিভে গেল সাথে সাথে ! আমার দিকে তাকিয়ে আবার একটু হাসলো ! তবে অন্য উপায় কিংবা বকল্প উপায়টা আর আমাকে বলল না ! আমি ওর হাসি দেখে খানিকটা সময়ের জন্য কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম ! মনে মনে বললাম এই মেয়ে এই মেয়ে এতো সুন্দর করে হাসে কেন ?

জেন তারপর বলতে লাগলো
-শাবকীর সন্তুষ্টির জন্য আমাদের কে এটা করতে হয় !
-না করলে ?
-আমাদের উপরে বিপদ নেমে আসে !
এখন এই ২১ শতকেও এমন কথা শনে আমি মনে মনে একটু কৌতুক অনুভব করি ! কিন্তু সেটা মুখে প্রকাশ করি না ! পাছে জেনের খারাপ লাগে !
-কি রকম বিপদ ! সত্যিই কি তুমি এটা মনে কর যে শাবকী দেবীই এই কাজ টা করে !

জেন চট করেই এই কথাটার জবার দিল না ! তবে একটু যেন ভাবলো ! তারপর বলল
-আসলে আমি কি মনে করি সেটাতে কি যায় আসে ! আমাদের গোত্রের লোকজন এটা বিশ্বাস করে ! আমি ছোট বেলা থেকেই এটা দেখে আসছি ! আমার কাছে সত্য মিথ্যা থেকে তাদের বিশ্বাসের মূল্যটা বেশি !
কৌতুহল থেকেই জিজ্ঞেস করলাম
-কি রকম অভিশাপ নেমে আছে ?
-এই মনে কর আমার ফসল নষ্ট হয়ে যায় ! পশুপাখি মারা পড়ে ! আর সব থেকে বড় সমস্যা হয় যে আমাদের পাহাড়ি এলাকার ঝর্ণার পানি গুলো শুকিয়ে যায় !
-সত্যি !
হুম ! এটা আমি নিজে দেখেছি !
-হয়তো শীত কালের কারনে পানি আসে না ! জানোও তো শীত কালে পাহাড়ি ঝর্ণার প্রবল স্রোত কমে আসে !
আমার কথা শুনে জেন কেবল হাসলো ! কিছু বলল না ! আমি আবারও ওর হাসি দেখে খানিকটা সময় অন্য কোথাও হারিয়ে গেলাম !



দুই
জেনের পূর্ন নাম আইজনে তুড়ং ! আমি ওকে ডাকি জেন বলে ! আমার ক্লাসমেট ! আর ভাল করে বলতে গেলে মেয়েটাকে আমি অসম্ভব পছন্দ করি ! জেন নিজেও জানে ব্যাপার টা ! কিন্তু ওর আমার কাস্ট আলাদা বলে ও কিছু বলে না ! আমার ভালবাসাটাকে বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে । কিন্তু বলে কি আমার কাছ থেকে দুরে থাকবে ?
তা থাকে না !
ক্লাসের বাইরের সব সময় সব থেকে বেশি সময় আমি ওস সাথেই থাকি !

সেই ছোট বেলা থেকেই আমার জাপানিজ নাক বুচা মেয়ে খুব পছন্দ ! কেমন সুইট ওদের চেহারা হয় ! নাকটা একটু বুচা হয় তাতে কি হয়েছে ! আমার তো মনে হয় নাক বুচার কারনে ওদের সৌন্দর্য্য আর কয়েক গুন বেড়ে যায় ! এখন এদেশে তো সহজে জাপানিজ কিংবা চাইনিজ মেয়ে খুজে পাওয়া যাবে না, কিন্তু আমাদের পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করা উপজাতিরা সেই অভাব পূরন করে দিয়েছে !

জেন প্রথম যেদিন আমাদের ক্লাসে এল সত্যি বলতে কি ওকে দেখে আমার দম বন্ধ হয়ে এল ! আমি প্রথম বছরটা জেন কে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম ! আরও দুজন উপজাতি ছেলে মেয়ে ছিল আমাদের ক্লাসে ! কিন্তু তাদের মত মোটেই ছিল না ও ! কারো সাথেই বিশেষ করে কথা বলতো না ! এমন কি ঐ উপজাতি ছেলে মেয়েদুটোর সাথেও না !
আমি একটা অবাক হয়ে লক্ষ্য করে দেখতাম যে কেবল আমাদের ক্লাসের কারো সাথেই নয় বরং জেন কারো সাথেই ঠিক মত মেশে না ! প্রয়োজন না হলে কথা বলে না ! আর ওরাও জেন কে একটু এড়িয়ে চলে ! কারন টা কি কে জানে !!

ক্যাম্পাসে একদিন কি একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিলো আদিবাসী না উপজাতিদের নিয়ে ! আমি কিছুটা সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে জেনকে খুজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না ! দেখার ইচ্ছে ছিল ও কি রকম সাজ দিয়ে এসেছে ! না পেয়ে ভীড় থেকে বেরিয়ে এলাম ! কিছু দুর যেতেই দেখি আইজেন একটা গাছের নিচে চুপ করে বসে আছে । মুখটা একটু যেন মলিন ! কি মনে হল সাহস করে এগিয়ে গেলাম !
-তুমি অনুষ্ঠানে নেই কেন ?
জেন আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো ! কিছুটা সময় ভাবলো কি বলবে ! আমি ভাবলাম হয়তো বিরক্ত হয়ে জবাব দিবে না ! কিন্তু জবাব দিল ! বলল
-আমি আসলে ওদের গোত্রের নই !
-এখানে সবাইকেই দেখলাম ! মানে এতো উপজাতীদের অনুষ্ঠান !
-আমি ওদের গোত্রের নই !
-ও ! বসবো একটু ?
-বস !
-হাই ! আমি .......
-আমি জানি তুমি কে ? আমার ক্লাসে গত দু বছর ধরে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা ছেলেকে আমি চিনবো না ?

এই বলে জেনের চোখে একটা হাসি দেখতে পেলাম ! আমি কি বলবো কথা হারিয়ে ফেললাম ! এতোটা অবাক আমি আসলেই এর আগে হয়েছি বলে মনে পড়তো না ! লজ্জা মিশ্রিট হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকালাম ! তার থেকেও বড় কথা আমার মনের ভেতরে আনন্দের স্রোত বয়ে যাচ্ছিলো ! আমি যে ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি এটা জেন ঠিক টের পেয়েছে !
-সরি !
-সরি কেন ?
-না মানে তুমি বিব্রত হয়েছো হয়তো !
-তোমাকে কে বলল যে আমি বিব্রত হয়েছি !
এই বলে জেন আবারও হাসলো ! হাসি দেখে আমি খানিকটা বাক্য হারা হয়ে গেলাম ! এই মেয়ে এতো সুন্দর করে হাসে কেন ? এটা তো রীতিমত অন্যায় !

ঐ দিন থেকেই শুরু ! তারপর আমাদের কথা দিন দিন বাড়তে লাগলো ! ওর যে কেবল চেহারা সুন্দর এই জন্যই ওর সাথে মিশি তা নয় ! ওর নিজের গোত্র সম্পর্কে আমার বেশ আগ্রহ জন্মে গেল কদিনের ভেতরই !

বাংলাদেশে যে কয়টা উপজাতি গোষ্ঠী ছিল আইজেন তুড়ং সেই গোষ্ঠীর কেউ ছিল না ! ও আমাকে জানালো যে ওদের গোষ্ঠীর কথা আসলে কেউ স্বীকার করে নিতে চায় না ! বাংলাদেশের সব উপজাতি থেকে ওদের গোষ্ঠীটা আলাদা ! কেবল মাত্র খাগড়াছড়ির একেবারে শেষ প্রান্তে ওদের বসবাস ! ঠিক বাংলাদেশ আর মিজোরাম সীমান্তের কাছে ! পাহাড় আর বন এতো গভীর যে ওদের খোজ নাকি ওনেকেই জানে না ! যদিও এখন সেখানে যাওয়ার পথ অনেকটাই সুগম করে নিয়েছে ওদের নিজেদের প্রয়োজনে ! তবুও বাইরের লোকেদের সাথে ওদের মানুষজন নাকি একদম মেশে না ! এমন কি কেউ তাদের পাড়ায় কিংবা গোত্রের ভেতরে যাক সেটা তারা কিছুতেই পছন্দ করে না ! আর সেটা দেশের একেবারে শেষ সীমান্তে বলে মানুষজন সেখানে যায়ও না !

আইজেনের গোষ্ঠীর নাম তুনতি ! ঐ এক মাত্র মেয়ে নাকি যে খাগড়াছড়ি শহরে এসে পড়া লেখা করেছে । ওর বাবা ওদের গোষ্ঠীর সরদার (রাজা) বলেই হয়তো এটা সম্ভব হয়েছে ! সেই হিসাবে আইজেন একজন প্রিন্সেস ! প্রিন্সেস জেন ! তা ছাড়া ও ওদের কালচার আর নিয়ম সম্পর্কে এমন কিছু কথা আমাকে বলেছিল আমি খানিকটা ভড়কে গিয়েছিলাম ! বিশেষ করে শাবকী দেবীট কথা শুনে তার আরাধনার পদ্ধতি শুনে !


সেই কৌতুহল থেকেই এবারের গ্রীষ্মের ছুটিতে যখন জেন আমাকে বলল ওর সাথে কদিন বেড়িয়ে আসতে আমি কিছুতেই সেটা ফেলতে পারলাম না ! একে তো ওর সাথে আরও কিছুটা সময় থাকা হবে ! আর অন্য একটা কথা যে ওদের কালচারটা আরও কাছ থেকে দেখা হবে ! তবুও মনে একটু সংসয় ছিল ! ওর বাবা একজন রাজা ! আমি গোত্রের বাইরের একজন মানুষ ! আমি গেলে আবার কোন সমস্যা হবে না তো !
আইজেন কে কথাটা বলতেই ও হাসলো ! তারপর বলল
-সেই সমস্যা থাকলে আমি কি তোমাকে বলতাম ? বলতাম না !
-সত্যি সমস্যা হবে না তো ? তুমি না বললে বাইরের লোকজন সেখানে এলাউড না !
-বাইরের লোক আর তুমি তো এক নও !
-কি রকম ?
আমার এই কথার জবার জেন দিল না ! কেবল হাসলো ! সেই রহস্যময় হাসি ! কিছু একটা বলতে চেয়েও বলল না !
কিছু সময় চুপ থেকে আবার বলল
-আর এবার গেলে হয়তো শাবকী দেবীর উৎসবটাও দেখতে পাবে !
-সত্যি নাকি ?
-হুম ! আর সপ্তাহ খানেক বাদেই সেটা শুরু হবে !

শাকবী দেবী ওদের গোষ্ঠীর একজন দেবী ! আরও ভাল করে বললে অপদেবী, অত্যাচারের দেবী ! কয়েক বছর পর পরই নাকি এই দেবীর অভিশাপ নেমে আসে ওদের তুনতি গোষ্ঠীর উপর । তখন গোষ্ঠীর রাজার কোন বংশধরকে সেই অভিশাপ কাটানোর জন্য কঠিন পরীক্ষার ভেতরে দিয়ে যেতে হয় ! এই দায়িত্বটা নাকি রাজার মেয়ের উপর বর্তায় ! যখন দেবী অসন্তুষ্ঠ হয় তখন কোন মেয়েকে দেবীর মন্দিরে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতান সহ্য করতে হয় ! সেই হিসাবেই নামি মেয়েটার শরীরের সমস্ত ছিদ্র সেলাই করে দেওয়া হয় ! শরীরে ফুটানো হয় এক হাজার একটা সুই !
যাওয়ার পথেই জেন এই সব কথা আমাকে বলতে বলতে যাচ্ছিলো ! আমি কেবল অবাক হয়ে শুনছিলাম !
-এখনও কি এমন টা হয় ?
-আরে মাথা খারাপ নাকি ! অনেক আগে হত ! এখন আর হয় না ! তবে আমরা সেই সংস্কৃতটা ধরে রেখেছিল ! কিছু আচার ব্যবস্থা করা হয় !
-সেলাই !!
জেন আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো !
-কিছু না । কেবল একটা সুই ফুটানো হয় ! আর বাকি গুলো কলা গাছের গায়ে ফুটানো হয় !
-যাক ভাল !

তিন
বাসে ভেতরে বসে বসেই কথা চলতে থাকে ! গত রাতে ওর সাথে বাসে উঠেছিলাম সকাল বেলা পৌছে গেলাম ! আমরা স্ট্যান্ডে পৌছানোর আগেই দেখি আমাদের নেওয়ার জন্য একটা জিপ গাড়ি এসে হাজির ! ব্যাগ নিয়ে সামনে যেতেই দুজন এগিয়ে এল ! চেহারা দেখেই মনে হল ওরাও জেনের চেনা চোক ! জেন দেখে মাথা কুর্নিশ করে সালাম করলো ! ঠিক যেমন রাজকুমারীকে দেখে সালাম করে !
আমি হেসে বললাম
-দেখা যাচ্ছে তুমি সত্যি রাজকুমারী !
-সাট আপ ! এখন রাজা ফাজা কেউ আছে নাকি ! এটা কিছু না !

জেন কিছু না বললেও লোক দুজনের আচরনে সত্যিই সত্যিই মনে হল ও আসলেই একজন রাজকুমারী ! আর আমি যেহেতু রাজকুমারীর বন্ধু আমার দাম কম নয় ! আমার কাছ থেকে প্রায় জোর করেই ব্যাগ টা কেড়ে নিল ! কিছুতেই আমাকে নিতে দিবে না ! আমাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে দেখলাম গাড়ি ছেড়ে দিল ! কিন্তু ঐ দুজন উঠলো না ! আমি বললাম
-ওরা যাবে না ?
-যাবে ।
-তাহলে এই গাড়িতে আসলে সমস্যা কি ?
জেন হাসলো ! ! তারপর বলল
-এটা রাজকুমারী বাহন ! ওরা কিভাবে এখানে চড়বে ?
-হুম ! তাহলে আমার কথাই সত্যি দেখা যাচ্ছে !

তারপর আমি সিট থেকে নেমে হাটু ভাজ করে বসে বললাম
-সেনোরিটা আমি কি আপনার পাশে বসার অনুমুতি পেতে পারি ?
ঠিক তখনও জেন একটা কাজ করলো ! আমার কপালে একটা চুূমু খেল !

চুম খাওয়ার সাথে সাথে ওর দিকে তাকিয়েই দেখি ওর চোখে একটা বিষাদের ছায়া ! কিন্তু পরক্ষনেই সেটা মিলিয়ে গিয়ে সেখানে আবার হাসিটা চলে এল ! আমার মনে যেন একটা সাহস বেড়ে গেল ! এতো দিন আমি ওর ঠোটে চুম খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে ছিলাম কিন্তু ও কোন প্রকার প্রস্রয় দেয় নি বলে এগোই নি ! কিন্তু আজকে মনে হল সেটা অনেকটাই পেরিয়ে চলে এসেছি !
আমি ওর পাশে বসতে বসতে এবার ওর ঠোটে চুম খেলাম ! ও বাধা দিল না ! একবার দুবার ! তিনবার ! আরও একবার খাওয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু গাড়ি থেমে যাওয়ায় থেমে গেলাম ! আপাতত চুমু বিরতি দিলাম ! ভেবেছিলাম সময় গাড়ি চলতে শুরু করলে আবার শুরু করা যাবে !

জেন গাড়ির ড্রাইভার করে কিছু বলল ওদের ভাষায় ! ড্রাইভার গাড়ি রেখে চলে গেল ! আমি তখনও জেনের দিকে তাকিয়ে আছে ! মেয়েটা আজকে হঠাৎ আমার সাথে এমন আচরন করলো কেন ? ঠিক বুঝলাম না !
অবশ্য মেয়েদের বুঝতে পারে এমন মহারথি এই দুনিয়ার কে আছে !
জেন তখনও অন্য দিকে তাকিয়ে আছে !
-জেন !
-হুম !
-থ্যাঙ্কিউ !
এবার ও কিছু বলল না ! কেবল হাসলো । তবে প্রানবন্ত হাসি না ! একটু যেন জোর করে হাসা ! হঠাৎ করেই যেন কিছু নিয়ে চিন্তিত হয়ে উঠেছে ! আমি আরও কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই দেখলাম একটা ১৫/১৬ বছরের ছেলে গাড়ির পেছনে চলে এসেছে !
জেনকে দেখে কিছু বলল ওদের ভাষায় !
প্রতি উত্তরে ও নিজেও কিছু বলল ! আমি কিছু বুঝলাম না
আমার দিকে তাকিয়ে ছেলে একটু হাসলো ! তারপর জেন বলল
-ও আমার কাজিন ! ওর নাম সাং । এবার ইন্টারে উঠেছে !
আমি হাসলাম !
-উঠে আয় !
সাং গাড়িতে উঠে এল ! বুঝলাম চুমু পর্ব আর শুরু হবে না আপাতত !

কিন্তু একটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করলাম যে জেনের মুডটা সেই যে হঠাৎ করেই অফ হয়ে গেছে সেটা আর ফিরে আসে নি ! ও অবশ্য হাসি মুখেই আছে কিন্তু আমার কাছ থেকে ব্যাপার লুকালো না ! অবশ্য আমি জানতে চাইলাম না ! ও নিশ্চয়ই কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত ! পরে ভাল করে জেনে নেওয়া যাবে !

কতটা পথ যে পার হলাম সত্যি বলতে পারবো না ! গাড়ি পাহাড়ি পথ বেয়ে চলেছে তো চলছে ! যেন এ আর শেষ হওয়ার নয় ! পাহাড়ি হলেও এই রাস্তাটাতে জিপ চলার উপযোগী করা হয়েছে । ওরা নিজেদের সুবিধার জন্য করে নিয়েছে ! আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই সাং বলল
-এটা আমরা বানিয়ে নিয়েছি ! এটা কেবল আমাদের চলাচলের জন্য ! অন্য কেউ এটা দিয়ে আসতে পারবে না !
-একে বারে গ্রাম পর্যন্ত ?
-হুম! আসলে আমার বেশ কিছু ফসল বাজাকে আসে তো তাই ! পরিবহনের জন্য !


চার
জেনদের গ্রাম টা বলতে গেলে সীমান্তের একেবারে কাছেই । চারিদিক থেকে তিন টা পাহাড় গ্রাম টাকে ঘিরে রেখেছে । ঠিক তার মাঝখানে ওদের গ্রামটা । কিছুদুরের পথ একেবারেই দুর্গম ! আমাদের যেমন বাস স্ট্যান্ড থাকে ঠিক তেমন ওদের গ্রাম থেকে একটু দুরে এসে আমাদের জীপটা থেমে গেল ! এখানেও দেখলাম আও কিছু জিপ গাড়ি দাড়িয়ে আছে ! জেন নামতেই ওকে আসে পাশের সবাই কুর্নিশ করে সালাম করলো !
জেন বলল
-এবার আমাদের একটু হাটতে হবে ! পারবে তো ?
-আরে পারবো না মানে ? তুমি জানো আমি পুরো বান্দরবনের পাহাড়ি এলাকা হেটে পার হয়েছি !
-হয়েছে ! এই গল্প তুমি আমার কাছে হাজার বার করেছো ! মাসে কাছে মাসির গল্প !
-আরে পারবো পারবো ! চলতো !


জেনের এলাকায় পৌছে আসলেই পারত পক্ষে রাজার আভ্যর্থনা পেলাম ! এতোদিন কেবল টিভি মুভিতেই কেবল এমন দৃশ্য দেখেছি এখন দেখছি নিজের সাথেই এমন হচ্ছে ! জেনের আব্বাও একজন অমাইক মানুষ ! গ্রামের অন্যান্য মানুষ বাংলাটা ঠিক মত বলতে না পারলেও রাজা খুব চমৎকার বাংলা বলেন ! জেনের মা দেখলাম খুব ভাল বাংলা বলে না ।
জানা গেল গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কোন দিন এই গ্রামের বাইরে যায় নি ! অল্প কয়েকজন মানুষ বাইরের মানুষের সাথে যোগাযোগ করে । আমি ঘুরে ঘুরে সব কিছু দেখতে লাগলাম !

তবে একটা ব্যাপার আমার কাছে একটু যেন কেমন মনে হল যে সবাই আমার দিকে কেমন চোখে যেন তাকাচ্ছিল । আমি জেনের সাথে সারাটা গ্রামটা যখন ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম তখনও আমার কাছেই ঠিক এই ব্যাপার টাই মনে হচ্ছিলো । হয়তো আমি নতুন কেউ বাইরের কেউ এই জন্যই সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিলো ! আমি খুব বেশি আমলে নিলাম না !
জেন বলল
-ইগনোর দেন !
-কি !
-বললাম ওদের দিকে বেশি মনযোগ দিও না ! গত প্রায় বছর দশেকের মধ্যে তুমিই এক মাত্র বিদেশী ! ওদের একটু কৌতুহল তো হবেই ! তাই না !
-তাই নাকি ! যাক সমস্যা নেই !

পুরো গ্রামের ভাব দেখলেই বুঝো যাচ্ছিলো যে তারা কোন উৎসবের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ! আমি একটা অন্য রকম অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হতে লাগলাম ! কেমন হবে কে জানে ! এরকম উপজাতির উৎসব আচার অনুষ্ঠান বলতে গেলে এই প্রথমবার কাছ থেকে দেখতে পাবো !
তবে একটা ব্যাপার আমার কাছে একটু যেন কেমন লাগলো ! গতবার যখন আমি পুরো বান্দরবান ঘুরে এলাম সেখানে জায়গায় কেবল ঝর্ণা দেখতেছি । কেবল বড় বড় ঝর্ণা সেটা নয় ! ছোট বড় অসংখ্য ঝিরি পথ ! আর এখন সময় টা গরমের শেষ সময় ! ঢাকায় থাকতেও বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হয়েছে । তাহলে আমার চোখ এখনও একটা ঝর্ণা পড়লো না কেন ?
একটা ছোট ঝিরি পথও নেই ! কেবল ওদের গ্রামে পাশ দিয়ে একটা ছোট্ট নদী দেখতে পেলাম তবুও সেটা প্রায় শুকিয়ে যাচ্ছে অথচ এখন তো ওটার পানি বাড়ার কথা !
কি জানি সমস্যা ! পাহাড়ি এলাকায় আসলাম অথচ ঝর্ণা দেখলাম না ! এটা কেমন হয় !


পাঁচ
পরদিন জেন আমাকে শাবকী দেবীর মন্দিরেও গেল ! খোলা জায়গার চারিপাশে গাছ গাছালির সারি ! ঠিক তার মাঝে খোলা একটা জায়গা ! তার মাঝে চারটা কাঠের চার টা থামের উপর গোলাকার ছাদ দাড়িয়ে আছে । সেইটা হচ্ছে মন্দির ! চার পাশে দেওয়াল নেই কোন ! মন্দিরের শাবকী দেবীর মুর্তিটা এক পাশে রাখা ! কালো কষ্টি পাথরের সম্ভবত ! ছিপছিপে দেহ ! কিন্তু একটা ব্যাপার দেখে আমার নিজের কাছেই কেমন লাগলো ! অন্যান্য মন্দির মত মূর্তি গুলো বসে কিংবা দাড়িয়ে নেই । মুর্তিটাকে যেন দুইহাত এক সাথে করে বেঁধে রাখা হয়েছে । দুই পা দুটো দুই দিকে এমন পজিশনে রাখা হয়েছে যেন হাত এবং দুই পায়ে রমধ্যকার সৃষ্ট কোণ সমান হয় !আরেকটা জিনিস আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো ! কারন স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে দেবী নাক মুখ কান এগুলো কেমন সেলাই করে জুড়ে দেওয়া ! আমি কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকেই চোখ সরিয়ে নিলাম ! এই দৃশ্যের দিকে খুব বেশিটা সময় তাকিয়ে থাকা উপায় নেই । মুর্তিটা একটা বেদির উপর রাখা আছে । মন্দিরের মুর্তিটার ঠিক মিটার দুয়েক দুরে একই রকম আরেকটা বেদি রাখা আছে । কিন্তু সেখানে কোন মুর্তি নেই !
আমি জেনকে বললাম কথাটা !
-এখানে কি আরেকটা মুর্তি থাকে !
আমার কথা শুনে জেন হাসলো ! তারপর বলল
-ঠিক মুর্তি না ! এখানে সেই মেয়েটাকে রাখা হয় !
-তাই নাকি !
-হুম ! ঠিক যেভাবে দেবী আছে ঠিক সেই ভাবে !

কথা মনে হতেই মনে হল আরে জেন তো রাজার মেয়ে । সেই হিসাবে জেন কেও কি এইভাবে রাখা হবে ? আমার চেহারার ভাব দেখেই জেন বুঝে ফেলল আমি মনে মনে কি ভাবছি ! হাসলো একটু ! আমি অবিশ্বাসের ভাব নিয়ে তাকালাম জেনে দিকে !
জেন বলল
-হ্যা ! আমিও এখানে দাড়াবো !
-এভাবে ?
মুর্তিটাকে দেখিয়ে বললাম !
-হুম !
-ও মাই গড ! নো ! দিস ইজ ইনসেইনস !
জেন কেবল হাসলো ! জেন ঠিক একই ভাবে শাবকী দেবীর মত করে বেঁধে রেখে কিছু পুরোহিত তার চারিপাশে পুজা করছে এটা ভাবতেই আমার মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠলো ! এদের মাথায় আসলেই বড় রকমের সমস্যা আছে !


মন্দিরটা বেশ বড় ! ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম মন্দরীরের এক স্থানে খুব যত্ন করে অনেক লেবু সাজিয়ে রাখা হচ্ছে !
আমি জেনের কাছে জানতে চাইলাম এগুলো এখানে কেন ? শাবকী দেবীর পুজার জন্য কি লেবু দরকার ?
জেন বলল
-ঠিক পুজার জন্য না ! আসলে শাবকীর অনিষ্ঠ থেকে সাময়িক ভাবে এই লেবু গুলো আমাদের রক্ষা করবে ! শাবকী সব কিছু সহ্য করলে পারলেও এই লেবুর গন্ধ সহ্য করতে পারে না ! তাই কথিত আছে যে যখন পুরোহিতেরা শাবকীর জন্য পুজা করে তখন নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই নাকি এই লেবু নিয়ে থাকে !

মন্দির থেকে বের হয়ে আমি তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় ! জেন কে বললাম
-এটা কবে তৈরি হয়েছে ! খুব বেশি পুরানো মনে হচ্ছে না !
-হুম ! এটা বছর ১০ আগে বানানো হয়েছে ! আরেকটা মন্দীর আছে ! সেটা আরও ভেতরে ! ঐ যে ঐখানে !

জেন আমাকে হাত দিয়ে দুরের একটা পাহাড় নির্দেশ করলো !
-অনেক দুরে ওটা ! আর পথ টা খুব বেশি দুর্গম ! ওখানে আমরা এখন আর যেতে পারি না ! যাওয়া সম্ভবও নয় ! মিজোরামের ভেতরে চলে গেছে সেটা ! ওখানে যাওয়া সম্ভবও না !

ঐ দিন রাতে খুব ভাল খাওয়া দাওয়া হল ! আর একদিন পরেই শাবকী দেবীর পুজা হবে ! প্রায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গেছে ! আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি কিন্তু সবার সেই চোখের দৃষ্টিটা আমার কছে মোটেই ভাল লাগছে না ! এদিকে জেনও যেন কেমন মন মরা হয়ে গেছে আরও । আমি কথা বলতে গেলে জোর করে হাসি ফুটিয়ে কথা বলছে কিন্তু ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ও নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে করছে । যেন খুব একটা অপরাধ করে ফেলেছে এমন কিছু !


ছয়
রাতের বেলা ঘুমিয়ে আছি এমন সময় জেনের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো ! ভাবলাম বুঝি সকাল হয়ে গেছে । তাকয়ে দেখি এখনও রাতই আছে । তবে গুড় গুড় করে মেঘ ডাকা আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি ! আমি আলো জ্বালতে গেলাম ও বাঁধা দিল ! শব্দ করতেও মানা করলো ! তারপর আমাকে খুব জোরে এসে জড়িয়ে ধরলো ! এতো জোরে আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না হঠাৎ কি হল ! তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল
-তোমার সামনে খুব কঠিন বিপদ !
-মানে ?
-কোন কথা না, কোন আওয়াজ না ! সাং দাড়িয়ে আছে বাইরে ! তুমি এখন ওর সাথে যাবা ! সকাল পর্যন্ত থামবা না ! কেবল হাটবা, পারলে দৌড়া ! সকালের আগে কোথাও থামবা না ! মনে থাকবে ?

আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ! হঠাৎ করেই কি হল ! আমার বিপদ মানে ? কি ভাবে বিপদ !
-জেন ! কি বলছো এসব ! আমার বিপদ মানে কিসের বিপদ !
জেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছু সময় !
-ইউ নো আই লাভ ইউ !
-হুম ! জাি তো !
-আমি সত্যি তোমাকে ভালবাসি ! আর আমার কারনে তোমার কোন ক্ষতি আমি করতে পারবো না !
-কি বলছো ! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না !
-আমি তোমাকে এখানে আমাদের উৎসব দেখাতে নয় তোমাকে শাবকির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার জন্য এনেছিলাম !
-মানে !!

আমি যেন নিজর কান কে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ! কি বলছে এই মেয়ে ! মাথা ঠিক আছে তো !
-শুনো ! এখনও সময় আছে পালিয়ে যাও ! কোন প্রশ্ন কর না ! হয়তো আর দেখা হবে না ! তবে একটা কথা মনে রেখো যে আমি তোমাকে ভালবাসি ! সব কিছুই থেকে ভাল বেশি ভালবাসি ! এই বলে জেন আমার ঠোটে একটা চুম খেল !

আমি আর দাড়ালাম না ! সাং বাইরের দাড়িয়ে ছিল ! ওকে নিয়ে আস্তে আস্তে হাটতে লাগলাম ! গ্রামের সীমা অতিক্রম করে এবার দৌড়াতে লাগলাম ! যদিও অন্ধকারে হাটতে বেশ কষ্ট হচ্ছিলো ! কেবল হাটছিলাম আর দৌড়াচ্ছিলাম !
জেন বলেছিল কোন ভাবেই রাতের বেলা কোথাও থামা যাবে না ! চলতে থাকতে হবে !


সাত
কিভাবে সকাল হল আমি বুঝতে পারলাম না ! কেবল মনে হয়েছে যে আমি আজীবন ধরে কেবল দৌড়েই চলেছি !
যখন আলো ফুটলো তখনও আমরা পাহাড়ি এলাকা থেকে বের হতে পারি নি ! একটা পাহাড়ের পাদদেশে একটা কুড়ে ঘর দেখে সেখানে বলসলাম একটু বিশ্রামের জন্য ! সাং বলল
-এখন মোটামুটি নিরাপদ ! ওদের গ্রামর মানুষ এখানে আসবে না । এটা অন্য গোত্রদের এলাকা !

আমি চোখ বন্ধ করলাম ! মাথার ভেতরে অনেক গুলো প্রশ্ন খেলা করছে । জেন এই সব কি বলছে ! ও আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছে ! যদি জেনের কথা ঠিক থাকে গ্রামের লোক গুলোর চোখের ঐরকম দৃষ্টির একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ! এই সব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই ! বৃষ্টির ঝাট গায়ে লাগাতে চোখ মেলে চাইলাম ! বাইরে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে ! পাশে তাকিয়ে দেখি সাং বসে বসে কাঁদছে ! আমরা তো বেচে এসেছি ! তাহলে এই ছেলে কাঁদছে কেন ?
-কাঁদছো কেন ?
-আইজেন বু আর বাঁচবে না !
-সে কি ! কেন ?
-ও আপনাকে বাঁচিয়ে দিয়ে নিজের মৃত্যু ডেকে এনেছে !
-মানে ?
-আপনি জানেন না ! বু বলে নি আপনাকে ?

আমি কিছু মনে করতে পারলাম না ! এমন কিছু বলেছে কি ! সাং বলতে শুরু করলো
-শাবকি ! হয় শরীর নয়তো কষ্ট ! শরীরটা ছিল আপনার ! সেটা যখন শাবকীকে দেওয়া হয় নি তখন কষ্ট ! সেটা হবে আইজেন বুর !

শাবকীকে সন্তুষ্ঠ করতে রাজার মেয়েকে কঠিন কষ্টের ভেতর দিয়ে যেতে হয় ! জেন বলেছি শজরীরের সব ছিদ্র সেলাই করে দেওয়া হয় ! তারপর শরীরের ফোটানো হয় ১০০১ টা সুই ! এভাবেই রেখে দেওয়া হয় শবকির মন্দিরের সামনে । যদি শাবকী নিজে এসে তাকে গ্রহন করে তাহলে হয়তো বেঁচে ওঠে নয়তো ওভাবে মারা যায় !
আর বিকল্প উপায় হচ্ছে রাজকুরামীর ভালবাসার মানুষকে শাবকীর উদ্দেশ বলি দেওয়া যাতে সারাটা জীবন যে মনের কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকে !

সাং বলল
-আমার নানী ছিল শাবকিনী !
-শাবকিনী ?
-যারা শাবকীর জন্য জীবন উৎসর্গ করে ! নানা নিজে এই গ্রামে ভালর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন ! নানী এতো দিন বেঁচে ছিল তাই আমার মা কিংবা আইজেন বুর মাকে কিছু করতে হয় নি । কিন্তু গত মাসে নানী মারা গেছে । আর এখন গ্রামে কোন শাবকিনী নেই ! নিয়ম অনুসারে এখন আইজেন বুকে শাবকিনী হতে হবে ! আমাদের পরিবারের একমাত্র মেয়ে সেই ই !

আমি কি বলবি কিছু খুজে পেলাম না ! কেবল জেনের চেহারাটা ভেসে আসতে লাগলো ! আসলেই কি সেই সব কিছু জেনের সাথে করা হবে !
না মোটেই না !
মোটেই না !

আমি আর ভাবতে পারলাম না ! না ! এটা হবে না !
-চল !
-কোথায় ?
সাং আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালো !
-আবার গ্রামে !
সাং সত্যি আমার দিকে তাকিয়ে রইলো অবাক হয়ে !
আামকে আগে এই কথা বললে আমি হয়তো আসতাম ই না ! জেন যদি আমাকে বাচানোর জন্য এই অবর্ননীয় কষ্ট স হ্য করতে পারে আমিও ওর জন্য মরতে প্রস্তুত ! তুমি এখনই চলে !

-এখন আর লাভ নেই ! আজকে ভোর বেলা বুকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ! আর এই যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে ! এটা তারই প্রমান ! নানাী মারা যাওয়ার পরপরই আমাদের গ্রামের উপরে শাবকীর অভিশাপ নেমে আসতে শুরু করে । ঝর্ণা শুকিয়ে যেতে শুরু করে । আমরা পানির সমস্যায় পড়তে শুরু করি ! এই যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এটা তারই জন্য ! বুবুকে শাবকীর সামনে রাখা হয়ে গেছে এতোক্ষনে !


আমার বুকের ভেতরে আবারও সেই অনুভুতি টাহল ! কেউ জেনের ঐ চমৎকার ঠোট দুটো সেলার করছে এটা ভাবতেই আমি শিউরে উঠলাম !
-যদি হয়েও থাকে তবুও ওকে বাঁচানো সম্ভব ! তুমি চল আমার আছে !
-আমি পারবো না ! এখন সে দেবীর সম্পত্তি হয়ে গেছে ! আমাদের কিছু করার নেই !


আট
সাং আমাকে দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ! আমার চোখে এমন কিছু ছিল যেটাতে ও রাজি হয়ে গেল ! আবারও আমরা পথ চলতে লাগলাম ! এতো এনার্জি আমার ভেতরে কোথায় ছিল আমি নিজেই জানি না ! বারবার কেবল জেনের কথা মনে হচ্ছিলো ! যখন পুরো মন্দিরে পৌছালাম তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে !

এতো জোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে আমি এক হাত দুরের জিনিস ঠিক মত দেখতে পাচ্ছি না । সেই সাথে অন্ধকার হয়ে আসছে । জায়গাটা এতো দুর্গম আমি একটু হাটতেও ক্লান্ত হয়ে এসেছি ! গাছপালা ঘন হলেও ঠিকই বোঝা যাচ্ছে পায়ে চলা একটা পথ আছে । তবুও সেটা ঠিক মত চোখ পড়ে না । তবে কিছু নতুন মারানো ভাঙ্গা পাতা ডাল চোখ পড়ছে । সাং যদি ঠিক বলে থাকে এর অর্থ হচ্ছে জেনকে নিয়ে আজকে ওরা এখানে এসেছে । আরও কিছু দুর আসতেই পথের চারিপাশে লেবু পড়ে আছে । তখনই মনে হল আমি কাছাকাছি চলে এসেছি !

সাং আমার পাশে পাশেই ছিল ! হটাৎ থেমে গেল !
-আমি আর যাবো না !
-কেন ?
-এরপরে আমার পক্ষে আর যাওয়া আর সম্ভব না ! আপনি আর একটু সামনে যান ! ঐ যে ঘন বেড়াটা দেখা যাচ্ছে ঠিক তারপরেই শাবকী দেবীর মন্দির ! আমি আপনার জন্য এখানে অপেক্ষা করছি ! আপনি যতক্ষন না আসেন !

আমি আর কথা বাড়ালাম না ! এক পা দুপায়ে এগিয়ে যেতে লাগলাম ! যতই আমি এগুতে লাগলাম ততই আমার মনে অদ্ভুদ ভয় দানা বাধতে লাগলো ! এতোক্ষন পরিবেশ টা হালকা ছিল কিন্তু যতই কাছে যাচ্ছি মনে হচ্ছে কেমন যেন একটা অশুভ কিছু রয়েছে চারি দিকে ! আমি যখন ঘন গাছ পালা ভেদ করে আমি ভেতরে তাকালাম প্রথমে কিছুই দেখলাম না । ততক্ষনে অন্ধকার হয়ে এসেছে । কিন্তু পরক্ষনে বিদ্যুৎ চমকে জায়গাটা একেবারে দিনের আলোর মত হয়ে উঠলো !

ঘন গাছপালার ভেতরে গোল মত একটা স্থান । বলা চলে একেবারে পাথরের কন্ক্রিট দিয়ে ঝালাই করা মঝে । আমি অন্ধকারের ভেতরেই পাথরের এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম ! একটু একটু করে এগুচ্ছি ! আর পায়ের কাছে লেবু ধাক্কা খাচ্ছে । বোঝা যাচ্ছে এখানে আশে পাশে অনেক লেবু পরে আছে । আসলেই কি লেবু শাবকি দেবীর হাত থেকে তুনতিদের বাঁচাতে পারে ! এই যুগে এই সব বিশ্বাস করা কিছুটা হাস্যকরই বটে কিন্তু এমন রাতের বেলা আর এমন বৃষ্টির সময় সব কিছুই কেমন সত্য মনে হয় ! আমার যরে ভয় ভয় করছসে না এই কথা বললে মিথ্যা হবে কিন্তু সেটার থেকেও আমার কাছে জেন আর জেন কে বাঁচানো টা বেশি গুরুত্বপূর্ন !

আরেকবার বিদ্যুৎ চমকাতেই আমি জেনকে দেখতে পেলাম । কিন্তু যা দেখলাম আর যেভাবে দেখলাম সেটা দেখার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না ! ঠিক যেমন টা শাবকীর মুর্তির দেখেছিলাম ঐ নতুন মন্দিরে ঠিক সরকম দুইটা মুর্তি দেখতে পেলাম ! পরস্পর থেকে মিটার খানেক দুরে রাখা আছে ! আরেক টু ভাল করে পরেরবার যখন আরেকবার বিদ্যুৎ চমকালো তখন দেখলাম আসলে একটা মুর্তি হলে অন্যটা কোন মুর্তি নয় !
ওটা জেন ! আমার জেন !

আমি কিছু তীব্র বৃষ্টি ভেদ করেও ওর দিকে তাকিয়ে আছি ! কিছু সময় পরপরই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর ওর চেহারাটা আমার কাছে বারবার ভেসে উঠছে ! প্রতিবারই ওর সেলাই করা ঠোট দুটো আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ! সেই ঠোট দিয়ে রক্ত পড়ছে । সারা শরীরে কেবল সুঁচ আর সুঁচ ! আমি কয়েক মুহর্ত কি করবো কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না ! আমি মন্দিরে সিড়িতে পা দিতেই আরেকবার বিদ্যুৎ চমকে উঠলো !

ঠিক তখনই জেনের চোখ খুলে গেল ! আমার দিকে তাকিয়ে ওর চোখে বিশ্ময় দেখলাম ! আমাকে সে এখানে কিছুতেই আশা করে নি ! যদিও অনন্ধকার হয়ে গেলে কিন্তু আমার কাছে মনে হল ও আমাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ! আরেকবার বিদ্যুৎ চমকাতেই দেখলাম সেই বিশ্ময় মাখা চোখে ও তখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! আমি আর মন্দিরে উঠে এলাম ! শাবকির মুর্তি পার হয়ে চলে গেলাম জেনের কাছে ! অন্ধকার হলেও এতো কাছ থেকে ওর চোখ দুটো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ! আমাকে দেখে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল ! স্পষ্টই ওর চোখ আমাকে বলছে এখান থেকে চলে যেতে ! কয়েকবার মুখ ফুটে কিছু বলতে গেলে কিন্তু সেলাই করার কারনে কিছু বলতে পারলো না ! চাপ লেগে আরও রক্ত বের হয়ে এল !
আমি কেবল বললাম
-তোমাকে ছেড়ে যাবো না ! বুঝেছো তুমি ! যাবো না যাবো না !

ঠিক তখনই আমার সেই আগের অনুভুতি টা আবার ফিরে এল । এতোক্ষন জেনের শরীরের এই অবস্থা থেকে আমার মাথায় অন্য কিছু আসে নি । আমি ওকে নামাবো কি, তার আগেই খুব কাছে একটা আওয়াজ এল ! কেউ যেন একটা পাথরে খুব জোরে আঘাত করলো ! আমি চট করে পেছন ফিরে তাকালাম ! প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও মনে হল কিছু একটা যেন ঠিক নেই ! কিছু একটা আগে ছিল ঠিক । কয়েক মিনট লাগলো ব্যাপার টা ধরতে ।

আরে এখানে শাবকীর মুর্তির ছিল সেটা কোথায় ?
প্রথমে মনে হল চোখের ভুল কিন্তু একটু পরে আরও ভাল করে বুঝতে পারলাম যে কোন ভুল না ! শাবকীর মুর্তির কাছে জেনের শরীর টা ছিল, কিন্তু এখন শাবকী দেবীর পাথরের মুর্টিটা নেই !
কোথায় গেল !
এটা কিছুতেই সম্ভব নয় !
সম্ভব না !
আমি মন কে বোঝাতে চাচ্ছি ! কোন ভাবেই এটা সম্ভব নয় ! কোন মুর্তি একা একা নিজের জায়গা ছেড়ে চলে যেতে পারে না ! হয়তো সেটা ......। হয়তো এমন কোন মুর্তি ছিলই না এখানে ! থাকতে পারে না !

আবার খুব কাছেই একটা আওয়াহ হল ! এবার ডান দিকে । ডাল ভাঙ্গার আওয়াজ ! খুব ভারী পারে কেউ যেন এগিয়ে আসছে ! আমার বুকের ভেতরে আবারও ধক করে উঠলো !
তারপর আবার ! এবার আমাদের পেছেন ! আমার কেবল মনে হল খুব অশুভ কেউ এগিয়ে আসছে । সাং বলেছিল জেন এখন দেবীর সম্পত্তি হয়ে গেছে । জেন কে নিয়ে যাওয়া মানে দেবীর সম্পত্তি নিয়ে যাওয়া !
এটা শাবকী দেবী কি এমনি এমনি হতে দিবে ?


আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রীয় বলছে এখনই এখান থেকে পালিয়ে যেতে ! কিন্তু জেন কে রেখে কে রেখে আমি কোথায় যাবো না ! আমি যাবো না !
চিৎকার করে বললাম কথা টা ! চিৎকার করলে নাকি ভয় কমে যায় ! আমি আমার গলার সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বললাম

আমি যাবো না ! আমি ওকে রেখে কোথায় যাবোনা ! যদি তোমার ওর কাছে পৌছাতে হয় তাহলে আমাকে মেরে তারপর যেতে হবে ! বুঝেছো তুমি ! সবাই তোমাকে ভয় পেলেও আমি পাই না ! আমি ওকে রেখে যাবো না !

ঠিক তখনই আমি তাকে দেখতে পেলাম !

একে বারে আমার না বরাবর ! অন্ধকারে ভেতরেও আরও কিছুটা বেশি কুঁচকুচে অন্ধকার ! আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে ! থপ থপ থপ আওয়াজ করে ! আমার বুকের ভেতরে কেবল ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল ! মাথা বলছে এখনই এখান থেকে দৌড় দিতে কিন্তু মন বলছে কিছুতেই জেন কে ছাড়া যাওয়া যাবে না ! দুনিয়া উল্টে গেলেও না !

এরই মাঝে আবারও একবার বিদ্যুৎ চমকালো ! আমি ওটাকে আরও পরিস্কার করে দেখতে পেলাম ! ঠোট দুটো নাকের দুইপাশ সেলাই করা ! সেখান থেকে একটু একটু রক্ত পড়ছে যেন ! বৃষ্টির প্রবল বর্ষন হওয়া সত্ত্বেরও সেটা ধুয়ে যাচ্ছে না ! আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে !

আমি জেনের শরীর দিকে আরও একটু এগিয়ে এলাম ! পায়ের কাছে তখনও কিছু লেবু গড়াগড় খাচ্ছে ! জানি কোন কাজ হবে না তবুও আমি দুটো লেবু হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে জেনে শরীরটা আড়াল করে রাখা চেষ্টা করলাম ! কোন ভাবেই জেনের কাছে আমি শাবকীকে পৌছাতে দিব না !
তখনও থপথপ আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি ! ওটা এগিয়েই আসছে ! আসছেই !



আমার আর তাকানোর সাহস নেই ! আমি ঘুরে গিয়ে কেবল জেন কে জড়িয়ে ধরলাম ! মনে মনে কেবল বলতে লাগলাম আমি ওকে ছেড়ে যাবো না ! যাবো না ! ওকে ছেড়ে যাবো না !


নয়
কতক্ষন এভাবে ছিলাম আমার নিজেরও মনে নেই ! একটা সময় কেবল লক্ষ করলাম যে চারিদিকে তীব্র লেবুর গন্ধ ছড়িয়ে পরেছে । তাকিয়ে দেখি আমার হাতের যে লেবু দুটো ছিল সেগুলো আমি উত্তেজনায় এতো ধরে চেপে ধরেছি যে সেগুলো হাতের ভেতরেই পিসে গেছে । আমি আবার ঘুরে তাকালাম ! তাকিয়ে দেখি শাবকীর মুর্তিটা ঠিক আগের জায়গায় রয়েছে ! একটু আগেও যে অশুভ অনুভুতিটা হচ্ছিলো সেটা আর হচ্ছে না এখন !

তবুও আমার কেবল মনে এখানে থাকাটা মোটেই শমীচিন হবে না ! আমি জেন কে নামালাম ! মন্দিরের মাটিতে নামিয়েই প্রথমে ওর সেলাই গুলো কাটতে চেষ্টা করলাম ! কিন্তু অন্ধকারের কারনে সেটা খুব বেশি বুদ্ধিমানের কাজ মনে হল না !

যখন ওর পালস নেড়ে দেখি খুব দুর্বল ! শরীর থেকে প্রচুর রক্ত বয়ে চলেছে ! শরীর সুই সব বের করা সম্ভব হল না ! তবুও কিছু বের করে ওকে নিয়ে বৃষ্টির ভেতরেই নেমে গেলাম !

নিচের গায়ের শার্ট টা ওকে আগেই পড়িয়ে দিয়েছি ! গাছ পালার দেওয়াল পার হয়েই দেখি সাং এখনও আমার জন্য অপেক্ষা করছে ! আমাকে আর জেন কে দেখে অবাক হয়ে তাকালো ! বিশেষ করে জেন দেখে দেখে ! আমি আরও একটু কাছে আসতেই হঠাৎ করেই মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে প্রানামের মত করলো !

-কি করছো তুমি ? আগে জেনকে ধর !
-না ! এটা আমি পারবো না !
মাথা নিচ করে রেখেই সাং বলল !
-কেন ?
-সে এখন আর স্বাধারন কেউ নেই । শাবকীনি হয়ে গেছে ! আর আমরা তার দিকে চোখ তুলে তাকানোর ক্ষমতা নেই !

এই বলে সে মাথা নিচ করেি রইলো ! বুঝলাম ওর কাছ থেকে আর কোন সাহায্য পাওয়া যাবে না ! ওকে একাই বয়ে নিয়ে চললাম ! কিন্তু আগে ওর শরীর থেকে সুই গুলো বের করতে হবে ! আর এই প্রবল বর্ষনের ভেতরে জনে কে নিয়ে এগোনো সম্ভব না ! ওর শরীর সেটা স হ্য করতে পারবে না !

সাং কে কথাটা বলতেই ও একটু দুরেই একটা ছোট গুহার মত খুজে বের করে ফেলল ! সেখানে এই বৃষ্টির ভেতরেও আগুন জ্বলিয়ে ফেলল কেমন করে জানি !

গুহার ভেতরে ঢুকে আমি কাজে লেগে গেলাম ! আস্তে আস্তে খুব সাবধানে ওর সেলাই গুলো কাটতে লাগলাম ! সাথে সাথে সুই গুলো শরীর থেকে বের করতে লাগলাম ! সাং কেবল দুর থেকে আমাকে দেখতে লাগলো ! ওর চোখে আমার আর জেন দুই জনের জন্য বিশ্ময় ছিল, ছিল ভয় ! কি সেই ভয় আমি জানি না !

যখন শেষ সুচ টা বের করলাম তখন রাত কয়টা বাজে কে জানে ! আমি সারা শরীরের তখন কি পরিমান ক্লান্তি এসে জমা হয়েছে আমি
। ভেজা শার্ট টা দিয়ে ওর শরীরটা মুছিয়ে দিয়ে আমি ওর পাশেই শুয়ে পড়লাম !




পরিশিষ্টঃ
সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন বাইরে রোদ উঠেছে । আমি চোখ মেলে দেখি পাশে জেন নেই ! সাংও নেই !

বাইরে বের হয়ে একটু অবাক হতে হল ! ঠিক গুহার সামনেই আমি একটা ঝর্ণা দেখতে পেলাম । স্পষ্টই মনে আছে কাল রাতে যখন এখানে এসেছিলাম তখন এটা ছিল না । তার মানে এক রাতেই এটা তৈরি হয়ে হয়েছে কিংবা আগে ছিল, শুকিয়ে গিয়েছিল এখন আবার কাল বৃষ্টির ফলে তৈরি হয়েছে । আমি সামনের জমা হওয়ার পানির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম জেন কোথায় গেল ! যদি নিজ পায়ে উঠে গিয়ে থাকে তার মানে কাল রাতের থেকেও ওর শারীরিক অবস্থা আগের থেকে ভাল !

আমি পানির দিকে তাকিয়ে আছি তখনই একটু আলোড়ন দেখতে পেলাম । আমি তাকিয়ে আছি পানির দিকে ।
তখন যেন সময় একটু স্লো মোশনে চলা শুরু করলো । হিন্দি সিনেমায় নায়িকা সমুদ্র কিংবা সুইমিং পুলের পানি থেকে উঠানো টা দেখানো হয় ঠিক সেই ভাবে পানি থেকে জেন কে উঠতে দেখলাম ।

পানি থেকে উঠে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে এল ! আমি কেবল অবাক করে তাকিয়ে দেখলাম ওর দিকে তাকিয়ে ! আমার বিশ্ময় টা আরও একটু বেড়ে যখন দেখলাম জেন আমার পাশে এসে বসলো ! ওর শরীর থেকে তখনই পানি ঝড়ছে । হাত দিয়ে চুলের পানির ঝাড়তে ঝাড়তে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ! সেই চিরো চেনা দম বন্ধ করা হাসি ! কাল রাতে ওর ঠোঁট দুটো সেলার করা ছিল, সেটা কাটার মনে হয়েছিল যে ঠোঁটে দাগ টা অনেক দিন থাকবে কিন্তু এখানে ওর ঠোটে একটা দাগ নেই !

আমি হাত দিয়ে ওর ঠোঁট দেখলাম !
-দাগ !!
শরীরের কোন ক্ষত নেই !
কিভাবে সম্ভব !
জেন কেবল হাসলো !



যখন জেনদের গ্রামে গেলাম পরিবেশ টা দেখার মত হল ! সবাই কেবল আমাদের দেখার সাথে সাথেই মাথা নিচ করে কুর্নিশ করছে । এমন কি স্বয়ং রাজা সাহেব আমাদের দেখে কুর্নিশ করছে । আগের বার তো কেউ কেউ জেন কে দেখে কুর্নিশ করছিল কিন্তু সেটার সাথে এইটার কোন তুলনায় নেই ! সত্যি কারের রাজ দেবীকে যেন তারা মাথা নত করে সালাম করছে ! এবং এরা এইবার আমাকে দেখেও কুর্নিশ করছে কিন্তু কেন !

জেন কেবল আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-অভ্যেস করে নাও ! ইউ আর গোয়িং টু বি দ্য কিং !!
-দ্য কিং !


সিরিয়াসলি !!!



পদাটিকাঃ তুনতি, শাবকী সবই কাল্পনিক শব্দ । বাস্তবে ইহার কুনো অস্তিত্ব নাই ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৯
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×