somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রাকৃত গল্পঃ দ্য গার্ল উইথ দ্য ব্লু ঈগল

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






গল্প শুরু আগেই বলে নেই, ইহা একটু অতি মানে গাজাখুড়ি গল্প এবং এর আগা মাথা কিছু নেই । এবং কিঞ্চিৎ রকমের একটু প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য । তাই পড়ার আগে নিজ দায়িত্বে পড়বেন এবং পড়ার পর এই কথা বলতে পারবে না যে সময় নষ্ট গেল । কারন আমি নিশ্চয়তা দিতেছি গল্পটা পড়ে আপনার সময় নষ্টই হবে




শুরুর আগে

রাতের শুনশান নিরবতা । বলতে গেলে একটা জনপ্রানীও নেই আশে পাশে কেবল একজন ছাড়া । সেও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । মিশুর চোখে কেবল ঘুম নেই । গত কালকেই ডাক্তারের রিপোর্ট টা হাতে এসেছে । ডাক্তার বলে দিয়েছে তাদের পক্ষে আর কিছু করার নেই । এখন সব উপরওয়ালার হাতে ।
মিশু তখন থেকেই কেবল অস্থির বোধ করছে । নিজের কাছের কেমন অসহায় লাগছে তার । বারবার কেবল মনে হচ্ছে যদি কোন উপায় থাকতো ! একটা মাত্র উপায় !
মনে মনে গভীর শুন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে কেবল একটা কথাই বলতে লাগলো ।
একটা মাত্র উপায় !
যে কোন উপায় ! যে কোন কিছু !

ঠিক তখনই একটা অদ্ভুদ ঘটনা ঘটলো ! মিশু কেবল দেখতে পেলো আকাশের অন্ধকারের ভেতরে একটা ছোট্ট আলোর বিন্দু ! সেটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে । অর্থাৎ ওর দিকে এগিয়ে আসছে ।
কোন কথা না বলেই কেটে গেল কয়েক মুহু্র্ত ! যখন আলোর বিন্দুটা ওর সামনে এসে হাজির হল তখন সেটা বিশাল বড় একটা ঈগল পাখির আকার ধারন করেছে । একেবারে সামনে এসে দাড়িয়েছে ওর !
ডেকে উঠলো তীক্ষস্বরে…..



এক


-এক কাজ করুন আপনি ক্যামেরাটা বরং আমার কাছে দিন । আমি আপনার ছবি তুলে দেই ।

আরও অনেকেই চারিপাশে ছবি তোলায় ব্যস্ত । তবে মেয়েটাকে দেখছিলাম নিজের ছবি নিজেই তুলছিলো । আমার যতদুর মনে হল মেয়েটার সাথে আর কেউ নেই । মেয়েটা একা একা এখানে এসেছে । একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । এতো দুর একটা মেয়ে একা একা আসতে পারে এটা একটু অন্য রকমই মনে হল ! বিশেষ করে এই পাহাড়ি এলাকায় মেয়েদের পক্ষ্যে একা একা আশা টা একটু অন্য রকমই বটে । মেয়েটি আমার দিকে ক্যামেরাটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-আপনি আমার দিকে খুব লক্ষ্য রাখছেন মনে হচ্ছে !
বলেই ছবির জন্য পোজ দিল ।

বান্দরবানের এই সৌন্দর্য্যে আসলে কেবল সেলফি দিয়ে ছবি প্রকৃত জিনিসটা আসে না । অন্তত বাংলাদেশের অন্যতম উচু একটা জায়গাতে উঠে অন্তত একটা চমৎকার ছবি তো তোলাই উচিৎ সবার ।
আমি মেয়েটির আরও কয়েকটা ছবি তুলে দিয়ে ক্যামেরাটা ফেরৎ দিতে দিতে বললাম
-যে মেয়েটা একা একা এমন জায়গায় আসার সাহস রাখে তার দিকে লক্ষ্য রাখাটা কিংবা কৌতুহল হওয়াটা নিশ্চই অস্বাভাবিক কিছু না ।
-তা আপনিও তো একা এসেছেন এখানে ?
-আমি একা আসতেই পারি । কিন্তু একটা মেয়ের পক্ষে একা একা আসাটা কি স্বাভাবিক ?
-কেন ? একটা ছেলে যা করতে পারে একটা মেয়েও তা করতে পারে !
-তা পারে । কিন্তু ..
-কোন কিন্তু না ।
-আচ্ছা কোন কিন্তু না । তা ছবি তোলার জন্যও তো কাউকে দরকার ।
-তা দরকার অবশ্য । আমর গাইড আছে অবশ্য । তবে সে খুব ভাল ছবি তুলতে পারে না !

মেয়েটি একটু হাসলো । তারপর আবার চারিপাশে ছবি তুলতে লাগলো ।

আমাদের সাথে আরও দুইটা গ্রুপ উঠেছে কেউক্রাডাং এর চুড়ায় । এখান থেকে জাদিপাই ঝর্ণা দেখতে যাবে । তারপর সবাই ব্যক করবে । আমি মেয়েটির পাশে গিয়ে বললাম
-আপনি কতদুর যাবেন ?
-কেন ?
-না এমনি । এখানে সবাই জাদিপাই পর্যন্ত যাবে । তারপর ব্যক করবে । আপনি এই এদের থাকলেই সম্ভব ভাল হবে ।
-আমি থানচি পর্যন্ত যাবো ।
-মানে ?

আমি খানিকটা অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকালাম । আরও ভাল করে মেয়েটিকে দেখতে লাগলাম । বয়স কত হবে মেয়েটির ? তেইশ চব্বিশের বেশি হবে না । মেদহীন শরীর । লম্বা আর ঘন কালো চুল নেমে এসেছে কোমরের নিচ পর্যন্ত ! পরনে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট আর গেঞ্জি । কাধে বড় ব্যাগ ঝোলানো । চেহারায় একটা নমনীয় ভাব লেগে আছে । এই মেয়ের পক্ষে এতো দুর যাওয়া কি সম্ভব ?

বান্দরবানের রুমা থেকে বগা লেক সেখান থেকে কেউক্রাডাং তাজিংডং থেকে থানচি । বলা চলে পুরো বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকাটা পায়ে হেটে পার হওয়া । এতুটুকু মেয়ের পক্ষে কি সম্ভব ? তাও আবার একা একা ? আমি বললাম
-আপনি কি সিরিয়াস ?
-জি ! কেন ?
-এতো বিপদ মাথায় কেন নিতে চাচ্ছেন ?
-আপনি এতো চিন্তা কেন করছেন ? আপনি আমাকে চেনেন না এমন কি নাম পর্যন্ত জানেন না । তাহলে …?

আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না । আসলেই তো মেয়েটাকে নিয়ে এতো চিন্তার কোন কারন নেই । মেয়েটাকে আমি চিনি না । এমন কি নামটাও জানি না । আমি বললাম
-কি নাম আপনার ?
-জেনে কি করবেন ?
-জেনে রাখি । আমি অপু । অপু হাসান ।
মেয়েটি বলল
-আমার মিশু । আনিকা আবেদ মিশু ।
-নাইস টু মিশু ।

মিশু আর ওর গাইড আরও কিছুটা সময় রয়ে গেল কেউক্রাডাং এর উপর । আমাদের সবার গাইড আমাদের তাগাদা দিতে লাগলো জাদিপাইয়ের দিকে যাওয়ার জন্য । কারন এখনই রওনা না দিলে দিনের আলো থাকতে থাকতে আর ফেরত্ আসা যাবে না । আমরা হাটতে লাগলাম ঝর্ণার দিকে ।

জাদিপাই ঝর্ণাটা দেখে সত্যি মনটা ভরে গেল । বিশাল গর্তের মত জায়গা গাছ পালাটা দিয়ে ভর্তি । প্রায় খাড়া নামতে হয় নিচে । তবে গাছ গাছালি থাকার জন্য খুব একটা সমস্যা হয় না । তবে একটা সমস্যা হচ্ছে এখন বর্ষা কাল । প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে । যদিও বগা লেক থেকে এই পর্যন্ত আসা অবদি এখনও বৃষ্টি হয় নি তবে গতকাল রাতে বৃষ্টি হয়েছে বেশ । আকাশে মেঘ ভর্তি । মাঝে মাঝে ডাক দিচ্ছে । মাটি বেশ পিচ্ছিল হয়ে আছে । তবুও সাবধানে নেমে পড়ালাম সবাই ।

ঝর্ণায় অনেক্ষন দাপাদাপির পর উঠে এলাম । কিন্তু সারাটা সময় মনের ভেতর মিশুর কথা ঘুরতে লাগলো । একটা মেয়ে কেবল ভ্রমন করার জন্য এতো কষ্ট করবে না একা একা । নিশ্চয়ই এর পেছনে অন্য কোন কারন আছে । থাকতে বাধ্য । অন্য কোন কারন না থেকে পারেই না । সেই অজানা কারনটা না জানতে পেরে মনের ভেতরে কিছুতেই শান্তি পেলাম না ।



দুই

মিশুকে আমি প্রথম দেখি বগা লেকে । গতকাল সন্ধ্যার দিকে । মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হতেই কটা দিন ছুটি নেওয়ার জন্যই হাজির হলাম বগা লেক । বন্ধুরা সবাই বিসিএস দেওয়ায় বিজি তাই কেউ এল না । আমি এলাম একা একাই ।
কোন প্লান প্রোগ্রাম করে আসি নি তাই তখন বগা লেকে এসে পৌছালাম তখনই সন্ধ্যা । আসার আগেই বগা লেক সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছিলাম । এখানে এই বগা লেকে নাকি কত রকমের জীব আছে যেগুলো সন্ধ্যার পরে উঠে আসে । তাই কেউ বগা লেকে নাকি সন্ধ্যার পর কেউ নামে না । এমনকি এখানে যারা বাস করে সেই উপজাতিরাও নাকি নামে না । সবই অবশ্য শোনা কথা !

আমি সন্ধ্যার পর ফ্রেশ হতে লেকের পাড়ে চলে এলাম । মনের ভেতরে একটা আশাও যদি কোন কিছু দেখা যায় । দুই কি তিন মিনিট পরেই আমি পাড়ের কাছে একটা পানির আলোড়ন টের পেলাম । সাথে সাথেই বুকের ভেতর একটা ধাক্কার মত খেলাম । সত্যিই কি তাহলে কিছু দেখতে যাচ্ছি ? চারিপাশে অন্ধকার হয়ে গেলেও ততক্ষনে চাঁদ উঠে পরেছে । মেঘাছন্ন আকাশের সেই চাঁদের আলো যেন চারিদিকে আরও ভৌতিক মনে হল ।
আমি যখন ভয়ংকর কিছু দেখার জন্য বুক দুরুদুরু নিয়ে অপেক্ষা করছি ঠিক তখনই একটা কালো মাথা পানি থেকে মাথা তুললো । আমি ভয়ংকর কোন মুখ দেখার অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু অত্যন্ত চমৎকার একটা মুখ দেখতে পেলাম । ঘন কালো চুল বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে । মেয়েটির পরনে কার গেঞ্জি জাতীয় কিছু পোশাক যা হাফ হাতা । প্যান্টটাও সম্ভব হাফ প্যান্ট । মেয়েটির ফর্সা দুই হাত আর পায়ের অনেক খানিই দেখা যাচ্ছে । আমি চিৎকার দিতে ভুলে গেলাম । কেবল অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটি আমার সামনে পাড়ে উঠেই পাড় থেকে একটা তোয়ালে তুলে নিয়ে চুল মুছতে লাগলো ।
আমার চোখে তখনও বিশ্ময় লেগে আছে । মেয়েটি আরও কিছুক্ষন চুল মুছে আমার দিকে তাকালো । চোখে একটা কৌতুক নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো । তারপর চলে গেল । তখনও আমার বিশ্বাস করতে খানিকটা কষ্টই হচ্ছে যে আমি আসলেই কোন অশরীরি দেখি নি, একজন মানুষই দেখেছি । বলা চলে চারিদিকের আবহাওয়া আর পরিবেশটাই এমন ছিল যে আমি মনেই করতে পারি নি যে এই সময়ে কেউ এখানে গোসল করতে পারে ।



তিন


তখন মেয়েটার নাম জানতাম না কিন্তু এখন জানি । সাথে সাথে মেয়েটার জন্য বেশ চিন্তা লাগছে যে মেয়েটা এতোটা পথ কেমন করে একা একা যাবে । যখন জাদিপাই থেকে ব্যক করছিল পথে আবারও দেখা হল মিশুর সাথে । গাইডের পেছনে চুপচাপ হাটছে । ক্রশ করার সময় আমাকে দেখে একটু হাসলো । আমিও হাসলাম কেবল । তখন আমার কেবল মনে হচ্ছিলো যে মেয়েটা নিশ্চয়ই কোন বিপদে পড়বে । আরও কিছুটা পথ এগিয়ে গেলাম তবুও মনে শান্তি পাচ্ছিলাম না কিছুতেই ।
ঠিক তখনই একটা পাগলের মত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম । কপালে যা লেখা থাকে থাকুক । আমার গাইডকে ডেকে দলের অন্যদের সাথে চলে যেতে বললাম । তার পাওনাও মিটিয়ে দিলাম । প্রথমে একটু গাইগুই করলেও খুব বেশি অমত করলো না । আমি সবাইকে একা রেখে আবার ফিরে চললাম । ততক্ষন মিশুরা চোখের আড়ালে গেছে ।

যখন আবার জাদিপাই ঝর্ণার কাছে গিয়ে হাজির হলাম তখন দেখি মিশুর গাইড জাদিপাই ঝর্ণার প্রবেশ মুখে বসে আছে । ভাব দেখে মনে হল যেন ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে । মিশুর কথা জানতে চাইলেই গাইড বলল যে মিশু একা একা নিচে গেছে । আর ওকে বলেছে এখানে একা একা অপেক্ষা করতে ।

আমি আর কিছু না ভেবে নিচে নামতে শুরু করলাম । তখনও জানি না মিশু ব্যাপারটা কিভাবে নেবে ! রাগ করতে পারে আবার নাও পারে । অবশ্য যে মেয়ে একা একা এতোদুর আসার সাহস রাখতে পারে সেই মেয়ের ক্ষেত্রে সম্ভবত আগে থেকে কিছু ধারণা করা ঠিক না । যে কোন কিছুই হতে পারে । আমি আস্তে আস্তে নামতে শুরু করলাম জাদিপাইয়ের দিকে । যতই নিচে নামছি ততই ঝর্ণার আওয়াজ বাড়তে লাগলো । একটু আগেই এখান ছিলাম । তাই পথ চিনতে অসুবিধা হল না । কোথায় কিভাবে নামতে হবে এটাও খুব বেশি চিন্তার কারন নয় ! একেবারে শেষ মুহুর্তে আমাকে থেমে যেতে হল ।

আমি মিশুকে দেখতে পেলাম কিন্তু এভাবে দেখতে পাবো ঠিক আশা করি নি । গাইডকে কেন উপরেই রেখে এসেছে মিশু কিছুটা বুঝতে পারলাম । আমি নিজের মধ্যে খানিকটা দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেলাম । মিশু ঝর্ণার পানি যেখানে পড়ছে তার থেকে একটু দুরে বসে আছে আমার দিকে পিঠ করে । তবে পানির ধারা এতো বেশি যে মিশু এরই ভেতর ভিজে গেছে । অবশ্য এই প্রবল পানির ধারাতে মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন সে ভিজে যেতে বাধ্য !

আমার দ্বিধার কারন হচ্ছে মিশুর শরীরে বিন্দু মাত্র কাপড় নেই । ও নিশ্চিত ভাবে জানে কেউ আসবে না । তাই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবেই মিশু প্রাকৃতিক গোসল করছে । তবে এমন ভাবে বসে আছে সেখান থেকে ওর শরীরটা বেশ ভাল করেই কাভার করছে তবে ওর পুরো পিঠটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে । এবং ওর পুরো পিঠ জুড়ে একটা অদ্ভুদ নীল রংয়ের ঈগল পাখির উল্কি আঁকা । ঈগলের চোখ দুটো লাল টকটকে । সেটা সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে আছে । কয়েক মুহুর্ত উল্কির ঈগলটার দিকে তাকিয়ে থাকতেই আমার কেন জানি মনে হল ওটা জীবন্ত । এতোটাই জীবন্ত ভাবে আঁকা যে আমি কিছুতেই ঈগলটার থেকে নিজের চোখ সরাতে পারছি না । ঠিক তখনই আমার কেন জানি মনে হল মিশু এমন ভাবে বসেছে যেন আমি ঈগলটাকে পরিস্কার দেখতে পারি । এবং ও হয়তো আমাক এখানে আশা করছিল । হয়তো আমি আসতে পারি ! কিন্তু কিভাবে ?
আমার সন্দেহটা সন্দেহ থেকে বাস্তবে পরিনত হল যখন মিশু নিজের চুলে পানি দিতে দিতেই বলে উঠলো
-লুকিয়ে দেখার দরকার নেই । সামনে এসো ।

আমি আড়াল থেকে একেবারে সামনে চলে আসলাম । এর আগে আমি টিভি স্ক্রিনে অনেক বিবস্ত্র মেয়েকে দেখেছি । মুভি কিংবা বয়স সন্ধিকারে লুকিয়ে যখন পর্ণ দেখতাম তখন । কিন্তু বাস্তবে সরাসরি এমন কোন মেয়েকে এই প্রথম । নিজের কাছে কেমন অদ্ভুদ একটা অনুভুতি লাগছিল । মিশু আমার দিকে মুখ ফিরলো । ওর ভেতর কোন প্রকার লজ্জার কোন রেশ দেখলাম না । ওখানে একটা দুষ্টামীর একটা আভা দেখলাম মাত্র । কেবল নিজের চুলটা এমন ভাবে সামনে এনে রাখা যেটা কোন রকমে ওর বুকটাকে ঢেকে রেখেছে । মিশু বলল
-কি দেখছো ?
আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । যাই বলি না কেন মিশু কি সেটা বিশ্বাস করবে ? কোন মেয়ের নগ্ন শরীরের সামনে রেখে যদি কোন ছেলে বলে সে সেটা দেখছে না তাহলে কোন মেয়েই সেটা বিশ্বাস করবে না ! আবার সরাসরি বলাও যায় না তোমাকে দেখছিলাম ! তাই চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে হল ! মিশু আবার বলল
-বগা লেকে তোমাকে দেখেছিলাম অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা টা । এখানেও তাকিয়ে আছো । তবে …
-তবে ?
আমি একটু কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ।
-তবে তোমার দৃষ্টিটাতে ললুপতা নেই, এটা ভাল লাগছে । বিশ্ময় আছে ।

মিশু আরও কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর বলল
-তা গাইডকে কি ছেড়ে দিয়েছো ?
-হুম ।
-জানতাম তাই দিবে । আমার সাথে যেতে চাও ?
-হুম ।
-আমার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে বুঝি ?
-হু !

এই কথা শুনে মিশু হেসে উঠলো । পুরো জায়গা জুড়ে একটানা ঝর্নার পানি পরার একটা টানা শো শো আওয়াজ ছাড়া আর কোন আওয়াজ ছিল না । মিশুর হাসির আওয়াজ সেই আওয়াজের সাথে মিশে অদ্ভুদ প্রতিধ্বনি হয়ে লাগলো চারিপাশে ! হাসি থামিয়ে মিশু বলল
-আরেকবার ভেবে দেখ কিন্তু । সামনে অনেক কিছু হতে পারে যেটা হয়তো তোমার মাথায় নাও ঢুকতে পারে । বিপদও হতে পারে ।
-হোক, তবুও যাবো ।

মিশু এমন একটা হাসি দিলো যেন ও জানতোই এমন কিছু আমি বলবো ।
-আচ্ছা তোমার ইচ্ছা । তবে আমি যা বলবো সেটা শুনতে হবে কিন্তু । মনে থাকবে তো ?
-চেষ্টা করবো ।
-বুঝলাম । এখন ঘুরে দাড়াও । তার আগে ঐ ব্যাগটা একটু এনে দাও ।

আমি ব্যাগ এনে দিয়ে ঘুরে দাড়ালাম । ও শরীর মুছে কাপড় পড়তে লাগলো । আমি যখন আবার ওর দিকে ফিরে তাকালাম ততক্ষনে ও কাপড় পড়ে তৈরি হয়েছে । তবে আগে তো বেশ ভাল কাপড় পড়ে ছিল কিন্তু এখন ওর পোষাক দেখে একটু ভড়কেই গেলাম । খুব বেশি আটসাট একটা গেঞ্জি পরেছ সাথে থ্রি কোয়ারটার ল্যাগিংস । থ্রি কোয়াটার না বলে হাফ ল্যাগিংস বলাই ভাল । এই পোষাক পরে ও বাইরে বের হবে কিভাবে ? অবশ্য যে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে গোসল করতে পারে সম্পর্ণ অপরিচিত একজনের সামনে আসতে পারে তার পক্ষে সবই সম্ভব ।
আমার মনের কথাই বুঝতে পেরে মিশু বলল
-সমস্যা নেই আমরা যে পথ দিয়ে যাবো সেখানে মানুষ জন থাকবে না । আর আদিবাসীরা তোমাদের ছেলেদের মত মেয়েদের পোশাক নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করে না ।
খোঁচাটা মারলো তবে আমি কিছু বললাম না । ও ব্যাগ থেকে রেইন কোর্ট বের করতে করতে বলল
-রেইন কোর্ট পরে নাও । খুব জলদিই বৃষ্টি নামবে ।
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই যে কোন সময় বৃদ্ধি নামবে । ওর কথা মত তাই পরে নিলাম । ঝর্ণা থেকে উপরে উঠতে উঠতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল । মিশুর গাইড দেখি আমাদের দেখাদেখি তৈরি হয়ে নিয়েছে ।



চার

আমরা হাটা দিলাম বৃষ্টির ভিতরে । আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে একটা মেয়ে যার পিঠে কিনা একটা অদ্ভুদ নীল ঈগলের উল্কি আঁকা, যার নাম ছাড়া আমি তেমন কিছুই জানি না তার সাথে অজানা কোন পথে যাত্রা শুরু করেছি । ব্যপার টা আসলেই আমার কাছে অন্য রকম মনে হতে লাগলো ! সাথে সাথে নিজের মনের কাছে একটা ভাল লাগার অনুভুতিও হতে লাগলো !

আমরা যতই এগুতে লাগলাম দেখলাম মিশু যেন আস্তে আস্তে কথা কমিয়ে দিচ্ছে । ওর চেহারা দিকে তাকিয়েই দেখি কিছু একটা যেন ওকে আস্তে আস্তে চিন্তিত করে তুলছে । আমার কাছে মনে হল সম্ভবত একটু বেশি পরিশ্রম করছে বলে হয়তো এমন হচ্ছে । তাই কিছু আর জানতে চাইলাম না ! একটা সময় মিশু আমার কাছ থেকে একটু পিছিয়ে পরেছিল আমি গাইডের কাছে জানতে চাইলাম যে সামনে কোথায় থামবো আমরা ! জিরমিন পাড়া বলে নাকি সামনে একটা পাড়া আছে । সেখানে আজকের রাতটা থাকতে হবে ! এতো বৃষ্টির ভেতরে আজককে আর সামনে যাওয়া যাবে না !

আবার যখন মিশুর কাছে এলাম তখন আসলেই মনে হল ওর চেহারায় যেন একটা অস্বস্থির ছাপ রয়েছে । মিশু আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কিছু না !
-কি কিছু না ?
-তুমি যা চিন্তা করছো সেটা না !
-তাহলে ?
-বাদ দাও ! আমি তোমার হাত ধরে হাটবো একটু ?
-হ্যা ! হাটো ! কিন্তু তোমাকে কেমন যেন ঠিক মনে হচ্ছে না !
-জোঁকে ধরেছে !
-কি !
-হুম ! এই জন্য !
-কোথাও থামি ? দেখি !
-না ! চল একেবারে সমানে গিয়ে থামবো !

আরও ঘন্টা খানেক হাটার পর সেই জিরকিন পাড়া পাওয়া গেল । গাইড গেল কথা বলার জন্য ! আমি মিশুকে নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম । তখনও তীব্র ভাবে বৃষ্টি পড়ছে ।
বলা চলে ঘর পাওয়া গেল খুব সহজেই । এরকম প্রত্যেকটা পাড়াতেই নাকি ঘর ভাড়া দেওয়ার সিস্টেম আছে । আমরা মিশুকে নিয়ে ঘরে উঠে গেলাম । রেইন কোর্ট খুলে দেখি আমার দু জায়গায় জোঁক ধরেছে । কিন্তু মিশুর অবস্থা একেবারে ভয়াভয় । কেবল দুই পায়েই সাত জায়গায় জোঁক লেগেছে । ওগুলো টেনে আর লবন দিয়ে তুলতেই সেখান থেকে রক্ত বের হতে শুরু হল । কিছুতেই যেন সেটা থামতে চায় না । ওর চেহারা দেখে মনে হল ও বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে ।
ওকে নিয়ে ফিরে যাবো কি না ভাবছি কিংবা ও ফিরে যেতে রাজি হবে কি না বুঝতে পারছি না । ক্ষতস্থান গুলো পরিস্কার করে ব্যান্জেজ বেঁধে দিলাম ।

এদিকে গাইড রান্না বান্না শুরু করে দিল ! রান্না হতে আরও কিছু সময় কেটে গেল ! ততক্ষনে ও ঘুমিয়ে পড়েছে । রান্না শেষে ওকে কিছু খাওয়ানো গেল না । যতই বলার চেষ্টা করলাম যে বেশ খানিকটা রক্ত বেরিয়ে গেছে কিছু না খেলে শরীরে শক্তি আসবে না কিন্তু কে শোনে কার কথা । কয়েক ঢোক পানি খেল কেবল । ওকে কাছে নিয়েই শুয়ে পরলাম কারন আমার নিজের শরীরও বেশ খানিকটা ক্লান্ত ছিল ।

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি মিশু একেবারে আমার শরীরের সাথে লেগে শুয়ে আছে । একটু একটু কাঁপছে আর বিড়বিড় করে কি যেন বলছে । কপালে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর আছে কি না । না জ্বর নেই । খানিকক্ষন মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করলাম কিন্তু খুব একটা লাভ হল না ! কিছুই বুঝতে পারলাম না । তবে জ্বরের ঘোরে মানুষ যেমন প্রলাপ করে ঠিক তেমন প্রোলাপ মনে হল । অথচ ওর জ্বর নেই !



পাঁচ

পরদিন সকালে আবারও আমাদের যাত্রা শুরু । এবার সারাটা পথ মিশু আমার হাত ধরেই হাটলো কিন্তু হাটলো বেশ আস্তে আস্তে । বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ি পথে ও বারবার পিছলে যাচ্ছিলো । আমার হাত না ধরলে হয়তো বেশ কয়েকবার আছাড় খেত তবুও দুবার বেশ ভাল মতই পড়ে গেল । আমাদের যেখানে গিয়ে বিরতি নেওয়ার কথা ছিল তার বেশ আগেই একটা জায়গায় বিরতি নিতে হল । বুঝলাম মিশুকে নিয়ে এভাবে আর এগুনো সম্ভব না । আরেকটা উপজাতি পাড়ায় থাকার ব্যবস্থা হল ।

এবার মিশুর অবস্থা আরও বেশি খারাপ । আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না যে কেবল মিশুকেই কেন এতো জোঁক ধরছে । রুমে ঢুকে মিশু শরীরের সমস্ত কাপড় খুলে ফেলল । আমি তাকিয়ে প্রায় শিউরে উঠলাম । কত জায়গায় যে জোঁক লেগে আছে সেটা গুনে শেষ করা যাবে না । তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে নিয়ে আবার লবন নিয়ে জোঁক ছাড়াতে বসলাম । মিশু জানলার পাশে বসে দুরে পাহারের দিকে তাকিয়ে রইলো । আমার দিকে তাকালো না একবারও । লজ্জার কারনে নয়, ও যে কষ্ট পাচ্ছে সেটা ও আমাকে দেখাতে চায় না ।
ওর শরীর থেকে আস্তে আস্তে টেনে আমি যখন জোঁক গুলো ছাড়াচ্ছিলাম আমার নিজের কাছেই যেন কেমন মনে হচ্ছিল । এরকম কোন দিন হবে স্বপ্নেও ভাবি নি । যখন পিঠের দিকে ফিরলাম দেখি সেখানে একটা জোঁকও নেই । এই ব্যাপারটা একটু অন্য রকম লাগলো । যেখানে মেয়েটার সারা শরীরে জোঁক লেগে আছে সেখানে পিঠে একটা জোঁকও নেই কেন ? অদ্ভুদ সেই উল্কির দিকে চোখ পড়তেই নিজের কাছেই কেমন করে উঠলো ।

সব কাজ শেষ হলে মিশুকে ঐ অবস্থায় বিছানায় শুইয়ে দিলাম । চাদর দিয়ে ঢেকে দিলাম পুরো শরীরটা । বাইরে বের হয়ে দেখি আমাদের গাইড রান্নার আয়োজন করেফেলেছে । বাজার সদাই সব উপজাতীদের কাছেই পাওয়া যায় ।
এবারও মিশু কিচ্ছু খেলো না । ওকে কিছুতেই যখন খাওয়াতে পারলাম না তখন বললাম
-তুমি না খেলে শক্তি পাবে কিভাবে ? আর না শক্তি পেলে যে কাজটা করতে এসেছো সেটা কিভাবে করবে ?
মিশু চোখ মেলে চাইলো । মৃদু স্বরে বলল
-তুমি কেন এতো চিন্তা করছো ?
-চিন্তা করছি কারন …
বলতে পারলাম না । বললাম
-জানি না কেন করছি ।
দুর্বল ভাবে মিশু হাসলো । তারপর বলল
-আচ্ছা আজ রাতের পর সব ঠিক হয়ে যাবে । তুমি চিন্তা কর না !

আজ রাতের পরেই সব ঠিক হয়ে যাবে মানে ঠিক বুঝলাম না । ও আসলে কি বলতে চাইলো সেটাও মাথার ভেতরে ঢুকলো না ! মিশু ততক্ষনে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে । ওকে ডেকে আর কিছু জানতে চাইলাম না !

অন্যান্য গ্রামের মতই এই পাড়াতেও খুব জলদিই রাত নামে । তার উপর এক টানা বর্ষনের ফলে রাত যেন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই নেমে পড়লো । আর কিছু না করার থাকায় আমিও আরেকটু খেয়ে শুয়ে পড়লাম ।

মিশু তখনও একই ভাবেই শুয়ে আছে । আমি ওর পাশে শুতেই ও যেন আমার দিকে আরও একটু এগিয়ে এল । স্বল্প সোলার আলোতেই পরিস্কার ওর মুখ টা আমি পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি । কি মনে হল আমি ওর কপালে ছোট্ট একটা চুমু খেলাম । কোন কারন নেই ও হয়তো আমার উপর রেখে যেতে পারে তবুও আমার মনে হল মেয়েটা এই দুদিনে কেমন যেন আমার উপর নির্ভর হয়ে গেছে । সাথে আমিও মেয়েটার উপর একটু যেন একটু বেশিই সম্পৃক্ত হয়ে পরেছি ।

মিশু চোখ না খুলেই বলল
-আই এম হ্যাপি যে তুমি এখানে আছো !
-আমিও ! আমিও হ্যাপি যে তুমি হ্যাপি !
-আর কিছু সময় অপেক্ষা কর !
-কিসের জন্য ?
-যা তুমি চাও ?
একটু অবাক হলাম ! বললাম
-আমি কি চাই ?
-কেন ? তুমি জানো না ?
-আমি তো অনেক কিছুই চাই । তুমি কোন চাওয়ার কথা বলছো ?
-প্রতিবার আমাকে দেখার পর তোমার মনে যে কথাটা সবার আগে আসে !

আমি মিশুর কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না আসলে মিশু কি বলতে চাইছে । ওর ঠোটে কেমন একটা হাসি দেখতে পেলাম । অদ্ভুদ হাসিটা আমাকে একটু চিন্তায় ফেলে দিল । মেয়েটাকে আমি ঠিক মত বুঝতে পারছি না । মেয়েটা কি চাচ্ছে কিংবা কি করতে যাচ্ছে । আর মেয়েটার পিঠের ঈগল ট্যাটুর অর্থই বা কি ! কিচ্ছুই না !

কখন এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছি আমি বলতে পারবো না । গত দিনের মত আমার রাতে আবারও ঘুম ভেঙ্গে গেল । এবার ঘুম ভেঙ্গেছে কারন মিশু নড়াচড়া করেছে । আমার গায়ের সাথে গা লাগিয়ে শুয়ে ছিল বিধায় ওর একটু নড়াচড়াতেই আমি জেগে উঠলাম ।
ঘুম ভাঙ্গে প্রথমেই কিছু দেখতে পেলাম না । পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে আছে । বাইরে থেকে তখনই প্রচন্ড বৃষ্টি আর মেঘ ডাকার আওয়াজ আসছে । আমি প্রথমে কিছুই দেখতে পেলাম না ! কিছুক্ষন পরেই অন্ধকার সয়ে এল চোখে তখনই দেখতে পেলাম ঘরের দরজাটা খুলে গেল । বাইরের অন্ধকার ঘরের অন্ধকার থেকে একটু হালকা তাই মিশুকে চিন্তে কষ্ট হল না ।

মিশুর কেমন টালতে টালতে বৃষ্টির ভেতরে নেমে পড়লো যেভাবে শুয়ে ছিল ঠিক সেভাবেই । ওর পেছনে ঈগলের উল্কি না আমি পরিস্কার দেখতে পেলাম বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে । কিছুক্ষন পরপরই বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে তাই মিশুর নগ্ন শরীরটা আমার সামনে ভেসে আসতে লাগলো । রেইন কোর্ট পরে আমি ওর পিছু নিলাম ।

আজকে দুপুরে আমরা যে পথ দিয়ে হেটে এসেছিলাম ঠিক সেই দিকে মিশু হাটতে লাগলো সম্পর্ন বিবস্ত্র হয়ে । চারিদিকে তুমুল বৃষ্টিতে আমি এগিয়ে চলেছি ওর পেছন পেছন । ওর হাটার ধরন দেখেই মনে হচ্ছিলো ওর হয় তো হুস নেই ও কোন দিকে যাচ্ছে ! হাটতে হাটতেই মিশু হঠাৎ করেই ডান দিকে মোড় নিলো । এদিক টাতে কোন পায়ে চলা পথ নেই । কেবল ঘন গাছ পালা । একটু পরেই নিচের খাদ । তবে খাদ টা খুব বেশি খাড়া নয় । একটু নিচে নেমে গেছে । সেখান থেকে আবার নতুন আরেক টা টিলার শুরু ।

সেখানেও বেশ ঘন গাছ গাছালী । মিশু তখনও সামনের দিকে নেমে চলেছে । ওর হাটার ধরন টা কোন ভাবেই সুস্থ মানুষের মত নয় । হঠাৎ করেই মিশু সেই ঢালুর কাছে গিয়ে বসে পড়লো । আমি দাড়িয়ে পড়লাম । মিশু এক ভাবে বসেই রইলো । পেছন থেকে মনে কিছু যেন পড়ছে ও । আস্তে আস্তে সেই পড়ার আওয়াজ টা যেন বাড়ছে । সাথে সাথে বৃষ্টি আর মেঘের ডাকও যেন বেড়েই চলেছে ।

হঠাৎই মিশু উপরের দিকে হাত তুলে কি যেন জোড়ে জোড়ে পড়তে শুরু করলো । কয়েক মুহুর্ত ঠিক তার পরেই একটা অদ্ভুদ ব্যাপার দেখলাম ! খুব জোরে মেঘ ডেকে উঠলো ঠিক তারপর পরই বিদ্যুৎ চমকে উঠলো, তবে এই বিদ্যুৎ চমকানোর আলোটা যেন অন্য সাধারন বিদ্যুৎ চমকানোর থেকে একটু বেশি উজ্জল । ঠিক তার সাথে সাথেই একটা আলো দেখতে পেলাম একটা মিশুকে ঘিরে ঘুরছে । আস্তে আস্তে সেটা আকারে বড় হতে হতে বেশ খানিকটা বড় হয়ে গেল ! আমি আস্তে আস্তে আলোর সেইপ টা বুঝতে পারলাম । ঠিক যেন একটা ঈগলের মত ! পুরো ঈগলের মত আলোটা বেশ খানিকটা সময় ধরে মিশুর চারিপাশে ঘুরতে লারলো । তারপর হঠাৎ করে আবার জোরে একটা মেঘ ডেকে উঠলো এবং তারপর পরই সেই আলোটাও গায়েব হয়ে গেল ।

মিশুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে একটু আগে বসে ছিল এখন সে সেখানে পড়ে আছে । আমি আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করলাম । তারপর মিশুর কাছে এগিয়ে গেলাম । মেয়েটা একেবারে চেতনা হারিয়ে পরে আছে । ওকে কোলে তুলে নিয়ে এগিয়ে ঘরের দিকে ।
ওর শরীর মুছে দিয়ে আবারও ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম ।



ছয়

সকাল বেলা মনে হয় আমার জন্য বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙ্গলো । আমি চোখ দেখি মিশু আমার আগেই উঠে পড়েছে । আমার পাশে উঠে বসে আছে । আমার চোখ মেলা দেখেই বলল
-গুড মর্নিং !
-গুড মর্নিং !
-এতো বেলা করে ঘুমালে চলবে ? আজকে অনেক কাজ বাকি । অনেক দুর যেতে হবে আজকে !

মিশুর দিকে তাকিয়ে মনে হল গত দিনের ক্লান্তি বলে ওর শরীরে কিছু নেই । একেবারে ঝড়ঝড়ে আর চটপটে । ঠিক যেমন টা ওকে প্রথম দিন দেখেছিলাম ।
-কি মশাই ? কি দেখছেন ওমন করে ?
-আমার তো কাজই কেবল তোমাকে দেখা ! আমার চোখের সামনে এমন করে থাকলে চোখ অন্য দিকে কিভাবে যাবে ?
-হুম ! দুষ্টামী !

এই বলতে বলতে আমার চোখ আবার ওর পায়ের দিকে গেল । গত দু দিনে জোঁকের কামপড়ে ওর পায়ে বেশ কিছু দাগ হয়ে গেছিল । আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি আজকে তার কিছু নেই । মানুষের ক্ষত না হয় সেরে যেতে পারে দ্রুত তাই বলে এক রাতের মাথায় দাগও গায়েব হয়ে যাবে ? এটা কেমন করে হল ?
তবে কি গত রাতেই সেই আলোর কারসাজি ?

অবশ্য মিশু আমাকে সেই ব্যাপারে কিছু বলল না ! আমিও গত রাতের ব্যাপারে কিছু জানতেও চাইলাম না ! আমি আগেই বুঝেছিলাম যে মেয়েটার ভেতরে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে । তবে নীল রংয়ের ঈগলটা আমাকে বেশ কৌতুলী কোরে তুলছে । সাথে সাথে সেই আলোটাও । দেখা যাক সেটা কোন দিকে যায় !

আমাদের জার্নি আবারও শুরু হল । সেই বৃষ্টি ভেতরে । টানা দুই দিন আমরা এক টানা চললাম । কোথাও প্রায় না থেমেই । সারা দিন চলি দিনের শেষে থামি কোন গ্রামে । রাত পার করে আবারও সকালে জার্নি ! এবার আমি ক্লান্ত হয়ে গেলাম । কিন্তু মিশু তখনও ফিট আছে । ঐ রাতের পরেই সম্ভবত কিছু একটা হয়েছে । ঐ ঈগলের আলোতে কিছু একটা ছিল । আরেক টা বিষয় লক্ষ্য করার মত এই দুদিনে আমরা খাবার খেলেও মিশু কেবল পানি বলতে গেলে আর কিছুই খাই নি । কিভাবে আছে কে জানে !

তাজিংডং পার হয়ে একটা ছোট্ট গ্রাম আছে । নাম টা জানতে চাই নি । কারন সেই এনার্জি আমার ভেতরে ছিল না । পৌছালাম বিকেলের কিছু আগে । আমি খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছি । মিশু আর গাইড কোথায় গিয়েছিল যেন । একটু পরেই মিশু ফিরে এল । ও আমার হাত ধরে বলল
-আজকে সময় এসেছে ।
-কিসের জন্য ?
-যেই জন্য আমি এসেছিলাম !
-মানে কি ? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না !
-তোমাকে বুঝতে হবে না ! কেবল এই টুকু বলি যে আজকে আমার মুক্তির দিন !
-কিসের থেকে ?
মিশু অনেক টা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর বলল
-আমার পিঠে তুমি একটা ঈগল দেখেছো না ?
-হুম !
-ওটা কিন্তু আমি আকাই নি ! কিংবা কেউ একে দেয় নি !
-মানে কি ? তাহলে ওটা কিভাবে এল ?
-তুমি বঝবে না ! কেবল জেনে রাখো ওটা জীবন্ত ! আমার ভেতরে রয়েছে !
-তুমি কি বলছো এসব ? মাথা ঠিক আছে তো ?
-তোমার এতো কিছু বুঝতে হবে না ! ঠিক আছে । চিন্তা বাদ দাও ! আর তোমাকে যা বলি তাই করবে আজকে !

তারপর মিশু আমাকে আস্তে আস্তে বলতে লাগলো ও কি করতে যাচ্ছে ! আমি কেবল চোখ বন্ধ করে শুনতে লাগলাম ! অবিশ্বাস ভরা চোখ নিয়ে । ওর বলা শেষ হলে মিশু বলল
-এখন বুঝতে পারছো তো তোমাকে কেন আমি সঙ্গে এনেছি ? তুমি ভার্জিন না ?
-হুম !
-আমার ঠিক এমনই একজনই দরকার ছিল ঐ অপদেবতার কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য !
-তুমি যা বলছি আমি মানতে পারছি না !
-তোমাকে মানতে হবে না ! ঠিক আছে । কেবল তুমি তোমার কাজ করবে ? তুমি চাও না ?

আমি দ্বিধায় পরে গেলাম ! মিশু যা বলছে তা যে কোন ছেলের পক্ষে প্রত্যাক্ষান করা করা প্রায় অসম্ভব ! বিশেষ করে যদি মিশুর মত একজনের সাথে যদি কাজ করতে বলা হয় ! আমি বললাম
-কিন্তু ?
-কোন কিন্তু না ! দেখো তুমি যদি রাজি নাও হও তাহলেও কিন্তু আমাকে কাজ টা করতে হবে ! ঠিক আছে ! আমার আর কোন উপায় নেই ! আমি অন্য কারো ভেইজ হতে হতে ক্লান্ত হয়ে পরেছি !
-ঠিক আছে !
-এই তো লক্ষি ছেলে ।
এই কথা বলে মিশু সত্যি সত্যি আমার ঠোটে চুম খেলো ! বেশ গভীর ভাবেই ! তারপর বলল
-যদি বেঁচে থাকি তাকি তাহলে আবার আমাদের দেখা হবে !



সাত

মিশুর কথা তবুও আমর ঠি বিশ্বাস হচ্ছিলো না ! প্রাচীন কালে হোরাটোইস নামের অপদেবতা ছিল । যেটার প্রতীক ছিল এই নীল ঈগল ! কোন ভাবে সেই অপদেবতা আবার জেগে উঠেছে । এবং সেটা মিশুর শরীরকে একটা বাহক/ভেইজ হিসাবে ব্যবহার করছে । অবশ্য এর পেছনে মিশু নিজেও কিছুটা দায়ী । ও নিজেই নাকি সেটাকে নিজের শরীরে প্রবেশের অনুমুতি দিয়েছে । এখন আস্তে আস্তে সেটা মিশুর শরীর কে ব্যবহার করছে নিজের কাজে ! তবে আশার কথা হচ্ছে সেটাকে ও দমিয়ে রাখতে পারছে । কিন্তু দিন দিন নাকি মিশুর নিজের ভেতরের নিজেকে হারিয়ে ফেলছে । তার বদলে সেখানে সেই হোরাটোইসই নিজের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিচ্ছে । একবার যদি সে নিজেকে নিয়ন্ত্রন নিয়ে ফেলে তাহলে হয়তো আর কোন দিন মিশুর মুক্তি হবে না ! এখন নিজেকে মুক্ত করার জন্যই মিশুর এখানে আসা !

এখানে না কি ডাবল ফলস নামে একটা জায়গা আছে । দুই টা ঝর্ণা এক সাথে পরে । এখাকার আরও একটা জায়গা আছে ঠিক এর পাশেই ! বছরের প্রায়ই নাকি সেখানে আকাশ থেকে বাজ পরে । সেখানের সব গাছ গাছালী নাকি পুরে ছাই হয়ে আছে । ঠিক গোল হয়ে বেশ কিছু জায়গা পুরে গেছে । কোন গাছ সেখানে জন্মায় না ! এবং অন্য কোন জায়গায় নাকি বাজ পরে না । কেবল সেই জায়গার ভেতরেই পরে ! উপজাতিরাও সেই জায়গা টা এড়িয়ে চলে । সেখানেই যাবে ও ।

সেই স্থানে এই প্রাচীন অপদেবতা হোরাটোইসকে একবার নিয়ে যেতে পারলে সে সেখান থেকে আর বের হতে পারবে না । এবং সেখানে নিয়ে গিয়েই মিশুর শরীর থেকে সেই হোরাটোইসকে বের করতে হবে ! যেটা করার জন্য মিশুকে কোন ভার্জিন ছেলের সাথে মিলন করতে হবে তাহলেই নাকি অপদেবতা তার শরীর থেকে বের হয়ে আসবে আর কোন দিন তার শরীরে ঢুকতে পারবে না !

আমার মাথায় এসব কিছুই ঢুকলো না ! এটাও কি সম্ভব ? কেব মনে হল কোন পৌরানিকক মুভি দেখছি একটু আগে মিশু আমাকে কোন রূপকথার গল্প শুনিয়ে গেল !



আট

আমরা রাত হলেই রওনা দিলাম । জায়গা টা নাকি আরও ভেতরে । কিন্তু যতই এগুচ্ছি ততই যেন যেন বৃষ্টি আর বাতাসের জোর বাড়তে লাগলো । মিশু কেবল আমার হাত ধরে বলল
-হোরাটোইস আমাদের যেতে বাধা দিচ্ছে । তুমি আমার হাত ধরে রাখো ! নয়তো কিন্তু ও তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে !
-ও তো তোমার ভেতরে আছে ! তাহলে ?
-আমার ভেতরে থাকলেও পুরো পৃথিবী জুরেই ওর চলাচল । আসলে আমি হচ্ছি প্রাণ বিন্দু ! নিয়ন্ত্রন কক্ষ !

আসলে কিছু একটা অনুভব করতে পারছিলাম আমি ! কিন্তু কিছু করার সাহস পাচ্ছিলাম না । আমাদের ঠিক কাছেই দু দুবার বাজ পড়লো ! মিশু একেবারে কাছেই । মিশু আমাকে অভয় দিয়ে বলল
-ভয় পেও না ! আমি তোমার সাথে আছি ! ও কিছু করতে পারবে না ! কারন আমার কিছু হলে ও নিজেই শেষ হয়ে যাবে !

নির্দিষ্ট জায়গায় এসে আসলেও আমার বুকে ভয় ধরে গেল । জায়গাটাতে মৃত্যু , মৃত্যু একটা গন্ধ আছে । কিছু একটা অশুভ ব্যাপার । মিশু আমার দিকে দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি তৈরি তো !
-হ্যা !
-ভয় পেও না ! কেবল একটা জিনিস লক্ষ্য রাখবে চুরান্ত মুহুর্ত পরেই হোরাটোইস আমার ভেতর থেকে বের হয়ে যাবে । আর বের হয়েই ও এই জায়গা টাতে আটকা পড়বে ! সেই সময়ে তোমাকে কেবল এখান থেকে বের হয়ে যেতে হবে ! ঠিক আছে ? কোন ভাবেই পেছন ফিরে তাকাবে না ! এর ভেতরে থাকবে না !
-আর তুমি ?
-আমার জন্য কোন ভাবেই অপেক্ষা করবে না !
-কিন্তু তোমার কি হবে ?
-সেটা নিয়ে তোমার এতো চিন্তা করতে হবে না ! ঠিক আছে ?

এই বলে মিশু আমাকে জোরে করে চুম খেল একটা ! তারপর ব্যাগ থেকে ওর দরকারি জিনিস বের করে সাজাতে লাগলো ! আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি ! কিছু মাথায় ঢুকছে না ! বাইরে কিছু একটা হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি !

মিশু বিড়বিড় করে কিছু পড়তে লাগলো ! মৌচাকে সকল মৌমাছি এক সাথে আওয়াজ করলে যে মন টা আওয়াজ হয় ঠিক সেরকম !

এরপরই আসল কাজ ! মিশি একটা গোল সার্কেল আকলো ! বৃষ্টিতে অবশ্য কিছু সময়ের ভেতরেই সেটা মুছে গেল তবুও মনে হল হয়তো কাজ হবে ! তার ভিতরে চারটা খুটি পুটলো ! বেশ গভীর ভাবেই ! এবার নিজের গায়ের সমস্ত কাপড় খুলে এক পাশে রাখলো । অন্যান্য দিন তো মিশু নিজেকে লুকানোর জন্য নিজের হাত কিংবা চুল ব্যবহার করতো । আজকে তেমন কিছুই করলো না ! বারবার বিদ্যুৎ চমকে ওর উন্মুক বক্ষ আমর চোখের সামনে আসছিল ! আমি কেবল সেদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম !

এবার মিশি বলল
-এইবার এই চার খুটির সাথে আমার চার হাত পা ভাল করে বাঁধ !
-কেন ?
-যা বলছি কর ! এটা তোমার নিজের সেফটির জন্য ! প্লিজ !

আমি তাই করলাম ! ও নিজে একটু টেনে টুনে দেখলো সেটা মজবুত হয়েছে নাকি ! মনে হল যে হয়েছে !
এই বার মিশু আামর দিকে তাকিয়ে বলল
-এবার ! তোমার কাজ !
আমি তখনই দ্বিধা করছি । কাজ টা করবো কি না !
-অপু ! দেরি কর না !

আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম ! আমি কোন দিন ভাবি নি আমার জীবনের এই অভিজ্ঞতা টা আমার সাথে এমন ভাবে হবে ! তারপর
পুরো টা সময় মিশু কেবল আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । আস্তে আস্তে ওর উত্তেজনা বুঝতে পারছিলাম । কিছুটা সময় পরেই ও নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো । কিন্তু হাতের বাধন বেশ শক্তই বলা চলে যে ও কিছুতেই ছুটতে পারছিল না । মুখ দিয়ে কিছু অন্য রকম আওয়াজ বের করতে লাগলো, যেটা কিছুতেই ওর আওয়াজ মনে হল না ! মিশু বলেছিলো আমি যেন আমি যেন অর আচরনে কিছুতেই বিচলিত না হই !

মিশুকে হঠাৎই দেখলাম চোখ বন্ধ করতে । আমি ওকে ডাক ডাক দেওয়ার চেষ্টা করলাম !
-মিশু ! মিশু !
-গো !
চোখ না খুলেই মিশু বলল কথা টা এবং বেশ ঠান্ডা স্বরেই ! খানিকটা মিশ্রিত স্বর । মনে হল দুজন যেন একসাথে কথাটা বলছে !
-কি !
-এখনই যাও ! যাও বলছি !
মিশু আমাকে ধমকের সুরে বলে উঠলো !

আমি আরও কিছুক্ষন ভাবলাম কি করবো কিন্তু হঠাৎ কি হল কেউ যেন আমাকে ধাক্কা দিল ! ধাক্কাটা এতঐ জোরে ছিল যেন আমি মিশুর শরীরের উপর থেকে প্রায় উড়ে গিয়ে পড়লাম ! বেশ দুরে গিয়েই পড়লাম ! কাঁদা মাটিতে একাকার হয়ে গেলাম । মুখ তুলে দেখি মিশুকে ঘিরে অদ্ভুদ আলো আধারীর খেলা শুরু হয়ে গেছে । সেই দিনের সেই ঈগলের আকৃতির আলো আবারও এসে ভর করে করে মিশুর চারিপাশে । কেবল মিশুকে নিয়ে টানা টানি শুরু করে দিয়েছে । কিন্তু ওর হাত পা বাঁধা থাকা কারনে নিতে পারছে না ।

এভাবে দাড়িয়ে থাকার কোন মানেই হয় না ! মিশুকে বাঁচাতে হলে ওকে ওখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে হবে ! আমি যেই না এক পা বাড়াবো তখনই কেউ একজন আমার পেছন থেকে আমার কাধে হাত রাখলো ! পেছনে তাকিয়ে দেখি আমাদের গাইড !
-ভাইডি চলেন ?
-কিন্তু ?
-আফা আপনেরে এইখান থেইকা নিয়া যাইবার বুলছে ।

আমি আরেকবার তাকিয়ে দেখি সেই ঈগল আকৃতির আলোটা মিশুর মাঝার কাছে টা টেনেইই চলেছে । চারিদিকে দিনের চেয়েও বেশি আলো হয়ে গেছে । আমার তাকিয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছিলো ! আলো এতোটাই তীব্র হয়ে উঠলো যে সেখানে আলোর জন্য মিশুর শরীর টা আলোর ভেতরে প্রায় ডুবে গে ! আমি সেই আলোর ভেতরেই দেখতে পেলাম যে ঈগলের আলো টা যেন মিশুর শরীরটাকে দুদিকে ছিড়ে নিয়ে চলে গেল !


তারপর হঠাৎ আলোটার মুখ যেন আমাদের দিকে ঘুরে গেল !
-ভাইডি চলেন !
তাকিয়ে দেখি গাইড ততক্ষনে দৌড় দিয়েছে । আমিও বুঝলাম আমারও দৌড় দেওয়া দরকার !
পেছন ঘরে কেবল দৌড় দিলাম । পেছনে অনুভব করলাম গাছ পালা ভেঙ্গে কেউ কিংবা কিছু একটা আসছে । আমি না থেমে কেবল দৌড়ে চললাম । কেবল মনে হল দাড়ালেই আর বুঝি বাচঁবো না !

কতক্ষন দৌড়েছি বলতে পারবো না ! একটা সময় মনে হল আর কেউ আসছে না । তবুও দৌড়ে চললাম !

তার পর সেখান থেকে কিভাবে থানচি পৌছালাম আমি আর আমার গাইড জানি ! আর দেরি করি নি । সোজা ঢাকায় ! তবে সারাটা সময় কেবল মিশুর কথা মনে হয়েছে । মেয়েটা মনেহয় আর বেঁচে নেই । নিজেকে মুক্ত করার জন্য এতো দুর এসেও শেষ মুক্ত পেল তবুও মৃত্যুর মাধ্যমে !



গত জুন মাসে গল্পটা লিখেছিলাম ! আমি সাধারনত এই টাইপের গল্প লিখি না । তবুও কেন লিখলাম কে জানে ! ভেবেছিলাম সামুতে এটা পোস্ট করবো না ! কেবল আমার নিজের ব্লগে থাকবে । তাররপ গতকাল এরকম আরেকটা গাজাখুরি গল্প লিখে ফেলেছি ! ভাবলাম যখন ঐ টা পোস্ট করবো তাহলে আর এইটা দোষ করলো কোথায় ! আজকে এটা পোস্ট করি কালকে আরেকটা !
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×