সকালবেলা ঘুমের সময় কেউ ফোন দিলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায় ! গতকালকে আমার এক বান্ধবী ফোন দিল সকাল বেলা ! যদিও তখন প্রায় দুপুর কিন্তু আমার কাছে তো ভোর বেলা ! যাই হোক ফোন দিয়ে কয় নোকিয়া লুমিয়ার জন্য সেটিং চাচ্ছে, কি করবো ? আমাদের এখানে যেটা আছে সেটা পাঠিয়ে দিবো !
আমার এই বান্ধবী জিপির কাস্টমার কেয়ারে জব করে !
আমি মনে মনে কই কি রে ভাই তুই হইলি কাস্টমার ম্যানেজার তুই জানবি আমি কেমনে জানবো কি পাঠাবি না পাঠাবি ?
একটু পরে ও নিজের বলল
-আরে ধুর তুমিতো তানভীর ! আমি তো মনে করেছি তানজির ভাই !
কি আর কইব মনের দুঃখের কথা ! বান্ধবী সকাল বেলা ফোন দিয়েছে তাও আবার ভুল করে ! দুর ! ভাবছিলাম কিছু সুখ দুঃখের কথা কইবে ! তা না !
আমি ফোন রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম ! ঘুম কি আসে !
আজকেও তাই ! সকালবেলা (বেলা ১.২৯) ফোন এসে হাজির ! মোবাইলের রিংটোন টা এতো কর্কশ যে ঘুম থেকে না উঠে উপায় নাই ! মোবাইলে স্ক্রীনে দেখি অপরিচিত নাম্বার ! মেজাজটা একটু খারাপ হল !
এই সকাল বেলা আবার কে ফোন দেয় !
-হ্যালো !
-হ্যালো ! অপু তানভীর ভাই বলছেন ?
ছেলে মানুষের গলা ! এইডা কিছু হইলো !
-জি !
-আমি কান্ডারী অর্থব !
আমি প্রথমে ঠিক মত শুনি নাই ! আমি আবার বললাম
-কে ?
-কান্ডারী অর্থব !
মুহুর্তের ভিতর আমার সব বিরক্ত বীলিন হয়ে হয়ে গেল ! কান্ডারী ভাই আমাকে ফোন দিছে এটা আমি ভাবতেই পারি নি ! নিজের কাছেই যে ভাল লাগলো আবার একটু লজ্জাও লাগলো !!
উনির নিজেই বললেন মিরপুরের ব্লগে আড্ডাতে আসার জন্য !
আসলে আমার নিজের ব্লগ আড্ডাতে যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না ! আর ঠিক উপায় ছিল না ! আমার পরার সেন্ডেল ছিড়ে গেছে গতকাল রাতে ! কেনার সময় পায় নি !
কিন্তু এখন তো না গিয়ে উপায় নাই !
আরমান কে মেসেজ পাঠালাম ! সে বলল সেও আছে ওখানেই !
তাড়াতারি করে ঘুম থেকে উঠলাম ! হাত মুখ ধুইলাম ! রান্না করে খেয়ে বের হতে হতে চারটা বেজে গেল প্রায় ! সেন্ডেল ছিল না পাশের রুমের এক জনের কাছ থেকে ধার নিয়ে বের হলাম ! সেটাও আবার ছেড়া ! কই যাই ! মুচির কাছে গিয়ে শেলাই করে নিতে হল !
কিভাবে যাবো ভাবছি ! বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে লেগুনায় উয়ে পড়লাম ! বাসে করে গেলে ভাল হত ! কিন্তু সেটার জন্য আমাকে আসাদ গেইটে যেতে হবে ! তার উপর আরও একটা কারন অবশ্য আছে ! আমার একটু আগে আগেই এক মেয়ে উঠলো ! আমিও উঠে পড়লাম ! মেয়েটি বসলো আমার দিকে মুখ করে !
আমি এখন কি করি ! আবার দেখি লেগুনার দেওয়ালে লেখা ভদ্রতা বজায় রাখুন ! শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দিয়া যদি বলা হয় এই মুরগি খাবি না এমন কথা আমার দেওয়ালেরই ভদ্রতা বজায় রাখুন লাইন দেখে মনে হল !
যাই হক মেয়েটা নেমে গেল শ্যামলিতে ! মন বড় খারাপ হল !
এইডা কিছু হইলো !
উপরওয়ালার কাছে কইলাম এই তুমার কেমুন বিচার ? সবে মাত্র কিছু একটা শুরু হয়েছিল ! আর এখনই..... ?
মনে হলে বিচার দেওয়াতে কাজ হল ! লেগুনায় এক চশমা আর জিন্স পরা উঠলো ! কথা বার্তায় বুঝলাম মেয়েটির গন্তব্য ১০ নাম্বার পর্যন্ত !
আহা !
উপরওয়ালাকে ধন্যবাদ !!
জার্নি ভালই হল ! কালশীর মোড়ে গিয়ে পড়লাম আরেক ঝালেমায় ! সেখানে আড্ডা হচ্ছে সেই জায়গাটা আমিও চিনি না ! রিক্সাওয়ালাও চিনে না ! এক লোক কে জিজ্ঞেস করলাম ! সে এক পথ দেখলো ! বেশ কিছু দুর যেতে যেতে আরমানের ফোন !
কোথায় ? এতো সময় কেন লাগছে ?
আমি বললাম ব্রিজের কাছে !
আরমান বলল
-আরে এতো দুর গেছো কেন ?
আবার রিক্সা ঘুরিয়ে আসলাম ! কি এক ঝামেলা !
শেষে পৌছালাম সেই আসল জায়গায় ! ততক্ষনে অনেকেই পৌছে গেছে ! আমি যেতেই জনাব মাহবুব আর কান্ডারী ভাই আমার ফটু তুলে আপলোড দিয়ে দিলেন !
দেখা হল অনেকের সাথে ! স্নিগ্ধ শোভন, মাগুর, সোহেল হোসেন, কুনোব্যাঙ, খাটাস, স্বপ্নবাজ অভি, একজন আরমান, পরিবেশ বন্ধু, এম মশিউর, জনাব মাহবুব ও ব্লগার কাণ্ডারি অথর্ব, জেরিফ, সেলিম আনোয়ার আরও অনেকের সাথে !
আরও পরে এল এস আর জনি, এ্যাপোলো ৯০, চিরতার রস, কাল্পনিক ভালোবাসা, মোমের মানুষ, নীল সাধু, রোদেলা,আহমেদ আলাউদ্দিন, আশরাফুল ইসলাম দুর্জয় মাহতাব সমুদ্র আর অনেকে।
তারপর এল আমাদের মডু শরৎ ভাই ! শুরু হয়ে গেল আড্ডা ! বলতে গেলে জম্পেস আড্ডা ! মডু ভাই একাই আড্ডা মাতিয়ে রাখলেন ! সঙ্গে যোগ দিলেন জনিভাই আর জাদীদ ভাই ! আড্ডায় আমরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে গেলাম ! লুল গ্রুপ ! এই ছিল সব থেকে বড় বড় দল আমাদের চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হলেন সেলিম আনোয়ার ভাই ! আর আমাদের প্রতিনিধি বা মুখপাত্র হল জনি ভাই !
সুশীল দলে গেল কুনোব্যাঙ আর এক আপু ! আরমান গেল আলু গ্রুপে ! আর কবি গ্রুপে গেল পরিবেশ বন্ধু ! তার দলে আরো দুজন কে পাওয়া গেল !
জাদীদ ভাই মানে কাল্পনিক ভালবাসা অনেক বার পাল্টি খাওয়ার পরে গেলেন আম জনতা পার্টিতে ! আর একদল হল হল ক্যাচাল বাজ ! সেখানে যোগ দিলেন ব্লগার মোমের মানুষ আর নীল সাধু !
আর আমাদের মডু শরৎ ভাই হলেন বিদেশী শক্তি !
শুরু হয়ে গেল আমাদের বিতর্ক !
আর একটা কথা বলতে ভুলে গেছি কান্ডারী ভাই কিন্তু আমাদের দলে যোগ দিলেন ! এমবিয়ে হিসাবে ! ম্যারেড বাট এভেইলএবল !
চায়ের সাথে আড্ডা চলতে থাকলো ! সবার দিকে শরৎ ভাইয়ের ক্যামরার ফ্ল্যাশ যাচ্ছে !
ওদিকে কান্ডারী ভাই তখন আমাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত ! কেক নিয়ে এলেন তার পরে নাস্তা ! আসলেই অনলাইনে যতখানি না আন্তরিক বাস্তবে তিনি তার থেকেও বেশি আন্তরিক !
কেক কাটা হল ! নাস্তাও হল ! আরো আড্ডা হল অনেকক্ষন ! সবার শেষে এল আমাদের আমিনুর ভাই !
অনেক দিন পরে চমৎকার একটা দিন গেল ! আসলেই চমৎকার একটা দিন ! অনলাইনের পরিচিত মানুষ গুলোকে আরো সামনা সামনি দেখে ভাল লাগলো অনেক !
সবাইকে, যারা আজকের ব্লগ ডে আড্ডাতে হাজির ছিল, জানাই অনেক অনেক ধন্যবাদ । বিশেষ করে কান্ডারীভাই কে !
ও আরেকটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি আমরা যারা যারা উপস্থিত ছিলাম জানা আপু আমাদের সবার সাথে কথা বলেছেন ফোন করে ! এটাও একটা চমৎকার বিষয় ছিল !
পরিশেষে আবারও ধন্যবাদ ! সবাইকে ব্লগ ডের শুভেচ্ছা !!
ছবির জন্য এই পোষ্টে যান
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫৯